ভালোবেসে তারে !! Part- 03
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থরথর করে কেপে চলেছি।না রাফিত কিছু করেনি।সেতো একমনে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দড়িয়ে টাই ঠিক করছে।আর আমি তার পেছনে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে রয়েছি।আসলে আমি রাফিতকে কিছু বলতে চাচ্ছি।কিন্তুু ভয়ে বলতে পারছিনা।হঠাৎই রাফিত আয়নার দিকে তাকিয়েই শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে উঠলো,
“তোমার কাপাকাপি শেষ হলে কি বলবে বলে ফেলো।”
আমি আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে বোঝলো কিভাবে যে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি?এভাবেতো আমি রোজই তার জন্য চা নিয়ে দাড়িয়ে থাকি।অবশ্য নিজ থেকে নয়।এটাও তার এক ধরনের টর্চার।যেইভাবেই বুঝোক তাতে আমার কি।এরপর আমি কাপা কাপা গলায় মাথা নিচু করে বললাম,
“আ…আসলে কাল তো আমার ফ্রে…ফ্রেন্ডের গায়ে হলুদ ছি…ছিলো আর আজতো বিয়ে।ত…..তাই বলছিলাম যে……..”
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই সে জোরে বলে উঠলো,
“স্টপ”
তার এরকম জোরে বলাতে আমি কেপে উঠে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুগে লাগলো।ভয়ে আমার হাত-পা জমে পুরোপুরি বরফ হয়ে গেছে। আমার হাতের চায়ের কাপটাও কাপছে।যে কোনো মুহূর্তে নিচে পরে যেতে পারে।সে আমার কাছে এসে আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে নিলো।তারপর চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে সেটাকে টি টেবিলের উপরে রেখে আমার দুই হাত ধরে স্লাইড করতে করতে সেদিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে সাইকোদের বলল,
“ওহহো সোনা কিযে করনা তুমি।এক্ষুনিতো গরম চা পরে হাতটা পুরে যেতো।ইশশশ এই সুন্দর হাতটা পুড়লে কেমন দেখা যাবে বলতো?একটুও ভালো দেখা যাবেনা তাইনা।”
সে এবার মাথা নিচের দিকে রেখেই চোখ উপরে তুলে মটকে আমার দিকে তাকালো।তারপর একহাত দিয়ে আমার গালদুটো চেপে ধরে আমাকে একদম দেয়ালের সাথে নিয়ে ঠেকিয়ে আমার দিকে মাথা সোজা করে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারও বলল,
“যা বলেছিস তা বলেছিস।এর বাইরে যদি আর একটা কথাও মুখ দিয়ে বের হয়েছে তোর তাহলে হাতের সাথে সাথে (গাল ছেড়ে এক হাতে নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে)তোর এই সুন্দর ঠোঁটটাও পুড়বে।আই থিংক বোঝতে পেরেছিস আমি কি বলতে চাইছি।”
এদিকে আমার ঠোঁটটা এতো জোরে চেপে ধরায় ব্যাথায় আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে।কিন্তুু সেদিকে তার কোনো খেয়াল থাকলেতো। একটুপর সে আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়িয়ে দুই হাতে গায়ের কোর্টটা ঠিক করতে করতে বললো,
“জাস্ট টুয়েন্টি মিনিটস।এর মধ্যে আমার ব্রেকফাস্ট রেডি চাই।গট ইট।গো নাও”
আমি ওভাবেই ঠোটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে কেদে কেদে বললাম,
“কেনো এমন করছেন আপনি আমার সাথে?প্লিজ বলুননা কি করেছি আমি?কেনো আমার উপরে এমন নির্দয়ের মতো আচরণ করছেন আপনি?প্লিজ বলুননা কেনো এমন করছেন?”
সে আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,
“তোমার টাইম কিন্তুু শুরু হয়ে গেছে।”
আমি এখনও ওভাবেই দাড়িয়ে কাদছি।সে আবারও ধমক দিয়ে বলল,
“গো না।”
আমি দৌড়ে সেখান থেকে নিচে চলে আসলাম।নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে দুই হাত রেখে দাড়িয়ে অঝোরে কাদছি।
কি এমন বলেছিলাম আমি যে সে আমার সাথে এমন করলো।কি ক্ষতি করেছি আমি তার?কেনো এমন করছে আমার সাথে?আমার কোনো কথার জবাবও দেয়না সে।
আমি ছোট থাকতেই আমার মা মারা যান।ছোটবেলা থেকেই সৎ মায়ের সংসারে বড় হয়েছি।খুব অত্যাচার করতো উনি আমার উপর।আমার বাবা সামন্য একজন দারোয়ানের চাকরি করে।বাবাও আমাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিতোনা।আমাদের পারিবারিক অবস্থাও তেমন ভালোনা।ছোট একটা ভাই আছে।টাকার জন্য ইন্টার পাশ করার পর আর পড়ালেখা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি।সামান্য কয়টা টিওশনি করতাম।ভাইটা এবার ক্লাস টেনে। তারও পড়ালেখা বন্ধ হতে চলেছিলো।ঠিক তখনই রাফিতের মা আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে।তারা অনেক বড়লোক।দেশে তিন-চারটা বড় বড় কোম্পানি আছে তাদের।তার ছেলেকে বিয়ে করলে আমার পরিবারের সবার দায়িত্ব নিবেন উনারা।আমার পরিবারের কেউই একটাবারের জন্য আমার কথাটা ভাবেনি।কোনো খোজখবরও নেয়নি রাফিতের ব্যাপারে।বিক্রি করে দিলো আমাকে টাকার বিনিময়ে।শুধু ছোট ভাইটা অনেক কেদেছিলো।আমিও তাকে শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরে প্রচুর কেদেছিলাম।বিয়ে পর্যন্ততো রাফিতের আচার-আচরণ সব স্বাভাবিকই ছিলো।কিন্তুু বাসর রাত থেকেই কেনো যেনো সাইকো টাইপ আচরণ করছে আমার সাথে। আমার এখানে আসার পর থেকে তাদের সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।হবে কিভাবে রাফিত দেয়নি তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে।আর না ওরা চেষ্টা করেছে।ঠেলে দিয়েছে আমাকে এই নরকে।
,
,
,
,
,
রাত ৯.০০ টা,,,,,
রাফিত এখনো অফিস থেকে আসেনি।আমি সব কাজ শেষ করে মাত্র গোসল করে বের হলাম।আসলে সারাদিন এতো কাজ করার পর খুব গরম লাগছিলো।পাষানটা আমি এ বাড়িতে আসার পর সব কাজের লোকগুলোকেও বিদায় করে দিয়েছে। বলে কিনা আমাকে টাকা দিয়ে কিনে এনেছেকি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর জন্য?কত্ত বড় সয়তান ভাবা যায়।এতো বড় বাড়িতে সারাদিন একা থাকি আমি।আর এমনিতেও মনটাও একটু খারাপ।তাই ভাবলাম হয়তো গোসল করলে ভালো লাগবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই আয়নার সামনে দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছি।হঠাৎই কেউ ঝড়ের গতিতে আমার এক হাতের বাহুু ধরে টান দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দুই বাহু চেপে ধরলো।আকস্মিক ঘটনায় আমি আমার কপাল কুচকে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।এমন একটা কান্ড কে ঘটালো তা দেখার জন্য আস্তে আস্তে চোখ খোলে তাকিয়ে তো আমি অবাক।আরে এতো রাফিত।কিন্তুু ও কখন এলো? ভিতরে ঢুকলোই বা কেমন করে?আমিতো দরজা খুলিনি।তাহলে?ওহ তার কাছেতো ডুপলিকেট কি আছে ভুলেই গিয়েছিলাম।হয়তো ওটা দিয়েই দরজা খুলে এসেছে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাকে এভাবে ধরার মানেটা কি?আল্লাহ আবার কোনো টর্চার করবেনাতো?
রাফিতের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ আমার ঠোঁটের দিকে।এক অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।সে এতোটা কাছে আসায় আমিও একটু আনইজি ফিল করছিলাম।আমার বুকের হর্টবিটরা যেনো আমার সাথে যুদ্ধ করছে এমম মনে হচ্ছে।তাই আমি তাকে বললাম,
“রাফিত কি করছেন?ছাড়ুন আমাকে।”
ওমা একি তার মধ্যেতো কোনো রিয়াকশানই নেই।আমি আবারও যেই তাকে কিছু বলতে যাবো ওমনি সে আমার ঠোঁটে তার ডান হাতের এক আঙ্গুল রেখে অন্য হাত দিয়ে আমার কোমর চেপে ধরে আস্তে করে বলল,
“হাশশশশশশ।একদম চুপ করে থাকো।ডোন্ট ডিস্টার্ব মি নাও।”
আমি বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি সে ঠিক কি করতে চাইছে।কিন্তুু খাটাস মার্কাটায় সেই সুযোগ দিলো আর কই।তার আগেই আমার ঠোঁটে কারও নরম ঠোঁটের ছোয়া পেলাম।আমি আমার চোখ দুটো সাথে সাথেই বন্ধ করে ফেলি।অনেক্ষন এভাবে কিস করার পর সে আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলো।আমি তাকিয়ে দেখি সে এবার রগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎই সে আমার নিচের ঠোঁটটায় খুব জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। আমি ব্যাথায় আহহহহ করে উঠলাম।সে আমাকে ছেড়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।আর এদিকে আমি এক হাত নিজের ঠোঁট চেপে ধরে হাবলার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি।এতক্ষণ যা হলো সব কিছুই যেনো আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।তার এমন আচরণের আমি কোনো মানে খোঁজে পেলামনা।…………………..