ভালোবেসে তারে !! Part- 17
গত আধ ঘন্টা যাবত রাফিত গাছে ওঠার চেষ্টা করে চলেছে।একবার অর্ধেক ওঠেও গিয়েছিলো।কিন্তুু বেচারার কি ভাগ্য দেখো পাশের ডালটা ধরে যেই উপরে চড়তে যাবে ওমনি ঠাসস করে নিচে পরে গেলো।অবশ্য ওতোটা উচু থেকেও নয়।হাত-পায়ের অনেক জায়গায় কিছুটা ছিলেও গেছে।যাকনা ছিলে আমাকে যখন কষ্ট দিতো তার বেলা।এখন বুঝোক কেমন লাগে।
আমি গাছের নিচে ঘাসের উপর আাসাম করে বসে হাটুতে দুই হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে দুই গালে হাত দিয়ে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।এবার বেশ বোর লাগছে।একি আদৌ উঠতে পারবে?এমন সময় কেউ জোরে ডেকে উঠলো,
“দিশা এই দিশা।”
তাকিয়েতো আমি জাস্ট অবাক।সাথে প্রচুর হাসিও পাচ্ছে আমার।হ্যা সে উঠেতো গেছে ঠিকই কিন্তুু গাছের একটা বেকে যাওয়া ডাল ধরে বসে আছে।হয়তো ভয়ে।আমি এবার বসা থেকে দাড়িয়ে খুব জোরে হাসতে লাগলাম।বেচারার কি করুন দশা।সে আমার হাসি দেখে গাছের উপর থেকে ধমক দিয়ে বলল,
“কি ব্যাপার হাসছো কেনো?আজবতো।এখন কি করবো সেটা বলো?”
আমি কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বললাম,
“ওকে ওকে আর হাসবোনা।আর কি করবেন মানে আম গাছে কি আপনি নাচতে ওঠেছেন নাকি।অবশ্যই আম পারবেন।আর এভাবে ব্যাঙের মতো বসে না থেকে যেটা করতে ওঠেছেন সেটা করুন।”
“কিন্তুু আমার খুব ভয় করছে দিশা।হাত ছাড়লে যদি পরে যাই।(করুন কন্ঠে) ”
“আরে ধুর পড়লেও তেমন কিছু হবেনা।আপনি ওতটাও উচুতে না।সো শুরু করুন।”
সে আর কিছু না বলে ডালে বসা অবস্থাতেই খুব কষ্টে এক হাত ডালে ধরে অন্য হাত বাড়িয়ে পাশে ঝুলে থাকা কয়েকটা আম ছিড়ে নিচে ফেললো।আমিও মনের খুশিতে ওগুলো তুলতে লাগলাম।এমন সময় কে যেনো ধমকের সুরে দূর থেকে জোরে বলে ওঠলো,
“ওই কেডারে ওইহানেএএ।”
আল্লাহ গাছের মালিক নয়তো।রাফিত অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মনে হয় গাছের মালিক।এবার কি হবে দিশা?”
আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা ইনোসেন্ট মার্কা মুচকি হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে আসতে লাগলাম।সে আবার চিল্লিয়ে বলল,
“এই এই তুমি কোথায় যাচ্ছো?দিশা এটা কিন্তুু ঠিকনা।আমি নামবো কিভাবে?দিশাআআ?”
আমি ততোক্ষণে চম্পট।ওখানে বেশিক্ষণ থাকলে আর রক্ষা থাকবেনা।সে অনেকবার ডাকছিলোও।তাও আমি শুনিনি।বকা খেলে সে একা খাক। আহা এবার কলিজাটা আমার কিছুটা ঠান্ডা লাগছে ব্যাটাকে জব্দ করতে পেরে।আমও খাওয়া হলো আর রাফিতকে শাস্তি দেওয়াও হলো।এটাকেই বলে ‘সাপও মরলো আর লাঠিও ভাঙলোনা’।
,
,
,
,
,
,
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মরিচ-লবন দিয়ে আম খাচ্ছি।এমন সময় দরজার দিকে চোখ যেতেই আমার হাত থেকে কাটা আমের টুকরোটা পরে গেলো।দুজন লোক রাফিতকে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে আসছে।হাতে-পায়ের বিভিন্ন জায়গায় কিসব ঘাসপাতা না কি লাগানো।মনে হয় কেটে গেছে।আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম,
“একি কি হয়েছে আপনার?কি করে ব্যাথা পেলেন?”
রাফিত কিছুই বলছেনা।সাথের লোকদের থেকে একজন বলল,
“তেমন কিছুই অয় নাই মা।বাবাজি গাছ থেইক্কা পইড়া গেছেতো হেইলেইগ্গা কিছুডা চুড পাইছে।পা-ঠাও মইচকা গেছে।কিছুদিন আটতে পরতোনা মনে অয়।কাডা জাগায় ঔষধ লাগায় দিছি।একটুখানি দেখবাল করলেই সাইরা যাইবোগা।”
কথাটা বলে তারা রাফিতকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো।রাফিত মাথাটা সোফার সাথে হেলান দিয়ে যেই পায়ে ব্যাথা ঐ পা-টা সামনের টি-টেবিলের উপরে রেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
এবার ভীষণ খারাপ লাগছে আমার।হয়তো একটু বেশিই করে ফেলেছি।তার অনেক জায়গায় কাটাছেঁড়ার দাগ।গাছ থেকে পরে যে এতোটা ব্যাথা পাবে ভাবতে পারিনি।আমি আর দেরি না করে ফাস্টএইড বক্সটা খুজে নিয়ে এসে তার পাশে বসলাম।আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে।সে আমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার পরও আমি তার একটুখানি কষ্ট সহ্য করতে পরছিনা।সত্যিই অদ্ভুদ ব্যাপার।আমি তার পায়ের যেই জায়গাগুলোতে কেটে গেছে সেখানে পরিষ্কার করে ঔষধ লাগাতে লাগলাম।নিচের দিকে তাকিয়েই বোঝতে পারছি রাফিত আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করতে করতে বললাম,
“খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছেন তাইনা।সব আমার দোষ।”
রাফিত জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,
“তোমাকেতো আমি এরথেকেও বেশি কষ্ট দিয়েছি।তাই হয়তো এইটাই আমার প্রাপ্য।”
আমি এবার ফুপিয়ে কেদে দিলাম।
“একি তুমি এভাবে কাদছো কেনো?তোমারতো খুশি হওয়ার কথা।”
তার কথা শুনে আমি তার বুকে ঝাপিয়ে পরে কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,
“আমি আপনাকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি বিশ্বাস করুন।”
সে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
“আরে পাগলি কাদছো কেনো আমি ঠিক আছিতো।”
আমি আগের মতোই কেদে চলেছি।
“জানো দিশা যখন তোমাকে আঘাত করতাম তখন আমার নিজে এরথেকেও বেশি কষ্ট পেতাম।মনে হতো ভেতরটায় কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।হয়তো তোমার অজান্তে।আচ্ছা দিশা আমরা কি পারিনা একটা হ্যাপি ফ্যামলি হয়ে থাকতে।তুমিতো জানো আমি যা করেছি সব তোমাকে ভুল বোঝে করেছি।”
ততক্ষনাৎ আমি তাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালাম।তারপর চোখের পানি মুছে বললাম,
“চলুন আপনাকে রুমে নিয়ে যাই।”
সে হয়তো বোঝতে পেরেছে আমি তার এইসব কথায় সন্তুুষ্ট না।হবো কিভাবে তাকে ক্ষমা করা যে আমার পক্ষে এতো সহজ নয়।কি কর ক্ষমা করবো তাকে?আমার মনে কাটা তার আচরের দাগগুলো থেকে যে আজও রক্তক্ষরণ হয়।
,
,
,
,
রাফিতকে নিয়ে এবার হয়েছে আরেক ঝামেলা।সে গোছল করবে।ওর শরীরে ধুলাবলিতে বাসা বানিয়ে রেখেছে।তাই গোসল করাটাও আবশ্যক।কিন্তুু কথাতো সেটা না কথা হলো গিয়ে সে তার আধভাঙা হাত-পা নিয়ে উঠাতো দূর ভালো করে নড়তেও পারছেনা। তাহলে গোসলটা করবে কি করে?আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তাকে ওয়াশরুমে যেতেতো হবে আগে।
সে বেশ কিছুক্ষন ধরে আমার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।তার এই তাকিয়ে থাকার অর্থটা আমার বোঝতে খুব বেশি টাইম লাগেনি।এতো কষ্ট করে টেনে উপরে আনলাম তাতে হয়নি।এখন আবার ওয়াশরুমেও নিয়ে যাও।বোঝতে পারছিনা একে আমি শাস্তি দিচ্ছি নাকি ও আমাকে দিচ্ছে।কি আর করার শত হোক স্বামীতো।তার কাছে গিয়ে বিরক্তমাখা মুখে বললাম,
“হাহ আদিক্ষেতা।আসুন।”
আমার কথায় যেনো রাফিত আকাশের চাঁদ হাতে পেলো এমন একটা ভাব।আমার বলতে দেরি তার আমাকে ধরতে দেরি হয়নি।এখন এই হাতিটাকে আবার টানো।যত্তসব।কোনোরকমে কাধে ভর করে তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলাম।……………….
to be continued……………….