ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 16

বাড়ির পাশের বাগানে একটা বাশের তৈরি বেঞ্চিতে দুই হাতে ভর দিয়ে আনমনে বসে আছি।এমন সময় কোথা থেকে ঝড়ের গতিতে কেউ পাশে এসে বসলো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রাফিত।একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার পূর্বের ন্যায় আমার থেকে কিছুদূরে সামনে থাকা গোলাপ গাছটার দিকে একমনে তাকিয়ে রইলাম।

কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেদ করে রাফিত বলল,

“আমি তোমার সাথে খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছি তাইনা।”

তার কথায় আমি সামনের দিকে তাকিয়েই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

“দেখুন বাগানের ফুলগুলো কতো সুন্দর না।খুব ভালো সুবাসও ছড়াচ্ছে।কিন্তুু এখন যদি খুব জোড়ে একটা ঝড় আসে তাহলে ফুলগুলো ঠিকই ঝড়ে পড়ে যাবে।তারপর আপনি কি পারবেন ওগুলোকে আবারও পূর্বের ন্যায় সাজাতে?”

সে কিছুই বলছেনা।হয়তো আমার কথার অর্থ সে বোঝতে পেরেছে।কিছু সময় চুপ থেকে রাফিত বলল,

“আমাকে আরেকটা সুযোগ দিলে খুব বেশি ভুল হয়ে যাবে কি দিশা?”

“একটা কথা কি জানেন রাফিত আমরা মেয়েরাও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ।তাই আঘাত করলে ব্যাথা আমরাও পাই।আমাদেরও কষ্ট আছে,মন আছে।জানেন কাউকে একবার ভালোবাসলে তাকে ঘৃণা করাটা খুব খুব খুব কঠিন।(কিছু সময় চুপ থেকে)আপনি তখন বলছিলেন না আমি যা শাস্তি দিবো মেনে নিবেন।তা পারবেন সেটা করতে?”

সে নিচু স্বরে বলল,

“আমি তোমার অপরাধী।তাই এতে আমি তোমাকে কোনো বাধা দিবোনা।তুমি যা খুশি শাস্তি দিতে পারো আমাকে।যদি মেরেও ফেলো তাও কিছু বলবোনা।”

“কিযে বলেননা আপনাকে মারার সাধ্য কি আমার আছে(তাচ্ছিল্যের সুরে)।যাই হোক কথাটা মনে রাখবেন।”

“তাহলে আমাকে ছেড়ে যাবেনাতো?”

“সেটা করার হলে কবেই চলে যেতাম।তাও পরে একবার ভেবে দেখবো।”
,
,
,
,
,
পরেরদিন সকালে,,,,,,

আমি রুমের সোফায় আসাম করে বসে রাফিতের ফোনে ‘টেমপাল রান’ গেম খেলছি।আমাকেতো ও ফোন দেয়নি।তাই এবার ওরটাই এখন থেকে আমার।

রাফিত আমার পাশে আমার জন্য চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ঠিক যেমনটা ও আমাকে দিয়ে রোজ করাতো।সে জীবনের প্রথমবার চা বানালো তাও আমার জন্য।সত্যিই ব্যাপারটা খুব মজার।বেচারার এক কাপ চা করেই দফারফা অবস্থা।এখনও তো ওকে দিয়ে কতকিছু করানো বাকি।এটাকেই বলে ‘টিট ফর টেট’।এবার আমি ওকে ফিল করাবো ও যখন আমার সাথে এমন করতো তখন আমার কেমন লাগতো।

রাফিত এবার বিরক্তমাখা ফেস নিয়ে বলল,

“কি শুরু করলে দিশা।চা কি ঠান্ডা হলে খাবে।”

“এতোক্ষনে মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গেছে।যান আবার করে নিয়ে আসুন।(গেম খেলতে খেলতে)”

“কি আবার(অবাক হয়ে)”

“হ্যা আবার করবেন।যান পাঁচ মিনিটের মধ্যে করে আনুন।গো।”

টাইমটেবল কি শুধু সেই দিতে পারে নাকি।এবার দেখ ব্যাটা আমিও পারি হাহ।

সে ইনোসেন্ট মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলল,

“দিশা দেখো চা-টা ওতোটাও ঠান্ডা………”

তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে,

“গো না।”

সেও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলে গেলো।হয়তো বোঝতে পেরেছে আমি ইচ্ছে করে এমন করছি।

সে আবারও আমার জন্য চা করে আনলো।আমি হাত থেকে ফোনটা রেখে আড়মোড়া ভেঙে বসে বললাম,

“নাহ চা খাওয়ার মোড চলে গেছে।অন্যকিছু খাব।”

রাফিত চেচিয়ে বলল,

“হোয়াটট!আমি যে এতো কষ্ট করে করলাম ওটার কি হবে?”

আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে তার হাত থেকে চা টা নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে তার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলাম।

কোমরে দুই হাত রেখে একটা আম গাছের নিচে দাড়িয়ে গাছের নিচ থেকে উপরের দিকে তাকাচ্ছি ও গাছটার পরিধি মাপছি।কার গাছ কে জানে।ওতোসতো ভেবে আমার দরকার নেই।রাফিত আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।থাকুক না কার কি।

নাহ গাছটা ওতোটাও বড় না আবার ছোটও না।কাচা আমগুলা দেখেই জিবে জল এসে যাচ্ছে আমার।ইসস লবন মরিচ দিয়ে খেতে যা লাগবেনা।গাছটা তখন লেকের ধারে যাওয়ার বেলাই চোখে পড়েছিলো আমার।আমি রাফিতকে বললাম,

“চলুন রাফিত এবার ফটাফট গাছে উঠে পরুনতো।”

সে অবাক হয়ে বলল,

“হোয়াটটট গাছে উঠবো মানে!”

“এমা আপনি তো দেখি বাংলাও বোঝেন না।এতো পড়ালেখা করে তাহলে কি করলেন আপনি?আমি আম খাবো তাই গাছে উঠবেন।কতো সিম্পল একটা ব্যাপার।”

সে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল,

“তুমি আম খাবে তাইনা।তো ঠিকআছে চলো আমি লোকমান চাচাকে দিয়ে তোমার জন্য অনেক আম আনিয়ে দিবো।কিন্তুু দেখো দিশা আমি গাছে উঠতে পারবোনা।তার উপর এটা কার না কার গাছ সেটাও জানিনা।এটা গ্রাম।ধরতে পারলে রামধোলাই দিবে।প্লিজ সোনা বোঝার চেষ্টা করো।”

কিন্তুু আমিও নাছোড়বান্দা।এতো সহজে ছাড়ার পাত্র আমি না।আমিও বললাম,

“একি রাফিত আপনিতো গতকালই আমাকে বললেন আমি যা শাস্তি দিবো মেনে নিবেন।আর এখনই পল্টি খাচ্ছেন যে হু(ভ্রু নাচিয়ে)”

সে অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কিন্তুু আমিতো কোনোদিনও গাছে ওঠিনি।ইভেন কিভাবে ওঠতে হয় তাও জানিনা।”

“উঠেননি তো কি হয়েছে এখন উঠবেন।”

তার ফেসটা দেখে আমার সেই লেভেলের হাসি পাচ্ছে।বেচারা এতোবড় বিজনেসম্যান ও এতো টাকার মালিক হয়ে শেষমেষ গাছে উঠবে।তাও আম চুরি করতে।হাও ফানি।…………………

to be continued………………………..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *