অজানা কারণ !! লেখাঃ আফরাহ্ হুমায়রা
অজানা কারণ
লেখাঃ আফরাহ্ হুমায়রা
_৬ জন বন্ধু মিলে টানা ১০ দিন গৃহবন্ধি করে আমাকে রেপ করেছেন। সমাজ, পরিবার ,বন্ধু সবার কাছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। শুধু তাই নয় এসব করেই আপনি ক্ষ্যান্ত হননি। হুমকি-ধামকি দিয়ে বাধ্য করেছেন আপনার সাথে আমাকে বিয়ে করতে।
কেন করছেন আপনি এসব? কি চান আপনি আমার কাছে? আমি তো এটাও জানিনা আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। যার জন্য আপনি আমার সাথে এসব করছেন।
মিনহাজ আমার কথাগুলো না শোনার ভান করে ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে রইল। মিনহাজের এরকম ব্যবহার দেখে আমার মেজাজ ক্রমাগত বাড়তে থাকল।
আমি এবার আগের থেকে দশগুণ উত্তেজিত হয়ে বললাম,
_চুপ করে আছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দিন!
কেন করছেন আপনি আমার সাথে এরকম? আপনি জানেন সেই দশ দিন আর রাতের মুহূর্ত গুলো আজও আমাকে তারা করে? আমার ঘুম হারাম করে দেয় সেই সময়ের দুঃখ-যাতনা গুলো। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারি না ।
কিছুতো বলুন দয়া করে!
মিনহাজ এবার ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিল।
আমি ক্ষিপ্ত হয়ে বিছানা থেকে নিচে নামলাম। নামা মাত্রই ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা গোলাপ ফুলের ছোট কাঁটা বিধল আমার পায়ে। আমি ওহ্!
আর্তনাদ করে বিছানায় বসে পরলাম। কিন্তু মিনহাজ এতটাই নির্দয় যে, একবারের জন্য ফিরেও তাকাল না।
অবশ্য মিনহাজের এই নির্দয় হওয়াটা আমাকে কোন পীড়া দেয় না। কারণ যে ছেলে একটা মেয়েকে রাতের পর রাত দিনের পর দিন বন্ধুদের নিয়ে রেপ করতে পারে ।এমনকি মেয়েটির কান্না -আকুতি মিনতি তে যার সামান্যতম হৃদয় গলে না। তার ব্যাপারে সহিংসতা ছাড়া অন্য কিছু আশা করাটাও নিজের ভুল।
পায়ের ব্যথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবছি মিনহাজের থেকে কি সাহায্য নিব? কোন ভাবেই আর যন্ত্রণা সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজের ভিতর মিনহাজের প্রতি বিষাক্ত মনোভাব টা আড়াল রেখে বললাম,
_একজন ডক্টর হয়ে আপনার সামনে একজন মানুষকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে কি আপনার ভিষন মজা লাগছে? এটা কোন ডাক্তারের ধর্ম বলে আমার জানা নেই।
আমি আর কিছু বললাম না চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছু দেখতেও পারছি না। হঠাৎ আমি আমার পায়ে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেলাম।
নিচে তাকিয়ে দেখলাম। মিনহাজ আমার পা ওর হাঁটুর উপর তুলে কাঁটা বের করার চেষ্টা করছে। আমি আমার পা টান দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বললাম,
_তার আর কোন প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই আমার কাঁটা বের করে নিয়েছি।একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে জ্ঞান করার চেষ্টা করুন। অবশ্য আপনার মত মানুষের থেকে এটা আশা করাটাও ভুল!
বিয়ের আগে তো আপনি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেনই। আর এখন জীবনটা নরক করে ছাড়বেন।
কিন্তু কেন এমন করছেন আপনি? একজন ডক্টর হয়ে এসব করতে আপনার লজ্জা করে না?
মিনহাজ এবার চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।দুই হাত দিয়ে আমার বাহু শক্ত করে ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলল,
_চশমা পড়ে থাকলে আর চশমা খুলে ফেললে কি আমার মাঝে কোন পরিবর্তন দেখা যায়?
যখন আমি চশমা পড়ে থাকি তখন আমি একজন ডক্টর থাকি। আর যখন চশমাটা খুলে ফেলি তখন আমি একজন সাধারন মানুষ থাকি।
আর তোকে যখন বন্ধুদের নিয়ে রেপ করেছিলাম তখন চশমাটা খুলে নিয়েছিলাম। তাই আমি তোকে কোন ভাবেই একজন ডক্টর হিসেবে রেপ করিনি।
আমি মিনহাজ কে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
_একজন সাধারন মানুষ হয়ে আমাকে রেপ করেছেন তাই তো? খুব গর্ব হচ্ছে কথাটা বলতে তাই না?
একজন মেয়ের সাথে এরকম পাশবিক আচরণ করতে আপনার লজ্জা করল না?
কেন করেছেন আপনি আমার সাথে এরকম?
আপনার সাথে বাসর ঘরে এক ছাদনা তলায় থাকতেও আমার ঘেন্না করছে। আপনার মত একজন খারাপ, চরিত্রহীন মানুষ কিনা আমার স্বামী ।
ছি!
মিনহাজ এগিয়ে এসে আমাকে সজোরে একটা চড় মেরে বলল,
_তোর কি মনে হচ্ছে তোর সাথে এক ঘরে থাকার খুব শখ আমার? নেহাৎ সবাই আশা করে ফুল দিয়ে বাসর ঘরটা সাজিয়েছে। না হয় আমি তোকে কাঁটা দিয়ে ভরিয়ে দিতাম। ফুল দিয়ে ভালোবাসা দেওয়া তো দূরের কথা। যাই হোক আর সবার মত যেহেতু আমি তোকে বিয়ে করেছি ।তাই তোকে তো আমার একটা গিফট দেওয়া উচিত তাইনা?
চোখ বন্ধ কর তোর জন্য আমার পক্ষ থেকে গিফট আছে। মিনহাজ আমাকে এত জোরে চড় মেরেছিল যে, আমি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলাম। কোন কিছু বলার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
আমাকে অবাক করে দিয়েই হঠাৎ ঘরের ভিতরে তিনজন পুরুষ প্রবেশ করে।
একসাথে তিনজন পুরুষকে দেখে আমি এত ভয় পেয়ে গেলাম যে ,মিনহাজ এর পিছনে গিয়ে আশ্রয় খোঁজার উদ্দেশ্যে পেছন থেকে শক্ত করে মিনহাজের টি শার্ট ধরে রাখলাম।
কিন্তু মিনহাজ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছেলেগুলোর মাঝখানে ফেলে দিয়ে বলল,
_দেখ বাসর রাতে তো স্বামী স্ত্রী বাসর করে থাকে তাই না? তোকে কিভাবে আমি এসব থেকে বঞ্চিত করি বল? আমার না হয় এসব ব্যাপারে তেমন কোন ইন্টারেস্ট নেই। কারন আমার যেটা পাওয়ার ছিল তোর থেকে সেটা আমার পাওয়া হয়ে গেছে। তবে তোর তো ইন্টারেস্ট আছে তাই না?
তাই আমি ভাবলাম আজ তুই না হয় আমার পরিবর্তে এই ছেলে গুলোর সাথে বাসর কর। গুড নাইট অ্যান্ড ইনজয় ইউর লাইফ!
আমি হকচকিয়ে গেলাম। ভারসাম্য না হারিয়ে মিনহাজ কে বললাম,
_দেখুন আগে যাই হয়ে থাক না কেন। এখন তো আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন। আর আইনত আমি এখন আপনার স্ত্রী। কিভাবে পারছেন নিজের স্ত্রীকে অন্য কারো সাথে লেলিয়ে দিতে?
মিনহাজ এসো আমার গলা শক্ত করে ধরে বলল,
_কে বলেছে তুই আমার স্ত্রী? আমি তোকে স্ত্রী হিসেবে মানি না। আর কখনো মানবোও না।
মিনহাজ হন হন করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল!
নরপিচাশ গুলো ক্ষুধার্ত নেকড়ের ন্যায় আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সেদিনের মত আমি আজও অসহায়, দুর্বল ও শক্তিহীন হরিনীর মতোই রইলাম!
চলুক,,,,,,,,,?