সে কি জানে Season 2 ! Part- 37
৪৮.
ঘুমিয়েই যাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ কারো গমর নিশ্বাস মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। চোখ খুলে সামনে থাকা ব্যক্তিকে থেকে ক্ষাণিকটা চমকে গেলাম। মুখ থেকে আপনা-আপনিই চিৎকার বেড়িয়ে আসতেই মুখ চেপে ধরল সে। কণ্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল…
— “সমস্যা কি তোমার? আমাকে দেখেছো না? তাও চিল্লাচ্ছো কেন?”
বিস্ময় নিয়ে রেয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলাম মাত্র! রেয়ান এত রাতে আমার রুমে কেন? উনাকে তো রাহুল আহমেদ আমার সাথে দেখা করতে বারণ করেছেন। তাহলে? কেন যেন মস্তিষ্ক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চাইছে না। চোখটা যেন ক্রমশই বড় হয়ে যাচ্ছে আমার। সেদিকে একবার তাকালেন রেয়ান। আমার থেকে সরে একটা চেয়ার নিয়ে আমার মুখ বরাবর বসে পড়লেন। চোখে-মুখে একটা সুপ্ত রাগ ফুটে উঠেছে তার। নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে প্রবল ভাবে। আমি উঠে বসলাম তরিৎ গতিতে। বালিশের কাছ থেকে ওড়না নিয়ে জড়িয়ে নিলাম শরীরে। পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলাম। বিস্ময় নিয়ে তাকালাম রেয়ানের দিকে। তার দৃষ্টি আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ। চোখে এক আকুলতা দেখতে পারছি আমি। সাথে একটু অভিমান আর কষ্ট! আচমকা জড়িয়ে ধরলেন আমায়। ঘাড়ের কাছে লম্বা একটা গরম নিশ্বাস ছেড়ে করুন কণ্ঠে বলে উঠলেন…
— “তোমার শ্বশুড়কে বোঝাও মরুভূমি। তুমি ছাড়া আমি নিঃস্ব! সে যে আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে দিবে না।”
এক ধরণের অসহায়ত্ব ফুটে উঠল রেয়ানের মধ্যে। তার পিঠে আলতো করে হাত রাখলাম আমি। শান্ত সরে বললাম…
— “কি হয়েছে? খুলে বলুন!”
— “সে রিভেঞ্জ নিচ্ছে আমার সাথে মরুভূমি। তার কথা না শোনার রিভেঞ্জ! আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে দিতে চায় না সে। যদি দেখা করি তাহলে বিয়েই দিবে না বলে দিয়েছে। তুমিই বলো মরুভূমি, হবু বরকে হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে না দেওয়াটা কি অন্যায় নয়? ঘোর অন্যায়!”
— “তাহলে তার নিষেধ করা সত্ত্বেও এখন কেন আসলেন? সেই-ই তো উনার কথার অমান্য করেছেন। এখন যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয়, তখন?”
আমার থেকে সরে এলেন রেয়ান। সোজা হয়ে বসে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলেন…
— “সব এত সহজ? মোটেও না! সে যদি আমার বাপ হয় তাহলে আমিও তার ছেলে। ডাবোল এডফান্স! কোনো ভাবেই কেউ জানবে না আমি তোমার সাথে দেখা করছি। আর জানলেও বা কি? আমি কাউকে ডরাই নাকি? একদম কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো তোমাকে!”
— “সব যখন আপনার পরিকল্পিতই, তখন এত মাথা ব্যথা কিসের?”
রেয়ান আবারও করুন সরে বললেন…
— “কাজী অফিসে গিয়ে একা একা বিয়ে করাটা কেমন না? আমি পরিবার নিয়েই তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আর এরজন্য তো তোমার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে হবে আমার।”
থামলেন রেয়ান। কিছু একটা ভেবে মুখে হাসি ফুটে উঠল তার। ভ্রুঁ নাচিয়ে বললেন…
— “তবে একটা ব্যাপার কিন্তু অনেক জটিল হবে মরুভূমি। ১৭-১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীর মতো লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে পারবো তোমার সাথে। মজা হবে তাই না? সাথে রোমেন্সও!”
চোখ মেরে বাঁকা হাসলেন উনি। তার এমন উদ্ভট চিন্তাধারা শুনে মুচকি হাসলাম আমি। সে আর তার আজব ভাবনা, একেক সময় একেক রুপে অবিষ্কৃত হয় আমার সামনে। অনেক সময় সেসব ভাবনা হয় জটিলতায় ভরা, অনেক সময় ভালোবাসায় ঘেরা!
___________________
ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে দীঘি। চুল আচঁড়িয়ে চিরুনি টেবিলে রাখতেই কোত্থেকে আবদ্ধ এসে কোলে তুলে নিলো দীঘিকে। ভয় পেয়ে যায় সে। আবদ্ধকে খাঁমচে ধরে। বন্ধ থাকা চোখ পিটপিট করে খুলতেই আবদ্ধের দুষ্টুমী ভরা চোখ আর বাঁকা হাসি দেখতে পায় সে। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে দীঘি। বুকে কয়েকবার “ফু” দিয়ে করুন দৃষ্টিতে তাকায় আবদ্ধর দিকে। সাথে সাথে আবদ্ধ দীঘির গালে চুমু এঁকে দেয়। দীঘি চমকায়। মনে এক শিহরণ বইলেও আবদ্ধের সামনে বিরক্তি প্রকাশ করে সে। ক্ষীণ সরে বলে উঠে…
— “নিচে নামান আমাকে আবদ্ধ।”
আবদ্ধর সোজাসাপ্টা জবাব…
— “না।”
— “প্লিজ।”
— “উহু। ছাদে যাবো এখন। জ্যোৎস্না বিলাস করব।”
দীঘি দমে যায়। আবদ্ধকে এখন কিছু বললে যে সে শুনবে না, তা বেশ ভাবে জানে দীঘি। চুপচাপ আবদ্ধের বুকে মাথা এলিয়ে দেয় সে। আবদ্ধ আরেকটু গভীরভাবে আকঁড়ে ধরে দীঘিকে। পা বাড়ায় ছাদের উদ্দেশ্যে!
ছাদে এসে রেলিং ঘেষে দাঁড় করিয়ে দেয় দীঘিকে। দীঘি চুপটি মেরে থাকে। পেটের কাছে হাত দু’টো কেমন জড়ো পদার্থের মতো লেপ্টে আছে। দীঘির পিছনে এসে তার পিঠের সাথে নিজের বুক ঠেসে দাঁড়ায় আবদ্ধ। দীঘির হাত পেটে লেপ্টে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো সে। ঝটকা মেরে হাত দু’টো সরিয়ে দিলো। নিজের হাত দু’টো আলতো করে পেটের মাঝে রেখে নরম স্পর্শ আঁকতে লাগলো আবদ্ধ। দীঘি কেঁপে উঠছে বারংবার। এক আলাদা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার। এক আলাদা অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠে সে…
— “ছা..ড়ুন। প্লিজ!”
আবদ্ধ দমে না। আরেকটু গভীর ভাবে আগলে ধরে দীঘিকে। ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিতে থাকে ঘাড়ে।
৪৮.
রাহুল আহমেদ কঠিন দৃষ্টিতে নীলা রাহমানের দিকে তাকিয়ে আছেন। নীলা রাহমান চুপ করে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছেন বিছানায়। রাহুল আহমেদের দিকে কয়েকবার আড়চোখে তাকিয়েছেন মাত্র! এদিকে রাহুল আহমেদের কপালে রাগের পাশাপাশি চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠেছে। মাঝরাতে পানি খেতে উঠে রেয়ানের রুমে একবার উঁকি দিয়েছিলেন উনি। রেয়ান রুমে ছিলেন না। যা দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় তার। তিনি নিশ্চিত তার বেহায়া ছেলে তার বউমার সাথেই এত রাতে দেখা করতে গিয়েছে। তিনি মনে মনে ভাবেন, তার ছেলে তার মতোই। বিয়ের আগে তিনিও নীলা আহমেদের সাথে দেখা করেছেন রাত-বিরাতে। রাস্তায় হাতে হাত রেখে হেঁটেছেন বহুবার। তাদের ভালোবাসায় ছিল না কোনো অশ্লীলতা, আর না ছিল ভালোবাসার কমতি। এখনও ঠিক তাই। তার এক অদম্য বিশ্বাস আছে রেয়ানের ওপর। তিনি যেমন, তার ছেলেও তেমন। ভুল মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করবে না রেয়ান কখনও। এই বিশ্বাস থেকেই হয়তো মীরার সাথে বিয়ে দিতে আপত্যি করেন নি তিনি। ভেবেছিলেন মীরাকে দিয়েই নিজের ছেলেকে সুধরাবেন। বিয়ে করিয়ে মীরাকে নিজের কাছে রাখবেন। এবং মীরাকে দিয়েই রেয়ানকে বাধ্য করাবেন ডাক্তারির পাশাপাশি একটু বিজনেসটাও যেন করে। তার ছেলেটা তো আবার অত্যাধিক জেদি। যা বলে তাই-ই করে। তার জেদ সে ডাক্তারির পাশাপাশি বিজনেস করবে না। এই একটা জিনিসই রেয়ানের বেশি। জেদে ভরপুর ছেলেটা। যা মোটেও পছন্দ না রাহুল আহমেদের। তার ছেলেকে তার কথার অমান্য করার জন্য এখন কিছু বলতেও পারবেন না তিনি। বলা তো যায় না, তার বেহায়া ছেলে যদি জেদের বসে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে তখন? রেয়ান দ্বারা তো সব সম্ভব।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রাহুল আহমেদ। মনে মনে আরও কয়েকটা ভাবনা এটে নিলেন মস্তিষ্কে। মীরার সাথে রেয়ানের বিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করিয়ে ফেলতে হবে। তাহলেই তো তিনি তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন। যদি পারেন তাহলে এক মাস পরের ডিলটা রেয়ানকে দিয়েই করাবেন রাহুল আহমেদ।
৪৮.
ফযরের আযান দিয়েছে মাত্র। আযানের সাথে সাথে রেয়ানেরও ঘুম ভেঙ্গে গেছে। চোখ খুলতেই নিজের মরুভূমিকে দেখতে পান তিনি। কোল বালিশ জড়িয়ে গুটিসুটি মেরে কিভাবে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে সে। ঠোঁটগুলো উঁচু হয়ে থাকায় যেন পরিপূর্ণ নবজাত শিশু লাগছে তাকে। রেয়ান হাসলেন। পরক্ষনেই আবার আফসোস করলেন। না জানি তার মরুভূমি তার কোলবালিশ কখন হবে! চেয়ার থেকে উঠে এবার হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন উনি। রাতে দু’জন জমিয়ে আড্ডা দিয়েছিলাম। তবে ঘুমের জন্য সারারাত জেগে থাকা এক প্রকার অসম্ভব ছিল আমার জন্য। রেয়ানের বুকে মাথা রেখেই একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। উনি আলতো করে আমাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে চেয়ারে বসে পর্যবেক্ষন করছিলেন আমায়। কখন যে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন খেয়ালই নেই!
চট করে দাঁড়িয়ে যান রেয়ান। ভোর হয়ে গেছে। বাবাও হয়তো জেগে গেছে এতক্ষনে। রুমে যদি তাকে না পায় রাহুল আহমেদ, তাহলে তো কেলেঙ্কারি বাঁধিয়ে ফেলবেন উনি। এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে তার। প্রেয়সীর মায়াবী মুখটা আরও একবার দেখে নিলেন রেয়ান। আলতো করে কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বারান্দা দিয়ে নিচে নেমে গেলেন।
__________________
বাসায় এসেই রেয়ান নিজের রুমের জানালার কাছের একটা লম্বা মই দিয়ে ঢুকে যান রুমে। বুকটা ক্ষাণিকটা মোচড় দিয়ে ওঠে তার। দরজা তো ভিড়ানো ছিল। এখন পুরো “হা” করা অবস্থায়। তাহলে কি বাবা জেনে গেছেন মীরার বাসায় গিয়েছিল সে? উফফ! চিন্তাটা ক্রমশই বাড়ছে তার। রেয়ান ফ্রেশ হয়ে নিলেন তাড়াতাড়ি। নিচে গিয়ে দেখলেন রাহুল আহমেদ নিশ্চিন্তে খবরের পত্রিকা পড়ছেন। নীলা রাহমান নাস্তা বাড়ছেন টেবিলে। তাকে দেখে হাসলেন উনি। রেয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে দু’জনকেই ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করলেন কিছুক্ষন। কাউকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তারা রাতের ব্যাপারে কিছু জানে! রেয়ান স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলেন। তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে বেড়িয়ে যান হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। নিজের বাসা থেকে হাসপাতালের দূরত্বটা অনেক। ফ্ল্যাটের একদম কাছাকাছি ছিল হাসপাতালটা। রেয়ান চেয়েছিলেন বিয়ের দিন নিজের বাসায় থাকতে আসবেন। তাও কয়েকদিনের জন্য মাত্র। তবে তা মানতে নীলা রাহমান নারাজ। তিনি এক প্রকার বাধ্য করেছেন তাকে নিজের বাবার সাথে একই বাড়িতে থাকতে। কিভাবে যেন রেয়ানও মায়ের বাধ্য ছেলে হয়ে যান। যেন মা ছাড়া তিনি কিছু বুঝেনই না। একদম নিষ্পাপ নবজাতক শিশু যাকে বলে!
এদিকে রেয়ান বাসা থেকে বের হতেই রাহুল আহমেদ খবরের পত্রিকা ভাঁজ করে টেবিলে রেখে দেন। চোখ থেকে চশমাটা খুলে মোবাইল হাতে নেন তিনি। মামীর নাম্বারে ফোন দিতেই দুই-তিনবার রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে ফেলেন মামী। দু’জনের মধ্যে কুশলতা বিনিময় হওয়ার পরপরই মামী বলে উঠেন…
— “এত সকালে ফোন দিলেন যে বেয়াই মশাই। কোনো জরুরি তলব?”
— “হ্যাঁ! আসলে আমি চাই রেয়ান আর মীরার বিয়ে যেন একটু তাড়াতাড়ি হোক। এই যেমন আর তিন দিন পর।”
মামী আপত্যি প্রকাশ করে বলে উঠেন…
— “এত তাড়াতাড়ি কিভাবে কি করব আমরা? অনতত এক সপ্তাহ সময় দিন আমাদের।”
— “আপনি একটু বুঝার চেষ্টা করুন বেয়াই। আমার ছেলেটা কেমন আপনি জানেনই। ও চায় বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক। তাছাড়া আমরাও চাই খুব শীগ্রই যেন মীরা আমাদের ঘরের বউমা হয়ে আসুক।”
— “কিন্তু…”
— “আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ। আমি সব মেনেজ করে ফেলবো। তাছাড়া আপনার ইয়াং বয় আবদ্ধ তো আছেই।”
— “আচ্ছা! আমি মীরার সাথে এ বিষয়ে কথা বলব।”
— “আজকে রাতেই কথা বলার চেষ্টা করবেন। আমি তিন দিনের মাঝেই ওদের বিয়েটা করিয়ে ফেলতে চাই।”
— “জ্বী।”
— “তাহলে এখন রাখি। খোদা হাফেজ!”
— “খোদা হাফেজ।”
রাহুল আহমেদ ফোন কেটে দিলেন। এসময় চা হাতে নিয়ে উপস্থিত হলেন নীলা আহমেদ। রাহুল আহমেদের হাতে চা দিতে দিতে বলে উঠলেন…
— “এত তাড়া কিসের বিয়ের? তাছাড়া মিথ্যা বললে কেন? মানলাম রেয়ান চায় বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তো বলে নি।”
নিলা আহমেদের কথায় পাত্তা দিলেন না রাহুল আহমেদ। নিজের মতো করে বলে উঠলেন…
— “তোমার ছেলেকে বিয়ের পরপরই তার নোংরা ফ্ল্যাটে চলে যেতে বলবে। বউমা আমাদের সাথেই থাকবে।”
নীল আহমেদ স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন…
— “এসব করে লাভ?”
— “শাস্তি দিবো ওকে। নিজের বাবার কথা না শোনার শাস্তি। আচ্ছা নীলা তুমিই বলো আমার চাওয়াটা কি খুব বেশি বড় ছিল? শুধু তো আমার বিজনেসটাই হেন্ডেল করতে বলেছিলাম তাকে। যাও! তাও মানলাম তার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে, সে হয়েছে। আমি তাকে ডাক্তারি করার পাশাপাশি বিজনেসটা করতে বলেছিলাম তাও সে জেদ ধরে সেটাও করতে চাইছে না। তাই রাগ করে বলেছিলাম ওকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে। আমি একবার বলেছি দেখে ওর কি বাসাটা ছেড়ে চলেই যেতে হবে?”
— “না। তবে ওর কথা হচ্ছে ও একসাথে দু’টো জিনিস সামলাতে পারবে না। তোমার তো আরেকটা ছেলে আছে। তাকে কেন বিজনেস করতে বলো না?”
— “বলব না আমি।ও পড়ালেখা করছে তাই করুক। আর রইল তোমার ছেলের কথা, ওকে তো আমি শাস্তি দিবোই। বউমা একবার ঘরের বউ হয়ে আসুক। কিভাবে ও বিজনেসটা না করে আমি শুধু তা-ই দেখবো।”
নীলা রাহমান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মনে মনে বললেন- “বাবা-ছেলে দু’জনেই একই। একদম সবকিছুতে অতিরিক্ত!”
৪৯.
সকাল প্রায় ১১টা। ভার্সিটির মাঠে হাঁটাহাঁটি করছি আমি আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। হঠাৎ একটু দূরে দিহানকে দেখতে পেলাম। সে জেনির সাথে বসে হেসে হেসে গল্প করছে। এটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল নিমিষেই। যাক! দিহান তাহলে অতীতের পিছু ছেড়ে এখন বর্তমানে নিয়ে বাঁচতে শুরু করেছে। মুখের হাসিটা আরও প্রখর হলো। একবার ভাবলাম দিহানের কাছে গিয়ে কথা বলব। পরক্ষনেই ভাবলাম- “না থাক! কি দরকার আবার অতীতকে ওর সামনে দাঁড় করানোর?” ঘুড়ে দাঁড়ালাম আমি। বেস্ট ফেন্ডের হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলাম ক্লাসের দিকে। ও ভ্রুঁ কুঁচকালো। আমি হেসে বলে উঠলাম…
— “ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।”
ওর যেন সন্দেহ গেল না। আমার দিকে আগের নেয় তাকিয়ে রইলো সে।
____________________
জেনির সাথে কথা বলতে বলতে দিহানের চোখ হঠাৎ-ই চলে গেল সবুজ রঙের কামিজ পড়া মেয়েটির দিকে। পিছনে ফিরে থাকা সত্ত্বেও দিহানের চিনতে অসুবিধে হলো না যে, সেটা তার মীরু। দীর্ঘশ্বাস ফেলল দিহান। জেনির দিকে তাকালো সে। মীরুর সাথে জেনির অনেক মিল। জেনি কথায় কথায় খিল খিল করে হাসে, মীরুও তাই। মীরুর মতো জেনির নাকটাও মুক্তদানার মতো ঘেমে থাকে। মীরার পাশে দিহান যখনই বসত একটা আলাদা ঘ্রাণ পেত তার চুল থেকে। সেই একই ঘ্রাণ জেনির চুল থেকেও প্রবল ভাবে পায় দিহান। আর সবচেয়ে মিল যেটায় আছে সেটা হলো- জেনি লজ্জা পেলে তার মুখ অধিকাংশই মীরার মতো হয়ে যায়। যা দেখে প্রথমে অনেক অবাক হয়েছিল দিহান। কিন্তু এখন! এখন বিধাতার কাছে শুকরিয়া আদায় করে সে। তার স্বপ্নের মায়াবতীকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তারই মতো একটা মায়াবতীকে তাকে দিয়েছেন বিধাতা।
দিহান জেনির হাত ধরে ফেলল চট করে। জেনি চমকায়। দিহান হাসে মৃদু। বলে উঠে…
— “তোমাকে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করতে পারি জেনি?”
জেনি অবাক হয়। আশেপাশে তাকায় একবার। মাঠে অনেক মানুষ আছে। কেউ বসে আছে, তো কেউ হাঁটছে। এমন পরিবেশে দিহান কি বলছে তাকে? সত্যিই কি বলেছে নাকি তার শুনতে কোনো ভুল হচ্ছে?জেনির জবাব না পেয়ে দিহান আবার বলে উঠে…
— “প্লিজ জেনি। একটু জড়িয়ে ধরে কান্না করি। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। কান্না করা প্রয়োজন।”
জেনি আরেক দফা অবাক হয়। সাথে চমকায়। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে ওঠে…
— “এখানে?”
প্রতিউত্তরে দিহান আর কিছু বলে না। জেনিকে জড়িয়ে ধরে ততক্ষনাত। জেনি যেন জমে যায়। নিজ থেকে দিহান তাকে স্পর্শ করেছে৷ এটা কি বিশ্বাস করার যোগ্য? নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে জেনি। চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষন। কিছু বলতে যাবে তার আগেই বুঝতে পারে দিহান কাঁদছে৷ দিহানের চোখের পানিতে তার ঘাড় ভিঁজে যাচ্ছে প্রবল ভাবে। জেনি থেমে যায়। আলতো করে পিঠে হাত রাখে। শান্তনামূলক কিছু বলছে না জেনি। কাঁদুক না ছেলেটা। কোথায় যেন শুনেছে সে “কাঁদলে কষ্ট কমে!”
.
.
চলবে…