বদনাম

বদনাম—– পর্বঃ ৭

শার‌মিন আক্তার
–অভির বাবাঃ তুই‌ কি মানুষ না‌কি জা‌নোয়ার?
তোর মত কুলাঙ্গার ছে‌লে‌কে আমি জন্ম দি‌য়ে‌ছি সেটা ভাব‌তেই নিজের উপর নি‌জের ঘৃনা হ‌চ্ছে। তোর সমস্যার কথাগু‌লো তুই আমাদের সবাইকে বল‌তে পার‌তি। আমরা যেভা‌বে হতো সবাই মি‌লে সব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতাম। বে‌রিয়ে যা আমার বা‌ড়ি থে‌কে!
অ‌ভিঃ মা প্লিজ তু‌মি বাবাকে বোঝাও!
অ‌ভির মাঃ কি বুঝা‌বো অভি? এই যে ছোট বেলা থে‌কে তো‌কে যা শিক্ষা দি‌য়ে‌ছি সব তুই মিথ্যা প্রমান ক‌রে দি‌ছিস? তনয়া মে‌য়েটা‌কে অনেক ভা‌লো‌বে‌সে এ বা‌ড়ির বৌ ক‌রে এনে‌ছিলাম। আজ ও থাক‌লে বা‌ড়িটা খু‌শি‌তে মে‌তে থাক‌তো। তারম‌ধ্যে মে‌য়েটা প্রেগ‌নেন্ট! ওর গ‌র্ভে আমা‌দের বং‌শের রক্ত বই‌ছে কিন্তু তোর নোংড়া‌মি‌তে মে‌য়েটা আজ সবার কা‌ছে খারাপ। সবাই‌ ওকে নি‌য়ে যা তা #বদনাম র‌টি‌য়ে‌ছে।
তুই আমা‌দের কা‌ছে কি বল‌ছি‌লি?
‌যে, তনয়া ওর বি‌য়ের আগের বয়‌ফ্রেন্ডএর সা‌থে পা‌লি‌য়ে গে‌ছে। আর তোকেও সে নাম্বার থে‌কে ফোন দি‌য়ে বল‌ছে তোর সা‌থে ঘর করা সম্ভব না। আস‌লে সত্যিতো এটাই মে‌য়েটা নি‌জে‌কে তোর মত পশুর হাত থে‌কে বাঁচা‌তে পা‌লি‌য়ে‌ছি‌লো। তুই একই কথা তনয়াদের বা‌ড়িও কেঁ‌দে কেঁ‌দে ব‌লে‌ছি‌লি এমন কি মোবাইলে নকল একটা মে‌সেস দে‌খি‌য়ে তা‌দের বিশ্বাস করি‌য়েছি‌লি। তারা তো‌কে ছে‌লের মত জান‌তো ব‌লে নি‌জের মে‌য়ে‌কে বিশ্বাস না ক‌রে তো‌কে কর‌ছে। কিন্তু তুই তা‌দের বিশ্বা‌সের এই প্র‌তিদান দি‌লি? আরে সে রা‌তে তনয়ার বাবা মর‌তে ব‌সে‌ছি‌লো। তুই তখনও নাটক ক‌রে তনয়ার মা‌কে তনয়ার উপর বি‌ষি‌য়ে দি‌লি! আবার বল‌ছিস ভুল হ‌য়ে গে‌ছে?
হুমমহহ ভুল! আরে ভুল‌তো আমা‌দের সবার হ‌য়ে‌ছে তো‌কে বিশ্বাস ক‌রে! আর সব থে‌কে ভুল হ‌য়ে‌ছে তোর বাবা আর আমার তোর মত জা‌নোয়ার অমানুষ‌কে পৃ‌থিবী‌তে এনে। যে নি‌জের স্ত্রী‌কে সম্মান কর‌তে জা‌নেনা সে কি ক‌রে নি‌জের মা‌কে কি সম্মান কর‌বে? তে‌াকে ছাড়া থাক‌তে কষ্ট ঠিকই হ‌বে কারন শত হোক নি‌জের ছে‌লে‌তো! কিন্তু নি‌জের ভিতর ‌অপরাধবোধ একটু হ‌লেও কম হ‌বে! কিন্তু তুই আমা‌দের সা‌থে থাক‌লে পাঁ‌পের বোঝা দিন দিন বে‌ড়েই যা‌বে! যা বের হ‌য়ে যা আমার চো‌খের সাম‌নে থে‌কে।
অ‌ভির বাবাঃ য‌দি কখ‌নো তনয়া মা‌কে ফি‌রি‌য়ে নি‌য়ে আস‌তে পা‌রিস ত‌বে আমা‌দের মুখ দেখাস। ছে‌লে ব‌লে পু‌লি‌শে দিলাম না তো‌কে! যা চ‌লে যা।
অ‌ভি একা একা রাস্তায় হাট‌ছে —–
অ‌ভির আজ নি‌জের উপর স‌ত্যিই খুব ঘৃনা হ‌চ্ছে ও কিভা‌বে এতটা জঘন্য কাজ কর‌তে পারলো? নি‌জে‌কে নিজে প্রশ্ন কর‌লো,
আচ্ছ‌া আমি সেই অভি যে, তনয়া‌কে প্রথমবার বি‌য়ের অনুষ্ঠা‌নে দে‌খে পাগল হ‌য়ে গে‌ছিলাম! ভাব‌ছিলাম ওকে না পে‌লে জীবন বৃথা!
আ‌মি কি সেই অভি?
যে, তনয়া‌কে দেখার পর ওর প্র‌তি পাগল হ‌য়ে মাত্র একমা‌সের ম‌ধ্যে ওকে বি‌য়ে ক‌রে ঘরে তুল‌ছিলাম!
আ‌মি কি সেই অভি?
‌যে, তনয়া‌কে প্রথম রা‌তে ওয়াদা ক‌রে‌ছিলাম কষ্ট নামক জি‌নিসটা‌কে ওকে স্পর্শ কর‌তে দি‌বো না?
আ‌মি কি সেই অভি?
যা‌কে তনয়া মাত্র ক‌য়েক‌দিনেই নি‌জের সবটুকু ভা‌লোবাসা দি‌য়ে পূর্ন ক‌রে দি‌ছি‌লো। আর আমি সিক্ত হ‌য়ে‌ছিলাম তনয়ার ভা‌লোবাসায়। পাগল হ‌য়ে যেতাম ওকে এক পলক না দেখ‌লে!
‌যে তনয়া আমা‌কে নি‌জের সবটা দি‌য়ে ভা‌লো‌বে‌সে‌ছে। আমার জীব‌নের সব অপূর্নতাকে দূর ক‌রে পূর্ন ক‌রে দি‌ছি‌লো আমার জীবনটা‌কে। যে , মাত্র এক মা‌সে আমার সংসারটা‌কে স্ব‌র্গে প‌রিণত ক‌রে‌ছি‌লো। এমন‌কি আমি বাবা হবার যোগ্য নই জে‌নেও আমা‌কে বাবা হবার মতও পৃ‌থিবীর শ্রেষ্ঠ সু‌খের অনুভবটা দি‌লো। তাকে আমি কি দিলাম? চাই‌লেই ও এবোশন ক‌রে নি‌জের নতুন জীবন শুরু কর‌তে পা‌রে। কিন্তু ক‌রে‌নি বাচ্চাটার কথা ভে‌বে। অথচ আমি তা‌কে রাগ, ঘৃনা, নোংড়া‌মি আর বদনাম ছাড়া কিছু দেই‌নি।
নাহ তনয়ার কা‌ছে মাফ চাই‌তে হ‌বে! দরকার হ‌লে ওর পা‌য়ে পা ধ‌রে মাফ চাই‌বো ও যা শা‌স্তি দি‌বে মাথা পে‌তে নি‌বো তবুও আমি তনয়া‌কে আবার ফি‌রি‌য়ে আন‌বো। তার আগে তনয়ার বাবা মাকে সব স‌ত্যি ব‌লে নি‌জের পাঁ‌পের প্রা‌শ্চিত্য কর‌তে হ‌বে! এর ম‌ধ্যেই কে যে‌নো ডাক দি‌লো ঐ শালা দালাল! অভি পিছ‌নেন ফি‌রে দেখে ওদের এলাকার এক ছে‌লে । দালাল কথাটা শু‌নে অভি রাগ ক‌রে ছে‌লেটার শা‌র্টের কলার ধরে মার‌তে শুরু কর‌লে ছে‌লেটা ওকে ধাক্কা দি‌য়ে ব‌লে
——-‌নি‌জের বৌ‌য়ের ঘ‌রে পরপুরুষ ডু‌কি‌য়ে দি‌তে পার‌বি আর দালাল ডাক শুন‌তে পার‌বি না। ব‌লি তোর বৌকে দেখ‌লে যে কা‌রোরই মাথা ঘু‌রে যাবে! ব‌লি তোর বৌ‌য়ের রেট কত‌রে! আমা‌কে এক রা‌তের ব্যাবস্থা ক‌রে দি‌বি?
অ‌ভি নি‌জের রাগ আর সামলাতে পার‌লো না। ছে‌লেটা‌কে ক‌য়েক ঘা দি‌য়ে বল‌লো
অ‌ভিঃ তোর সাহস তো কমনা, আমার তনয়া‌কে নি‌য়ে বাঁ‌জে কথা বল‌ছিস!
—–তুই তো নি‌জেই নি‌জের বৌকে বদনা‌মের ভা‌গি কর‌লি আবার বড় বড় কথা বল‌ছিস!
অ‌ভি আর কিছু বল‌লো বা ছে‌লেটা‌কে ছে‌ড়ে দি‌য়ে সোজা তনয়া‌দের বা‌ড়ির উদ্দে‌শ্যে রওনা হ‌লো। তনয়া‌দের বা‌ড়ি গি‌য়ে সব স‌ত্যি কথা বলার পর তনয়ার মাও অভি‌কে চড় মে‌রে অনেক কথা শু‌নি‌য়ে বাড়ি ‌থে‌কে বের ক‌রে দেয়। অভি রাস্তায় উদ্ভটএর মত হাঁট‌ছে মাথা কাজ করা বন্ধ ক‌রে দি‌ছে। শুধু একটাই কথা ভাব‌ছে কিভা‌বে তনয়ার সাম‌নে গি‌য়ে দাড়াবে?
এ‌দি‌কে তনয়া বেশ সুন্দরভাবে নি‌জে‌কে গু‌ছি‌য়ে নি‌চ্ছে। এমদা‌দের মা তনয়া‌কে নি‌জের মে‌য়ের মত দে‌খে আর এমদাদ তো বোন বল‌তে অজ্ঞান। তনয়া এমদা‌দের মা‌কে মা ব‌লেই ডা‌কে। তনয়া এমদাদ‌কে পড়ায় অনেক সাহায্য ক‌রে। কো‌চিং এ ভা‌লো পড়া‌নোর ফ‌লে তিনটা ব্যাচ মোটামু‌টি পে‌য়ে গে‌ছে। বেত‌নের সব টাকা এ‌নে এমদা‌দের মা‌য়ের হা‌তে এনে দি‌য়ে ব‌লে মা তোমার যা ভা‌লো ম‌নে হয় ক‌রো। টাকা পয়সার ঝা‌মেলায় আমায় একদম টান‌বে না। এমদা‌দের মাও তনয়ার টাকা থে‌কে বে‌শির ভাগ বাঁ‌চি‌য়ে তনয়ার না‌মে রে‌খে দেয়।
আর এদি‌কে অনেক সাহস ক‌রে তনয়ার বাবা মা আয়াত‌দের বা‌ড়ি আসে! এসে তু‌লি নিকট তনয়ার চ‌লে যাবার খবর শু‌নে অনেক কান্না ক‌রে। তু‌লি খুব যু‌ক্তি বাদী মে‌য়ে ও উচিৎ কথায় কাউ‌কে ছা‌ড়ে না। তাই তনয়ার বাবা মা‌কে বল‌লো——
তু‌লিঃ এখন লোক দেখা‌নো কান্না ক‌রে কি লাভ? যখন নি‌জের মে‌য়ের পা‌শে থাকা দরকার ছি‌লো তাকে সা‌পোর্ট করার দরকার ছি‌লো তখন তো তা‌কে মিথ্যা বদনাম দি‌য়ে কুকু‌রের মত ঘর থে‌কে বের ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লেন। আপনা‌দের ভু‌লের জন্য আমার আয়াতটাকে এলাকার কত লোক কত কথা শোনা‌লো। তনয়া‌ তো অনেক ভা‌লো মে‌য়ে দে‌খে কিছু বলে‌নি আমি হ‌লে আপনা‌দের মত বাবা মা কে জী‌বিত অবস্থায় দাফন ক‌রে দিতাম। এখন আবার সবাই‌কে দে‌খি‌য়ে ন্যাকা কান্না কর‌ছে লজ্জা ক‌রে না! বিশ্বাস কা‌কে ব‌লে আমা‌দের প‌রিবার আর আমার আর আয়া‌তের সম্পর্ক দে‌খে জানুন শিখুন! ‌সে‌দিন য‌দি ছ‌বি তোলার জায়গায় আমি নাও থাকতাম তাও আয়াত‌কে চোখ বন্ধ ক‌রে বিশ্বাস করতাম কারন আমা‌দের সম্পর্কটা আপনা‌দের মত ঢং দেখা‌নোর না স‌ত্যি স‌ত্যি বিশ্বাস আর ভা‌লোবাসার।
আমার বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে আরো ছয় বছর আগে তখন আমার বয়স মাত্র আঠা‌রো। বাবা‌কে ব‌লে‌ছিলাম বাবা আমার আয়াত‌কে চাই। বাবা কিন্তু সে‌দিন আমায় উল্টা পাল্টা কথা ব‌লে ধমকায়‌নি উল্টা আমার উপর ভরশা রে‌খে‌ছে, আমার মতামতটা‌কে মূল্যায়ন ক‌রে‌ছে। আজ পর্যন্ত আমার বাবা মা আমার সব থে‌কে প্রিয় বন্ধ হ‌য়ে আছে। কেন আমার বাবা-মা কি বাবা-মা না, না‌কি তারা এলি‌য়েন? সে কি তার মে‌য়ে‌কে শাসন ক‌রে‌নি? ক‌রে‌ছে কিন্তু আপনা‌দের মত অবিশ্বাস ক‌রে বাবা-মে বা মা-মে‌য়ের সম্পর্ক নষ্ট ক‌রে‌নি। যে মে‌য়ে‌কে দশমাস গ‌র্ভে রাখ‌লেন, বাইশ বছর পৃ‌থিবী‌তে লালন পালন কর‌লে তা‌কে মাত্র এক রা‌তের ব্যাবধা‌নে ভুল বুঝ‌লেন ? আজব বাবা-মা!
আয়াতঃ তু‌লি চুপ ক‌রো না! ওনারা ওনা‌দের ভুল বুঝ‌তে পার‌ছে। প্লিজ চুপ ক‌রো তু‌লি?
তু‌লিঃ কেন চুপ কর‌বো? ভু‌লে গে‌ছো তনয়ার মা সে‌দিন তোমায় কত অপমান কর‌ছি‌লো, এমন‌কি বাবা‌কে পর্যন্ত ব‌লে‌ছে এমন লম্পট ছে‌লে তা‌দের হ‌লে গু‌লি ক‌রে মে‌রে ফেল‌তো। তু‌মি ভুল‌তে পা‌রো কিন্তু আমি আমার স্বামী‌কে করা অপমা‌নের কথা ভুল‌তে পার‌বো না। উপরওয়ালা আছেন তাই আমা‌কে আমার স্বামী আর শ্বশু‌রের অপমা‌নের যোগ্য উত্তর দেয়ার সু‌যোগ ক‌রে দি‌ছেন। ভু‌লে গে‌ছো তু‌মি এলাকার লোক এখ‌নো তোমায় যা তা ব‌লে। শুধু মাত্র সে‌দিন ওনারা এসে এখা‌নে নাটক কর‌ছি‌লো ব‌লে। শু‌নোন নি‌জের মে‌য়ে‌কে যা ইচ্ছা তা বলার অধিকার আপনা‌দের আছে আমার স্বামী‌কে যা ইচ্ছা তা বলার অধিকার কে দি‌ছে আপনা‌কে? যত্তসব। এখন আমাদের এখা‌নে এসে ইমোশনাল ড্রামা কর‌তে এসে‌ছে? নি‌জের র‌ক্তের প্র‌তি বিশ্বাসহীন মানুষ লাই‌ফে প্রথম দেখলাম। তাও আবার তনয়ার মত এত নেক ম‌নের একটা মে‌য়ে‌কে। একবারও ভাব‌ছেন প্রেগ‌নেন্ট অবস্থায় মে‌য়েটা এখন কোথায় কিভা‌বে দিন যাপন কর‌ছে? সেটা কেন ভাব‌বেন, ভাবার মত মন আছে? থাক আর কিছু বল‌বো না আপনা‌দের। আপনা‌দের বলা না বলা সমান! দাড়ান আমি আস‌ছি! তনয়ার আপনাদের জন্য চি‌ঠি রে‌খে গে‌ছে সেটা নি‌য়ে আস‌ছি।
তারপর মু‌খে বির‌বির কর‌তে কর‌তে তু‌লি রু‌মে চ‌লে গে‌লো। তনয়ার বাবা মা ড্রইয়িং রু‌মের সোফায় ব‌সে ফু‌ঁপি‌য়ে ফু‌ঁপি‌য়ে কাঁদ‌ছে। কি বল‌বে? বলার মত কিছু যে নাই তা‌দের মু‌খে! কারন তু‌লি যা বল‌ছে সব অক্ষ‌রে অক্ষ‌রে স‌ত্যি। এত‌দিন মিথ্যা‌কে স‌ত্যি ভে‌বে তারা মিথ্যার পিছ‌নে ছ‌ুটি‌ছে। আজ স‌ত্যি তা‌দের ম‌নে হ‌চ্ছে তারা বাবা মা না‌মের কলঙ্ক। তা‌দের কান্না দে‌খে আয়া‌তের খ‌ুব খারাপ লাগ‌ছি‌লো তাই বল‌লো
আয়াতঃ ‌প্লিজ কান্না কর‌বেন না। তু‌লির কথায় কিছু মনে কর‌বেন না। ওর হ‌য়ে আমি ক্ষমা চাই‌ছি।
তনয়ার বাব‌াঃ না বাবা তোমার স্ত্রী ঠিক বল‌ছে। সম্প‌র্কের বিশ্বা‌সের কি বি‌শ্লেষন তা তু‌লি‌কে না দেখ‌লে বুঝ‌তে পারতাম না। তোমা‌দের বি‌য়ের মাত্র ছয় বছর অথচ একে অপ‌রের প্র‌তি বিশ্বাসে কত ভরপুর! সম্প‌র্কের মাধুর্যতা‌ কাকে ব‌লে তোমা‌দের থে‌কে শেখা উচিৎ! সবই তোমা‌দের বাবা মায়ের শিক্ষা আর ভরশার কার‌নে। অথচ বাইশ বছর ধ‌রে যে মে‌য়ে‌কে নি‌জের হা‌তে মানুষ কর‌ছি তা‌কে বিন্দু মাত্র বিশ্বাস করলাম না।
তু‌লি চি‌ঠিটা নি‌য়ে এসে তনয়ার বাবার হা‌তে দি‌লো। আর বল‌লো।
তু‌লিঃ আমা‌কে মাফ কর‌বেন আঙ্কেল-আন্টি! আমি আপনা‌দের সা‌থে বেয়াদ‌বি ক‌রে ফেল‌ছি। আমার অত কড়া ভাষায় কথা বলা উচিৎ হয়ে‌নি। আস‌লে রাগ উঠ‌লে আমার মাথা ঠিক থা‌কে না তাই খারাপ ব্যবহ‌ার ক‌রে ফেল‌ছি। কিন্তু কি জা‌নেন আন্টি? তনয়া আপনা‌দের ভিষন ভা‌লোবা‌সে। যত‌দিন এখা‌নে ছি‌লো এমন কোন দিন নাই যে, আপনা‌দের কথা ম‌নে ক‌রে কান্না না কর‌ছে? আপনারা খুব লা‌কি যে, এমন ভালো ম‌নের একটা মে‌য়ে পে‌য়ে‌ছেন।
তনয়ার বাবা কাঁপা কাঁপা হা‌তে চি‌ঠিটা খুল‌লো। সেখা‌নে লেখা
বাবা-মা,
অ‌নেক ভা‌লোবা‌সি তোমা‌দের। তোমরা যতই আমার অবিশ্বাস ক‌রো কিন্তু আমার আল্লাহ জা‌নে আমি কোন অন্যায় ক‌রি‌নি। যতই ঘৃনা ক‌রো না কে‌নো আমি তোমা‌দের সবসময় ভা‌লোবাস‌বো। কারন তোমারা আমার বাবা-মা! আর তোমা‌দের স্থান সর্বোচ্চ!
একটা অনু‌রোধ আমার ভাইটা‌র উপর সবসময় বিশ্বাস রাখার চেষ্টা ক‌রো। কারন ছে‌লে-মে কষ্ট পে‌লে বাবা-মা‌য়ের কা‌ছে যায় নি‌জে‌দের কথা বল‌তে। কিন্তু বাবা-মা ই যদি বিশ্বাস না ক‌রে সন্তানরা কোথায় যাবে?
ভা‌লো থে‌কো তোমরা। নি‌জে‌দের খেয়াল রে‌খো। আল্লাহ হা‌ফেজ।
****তোমাদের #বদনামী মে‌য়ে****
‌চি‌ঠিটা প‌ড়ে তনয়ার বাবা-মা হুহু ক‌রে কেঁ‌দে উঠ‌লো।
তনয়ার বাবা মা তনয়াকে অনেক খু‌ঁজেও পায়‌নি। হয়‌তো তনয়া নি‌জে থে‌কে ধরা দেয়‌নি। হয়তো তা‌দের থে‌কে লুকি‌য়ে আছে।
চ‌লে গে‌লে ক‌য়েকমাস——
‌কেউ শা‌ন্তি‌তে নেই।
তু‌লি আর আয়া‌তের ঘ‌রে সু‌খের ছড়াছ‌ড়ি থাক‌লেও মা‌ঝে মা‌ঝে তনয়ার কথা ম‌নে ক‌রে ভিষন মন খারাপ ক‌রে ওরা। বি‌শেষ ক‌রে তু‌লি। কিন্তু আয়াতের ভা‌লোবাসা তু‌লি‌কে আবার ফু‌টি‌য়ে তু‌লে সকা‌লের ফুটন্ত শাপলার মত। কিছু‌দিন পর আস‌বে যে ছোট্ট সোনা তাকে নি‌য়ে মে‌তে আছে সবাই। কিন্তু কিছু কার‌নে ভিষন টেনশ‌নে আছে আয়াত!
তনয়া এখন আর আগের মত কাজ কর‌তে পা‌রে না। কারন এ সময় এত চাপ নেয়া ‌কোন মে‌য়ের প‌ক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু এমদাদ আর তার মা তনয়ার য‌ত্নে কোন ত্রু‌টি রা‌খে না। মাঝরা‌তে তনয়া খুব কাঁ‌দে, হয়‌তো এখন কা‌রো অনুভু‌তি চাই‌ছে ওর মন। মন চাই‌ছে প্রিয় মানুষটার কাঁ‌ধে মাথা রেখে কান্না ক‌রে বু‌কের সব কষ্ট না‌মি‌য়ে দিতে। না‌মি‌য়ে দিতে বুক থে‌কে #বদনাম নামক নোংড়া পাথ‌রের ভারটা‌কে। চোঁখ থে‌কে ঝড়ুক কতক্ষন অশ্রু নামক বৃ‌ষ্টি ফোঁটা। কিন্তু সে অশ্রু দুঃখের নয় সু‌খের হওয়া উচিৎ।
আর অভি——-?
অসহ্য যন্ত্রনায় দিন কাঁট‌ছে তার। একটা একটা ক‌রে প্রহর গুন‌ছে ক‌বে তনয়ার দেখা পা‌বে——-
চল‌বে———-