অন্তরালে তুমি আমি

অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 20 (শেষ)

“চারমাস পর,
বিছানার উপর বসে লাল সেড়োয়ানী পরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেলা করছে আদি।মনে মনে বলছে জলি আসছে না কেন?”

“ওদিকে অহনা জলিকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে। বিয়ের পর আজ প্রথম জলি আদির রুমে যাবে।অহনা চেয়েছিলো একদম নতুন বউয়ের মতোন করে জলিকে সাজাতে।কিন্তু জলি তা চাই না।কারণ শাড়ির ভার জলি একদম সইতে পারে না।আর সাজগোছ তো নয়ই।তাই পাতলা দেখে একটা লাল শাড়ি অহনার কাছ থেকে পরে ঠোঁটে একটু হালকা গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক দিয়ে আদির রুমে আসে।”

“রুমে এসে ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দেয় জলি।যার শব্দ শুনতে পেয়ে আদি চেয়ে দেখে জলি এসেছে।এর আগে কখনো আদি শাড়িতে জলিকে দেখে নি।তাই অপলক দৃষ্টিতে জলির দিকে তাকিয়ে আছে।আদির চোখ যেন সরছেই না।আদিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জলি একটু লজ্জা পায়।লজ্জা লজ্জা মুখ করে জলি ধীর পায়ে সামনের দিকে আগাতে গেলে শাড়ির কুচিতে বেঁধে ধপাস করে নিচে পরে যায়। আর সেটা দেখে আদি জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।আদিকে ওভাবে হাসতে দেখে জলি রেগে গিয়ে বলে,”
—“খুব হাসি পাচ্ছে তোর, হারামি?”
—“হুমমম।খুব হা হা হা।শাড়ি যখন সামলাতে পারিস না তখন পড়তে গেলি কেন?”

“আদি বিছানা থেকে নেমে এসে জলিকে ধরে দাড় করায়। তারপর জলির মুখটা ধরে হাসতে হাসতে বলে,”
—“শাড়ি সামলানো তোর কাজ না।”

“জলি এবার আরও বেশি রেগে যায়।রেগে গিয়ে একটানে শাড়ির কুচি খুলে ফেলে তারপর পুরো শাড়িটা খুলে দূরে ছুড়ে মারে।জলির রাগ দেখে আদি হাসি থামিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়।”

“জলি আদির সেড়োয়ানীর কলারটা টেনে ধরে বলে,”
—“সয়তান, হারামি তোর জন্য শাড়ি পরেছিলাম আর তুই আমাকে নিয়ে হাসছিস? তোকে তো আমি..”

“জলি আদির ঠোঁটে জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে ছেড়ে দেয়।ব্যাথা পেয়ে আদি আহ্ করে উঠলে জলি বলে,”
—“আর কখনো যদি আমাকে নিয়ে হেসেছিস তো খবর আছে।”

“তারপর জলি আদিকে ধাক্কা দিয়ে আলমারির কাছে যায়। আলমারি খুলে একটা কামিজ বের করে বিছানার উপরে এনে রাখে।আর রেগে তাড়াহুড়ো করে ব্লাউজের হুকগুলো খুলতে থাকে।হঠাৎ সামনে তাকিয়ে আয়নার ভেতরে দেখে আদি তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।জলির ধ্যান ফেরে,”
—“হায়! হায়! কি করতে যাচ্ছিলাম আমি? আদির সামনে কিভাবে চেঞ্জ করবো?(মনে মনে)
—“কি হলো থেমে গেলি কেন? চেঞ্জ কর। তোকে শাড়িতে একটুও মানায় না ওই কামিজটাই পর।”

“জলি পিছনে ঘুরে তেড়ে আসে আদির কাছে।”
—“ওই হারামি? আমাকে কি বলদ পেয়েছিস যে তুই বলবি আর আমি তোর সামনেই চেঞ্জ করবো? যা বের হ রুম থেকে চেঞ্জ করার পর আসিস।”
“কথাটা বলে আদিকে বাইরের দিকে ইশারা করে জলি।”

“আর আদি জলিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।তারপর খুব ভাব নিয়ে বলে,”
—“ভুলে যাস না আমার তিন সন্তানের মা তুই।তাছাড়াও এখন আমি তোর স্বামী তাই ঢং না দেখিয়ে আমার সামনেই চেঞ্জ কর!”
—“নাহহহ!”
—“হ্যাঁ!”
—“বললাম তো না।”
—“আচ্ছা বুঝেছি এভাবে মানবি না তুই।আমিই করছি।”

“কথাটা বলে আদি টেনে জলির হুক খোলা ব্লাউজটা দু’পাশে সরিয়ে দেয়।আর সঙ্গে সঙ্গে জলি আদিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে আসে।”

“জলি আর কোনো কথা বলে না আদির উল্টো দিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকে।আর আদি জলিকে নিরব দেখে এগিয়ে আসে।জলির ব্লাউজটা আবার পিছনের থেকে দাড়িয়ে আস্তে করে টেনে খুলে দেয়।তারপর জলির কাঁধে থুতনিটা রেখে পেছনের থেকে জলিকে জড়িয়ে ধরে রাখে।”
—“আদি! ছেলেমেয়েরা দেখছে।”
—“দেখুক।ছোট্ট বাচ্চারা বোঝে না কিছু।”

“জলি আদির দিকে ঘুরে যায়। আদির সেড়োয়ানীর কলারটা টেনে ধরে বলে,”
—“তুই এখনো সেই লুচুই রয়ে গেলি।”
“আদি জলির হাত টেনে নিজের ঠোঁটের কাছে এনে জলির হাতে চুমু দিতে থাকে।তারপর বলে,”
—“ধূর, পৃথিবীর সব স্বামীরাই তার বউয়ের কাছে লুচু হয়।ওসব আমি ধারধারি না।আজ আমার বাসর রাত না? আমার যা ইচ্ছা আজ আমি তাই করবো।”

“কথাটা বলে জলিকে কোলে তুলে নেয়।তারপর জলিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আলোটা নিভিয়ে দেয় আদি।”





“খাবার টেবিলে বসে জলির বাবা-মা কথা বলছে।আদির সাথে জলির বিয়ে দিয়ে তারা খুশি হলেও অহনার কথা ভেবে খারাপ লাগছে।বেচারি অনেক কিছু করেছে জলির জন্য। আজ জলি আর জলির সন্তানরা বেঁচে আছে আবির আর অহনার জন্যই। উপর অ’লা ওদের কোলটাও ভরিয়ে দিক এটাই তাদের চাওয়া।”

“পরেরদিন সকালে,
অহনা প্রতিদিনের মতো আজও নিজের হাতে সব রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।জলি, আদি ওরা এখনো নিচে নামে নি।আবির আর জলির বাবা-মাকে অহনা পরোটা আর আলুভাজি দিয়ে প্লেটে উঠিয়ে নিয়ে খেয়ে নিতে বলে।জলির বাবা বলে,”
—“আর একটু অপেক্ষা করলে ভালো হতো না? জলি আর আদিও আসলে।একসাথে নাস্তা করা হতো।”
“জলির বাবার কথা শুনে আবির আর অহনা মুখ টিপে হাসে।”
—“কি হলো তোমরা হাসছো কেন? আমি কি হাস্যকর কিছু বল্লাম?”
“জলির মা হাতের কনুই দিয়ে জলির বাবাকে একটা খোঁচা দেয়।তারপর বিড়বিড় করে কানের কাছে বলে,”
—“তুমি কি বোকা? মেয়েটার বিয়ে হলো। কাল যে ওদের বাসর রাত ছিলো তা ভুলে গেলে?”
—“কি যে বলো না! তিন সন্তানের বাবা-মায়ের আবার বাসর রাত।”
“জলির মা কড়া গলায় বলে,”
—“কি বললে তুমি?”
—“নাহ নাহ কিছু না!”

“সামনে তাকিয়ে দেখে জলি আর আদি নামছে তাদের তিন সন্তানকে নিয়ে।জলির কোলে মেয়ে।আর আদির দুই কোলে দুইটা ছেলে।”
—“ওইতো ওরা আসছে।”

“অহনা ঘুরে দেখেই এগিয়ে যায় আদির কাছ থেকে একজনকে নেওয়ার জন্য। নইলে যদি একটা অঘটন ঘটে যায়? কয়েকটা সিঁড়িতে উঠতেই অহনা মাথাটা ঘুরে পরে যেতে লাগে।অহনাকে সিঁড়িতে দাড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে ঢুলতে দেখে আবির ছুটে গিয়ে ধরে বসে।আর অহনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।আবির অহনাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায়।তারপর ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়।ডাক্তার এসে চেকাপ করে বলে।খুশির খবর। মিস্টি মুখ করান।অহনা মা হতে চলেছে।কথাটা শুনে আবিরের চোখে পানি চলে আসে।অহনা খুশিতে কেঁদে ওঠে। পেটে হাত দিয়ে বলে,”
—“তুই এসে গেছিস? আমি জানতাম তুই আসবি।”

“আবির এসে অহনাকে জোড়িয়ে ধরে বলে,”
—“তুমি মা হবা অহনা আর আমি বাবা।”

“জলি বলে,”
—“আমি আন্টি হবো আর আদি আঙ্কেল।”

“জলির বাবা জলির মাকে বলে,”
—“আমরা আবার দাদা-দাদি হবো।আমাদের অহনার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।”

“আজ সবাই অনেক খুশি।কস্টের পরই যে সুখ থাকে।ওদের সকলের জীবনেও এসেছে সেই সুখ।”
“অহনা-আবির, জলি-আদি এদের সম্পর্কটাই ছিলো #অন্তরালে_তুমি_আমি’র।হাজারও বাঁধা পেরিয়ে ওরা ওদের সম্পর্ক গুলোকে টিকিয়ে রেখেছে।ভুল বুঝাবুঝি সব মিটিয়ে নিতে পেরেছে।আর তাই ওদের সকলের খুশিটার ভাগ আপনারাও নেন।অহনার সন্তান যেন সুস্থ ও সুন্দর ভাবে পৃথিবীতে আসে সেই দোয়া করেন।এতোদিন গল্পটার সাথে থাকার জন্য সবাইকে এত্তোগুলো শুকরিয়া।সবাই ভালো থাকেন।সুস্থ থাকেন।আল্লাহ হাফেজ।”

।।।।সমাপ্ত।।।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *