অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 19
“আবির কথাটা শুনে থ হয়ে আছে।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।শুধুই কস্ট হচ্ছে।কস্টে আবিরের বুকের ভেতরটায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে।আর আবির ভাবছে কথাটা জানলে অহনার কি হবে?”
“অহনাকে কেবিনে শিফট করা হয়।কিছুক্ষণ পর অহনার জ্ঞান ফিরে আসে। চোখের সামনে অহনা আবিরকে আর জলির বাবা-মাকে দেখে উঠে বসে।আর অহনার সবকিছু মনে পরে যায়। অহনা ভাবে তখন সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়ার পরে বাচ্চাটার কিছু হয় নি তো।আবিরের চোখে পানি দেখে অহনা কিছুটা আচ করে নিজের পেটে হাত রেখে উপলব্ধি করে তাদের সন্তানটা আর নেই।অহনা কাঁদতে থাকে আর কাঁদতে কাঁদতে বলে আমার সন্তান! আমার সন্তান! আবির অহনার কাছে আসে আর অহনাকে জড়িয়ে ধরে বলে, শান্ত হও অহনা।প্লিজ শান্ত হও।আমারা আবার সন্তান নিবো।প্লিজ এই দূর্ঘটনা’টা তুমি ভুলে যাও।”
“অহনা মানতে চাই না। কেন এমনটা হলো তাদের সাথে? আবির অহনাকে বলেছিলো সাবধানে থাকতে। কিন্তু অহনা তা পারলো না।অহনা পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পরেছে।ভাবছে সব দোষ তারই।উত্তেজিত হয়ে অহনা নিজের হাতের স্যালাইলে টান দিয়ে খুলে ফেলে।কেবিনের মধ্যের সব জিনিসপত্র ভাংচুর করতে শুরু করে।কাঁদতে কাঁদতে অহনা মেঝেতে বসে পরে।আবির অহনাকে শান্ত করতে পারে না।যখন অহনা বসে পরে তখন অহনার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে রেখে বলে, আমরা আবার সন্তান নেবো অহনা।প্লিজ এবার একটু শান্ত হও।”
“জলির বাবা-মা এমন অবস্থায় অহনাকে ছাড়তে চাই না।আবিরকে বলে কটা দিন তাদের বাসায় অহনাকে নিয়ে থাকতে।আবিরও রাজি হয়ে যায়। অহনাকে নিয়ে জলিদের বাসায় যায়।”
“অহনা বাড়িতে এসেছে শুনে জলি খুব খুশি হয়।কিন্তু জলির রুমে আজ অহনা একবারও আসে নি।হয়তো ছোট ছোট বেবিগুলোকে দেখলে অহনা খুব ভেঙে পরবে তাই আবির অহনাকে জলির রুমে আসতে দেই নি।”
“জলির অহনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।আজ তাকে বাঁচাতে গিয়ে অহনার এই অবস্থা।কিন্তু জলিকে এখনো কেউ বলে নি অহনার বাচ্চাটা আর নেই।জলি আদিকে বলে অহনার রুমে তাকে একটু নিয়ে যেতে।তাই আদি জলিকে কোলে তুলে অহনার রুমে নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে জলি অহনাকে ডাকে,”
—“অহনা? এই অহনা।পরে ঘুমোস একটু আমার সাথে কথা বল না।”
“অহনা না ঘুরলে জলি অহনাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় আর দেখে অহনার চোখে পানি।”
—“একি অহনা! তুই কাঁদছিস? এমন সময়ে কাঁদলে বাচ্চাটার উপর সেটার প্রভাব পরবে।আর বড় হয়ে তোর মতোনই কাঁদন রানী হবে।”
“জলি কথাটা বলতেই অহনা শোয়া ছেড়ে উঠে বসে আর জলিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—“আমার বাবুটা আর নেই জলি।আমার স্বপ্ন আশা সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।আবির আমাকে অনেকবার বলেছিলো সাবধানে থাকতে যা আমি শুনি নি।আমি পারি নি নিজের সন্তানকে বাঁচাতে।”
“কথাটা শুনে জলি একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর অহনা জলিকে ছেড়ে দিলে জলি আদির মুখের দিকে তাকায়।আর আদিকে বলে বাচ্চাদেরকে এই রুমে নিয়ে আসতে।আদি গিয়ে বাচ্চাদের এই রুমে নিয়ে আসে।তারপর জলি বিছানার উপরে তাদেরকে শুইয়ে দেয়। আর বলে,”
—“একসাথে এতোগুলো বাচ্চা সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব না।আদি বিজনেসের কাজে সবসময় বিজি থাকবে আর আমি কতটা অলস তাতো তুই খুব ভালো করেই জানিস।তাই আমি চাই এদের মধ্যে একজনকে তুই নিয়ে নে।”
“জলির মুখে এমন কথা শুনে আদি রেগে ওঠে। জলিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”
—“পাগল হয়ে গেছিস তুই? কথাটা বলার আগে আমার অনুমতি নিয়েছিস? একটা কথা শুনে রাখ জলি আমার সন্তানদের আমি শুধু আমার পরিচয়ে বড় করবো।দরকার হলে ওদের একএকজনকে দেখাশুনা করার জন্য আমি হাজারটা লোক রাখবো।তবুও আমার সন্তানদের আমি কাউকে দিতে দেবো না।”
“জলি আদিকে বুঝাতে চেস্টা করে,,,
অহনা, আবির ছাড়া তাদের সন্তানরা এই পৃথিবীতে আসতো না।আজ জলির সময় এসেছে তাদের ঋণ শোধ করবান।তাছাড়াও অহনা আজ জলিকে বাঁচাতে গিয়ে তার নিজের সন্তানকে হারিয়েছে। যেখানে জলির তিনটা সন্তান সেখানে অহনা কেন শূন্য কোলে তিলতিল করে কস্ট পেতে থাকবে?”
“সব শুনেও আদি জলির কথায় সম্মতি জানায় না।আদি চাই না তার একটা সন্তানকেও অন্য কাউকে দিতে।আদির শুধু একটাই কথা আমার সন্তান আমি অন্য কাউকে দেবো না।ওরা আমার পরিচয়ে বড় হবে।এই বিষয়টা নিয়ে জলি আর আদির মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে থাকে।অহনা চিৎকার দিয়ে দু’জনকে ধমক দিয়ে থামায়।তারপর বলে,”
—“কি শুরু করেছো তোমরা? তোমাদের সন্তান তোমাদেরই থাকুক।আমার চাই না অন্যের সন্তান।আমি নিজে মা হতে চাই।সন্তানের সাথে মায়ের যেই নারীর টানটা থাকে নিজের সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে সেই মাতৃতের সুখটা অনুভব করতে চাই।আর জলি যদি আদি রাজিও হতো আমি তোর সন্তানকে নিতাম না।কারণ আমি মা হয়ে নিজের সন্তানকে হারিয়ে বুঝেছি এটা কতোটা যন্ত্রণাদায়ক।আমি বোন হয়ে কিভাবে তোর কোল খালি করতে পারি বল?”
—“কিন্তু অহনা?”
—“কোনো কিন্তু না।উপর অ’লা চাইলে আমার শূন্য কোল ভরে দেবে।শুধু তোরা একটু দোয়া করিস আমার জন্য।আর কিচ্ছু লাগবে না।”
“আবির এতোক্ষণ দরজার কাছে দাড়িয়ে অহনার কথা গুলো শুনেছে।যা শুনে অহনার প্রতি ভালোবাসা আজ অনেকটা বেড়ে গেছে।আবির চোখের পানি মুছে রুমের মধ্যে ঢুকে জলিকে জিজ্ঞাসা করে,”
—“তো জলি তোর ছেলেমেয়েরা আমাদের কি বলে ডাকবে?”
“অহনা বলে,”
—“আমাকে খালামনি আর তোমাকে খালু।”
“আবির,”
—“নাহ! আমাকে মামা আর তোমাকে মামি।”
—“নাহ! আমি আগে যা বলেছি তাই।”
“আদি বলে ওঠে,”
—“এক মিনিট,, ওয়েট, ওয়েট তোমরা এভাবে ঝগড়া করো না। আবিরকে আঙ্কেল আর অহনাকে আন্টি বললে কিন্তু মন্দ হয় না।
চলবে,,,,,