অপেক্ষা

অপেক্ষা !! Part- 07

লেখিকাঃআতিকা জাহান।

রাফিন আর শুভোর ভেতরে কিছু একটা চলছে।কিন্ত কি চলছে সেটা আমাকে খুজে বের করতেই হবে যেভাবেই হোক।

আপু চলে এসেছে পার্লার থেকে।আমি এখনো রেডি হয়নি।আমি কোনোরকম রেডি হয়ে নিচে গেলাম।আপুর পাশে গিয়ে বসলাম।শুভ এক মিনিটো চোখের আড়াল করছে না আমাকে।এদিকে রাফিন আমার চারপাশে ঘুর ঘুর করছে।মনে হয় ও কিছু বলতে চায় আমাকে।ছেলের বাড়ি লোক এসে গেছে,আমি দৌড়ে গেলাম গেট ধরতে।তখনি কেউ একজন রং মেরে দিলো আমার গায়ে।আমার ড্রেস পুরো নষ্ট হয়ে গেলো।আবার চেঞ্জ করতে যেতে হবে ধুর ভালো লাগে না।
আমি উপরে গেলাম চেঞ্জ করতে।চেঞ্জ করা শেষে আমি নিচে নাবছি ঠিক তখনি কেউ একজন আমার মুখ চেঁপে ধরলো পেছন থেকে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। মনে হয় আমি সেন্সলেস হয়ে গেছি।জানিনা কতক্ষন এভাবে সেন্স হারিয়ে পড়ে ছিলাম।সেন্স ফেরার পর আমি যেনো চোখ মেলে তাকাতেই পারছি না।দুচোখ যেনো ঘুমে ভরে আছে।ঝাপসা চোখে দেখলাম।আমার সামনে কেউ একজন চেয়ারে বসে আছে।আর আমি মনে হলো বেডে শুয়ে আছি।কিন্ত চোখ মেলে ভালোভাবে দেখার শক্তি যেনো আমার নেই।আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।কতদিন এভাবে রুমটাতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলাম কিছুই জানিনা।শুধু দু এক বার তাকিয়েছি তাও ঝাপসা ঝাপসা।কেউ একজন আমকে খাইয়ে দিতো।খেয়েছি কিনা জানিনা।হয়তো খেয়েছি।

আজকে হঠাৎ আমি পুরোপুরি ভাবে সেন্স ফিরে পেয়েছি মনে হচ্ছে।চারপাশটা একদম ভালো ভাবে দেখতে পাচ্ছি।আমি আস্তে আস্তে উঠে জানালার কাছে গেলাম, জানালাটা খুলে দিলাম।দিয়ে অবাক হয়ে বাইরে তাকালাম।এই জায়গাটাই আমি আগে কখনো এসেছি বলে মনে হয় না।মনে হচ্ছে এটা অনেক পুরাতন একটা বাংলো।কিন্ত এখানে আমাকে আনলো কে?

হঠাৎ একটা আওয়াজ পেয়ে সাথে সাথে আমি আবার জানালা অফ করে আগের মত বেডে শুয়ে পড়লাম।
কারো পায়ের শব্দ। দেখলাম কেউ একজন রুমে ঢুকলো।

একি আমি ঠিক দেখছি তো।এটা শুভ?
ভালোকরে তাকিয়ে দেখলাম ওটা সত্যি শুভ।তাহলে আমাকে এখানে,,,,
কিন্ত কেনো।শুভ ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে গেলো।ও ভাবছে আমি এখনো সেন্সলেস।ও ওয়াশরুমে যাবার সাথে সাথে আমি ফোনটা নিয়ে রাফিন কে কল দিলাম,একি রাফিনের ফোন নম্বর শুভোর ফোনে অলরেডি সেভ করা।

আমি রাফিন কে কল দিলাম।
কেউ ফোন রিসিভ করেছে।

-হ্যালো শুভ তুই সেজুতি কে কোথাই লুকিয়ে রেখেছিস বল।দেখ তোর শত্রুতা আমার সাথে, তুই সেই শাস্তি সেজুতিকে কেনো দিচ্ছিস?

আমি-হ্যালো রাফিন আমি সেজুতি বলছি।

রাফিন-সেজুতি, সেজুতি কোথাই তুমি?আজ একটা মাস আমরা তোমাকে তন্ন তন্ন করে খুজছি।কোথাই আছো তুমি।তুমি জানো, তোমার বাসার সবার কি অবস্থা টেনশনে।

আমি রাফিনের কথা শুনে থ হয়ে গেলাম।এক মাস আমি এভাবে পড়ে আছি এখানে।শুভো কেনো এভাবে তুলে আনলো আমাকে।আমরা তো বিয়ে করতাম কিছুদিন পরে

আমি-রাফিন, শুভ আমাকে জানিনা কোথাই নিয়ে এসেছে।(কাঁদতে কাঁদতে)।

রাফিন-সেজুতি কুল ডাউন। মাথা ঠান্ডা করে আমার কথা শুনো,শুভ যদি তোমাকে বিয়ের জন্য জোর করে খবরদার তুমি রাজি হবে না।ও একটা সাইকো।মাথার ঠিক নেই ওর।তুমি যেই রুমে আছো সেখানে জানালা থাকলে খুলে দেখোতো।আশেপাশে এমন কিছু দেখতে পাও কিনা,যেটা দেখলে তুমি বুঝতে পারো জায়গাটা কোথাই হতে পারে।

আমি-আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি।(আমি জানালার কাছে যাবো ঠিক তখনি শুভো আমার হাত টেনে ধরলো।

শুভ-কার সাথে ফোনে কথা বলছে সেজুতি?দাও ফোনটা আমাকে দাও।

আমি-না।দেবো না।

শুভ-দাও বলছি।(জোরে ধমক দিয়ে) কেড়ে নিলো ফোনটা শুভ আমার কাছ থেকে।

হ্যালো কে রাফিন?

রাফিন-দেখ শুভ সেজুতি কে ছেড়ে দে বলছি।আমি যদি ওখানে আসি ভালো হবে না বলছি।

শুভ কোনো কথা না বলে ফোনটা কেটে দিলো।

আমি-শুভ, তুমি আমাকে এখানে কেনো এনেছো?

শুভ-সেজুতি রেডি হও আজকে আমাদের বিয়ে।দেখো তোমার জন্য আমি কি এনেছি।এই দেখো শাড়ি।

আমি-শুভ আমার প্রশ্নের উওর দাও।তুমি আমাকে এখানে কেনো এনেছো?

শুভ-সেজুতি দেখো এটা আমার পাঞ্জাবি, তোমার পছন্দের রং নিল এর।সুন্দর হয়েছে না বলো?

আমি-(শুভোর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম)কি হচ্ছে টা শুভ এসব, আমার একটা কথা জিঙ্গাসা করেছি তোমাকে।এসব কি? আর কিসের বিয়ে?আমি কেনো সবার থেকে লুকিয়ে বিয়ে করবো এমন তো না যে কেউ রাজি ছিলো না এই বিয়েতে।সবাই রাজি।তাহলে, এভাবে কেনো?আমি এক্ষুনি বাড়ি যাব শুভ। (তাই বলে আমি বাইরে বের হতে গেলাম তখনি শুভ আমাকে টেনে ধরে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরলো)।

শুভ-হ্যাঁ যাবোতো বিয়েটা করে নেই আগে।তুমিতো আমাকে ভালোবাসো তাহলে বিয়ে করতে আপত্তি কিসের?

আমি-ছাড়ো আমাকে শুভ।আমার লাগছে।ছাড়ো বলছি।আমি বাড়ি যাবো ছাড়ো আমাকে।(আমি শুভকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে চলে আসতে গেলাম শুভ আমাকে ধরে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে।বিয়ে না করে এখান থেকে এক পাও বাড়াবি না বুঝলি।আর যদি পালাতে চেষ্টা করিস তবে হাত পা ভেঙে এখানে বসিয়ে রাখবো।

আমি-(আমার মাথাই আকাশ ভেঙে পড়লো এ কোন শুভকে দেখছি আমি।শুভ তো এমন ছিলো না।)শুভ কি বলছো কি তুমি মাথা ঠিক আছে তোমার।তুমি এভাবে কেনো কথা বলছো আমার সাথে।ছিঃ শুভ ছিঃ।

শুভ-চুপ একদম চুপ।(আমার চুলের মুঠি ধরে বললো)একটা কথাও না।একটা কথা মনে রাখিস তুই শুধু আমার।

আমি- আহ শুভ আমার লাগছ।ছাড়ো।

শুভ-এখানে শাড়ি গহনা সব রাখা আছে রেডি হও জলদি।আজকেই আমাদের বিয়ে।

আমি-না আমি এভাবে বিয়ে করবো না।আমিতো বলিনি বিয়ে করবো না।করবো তবে সবাইকে নিয়ে।এভাবে চোরের মত না।
শুভ তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো’প্লিজ সেজুতি আমি তোমাকে ভীষন ভালোবাসি।আমি তোমাকে হারাতে চাই না।রাফিন তোমাকে কেড়ে নেবে আমার কাছ থেকে।প্লিজ সেজুতি চলো না বিয়েটা করে নেই।

আমি-না শুভ এভাবে আমি বিয়ে করবো না।আর আজকে তোমার যে রুপ আমি দেখলাম এরপরেও তোমাকে বিয়ে করবো কি না সেটা আমাকে ভেবে দেখতে হবে।
শুভ-কি বলছো এসব তুমি সেজুতি? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?নাকি রাফিনকে দেখে তোমাস পুরাতন প্রেম আবার জেগে উঠেছে?।

আমি- ছিঃ শুভ এসব কি বলছো তুমি,আর এক মিনিট আমি যে রাফিন কে ভালোবাসতাম সেটা তুমি কিভাবে জানলে?আমিতো কখনো তোমাকে বলিনি।আর তোমাকে কেনো,আমি রাফিনের কথা কাউকেই বলিনি।তুমি কিভাবে জানলে?

শুভ-আমি কিভাবে জানবো।এমনি গেস করলাম আর কি।

আমি-দেখ শুভ আমি কোনো বাচ্চা না যে তুমি আমাকে যেটা বোঝাবে আমি সেটা বুঝবো।আমি অনেকদিন থেকে খেয়াল করছি তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছ আমার কাছ থেকে।আজকে বলতে হবে তোমাকে না হলে আমি তোমাকে জীবনেও বিয়ে করবো না, শেষ করে দেবো নিজেকে।বলো শুভ, বলো।

রাফিন-শুভ তোমাকে কি বলবে সেজুতি বলবো তো আমি।বলার মত ওর কাছে কিছুই নেই।

আমি-রাফিন তুমি এখানে, কি করে এলে?

রাফিন -তুমি আমাকে কল করেছিলে,সেই কল থেকে লোকেশন টেক করে আমি এখানে পৌছেছি।

সেজুতি, তোমার মনে আছে আমি চলে যাবার পর থেকে কেউ তোমাকে ফলো করতো,সেটা কে ছিলো জানো।সেটা ছিলো শুভ।একটা সময় ও আমার সবথেকে ভালো বন্ধু ছিলো।তাই আমি বিদেশ আমি জানতাম না ও তোমাদের কাজিন।ও কখনো বলেনি আমাকে আর বিথিও না।
আমি বিদেশ যাবার আগে খুব চিন্তাই ছিলাম যে আমি চলে যাবার পর যদি তুমি অন্য কারো সাথে রিলেশনে জড়াও,কিংবা যদি তোমার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায়।এদিকে আমি চেয়েছিলাম নিজের পায়ে দাড়িয়ে তারপর তোমাকে বিয়ের কথা বলবো।একদিন শুভো নিজেই আমাকে বলে ‘তুই কোনো চিন্তা করিস না আমি এদিকটা সামলে রাখবো সেজুতির যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না হয় সেই দায়িত্ব আমার’।
আর আমিও কি সুন্দর ওর কথা বিশ্বাস করে চলে গেলাম।পরে শুভ আর আমার সাথে ঠিকমত যোগাযোগ করতো না,তাই আমি তোমাকে ফেসবুকে নক করেছিলাম।কিন্ত তুমি ভালোভাবে আমার কোনো কথাই না শুনে আমাকে ব্লক করে দিলে।শুভ যে আমার সাথে এত বড় বেইমানি করবে সেটা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।

শুভ-বেইমানি? কিসের বেইমানি করেছি।ভালোবাসার অধীকার সবারি আছে।আর আমি কি জানতাম আমি সেজুতিকে দেখে ভালোবেসে ফেলবো? আর সেজুতিও আমাকে এখন ভালোবাসে। তুই চাইলেও আর কিছু করতে পারবি না।আর একটা সময় সেজুতি তোকে নিজে প্রপোজ করেছিলো কেনো তখন তো তুই ওকে সবটা বুঝিয়ে বলতে পারতি।কেনো অপমান করেছিলি ঐ দিন বল।তুই তো ঐ দিন ওকে বলতে পারতি তোর জন্য অপেক্ষা করতে।তাহলে আজকে এই দিন তোকে দেখতে হতো না।আমি সেজুতিকে ভালোবাসি সেজুতি শুধু আমার।

আমি-চুপ করো তোমারা প্লিজ চুপ করো।তোমরা নিজেরা নিজেদের মত ডিসিশন নিয়ে নিলে আমি কার।কেনো আমিও তো একটা মানুষ।আমারো তো কোনো ইচ্ছা থাকতে পারে নাকি।আমি বাড়ি যেতে চাই।
(এটা বলে আমি সেখান থেকে বের হয়ে চলে গেলাম)।বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম আমাদের গাড়িটা মনে হয় রাফিন এনেছে।কিন্ত চাবিটা কোথাই? চাবি মনে হয় রাফিনের কাছে।আবার গেলাম চাবি আনতে, যখনি দরজার কাছে গেলাম।এমন কিছু কথা শুনলাম যেটাতে আমার মাথা ঘুরে গেলো।

রাফিন-শুভ তুই কাজটা করতে পারলি?তুই না একসময় আমার বন্ধু ছিলি?তোকে আমি নিজের ভায়ের মত ভালোবাসতাম।আর তুই কিনা,,,,,

শুভ -আরে রাখ তোর বন্ধুত্ত তুই ছোটথেকে আমার সব পছন্দের জিনিসে ভাগ বসিয়েছিস।সবসময় আমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছিস বলে মা আমাকে তোর জন্য বকা দিতো।এমনকি কলেজে তোর জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছি।মা সবসময় তোর প্রসংশা করতো, আমার সহ্য হতো না।আমার মা আমার থেকে তোমাকে বেশি ভালোবাসতো।
তুই আমার সব ভালোবাসার মানুষদের কেড়ে নিয়েছিস।আর সবথেকে বড় কথা তোর বাবার জন্য আমার বাবার ব্যাবাসা ডুবে যেতে বসেছে।তাই মনে মনে সিধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম যে বিয়ে যদি করি তো আমি তাকেই বিয়ে করবো যাকে তুই ভালোবাসিস।তখন বুঝবি হারানোর কত কষ্ট।তুই যাকে ভালোবাসিস সে হবে আমার বৌ।আমি যে সেজুতিকে ভালোবাসি এটা মিথ্য না।আমি সত্যি যেদিন প্রথম ওকে দেখেছিলাম সেদিন থেকেই ভালোবাসি ওকে আমি।নিজের থেকেও বেশি।বিয়ে তো আমি রেজুতিকেই করবো পারলে আটকে দেখাস। রাফিনের চোখ ছলছল করে আসলে পানিতে,যে বন্ধু ও ভায়ের মত ভালোবাসতো সে কিনা এতদিন তার মনের ভেতরে ওর জন্য এত ঘৃনা পুষে রেখেছিলো এটা ভেবে।)
(

রাফিন -চেলেঞ্জ করছিস আমাকে?

শুভ-হ্যাঁ যদি তাই মনে করিস তবে তাই।

রাফিন-ঠিক আছে, তোর মত অমানুষের হাত থেকে সেজুতিকে বাঁচাতে যদি মৃত্য হয় হোক।তবুও তোর মত একটা মানুষের সাথে সেজুতির বিয়ে আমি কিছুতে হতে দেবো না।মনে রাখিস।

(আমি দৌড়ে গাড়িস কাছে চলে গেলাম, রাফিন এসে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে চলে আসলো)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *