অপেক্ষা !! Part- 06
আমি রাফিনের কোন কথা শুনলাম না।না শুনে সেখান থেকে চলে এলাম।নিচে এসে নিজের রুমে সুয়ে পড়লাম।কিন্ত কিছুতে ঘুম আসছে না।আচ্ছা”আমার কি রাফিনের কথা গুলো শোনা উচিৎ ছিলো”।রাফিন মনে হচ্ছে শুভোর ব্যাপারে কিছু একটা বলতে চেষ্টা করছিলো? হয়তো শুভোকে আমার চোখে খারাপ করার জন্য ওর নামে খারাপ কিছু বলতো বানিয়ে বানিয়ে। শুনিনি ভালোই করেছি।
এত কিছু ভেবে শুধু শুধু রাত জেগে থাকার কোনো মানে হয় না,তার চেয়ে বরং ঘুমিয়ে পড়ি।কাল আপুর বিয়ে অনেক কাজ।ঘুমিয়ে পড়লাম।ভোরে উঠলাম উঠে ব্রাশ করে, ছাদে গেলাম গিয়ে দেখি রাফিন ফোনে কথা বলছে।ওর কথা বলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ও কারো সাথে ঝগড়া করছে,কথা কাটাকাটি করছে।শুধু বার বার বলছে তুই এত বড় বেইমানি করতে পারিস না আমার সাথে।
তুই এটা করতে পারলি কি করে।
যাই হোক যার সাথে ইচ্ছা কথা বলুক ঝগড়া করুক, তাতে আমার কি?
আমি নিচে চলে আসছি তখন একটা শব্দ দেখলাম রাফিন ওর ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো।আর চিলেকোঠার দেওয়ালে জোরে জোরে ঘুসি মারছে।ওর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।আমি দৌড়ে গেলাম।
আমিঃকি করছেন রাফিন ভাই এটা। মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।দেখেন তো কত রক্ত বের হচ্ছে।
রাফিনঃ ছাড়ো আমাকে। রক্ত ঝরলে ঝরছে আমার তাতে তোমার কি? দুরে যাও আমার থেকে।
আমিঃ আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে উঠে এলাম সেখান থেকে।
রাফিনঃসেজুতি দাড়াও।(রাফিন দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আমাকে)।
আমিঃছাড়ুন আমাকে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে ছাড়ুন।(আমি ধাক্কা দিয়ে রাফিন কে সরিয়ে দিলাম)।
রাফিনঃ সেজুতি শুভ তোমাকে কবে থেকে ভালোবাসে?
আমিঃও আমাকে অনেক ছোটথেকে ভালোবাসে।
রাফিনঃআচ্ছা সেজুতি,তুমি একটা কথা কখনো ভেবে দেখেছো?
আমিঃকী?
রাফিনঃযে মানুষটা তোমাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে সে তোমাকে সেই ছোটবেলা থেকে তোমাকে প্রপোজ করার আগে পর্যন্ত কতবার দেখেছে?
তুমিও বা কতবার দেখেছো ওকে?
আমিঃআমি ওকে আপুর বিয়ের আগে এক বার দেখেছিলাম। আর কখনো দেখিনি
রাফিনঃআচ্ছা সেজুতি যে মানুষটা তোমাকে এতটা ভালোবাসে সে তোমাকে না দেখে ১০/১৫ বছর কিভাবে কাটিয়ে দিলো? ভালোবাসলে এভাবে দুরে থাকা যাই? ভালোবাসার মানুষ কে না দেখে? আর এমনটাও তো না যে ওর বাসা অনেক দুর। ও তো কাছেই থাকে।
আমিঃ ইয়ে মানে,মানে,সে যাই হোক,দেখুন আপনি একদম শুভ আর আমার মাঝে ঝামেলা পাকাতে আসবেন না।(আমি নিচে আসার জন্য পা বাড়ালাম রাফিন আবার বলে উঠলো)।
রাফিনঃতুমি কি কখনো খেয়াল করেছিলে আমি চলে যাবার পর থেকে তোমাকে কেউ ফলো করতো রোজ?
আমিঃহ্যাঁ, ওটা তো শুভ ছিলো।কিন্ত, এক সেকেন্ড দাড়ান, আপনি কি করে জানলেন এটা, নিশ্চয় শুভ বলেছে তাই না?
রাফিনঃশুভ তোমাকে এত ভালোবাসে অথচ শুধু দুর থেকে ফলো করতো তোমাকে কখনো কাছে এসে প্রপোজ করেনি, এটা কি অশ্চার্য জনক বেপার না?
আমিঃচুপ থাকুন একদম। অনেক হয়েছে। আপনি আর শুভোর সম্পর্কে একটা বাজে কথাও বলবেন না প্লিজ।
রাফিনঃসেজুতি তুমি কি জানো শুভ আর আমি অনেক আগে থেকে দুজন দুজন কে চিনি।ইনফ্যাক্ট ও আর আমি একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।
আমিঃকি বলছেন কি আপনি?কই শুভ তো কখনো বলেনি আপনার কথা আমাকে।
রাফিনঃ বলবে না তো,ও আমার আমানতের খেয়ানত করেছে।ও কথা দিয়ে কথা রাখেনি।
আমিঃমানে?
রাফিনঃমানে, আমি শুভোকে বলেছিলাম,,,,,
শুভঃসেজুতি,সেজুতি,আরে সেজুতি তুমি এখানে আর আমি তোমাকে সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুজলাম। আর তুমি ছাদে।
আমিঃশুভ তুমি! এত সকালে?
শুভঃ কেনো আমার কি আসতে মানা নাকি?আর তোমার কথা ভীষন মনে পড়ছিলো,একটু পরে এমনিতে তো আসতামি তাই একটু আগেই চলে আসলাম।
আমিঃদাড়াও শুভ, তোমার সাথে কিছু কথা আছে।রাফিন কিছু বলছিলো ও নাকি তোমাকে,,,,,
শুভঃও সেজুতি পরে শুনবো এখন চলো তো।আপু ডাকছে নিচে তোমাকে।(এটা বলে শুভ আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেলো।আর আমি পেছনে দাড়িয়ে থাকা রাফিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আমি কেমন যেনো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।কিছু তো একটা আছে, যেটা আমার থেকে গোপন করা হয়েছে।কিন্ত কী?সেটা আমাকে জানতেই হবে।
আমি নিচে গিয়ে।
আমি-আপু তুমি আমাকে ডাকছো?
আপুঃকই না তো।
আমিঃকিন্ত শুভ যে বললো,,,,
আপুঃআচ্ছা সেজুতি শুভোর কী কিছু হয়েছে?
আমিঃ নাতো আপু কেনো?
আপুঃ শুভো একটু আগে এসে তোকে পাগলের মত খুজছিলো।বুঝলাম না ব্যাপারটা।যাই হোক তুই কি পার্লার যাবো চল, রোডি হ।
-না আপু আমি যাবো না,তুমি মিহি আপুকে সাথে নিয়ে যাও।
-তোর আবার কি হলো?
আমি-কিছুনা, আমি বাসায় রেডি হতে পারবো যাও।আর এমনিতেও আমি কি পার্লারের থেকে খারাপ সাজি নাকি হুম(তাই বলে আমি একটু মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।আপু যেনো কিছু বুঝতে না পারে)।
আপু-আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি নিচে যাচ্ছি সাথে সাথে শুভ আমার হাতটা টেনে এক সাইডে নিয়ে গিয়ে আমকে জড়িয়ে ধরে বললো চলোনা সেজুতি আজকে আমরা আমাদের বিয়েটা সেরে ফেলি।
আমি-কি বলছো মাথা ঠিক আছে তোমার?
শুভ-কেনো ক্ষতি কি, রেজিস্ট্রি টা করে রাখি।
আমি-আর তো মাএ এক মাস,এত তাড়াহুড়োর কি আছে শুভ।তাছাড়া আমি পালিয়ে যাচ্ছিনা কোথাও বুঝলে।
শুভ- রেজিস্ট্রি টা করে রাখলে সমস্যা কি?
আমি-কি হয়েছে বলোতো শুভ তোমার।শরীর ঠিক আছে তো?
ছাড়ো আমাকে আর এসব পাগলামি বাদ দাও।আমি রেডি হবো।
শুভ-না ছাড়বো না।
হঠাৎ একটা কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম,তাকিয়ে দেখলাম আমাদের পেছনের দরজার পাশের ফুলদানি টা পড়ে আছে,দারজার পর্দাটা এখনো নড়ছে।তারমানে কেউ লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলো। আমি দৌড়ে গেলাম দেখার জন্য গিয়ে দেখি রাফিন চলে যাচ্ছে। ও কেনো শুনছিলো আমাদের কথা। আমার কেমন যেনো লাগছে।মাথাই কাজ করছে না।কিছু একটা চলছে যেটা আমি জানি না।
শুভ -কি হলো সেজুতি?
আমি-না কিছু না।তুমি থাকো আমি রেডি হতে যাবো।
শুভ -আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমি-মাথা ঠিক আছে তোমার শুভ।কেউ দেখলে কি ভাববে।আর আমিও বা কি ভাবে চেঞ্জ করবো তোমার সামনে?
শুভ-ঠিক আছে আমি তাহলে দরজার বাইরে অপেক্ষা করবো।
আমি-আমার অনেক টাইম লাগবে।তুমি বসে বসে কি করবে?
শুভ-তাতে কি।
আমি-আচ্ছা তোমার যা ভালো লাগে করো।(শুভোর শরীর এখনো পুরোপুরি ঠিক হয় নি,ওর এমন অদ্ভুত আচারন দেখে অবাক হচ্ছি আমি)।
আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাড়ালাম তখন অদ্ভত একটা জিনিস দেখলাম। দেখলাম নিচে শুভ আর রাফিন কথা বলছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে ওদের ভেতর প্রচন্ড কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
আমি সাথে সাথে নিচে গেলাম।গিয়ে দেখি ওরা আমাকে দেখে আবার হেসে হেসে কথা বলছে ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না।
আমি আবার ফিরে এলাম এসে দেখি আমার বাবা মা আর শুভোর বাবা মা কি যেনো আলোচনা করছেন।আমি সেদিকে কান না দিয়ে উপরে চলে গেলাম।
উপরে গিয়ে রেডি হচ্ছি ঠিক তখনি মা এসে বললো”সেজুতি তোর সাথে কিছু কথা ছিলো”।
-হ্যাঁ মা বলো।
মা-সেজুতি শুভোর বাবা মা চাই আজকে বিথিস সাথে তোর আর শুভোর রেজিস্ট্রি টাও হয়ে যাক।তুই কি বলিস মা?
আমিঃমা এই কথাটা শুভোর বাবা মায়ের নাকি শুভোর?
মা-যারি হোক আমাকে বললো ওর বাবা মা।এখন তোর কি মতামত তাই বল?
আমিঃমা( আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাফিন মাথা নাড়িয়ে আমাকে না করতে বলছে)।
মা-কি হলো চুপ করে আছিস কেনো কিছু বল।
আমিঃমা আমি একটা জিনিস বুঝলাম না। এত তাড়াহুড়োর কি আছে মা
আর বিয়েটা কি ছেলেখেলা নাকি।যে বললাম আর হয়ে গেলো।দেখো মা আমি এভাবে বিয়ে করতে চাই না।
মা-এটাই তোর শেষ কথা?
আমি-হ্যাঁ মা।
মা রুম থেকে চলে গেলো।সাথে সাথে রাফিন রুমে ঢুকলো।
রাফিনঃ থেংকিউ সেজুতি আমার কথাটা শোনার জন্য।
আমি- আমি আপনার কথা রাখার জন্য কিছু করিনি।আমার যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটা করেছি।আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার কথা রাখার জন্য এমনটা করেছি সেটা আপনার ভুল ধারনা।
রাফিনঃসেজুতি তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো,ঐ যে তখন বলতে বলতে চলে গেলে।
আমি-হ্যাঁ বলুন।
রাফিনঃসেজুতি শুভ আসলে,,,,,
শুভ-সেজুতি তুমি এখনো রেডি হও নি?আর রাফিন কি করছে তোমার রুমে?আমকে আসতে দিচ্ছিলে না আর ওকে আসতে দিলে,কেনো?
আমার থেকে ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
আমি-না আসলে ও তখন কি বলতে বলতে,,,
শুভ -চুপ করো।রেডি হও জলদি।আর রাফিন নিচে চলো আমার সাথে মা তোমাকে ডাকছেন।
রাফিন-আমি আসছি তুমি যাও।
শুভ -আরে এখনি ডাকছেন মা তোমাকে।
(আজকাল শুভোর আচারন বড় অদ্ভত লাগে)।
রাফিন আর শুভোর ভেতরে কিছু একটা চলছে।কি চলছে সেটা আমাকে খুজে বের করতেই হবে।
চলবে,,,,