সাঁঝের প্রেম !! Part- 12
মাহবুব নিশিকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো। নিশি বলল,
-কোনো ছেলে আমাকে কিছু বললে তো তোমার সহ্য হয়না। আর তোমার ফোনে এসব ছবি দেখার পর আমার নিজের কিভাবে সহ্য হতো?
-হুম সেইটাই তো কিভাবে সহ্য হতো! ডিলিট করে দিচ্ছি সব। এক মিনিট!
মাহবুব ফোনটা হাতে নিয়ে সব ছবি ডিলিট করে হোয়াটসঅ্যাপ আনইন্সটল করে দিলো নিশির সামনেই।
-এখন থেকে আমায় ভালবাসবে তো? (নিশি)
-না।
-না মানে? (মাহবুবকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিশি)
-না মানে না।
-মাফ করবানা আমায়? (নিশি)
-করেছি তো। (নিশিকে ধুম করেই কোলে নিয়ে মাহবুব)
-কোলে নিয়েছো কেনো?
-মন চেয়েছে তাই।
-কতদিন পর তোমার কোলে উঠলাম! (মাহবুবের গলা জড়িয়ে ধরে নিশি)
-অবশ্য তোমার জায়গায় ইকরাকে দুইবার কোলে নিতে হয়েছে। (নিশিকে রাগানোর জন্য মাহবুব)
-আবার তুমি ইকরা ইকরা করছো?
-আচ্ছা করছি না। এখন থেকে নিশি নিশি করব ঠিক আছে? (নিশিকে খাটে বসিয়ে দিয়ে)
-নিশি মাথা নিচু করে বসে আছে।
মাহবুব টি শার্ট ঠিক করে বাইরে আসে। এসে দেখে সায়েম টিভি অন করেই ড্রইংরুমে ঘুমিয়ে গেছে। মাহবুব টিভি অফ করে সায়েমকে ঘরে দিয়ে আসলো ধরে ধরে। এরপর বাড়ির আঙিনা থেকে কালো গোলাপ আর একটা লাল গোলাপ ছিঁড়লো। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে নিশিকে দাঁড় করালো। নিশির চুলের খোপা খুলে গেছে অনেক আগেই। লম্বা চুলগুলো উড়ে এসে মাহবুবের মুখে পড়ছে। মাহবুব নিশির চুল সরিয়ে ট্রাউজার টান দিয়ে এক হাঁটু গেড়ে নিশির দুইহাত সামনে বসলো। নিশি চুলগুলো হাত দিয়ে সরালো আর হাসছে।
-দেখো মেয়ে কিভাবে প্রপোজ করতে হয় আমি জানিনা! বিয়ের আগে মটরফুল দিয়ে প্রপোজ করেছিলাম। এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে এখনকার প্রপোজ স্টাইলটা একটু ভিন্নই হবে। বিয়ে তো করে ফেলেছি তাই বলতে পারবনা উইল ইউ মেরি মি! বলছি “উইল ইউ বি দা মাদার অফ মাই ডটার?”
-ইফ ইউ ওয়ান্ট টু বি দা ফাদার অফ ইউর ডটার দেন আই হ্যাভ নো প্রবলেম টু বিকাম দা মাদার অফ ইউর ডটার।
-আই এগ্রি।
-আই অলসো। (ফুলটা হাতে নিয়ে নিশি)
নিশি ফুলগুলো খাটের পাশের ফ্লাওয়ার ভাসে রেখে দিলো। নিশি মাহবুবকে বলল,
-ওয়েট তোমার জন্য ও একটা সারপ্রাইজ আছে। ভেবেছিলাম বাসররাতে দিব।
-কি?
-চোখ বন্ধ কর।
মাহবুব চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আর নিশি ড্রয়ার খুলে একটা বিশাল ডায়েরি বের করলো। মাহবুবের হাতে দিলো ডায়েরিটা। এরপর মাহবুব চোখ খুললো। ডায়েরির কভার পেইজে নিশি আর মাহবুবের ডুয়েট ছবি সুন্দর করে এঁকে বসানো। ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠায় ওদের রিলেশনের প্রথম দিন থেকে বিয়ের আগের দিনের হিসাব লিখা আছে আর ওদের ছবি দিয়ে ভরা পুরো ডায়েরিটা। মাহবুব নিশিকে কখন কি বলেছিলো সব নিশি লিখে রেখেছিলো। মাহবুব ডায়েরিটা উল্টাচ্ছে আর পড়ছে আর নিশি মাহবুবের কাঁধ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
-বেস্ট গিফট অফ মাই লাইফ। থ্যাংক ইউ।
-ওয়েলকাম।
ডায়েরির শেষে নিশির কিছু মনের কথাও লিখা ছিলো কিন্তু ওইসব এখন মাহবুব পড়বেনা। ফাইনালি ও নিশিকে কাছে পেয়েছে। আজকে রাত যতটা বাকি ওতটা জুড়েই নিশি বিচরণ করবে মাহবুবের মনে। মাহবুব ডায়েরিটা ওর ড্রয়ারে রেখে দিলো। এরপর নিশির গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-পাঁচ বছর আগের কাছে আসা আর আজকের কাছে আসা এক হবে?
-না।
-কেনো?
-তখন ছিলাম আনমেরিড। ভয় কাজ করছিলো পরবর্তী একমাস। এখন আর সেইটা করবেনা।
-বিয়ের শক্তিটা আসলেই বেশি।
-হুম।
-তুমি পাল্টাওনি নিশি। আগের মতই আছো। চেহারায় কালো দাগ দেখেছিলাম বিয়ের আগে কিন্তু এখন কমেছে সেইটা।
-পাল্টে তো তুমি গেছো।
-নাহ। (নিশিকে ঘুরিয়ে ওর ওড়না সরিয়ে দেয় মাহবুব)
-না পাল্টালে আমাকে এতদিন কষ্ট দিতে না, দূরে সরিয়ে রাখতে না আমাকে। (মাহবুবের কাছে এসে)
-সেইম কথা তো আমিও বলতে পারি!
-ছেড়েও তো দাও নি।
-হইছে এখন চুপ! আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু গো এনি আর্গুমেন্ট রাইট নাও।
-হ্যা সত্যিটা বললে তর্ক ই হয়।
-এই মেয়ে এখনো থামছে না!
(থাক আর না বলি🙊)
সকালবেলা,
মাহবুব ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে এসে দেখে নিশি রান্নাঘরে। সায়েম এখনো ঘুমাচ্ছে। নিশির চুলে টাওয়েল প্যাচানো আর নিশি কফি বানাচ্ছিলো। মাহবুব নিশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-শেষ কফি বানানো?
-হ্যা। তুমি কখন আসলা?
-জাস্ট।
-সায়েম এক্ষুনি উঠবে। ছাড়ো।
-সাড়ে ছয়টা বাজে। এত তারাতারি ও উঠেনা।
-তুমি ছাড়বা?
-হ্যা ছাড়লাম। আমার কফি মগটা দাও।
-এই যে। এইটা সায়েমকে দিয়ে আসি।
-যাও।
নিশি সায়েমকে ডেকে তুলে কফি মগ হাতে ধরিয়ে চলে আসে। সায়েম ঘুমে কিছু দেখছেনা। ও কফি খাওয়ার বদলে নিজের পায়ে ঢালছে ঘুম ঘুম চোখে। পায়ে গরম লাগার পর জোরে চিৎকার করে সায়েম দাঁড়িয়ে যায়। পায়ের পশমগুলো সব পুড়ে গেলো। মাহবুব নিশি চিৎকার শুনে দৌড়ে সায়েমের ঘরে যায়। গিয়ে দেখে এই অবস্থা। নিশি সায়েমের পায়ে বরফ ধরে আর মাহবুব হাসছে।
-ভাইয়া তুমি হাসছো? (কাঁদো কাঁদো অবস্থা সায়েমের)
-তো কি করব? একটা মানুষ এতটা হোয়াটলেস কিভাবে হয়? কফি খাওয়ার বদলে পায়ে ঢালে!
-আমি তো ঘুমে টাল ছিলাম তখন আর ভাবি এসে আমার হাতে কফি ধরিয়ে দিয়ে গেলো। খেতে গিয়ে পায়ে ঢেলে দিয়েছি। ও মা কি জ্বলছে! (সায়েম)
-দাঁড়া মলম আনছি।
-ইশ চামড়া উঠে গেছে। (নিশি)
-সব তোমার দোষ ভাবি।
-হ্যা এখন তো সব দোষ নন্দঘোষ। সকাল সকাল কফি তো আমি খাই নাকি?
-আমিই খাই কিন্তু আজকে কি হলো এইটা!
-আচ্ছা সেড়ে যাবে। আমি মলম লাগিয়ে দেই দাঁড়াও।
নিশি সায়েমের পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়ে বিছানার চাদর চেঞ্জ করে সায়েমকে বসিয়ে দিয়ে যায়। আবার সায়েমকে কফি করে এনে দেয়। কফি খেয়ে, ফ্রেশ হয়ে সায়েম দেখে সাড়ে সাতটা বাজে। মাহবুব কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে যাবে। মাহবুব রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আসে আর নিশি মাহবুবকে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছে। মাহবুব পাশেই বসে আছে।
-এখন কি অবস্থা?
-এখন ভালো। ভাবি আমার খাবারটাও দাও। আমিও বের হব। (সায়েম)
-এই অবস্থায় তুমি কোথায় যাবা? (নিশি)
-ঘুরতে।
-চুপচাপ বাসায় বসে থাক। আজকে বের হওয়া লাগবেনা। (ধমক দিয়ে মাহবুব)
-আচ্ছা গেলাম না।
মাহবুব ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেলো। মাহবুব বের হওয়ার আগে নিশি ঘড়ি পরিয়ে দিলো আর শার্টের কলার ঠিক করে দিলো।
-আচ্ছা আসছি আমি।
-যাও। আমি পেপারস গুলো এনে দিচ্ছি। তুমি জুতা পরো।
-আচ্ছা।
মাহবুব বাইরে জুতা পরছিলো তখন নিশি পেপারস গুলো দিয়ে মাহবুবকে বাই দেয়। মাহবুব যাওয়ার সময় নিশির হাতে কিস করে যায়।
-কি ভালবাসা রে! (নিশিকে পিঞ্চ করে সায়েম)
-পাকামো কম কর। খাওয়া হইছে? (সায়েমের সামনে এসে নিশি)
-মোস্ট অফ। শুনো ভাবি আমি এখন বের হব কিন্তু তুমি ভাইয়াকে বলবানা।
-না তোমার ভাইয়া নিষেধ করেছে সো তুমি বের হবেনা। বাসায় বসে থাকো আজকে।
-বাসায় বসে থেকে আমি কি করব বলো?
-কম্পিউটার আছে, ল্যাপটপ আছে, ফোন আছে, ইন্টারনেট আছে। এখন যা খুশি কর। বাট বের হবেনা। আর একান্তই এইসবে রাজি না হলে আমায় সবজি কেটে দাও বসে বসে।
-এই কথাও শুনা লাগলো? ইয়া আল্লাহ তুইল্লা নাও উপরে, আমি থাকতে চাইনা এই মাটিতে।
-এই ঢং কম কর ভাই। চপিং বোর্ড দিচ্ছি, চাকু দিচ্ছি আর সবজি দিচ্ছি এখানে বসে বসে কাটো। আমি তোমার কফি ফালানো চাদর ধুয়ে দিয়ে আসছি।
-আচ্ছা দাও দেখি কাটি।
নিশি সায়েমকে সবজি দিয়ে গেলো। সায়েম গাজর কাটছে আর নিজেই খাচ্ছে। গাজর খাওয়া শেষ হলে সায়েম ফোন হাতে নেয় আর টেবিলের উপরে রেখে গুগলে লিখে হাউ টু কাট আলু। সায়েম সার্চ দেওয়ার পর বলছে,
-ভাগ্যিস গুগল হাহা রিয়েক্ট দেয়নি।
কোনোমতে সায়েম সবজি কাটছে যদিও নিশি দেখিয়ে দিয়ে গেছে কিভাবে কি কাটতে হয়। নিশি আসার পর দেখে সায়েম সবজি কাটছে গুগলে সার্চ করে করে।
-সায়েম!
-কি ভাবি? (টমেটো কাটতে কাটতে সায়েম)
-আইডিয়াটা জোস!
-আসলেই জোস কিন্তু ভাবি তুমি হাসছো কেনো?
-না মানে তোমার আইডিয়াটা জোস। তুমি কর আমি একটা ভিডিও করি। তোমার ভাইয়া আসলে দেখাতে হবে তো।
-এই ভাবি চাকু দিয়া টোকা দিব কিন্তু! ভাইয়া আমায় আবারো হোয়াটলেস বলবে দেখো তুমি! সোনা ভাবি এইসব করনা।
-চুপচাপ কাটো বাকিটা আমি দেখছি।
নিশি বেডরুম থেকে ওর ফোন এনে সায়েমের ফোন ভিডিও করলো এরপর সায়েমের কাটাকুটি ভিডিও করলো। সায়েম তো মাথা ই তুলেনা। মাথা নিচু করে কাটছে। সায়েমের কাটাকুটি শেষ হওয়ার পর নিশি রান্না বসায় আর সায়েম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাজর খাচ্ছে আর রান্না দেখছে।
-ভাবি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
-হ্যা বলো।
-পাঁচবছর আগে তোমরা চিটাগং হিল ট্রাকে এসেছিলে।বোতল পরে তোমার পা কাটলো। এরপর কি হয়েছিলো তোমাদের?
-তুমি কিভাবে জানো?
-ভাইয়ার মুখ থেকে এইটুকুই শুনেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত শোনার ইচ্ছা প্রবল। প্লিজ ভাবি বলো।
-ইচ্ছে যে করেনা এখন এসব বলতে।
-একমাত্র দেবরকে বলতেই হবে। বলো।
-রান্নাটা শেষ করি আগে?
-না। রান্না করতে করতেই বলো।
-আচ্ছা বলছি। ওইদিন পাহাড় থেকে তোমার ভাইয়া আমায় কোলে করে হোটেলে নিয়ে আসে। সেইদিন আমি শাড়ি পরেছিলাম তোমার ভাইয়ার অনুরোধে। যেহেতু পা কেটে গেছে তাই কোনোমতে চেঞ্জ করার পর তোমার ভাইয়া পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয় এরপর আমাকে বেশ কিছুক্ষণ বকাবকি করে। এরপর রাতে আমাকে খাইয়ে তোমার ভাইয়া আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে সোফার উপর ঘুমায়। সকালে উঠে দেখি পায়ের ব্যাথাটা কমে গিয়েছে। তোমার ভাইয়াও খুশি হয় এজন্য। সেইদিন আর আমরা কোথাও যাইনি। রাতে আমার খুব ইচ্ছে করছিলো শাড়ি পরব। তোমার ভাইয়াকে বললাম,
-শুনেন আমি শাড়ি পরব।
-এখন? কেনো?
-জানিনা ভীষন ইচ্ছে করছে।
-তো পর। আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসছি।
-আচ্ছা।
এরপর তোমার ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি শাড়িটা পরলাম। সময় নিয়ে পরছিলাম। কিন্তু ওইদিন যে কি হলো আমি শাড়িটা কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিলাম না তাই যথেষ্ট পরিমাণে সেফটিপিন লাগিয়েছিলাম। অবশেষে শাড়িটা পরেছি আর একটু সেজেছি। তখনি তোমার ভাইয়া হোটেলে ঢুকে হাতে একটা ফুলের মালা নিয়ে।
চলবে