1. নতুন গল্পঃ2. ছোট গল্প গুলোঃলেখাঃ আরফিন জাহান শিফাসবসময় কি এমনই হয়

সবসময় কি এমনই হয় !! লেখাঃ আরফিন জাহান শিফা

সবসময় কি এমনই হয় 

ঠাসসসস্……………
প্রচন্ড জোরে এক থাপ্পর বসিয়ে কাটা চামচ এর দ্বিতীয় আঘাত হানার মুহূর্তে তার চেহারা দেখে নিজেই হতবিহবল হয়ে গেল ফারিয়া। হোয়াট সি ডিড!! পুরো এলাকার সরি পুরো থানার সবচেয়ে ক্ষমতাবান আর প্রভাবশালী ছেলেটাকেই সে থাপ্পর মেরে বসলো!ওহ নো…………!
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার এ রাস্তা দুপুরবেলা বেশ নির্জন থাকে। কেউ ফলো করছে বুঝে কিছুটা ভয় পেলে ও মোটামোটি প্রস্তুত হয়েছিল ফারিয়া।পেছন থেকে হিজাবে একটু টান লাগতেই চোখমুখ খিচে জোরে এক থাপ্পর লাগিয়েছে ও। আর সাইড ব্যাগ থেকে হাতে নিয়ে রাখা কাটা চামচের আঘাতে ছেলেটার চেহারা রক্তাক্ত করার উদ্দেশ্যে হাত উঁচু করেই থমকে গিয়েছে ফারিয়া।
_ফারহান ভাই! শিট!! আমি বুঝতে পারি নাই ভাই। সরি!

ফারহান কিছু না বলে শিতল চোখ নিয়ে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

(বিঃ দ্রঃ “ সবসময় কি এমনই হয় !! লেখাঃ আরফিন জাহান শিফা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

_ভাই প্লিজ! আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি। ভাই!!

ফারিয়াকে আর কিছু বলতে দিল না ফারহান তাকে একটানে নিজের কাছে এনে আলতো হাতে নিকাবটা উঠিয়ে নরম সুরে বলল,
_আমাকে ভাই বলাটা বাদ দিতে পারবা?? তাহলে মাফ করে দিব………………

রিক্সায় ফারিয়ার বাহু শক্ত করে চেপে রেখেছে ফারহান। প্রচন্ড ভয়ে ফারিয়া কেঁদেই ফেলবে প্রায়। চোখে পানি টলমল করছে। ফারহানকে রাগিয়ে দিয়েছে ও। একটা কথায় এত রিয়েক্ট করা ঠিক হয়নি তা ভালোমতোই টের পাচ্ছে ফারিয়া। কিছুক্ষণ আগে ফারহান যখন ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছিল, তখন ও নিজেকে ফারহান এর কাছ থেকে সর্বশক্তি দিয়ে ছাড়িয়ে আবারও এক থাপ্পর দিয়ে দিয়েছিল। একটা পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু দুইটা…………! নাহহ!!ফারিয়া নিজেই বুঝতে পারছে না, আজ ওর এত সাহস আর শক্তি কোত্থেকে এলো!!

_আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?? প্লিজ…….আমি বাড়ি যাব!

ফারহানের রক্তবর্ণ চোখ ফারিয়াকে থামিয়ে দিল। ফারিয়ার মনে খারাপ চিন্তা উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো। হঠাৎ ওর মাথায় একটা পরিকল্পনার উদয় হলো। রিক্সা যেহেতু তাদের বাসার দিকে রাস্তাতেই আছে, সো………… বাসার সামনে গেলে ও চিৎকার করবে।

১……২……৩……. চিৎকার দেয়ার আগেই ও দ্বিতীয়বারের মতো অবাক হল। রিক্সা ঠিক ফারিয়ার বাসার সামনে থেমেছে। ফারহানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ও। ছেলেটা অত্যন্ত ভালো। ওর চিন্তা ভাবনাই তো ভালো না! কুৎসিত!! ছেলেটার ব্যাপারে কি সব হাবিজাবি ভেবেছিল।

_এভাবে কি দেখছ! প্রেমে পড়ে যাবে তো!!

এহহ! প্রেমে পড়ে যাবে তো! কমন ডায়লগ!! এত সহজ? প্রেম নিষিদ্ধ। বিয়ের আগে এগুলো নিষিদ্ধ‌। মনে মনে আওড়াতে-আওড়াতে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় ফারিয়া।

ধার্মিক রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ের ফারিয়া। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ছোটবেলা থেকেই গড়ে উঠেছে ও। বাসা থেকে বের হলে বা গায়রে মাহরাম কারও সামনে যাওয়ার আগে বোরকা, নিকাব, মোজা পড়ে নেয়। বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা এগুলো ওর কাছে অগ্রহণযোগ্য।

🖤

বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে ফারিয়া। একটুও ঘুম আসছে না ওর। বারবার ওই দৃশ্যটাই মনে পড়ছে। কত কাছে চলে গিয়েছিল ভাইয়ার! ওদের ক্লাসের সবার ক্রাশ বয় ফারহান ভাই। ওর ক্লাসের মেয়েরা তো হ্যান্ডসাম, জোশ, মাই ক্রাশ……………ব্লা ব্লা বলতে বলতে পাগল। আচ্ছা ভাইয়া তো অত ফর্সা না। তারপরও এত সুন্দর কেন!! চেহারার গঠনের জন্যই! ঘন ভ্রু নীচের চোখ, সুগঠিত নাক আর ঠোট। আসলেই, ভাইয়া সুন্দর‌। কতওওও সুন্দর!!
ছি!! এগুলো কি ভাবছি! লজ্জায় ফারিয়ার গাল লালচে হয়ে আসে।

হঠাৎ বারান্দায় ধুপ করে একটা শব্দ হয়। চমকে উঠে ফারিয়া। থাই এর পিছনে ডিম লাইটের আলোয় দেখা যায় একটা অবয়ব। ভয় পেয়ে যায় ও। ছায়া মানবটা সোজা বারান্দার খোলা দরজা দিয়ে ওর রুমে ঢুকে। ফারহানকে দেখেই আঁতকে উঠে চিৎকার দেয়ার জন্য হা করতেই ওর মুখ চেপে ধরে ফারহান।

_চুপ একদম চুপ।

ধমকে উঠে ফারহান। ফারহান দোতলার বারান্দায় কিভাবে উঠলো তা নিয়ে তেমন আশ্চর্য হয় না ফারিয়া। ভাইয়ার দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। ফারহান ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর রুমের লাইট অন করে। ফারিয়ার সামনাসামনি খাটে এসে বসে।

_রিয়া……!(ফারহান ফারিয়াকে রিয়া বলে ডাকতেই পছন্দ করে)
_জি।
_তুমি তো জানোই আমি স্ট্রেট কথা বলা পছন্দ করি আর বলিও। তোমাকে দেখার সাথে সাথে আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝার পড়ে তাও তোমাকে স্টেট জানিয়েছি। জানিয়েছি না!!
_জি।
_আমি কিন্তু জানতে চাইনি যে তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা। তোমার বয়স কিছুটা কম। 18 বছর হলেই আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলবো। তখন পর্যন্ত তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেললে তো ভালোই। আর তা না হলে জোর করব। আর আমার মনে হয় না তোমাকে জোর করতে হবে। তুমি নিজেই শীঘ্রই আমাকে ভালোবেসে ফেলবে। যেভাবেই হোক আমি তোমাকে নিজের করে নিবোই।
_জি।
_এই সেইম কথাটা আমি তোমাকে আগেও বেশ কয়েকবার বলেছি। তুমি জি জি করে উড়িয়ে দিও না। আমি চেষ্টা করেও ব্যর্থ। তুমি আমাকে ভালবাসলাই না! আমার মধ্যে কিসের কমতি আছে, বল তো। আমি কি দেখতে খারাপ!!
_জি।
_হেইইই! কি জি জি শুরু করলো আবার! আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ?! তোমার মত কত কত মেয়ে আমার পিছনে ঘুরে জানো?? ইউ কান্ট ইমাজিন!!
_জি।
_আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, তুমি আমাকে ভালোবাসো। না হলে তো, এত রাতে এক রুমে আমার সাথে বসে থাকতে পারতে না…………। তাই না!!
_আমি আপনাকে কতবার বলবো! প্রেম ভালবাসা এগুলো……………
_স্টপ। জাস্ট স্টপ ইট! সত্যি করে বলো………………আমাকে ভালোবাসো?
_………….…..………
_চুপ করে থেকো না। প্লিজ!!
_…………………………
_আচ্ছা! জাস্ট দয়া করে এটা বলো………আমাকে একটুও পছন্দ হয় না!!
_….………….………….

ফারিয়ার এই নীরবতা ফারহানের পছন্দ হলো না। রেগে গেল সে। রাগ দিগ্বিদিক হারিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে লাগল ফারহান।

_ক……কি করছেন আপনি!!

ফারিয়ার কথায় কর্ণপাত করলো না ফারহান। পুরোপুরি শার্টটা খুলে মেঝেতে ছুড়ে মারলো সে।
_কিসের কমতি আমার মধ্যে?? হ্যাঁ! আমার জিম করা বডি দেখে কতশত মেয়েরা পাগল হয়ে যায়। আর তুমি!!(ফারিয়ার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে)

ফারিয়া একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। ওর মাথা ভনভন করছে।
_ভাই শার্ট টা পড়ে নিন। আমি পারছিনা। আমি মারা যাচ্ছি। সত্যি মারা যাচ্ছি!!

আর কিছু বলতে পারেনা ফারিয়া। ফারহানের গায়ে ঢলে পরে। এতক্ষণে ফারহানের হুঁশ হয়। ওকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়। ফারিয়া সেন্সলেস হয়ে গেছে। প্রচন্ড হাসি পায় ফারহানের। মেয়েটার সত্যিই বাচ্চা। সামান্য শার্ট খোলা অবস্থায় তাকে দেখেই অবস্থা! বেণী করে রাখা সত্ত্বেও সামনের ছোট ছোট অবাধ্য চুল গুলোকে পিছনে সরিয়ে দেয় সে। ঝুঁকে আরো কাছে এসে কপালে চুমু খায়। তারপর………………
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *