ভালোবেসে তারে !! Part- 15
হঠাৎ কারো ডাকে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।তাকিয়ে দেখি একটা অল্পবয়সী মেয়ে।বয়স আর কত হবে ২০ কি ২২ বছর।সে বলল,
“আফা আপনের খাবারটা দিয়া গেলাম।ভাইজান কইছিলো রুমে দিয়া যাইতে।খাইয়া লইয়েন।”
বোঝলাম সে রাফিতের কথা বলছে।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
” তোমার ভাইজান কোথায়?”
“হেতি মনে অয় খালের ধারে গেছে।যহনই এইহানে আহে ওইহানেই যাইয়া বইয়া থাহে।”
“ওহ।তোমার নাম কি?তুমি কি এই বাড়িতে থাকো?”
“জে না।আমার বাড়ি এইহান থেইক্কা ইট্টু দূরে।আর আমার নাম সাদিয়া।আমার আব্বা এই বাড়ির দেহাশুনা করে।”
“ওহ।তা খালটা কোনদিকে?”
“এইহান থেইক্কা বাহির হইয়া বাম দিকে পাঁচ মিনিট আটলেই খালডা।আফনে যাইবেন?আমি লইয়া যামু?”
“না থাক।দরকার পরলে নিজেই খুজে নিবো।এখন তুমি আসতে পারো।”
“জে আফা।”
মেয়েটা চলে গেলো।দেখলাম টেবিলের উপরে খাবার রাখা।কিন্তুু আমার এখন খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।এতোকিছু হওয়ার পরকি আর গলা দিয়ে খাবার নামে।
♣
ঘড়িতে বিকেল ৪.০০ টা,,,,,,
না আর ভালো লাগছেনা এভাবে বসে থাকতে।রফিতেরও কোনো খবর নেই।তাই এবার ঘর থেকে বের হলাম।এতোক্ষণে বাড়ির ভিতরটা খেয়াল করলাম।বিভিন্ন রকমের পেইন্টিং ও দামী শু-পিছ দিয়ে চারপাশটা সুসজ্জিত।বেশ যত্ন করেই সাজানো হয়েছে।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও কোনো অভাব নেই।
বাড়ির সীমানা পেরিয়ে বাম দিকে হাটা দরলাম।যেদিকে মেয়েটা লেকের কথাটা বলেছিলো।চারপাশেই গাছপালা।খুব দূরে দু-একটা বাড়ি রয়েছে।তবে একটা সরু কাচা মাটির রাস্তা রয়েছে বাম দিকে।মনে হয় এটাই লেকের রাস্তা।দশ মিনিট হাটার পর লেকটা পেয়েও গেলাম।এদিকটায় এসে অনেকটা জায়গা জুড়ে শুধু ঘাস ছাড়া আর কিছু নেই।মাঠের মতোও বলা যায়।তার কিছু দূরেই লেকটা।লেকটা অনেক বড়।লেকের ধারে যেতেই একটা ছোট কাঠের তৈরি সাকু দেখতে পেলাম।লোকে এটাকে কি বলে জানিনা তবে আমার কাছে সাকু-ই মনে হয়।যেটা লেকের কিছুদূর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।হয়তো ৪.৫ ফুট চওড়া ও ১২ ফুট লম্বা হবে।
সেখানেই রাফিত একদম কোণায় পা ঝুলিয়ে বসে পানিতে তাকিয়ে একমনে কি যেনো ছুড়ে চলেছে।হাতে কিসের একটা প্যাকেট।
আমি সেখানে গিয়ে তার পিছনে দাড়াতেই সে আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,
“এখানে এসে বসো।(তার পাশে ইশারা করে)”
তাজ্জব ব্যাপার সে কিভাবে বোঝলো যে আমি এসেছি?সেতো একবারও আমার দিকে তাকায়নি।তাহলে কিভাবে?আমি আর কিছু না ভেবে রাফিতের পাশে গিয়ে বসলাম।এবার দেখি সে মাছকে খাবার দিচ্ছে।বাহ কি সুন্দর আমার খাওয়ার কোনো খবর না নিয়ে ওনি এখানে মাছকে খাওয়াচ্ছেন।কি পোড়া কপাল আমার।
দুজনের নজরই পানির দিকে।মাছগুলো কি সুন্দর করে খাচ্ছে।শুধু বাতাসের শু শু শব্দ ও পানির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই এখানে।আশেপাশে দূর দূর অবধি গাছপালা ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছেনা।আমার আজকে তাকে অনেক কিছু বলার আাছে ও জানারও আছে।আমি তাকে বললাম,
“আজ কিছু জিজ্ঞেস করবো।উত্তর দিবেন?”
সে আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল,
“খেয়েছো?”
আমিও তার কথার জবাব না দিয়ে বললাম,
“আপনি কি জানেন তাহিয়ার সাথে যা যা হয়েছে তার কোনো কিছুর জন্যই আমি দায়ী না।”
“হ্যা জানি।”
তার এই ‘জানি’ কথাটা শুনে আমি চমকে উঠলাম।জানে মানে কি?আর যদি সব জেনেই থাকে তাহলে আমার সাথে এইসব কেনো করছে।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“জানেন মানে!”
আমার কথায় সে মুচকি হাসলো।তারপর বলল,
“আমি সবকিছু দুইদিন আগে থেকেই জানি।”
“যা বলার ক্লিয়ারলিভাবে বলুন।”
“সাদমানকে ধরার জন্য আমি অনেক আগেই লোক লাগিয়েছিলাম।কিন্তুু তাকে ধরতে পরছিলামনা। দুইদিন আগে আমার লোকেরা ওর খোজ পায়।তখন তাদেরকে দিয়ে সাদমানকে আমি ধরি।ওকে তোমার ছবি দেখানোর পর জানতে পারি ও তোমাকে চিনেনা।এটাও বলে ওইদিন তাহিয়া তোমার ফোন দিয়ে তাকে কল করেছিলো।তোমার সাথে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই।কথাটা শুনার পর নিজের প্রতি খুব রাগ ও ঘৃণা জন্মেছিলো।তাকে আমি তখন বেধরমভাবে পেটাই।তারপর দুইদিন না খাইয়ে রেখে অনেক টর্চার করাই আমার লোকদেরকে দিয়ে।এমনকি পেন্টের ভিতর বিষাক্ত পোকাও ছাড়িয়েছি।তাও মনে শান্তি পাচ্ছিলামনা আমি।
এখন তুমি হয়তো ভাবছো আমার তোমাকে ওইদিন সরি বলাটা নাটক ছিলো।কিন্তুু আমি আর যাই করি না কেনো অভিনয়টা করতে পারিনা।হ্যা আমার তোমাকে কেয়ার করার পেছনে রহস্য ছিলো।তবে মিথ্যে ছিলোনা।আমি এখানে এসে যা করেছি তা ঢাকাতেই করতে পারতাম।কিন্তুু মা ফোন করে বলল উনি নাকি আমাদের ওখানে পারমানেন্টলিভাবে থাকতে আসছেন।আমি এবার আর তাকে ঠেকাতে পারিনি।আমি তোমার উপর যে এতো টর্চার করেছি সে বিষয়ে উনি কিছু জানেন না।অবশ্য কিছুটা জানেন।না জেনেবুঝে তোমার সাথে এতোকিছু করেছি জানলে উনি খুব কষ্ট পাবেন।তাই তুমি যেনো উনাকে বেশি কিছু বলার সুযোগটা না পাও সেইজন্য মিথ্যে বলে এখানে আসা।”
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম,
“আর মার্ডারটা যে আমাকে দিয়ে করালেন ঐটা?”
সে আবারও একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপর বলল,
” আমার বোনতো একজন মেয়ে আর তুমিও।তার সাথে যে অন্যায়টা হয়েছে তা অন্য অনেক মেয়ের সাথেই হয়েছে।যার নাটের গোড়া ছিলো ঐ সাদমান।মানে তাহিয়ার বয়ফ্রেন্ড।তাই আমি চেয়েছিলাম ওর মৃত্যুটাও একটা মেয়ের হাতেই হোক।ওর জন্য আমিও তোমাকে অনেক ভুল বোঝেছি।জানি অন্যায় আমিও করেছি।দোষ আমারও আছে।আমার সবকিছু যাচাই করার উচিত ছিলো।কিন্তুু কি বলোতো নিজের একমাত্র বোনের মৃত্যুতে আমি এতটাই শুকাহত ছিলাম যে কিছু না বোঝেই হিংস্র পশুর মতো আচরণ করেছি তোমার সাথে।এই কদিন সাদমানকে ঢাকায়ই রাখা হয়েছিলো।গতপরশু এখানে ট্রান্সফার করি।
আর তোমাকে যদি তখন ভালোভাবে বলতাম তুমি কখনোই ওকে মারার জন্য রাজি হতেনা।তাই তখন তোমার সাথে ঐরকম বিহেভ করেছিলাম।যাতে তুমি ওকে মারো।কিন্তুু অর্ধেক কাজটা সেই আমাকেই করতে হলো।”
কিছুক্ষন থেমে সে আবারও বলতে লাগলো,
“আমি জানি তোমাকে এখন সরি বলাটা খুবই নগন্য।তাই আমি তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চাইবোনা।সে মুখ আমার নেই।তুমি আমাকে যা শাস্তি দিতে চাও দিতে পারো।শুধু একটা রিকুয়েষ্ট প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।তোমাকে খুব ভালোবাসি আমি।জনিনা তুমি কি বলবে তবে তোমাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
কথাগুলো বলতে বলতে যে তার গলাটা ধরে আসছিলো তা বেশ বোঝতে পারছি।সে এতোক্ষনে একবারও আমার দিকে তাকায়নি।তাকাবে কি করে।সেই মুখ যে তার নেই।
আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে।কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিনা আমি।কি-ই বা বলবো।একটা মানুষ আমার সাথে এতোকিছু করলো তাও আমি তাকে ঘৃণা করতে পারছিনা এটা বলবো।তবে এতোকিছুর পরও তাকে এতো সহজেতো আর ছেড়ে দেওয়া যায়না।শাস্তি তো তাকে কিছুটা হলেও পেতে হবে।কিন্তুু আমার সাথে এতো অন্যায় করার পরও কি তার সাথে সংসার করা যায়?
আমি তাকে আর কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসি।…………………..
to be continued…………………..