অপেক্ষা

অপেক্ষা !! Part- 05

কি করে এমন একটা অমানুষকে ভালো বেসেছিলাম সেটা ভাবলেও এখন ঘৃনা লাগছে।
আমি রাফিন কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিচে চলে আসলাম।খুব কান্না পাচ্ছে আমার।ভেবে দেখলাম এবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুভ সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে বাঁচি।

নিচে এসে দেখলাম আপুর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
মা-কিরে সেজুতি কোথায় ছিলি?
আমি-এই উপরে ছিলাম মা।
মা-তোর আপু অনেকক্ষন থেকে খুজছে তোকে যা জলদি।

আমি-আচ্ছা মা।

আমি আপুর পাশে গিয়ে বসতেই আপু একটা রাগি লুক দিয়ে বললো’কোথাই ছিলি এতক্ষন?’আমার গায়ে হলুদ আর আমার একমাত্র বোনটাই হাওয়া।
আমি- আপু আসলে,রাফিন(ভেবেছিলাম আপুকে বলে দেবো কিন্ত যখনি বলতে যাবো দেখি রাফিন হাজির)।

আপু-ঐ দেখ রাফিন। এই রাফিন তোকে খুজছে সেজুতি।

আমি-আপু না।
রাফিনকে দেখে আমি উপরে চলে গেলাম রেগে,এখানে থাকলে জানিনা আবার কি করে।উপরে গিয়ে দেখি আমার রুম একদম অন্ধকার।লাইট জ্বালাতে যাবো ঠিক তখনি পেছন থেকে কেউ একজন আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমার মুখে হলুদ মাখিয়ে দিলো।দিয়ে আমার কাধের চুলগুলো সরিয়ে একটা কিস করলো।এটা রাফিন ছাড়া আর কেউ না। ওর এত বড় সাহস কি করে হয়।প্রচন্ড রেগে গিয়ে আমি মুখ ঘুরিয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।তারপর রুমের লাইট অন করে যা দেখলাম দেখে আমার মাথা ঘুরে গেলো,দেখলাম শুভ দাড়িয়ে আছে।তারমানে আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটা ভুল।ওটা রাফিন না, ওটা শুভ ছিলো।কি করবো আমি এখন, কি বলবো শুভ কে।শুভ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ ছলছল করছে।

শুভ-সেজুতি তুমি আমাকে মারলে?

আমি-না শুভ আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ প্লিজ শুভ ক্ষমা করে দাও আমাকে, আমি আসলে বুঝতে পারিনি আমি ভেবেছিলাম রাফিন,,

শুভ-রাফিন কে?
আমি-না মানে ইয়ে রাফিন, রাফিন, রাফিন আবার কে, কেউ না।(শুভ কে যদি বলি আমি রাফিন কে একসময় ভালোবাসতাম তাহলে ও হয়তো কষ্ট পাবে তাই বললাম না তাছাড়া রাফিনের সাথে তো আমার কখনো রিলেশন ছিলো না,বলারি বা কি আছে,না বলাটা ভালো)।

শুভ-রাফিন কে মানে তুমি তো এই মাত্র বললে রাফিন।

আমি-(আমি কিছু না বলে সোজা গিয়ে শুভ কে জড়িয়ে ধরলাম।আমি জানি ওর আর রাফিনের কথা মনে থাকবে না)।
আমি শুভোর গালে হাত বোলাতে বোলাতে বললাম খুব লেগেছে না?সরি।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।আমিত কল্পনাও করিনি তুমি আসবে।আমি তো তখন বললাম তোমাকে তুমি তে বললে না যাবো না।

শুভ-আসলে তোমাকে ছেড়ে একা থাকতে ইচ্ছা করছিলো না তাই।আর বাবা মা তো এমনিতে আসতো,ওরা একবার বললো তাই আর এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না চলে আসলাম।সেজুতি একটা কথা বলি?

আমি-হ্যাঁ বলো।
শুভ-তুমি সত্যি ভালোবাসোতো আমাকে?

আমি-বোঝো না?

শুভ -হ্যাঁ বুঝি তবুও কেনো জানিনা খুব ভয় লাগে।

আমি-কিসের ভয়?

শুভ-তোমাকে হারানোর ভর।আসলে অনেক কষ্ট করে পেয়েছি তোমাকে। পারলে তোমাকে বুকের ভেতরে রেখে দিতাম।

আমি-জ্বী স্যার বুঝলাম এখন চলুন নিচে। সবাই অপেক্ষা করছে চলুন।

শুভ-ঠিকআছে চলো।

আমারা দুজনে মিলে নিচে গেলাম।গিয়ে দেখি রাফিন এখনো আপুর পাশে বসে আছে।আমরা যেতেই আপু শুভোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।শুভো রাফিনের নামটা শুনে কেমন যেনো ভ্রু কুচকালো।জানিনা ও কিছু সন্দেহ করলো কি না।ভীষন ভয় করছে।একটা সময় যাকে ভালোই বাসতাম না তাকে আজ হারানোর ভয় কাজ করছে মনের ভেতর ভীষনভাবে।আর যাকে ভালোবাসতাম তার থেকে বাচাঁর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

আমি-শুভ এদিকে এসো।(তাই বলে আমি শুভোর হাত ধরে ওখান থেকে একটু দুরে এসে দাড়ালাম।আপু সাথে সাথে বললো,”কিছুদিন পর বিয়ে আর এখনি এ অবস্থা, বরকে চোখে হারাচ্ছিস এখুনি?
শুভ আপুর কথা শুনে লজ্জা পেলো।
রাফিন-বিয়ে কার বিয়ে বিথি?
আপু-আরে তোকে তো বলা হয়নি,সেজুতি আর শুভোর বিয়ে খুব জলদি।আবার বিয়ে খাওয়ার জন্য রেডি হও দোস্ত রাফিন।
রাফিন-বিয়ে কবে ঠিক হলো?তুই তো কিছু বললি না আমাকে।

আপু-আরে হয়েছে কিছুদিন আগে।এর ভেতরে অনেক ঝামেলাই ছিলাম।এ জন্য বলা হয়ে ওঠে নি।

আমি আপুর কথা শুনে রাফিন কে দেখিয়ে দেখিয়ে শুভোর হাতটা ধরে সেখান থেকে কিছুটা দুরে চলে এলাম।
দুর থেকে দেখি রাফিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।আমি মনে মনে বললাম, “দেখ, দেখবি আর জ্বলবি লুচির মত ফুলবি,একটা সময় তোর জন্য দিন রাত কেঁদেছি।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো।
মা-সেজুতি বিথির বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা কর।

আমি-মানে ওরা থাকব?

মা-হ্যাঁ।তো কোথাই যাবে ওরা ওদের বাসা কত দুর জানিস।ওরা পোরসু একেবারে বিথির বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরবে।

আমি-কেনো মা রাফিন ভায়ের বাসা তো কাছে উনি তো চলে যেতে পারে।

মা-এত বেশি বুঝিস কেনো তুই। সবাই থাকবে ও কেনো চলে যাবে?তুই যা তোর রুমের পাশের রুমটাতে ওদের থাকার ব্যাবস্থা কর আর তুই বিথি আর বিথির বান্ধবী তোর রুমে থাকবি।

আমি-(কিছু করার নেই)আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।

রাফিন এখানে থাকবে।শুনে কেমন জানি ভয় ভয় করছে।একটা সময় চাইতাম ও সমসময় আমার সামনে থাকুন। আর এখন মনে হয় সমনে থেকে গেলে বাঁচি।

আমার পাশে বিথি আপুর রুম।ওখানে আপুর বন্ধুদের থাকার ব্যাবস্থা করা হলো।শুভোরা চলে যাবে এবার।আমি নিচে গেলাম ওকে এগিয়ে দিতে।

নিচে গিয়ে দেখি শুভ রাফিনের সাথে গল্প করছে।রাফিনের মনে কি আছে বুঝতে পারছি না ও শুভোর সাথে একদম ফেবিকলের মত চিপকে আছে।
শুভ-সেজুতি কোথাই ছিলে?আমি চলে যাবো।

রাফিন-দেখো তোমার সেজুতি আবার কারোর সাথে পালিয়ে যাবার প্লান করছে কিনা(শুভোকে উদ্দেশ্য করে বললো)।

আমি-সেট আপ।এসব ফালতু চিন্তা ভাবনা আপনার মত মানুষের মাথা-ই আসে।চলো শুভো।আমি শুভোকে নিয়ে এক সাইডে গেলাম।

শুভ -কি মেডাম কোথাই ছিলেন আপনি এতক্ষন?

আমি-শুভ আমাকে নিয়ে চলো আমি আজ রাতটা থেকে কাল সকালে চলে আসবো আবার।

শুভ-কেনো?

আমি-তোমাকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছা করছে না(আসলে রাফিন আমাদের বাসায় থাকবে, আমারর ভয় করছে ও আবার যদি কিছু করে,এই বিয়ে বাড়িতে কাকে কি বলবো আমি)।

আমরা দুজন কথা বলছি সাথে সাথে মা চলে এলো।

শুভ-মা আমি সেজুতি কে নিয়ে যাবো? ও কাল সকালে চলে আসবে।(শুভ আমার মা কে মা বলে ডাকে)।

মা-সেজুতি একটু শোন।

আমি-হ্যাঁ মা।আসছি।মা আমাকে এক সাইডে নিয়ে গেলো।

মা-সেজুতি তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে।কিছুদিন পর তোর আর শুভোর বিয়ে।আর বিয়ের আগে শশুর বাড়ি যাবি।মানুষ কি বললে।তুই শুভকে বারন করে দে।তাছাড়া বিয়ে বাড়ি কত কাজ জানিস।

আমি-কিন্ত মা,,,,,,

মা-কোনো কিন্ত না তুই এখনি শুভ কে বুঝিয়ে বল। ও বুঝবে।আর ভালো ভালোভাবে বলবি যাতে ও কষ্ট না পাই।এমনিতে ছেলেটা অসুস্থ।

আমি-মা।

মা-আবার মা মা করিস না, তোকে যা বলছি কর যা।

আমি শুভকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।ওকে তো থাকতে বলতে পারছি না।কারন ওর শরীর খারাপ।

আমি রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে।একটু ছাদে গেলাম হাটতে।দেখলাম কেউ একজন দাড়িয়ে আছে এক কোনে।মনে হচ্ছে যে দাড়িয়ে আছে সে কাঁদছে।বার বার চোখ মুচছে।নিজের হাত দিয়ে।আমি কিছুটা কাছে যেতেই দেখলাম ওটা আর কেউ না ওটা রাফিন।যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহাই।
আমি ওকে দেখে পা টিপে টিপে চুপি চুপি সেখান থেকে চলে চলে আসছি ঠিক তখনি ও বলে উঠলো,

রাফিন- অনেক অনেক শুভেচ্ছা। বিয়ে ঠিক হয়েছে বলোনি তো।(চোখ মুছতে মুছতে)।

আমি-কে আপনি?যে আপনাকে বলতে হবে।শুভ আমাকে ভালোবাসে।আর আমিও।

রাফিন-ফেসবুকে আমাকে ব্লক দিয়েছিলে এই জন্য?

আমি -সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।

কথাটা বলে আমি সেখান থেকে চলে আসছি ঠিক তখনি,রাফিন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কাঁদতে লাগলো।

আমি যেনো আঁকাশ থেকে পড়লাম একেবারে।ওর মত একটা মানুষের চোখেও পানি আসতে পারে এটা ভেবে।

রাফিন-সেজুতি আমি তোমাকে ভালোবাসি।

আমি-ছাড়ুন বলছি আমাকে।ছাড়ুন।আপনার মত একটা শয়তানের মুখে ভালোবাসি কথাটা শোভা পাই না।আর তা ছাড়া আমি শুভ কে ভালোবাসি। (আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছি)।

রাফিন -দাড়াও সেজুতি।কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।

আমি-আপনার মত মানুষের কথা শোনার মত কোনো সময় নেই।

রাফিন -প্লিজ সেজুতি।একটা সময় আমরা তো খুব ভালো বন্ধু ছিলাম তার জন্যে হলেও আর তুমি ৫ টা মিনিট আমাকে দাও।একটু শুনো আমার কথা গুলো।

আমি-ঠিকআছে বলুন।

রাফিন-তুমি কি ভাবতে সেজুতি আমি তোমাকে ভালোবাসি না?আসলে তুমি তখন খুব ছোট ছিলে, সে জন্যো আমি কখনো আমার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করিনি,যাতে তোমার পড়াশোনা নষ্ট না হয়।আমি তোমাদের বাসায় বার বার আসতাম শুধু তোমাকো একটা বার দেখা জন্য।বিথি তো বাহানা ছিলো মাত্র।তুমি আমাকে আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে আমি সেটা সবসময় লক্ষ্য করতাম।এমনকি আমি বিদেশ যাবার দিনো তোমাকে একটা বার দেখার জন্য তোমাদের বাড়িতে এসেছিলাম সকালে।এয়ারপোর্টে বন্ধুদের নিয়ে যাবার প্লানিং করেছিলাম যাতে তুমিও যাও।
আমি বিদেশ থেকে দিনের পর দিন তোমার খোজ রেখেছি বিদেশ থেকে।কত কষ্ট করে তোমাকে ফেসবুকে খুজে খুজে রিকু দিছিলাম জানো।আর ফেসবুকে যে মেয়েটার ছবি ছিয়েছিলাম এটা আমারি চাচাতো বোন।তোমাকে জ্বালানোর জন্য ছবি দিয়েছিলাম। যাতে তুমি বলে ফেলো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।তোমাকে আমি তখনি বলতাম।কিন্ত তুমি তো ব্লক দিছিলে আমাকে।আর তোমার কন্টাক্ট নম্বরো ছিলো না আমার কাছে।

আমি-চুপ থাকুন চুপ।অনেক হয়েছে আর না।খুব সুন্দর মিথ্যা বলতে পারেন আপনি খুব সুন্দর।যথেষ্ট হয়েছে আর না।আর তুমি জানো শুভ কে আমি,,,,,,,

আমি-চুপ আপনার মত একটা মানুষের মুখে শুভোর নাম ও উচ্চারণ করবেন না।

রাফিন-কিন্ত সেজুতি,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *