প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 70
আহানা চোখ খুলে দেখলো শান্ত কানে ফোন ধরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে
উঠে বসে পেটে হাত দিয়ে বসে থাকলো সে,তারপর চোখ মুছে নেমে গিয়ে শান্তর পা ধরে বসে পড়লো ফ্লোরে
ছল ছল চোখে চেয়ে রইলো শান্তর দিকে
শান্ত চমকে ফোন থেকে মনোযোগ হটিয়ে নিচে তাকালো
আহানা ওর পা ধরে বলতেসে যেন এবোরশান না করায়
.
আহানা এসব কি করতেসো?
.
শান্ত প্লিস!
.
ওকে ওকে,করবো না,কান্না থামাও প্লিস,উঠো এখন
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে শান্তর হাত ধরে নিজের মাথায় রাখলো
“বলেন কখনও এমনটা করবেন না,কথা দিন আমাকে
.
শান্ত চুপ করে থেকে বললো”কথা দিলাম”
.
আহানা খুশি হয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরলো
শান্ত ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাবনার রাজ্যে ডুব দিয়েছে
আহানার মন রক্ষার্থে বলে তো দিলাম কিন্তু এতে তো আহানাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলেও দিলাম
.
বাসায় ফিরে আহানা একটা সুতির শাড়ী নিয়ে বসলো এটা কেটে কেটে বাবুর কাঁথা বানাবে সে
শান্ত চা বানাচ্ছে আর সোফার দিকে বারবার চেয়ে দেখতেসে
আহানার চোখ মুখ হাসিতে টইটুম্বুর
এই মেয়েটার কিছু হলে আমি বাঁচবো না,মেয়েটা বুঝতে চায় না কেন!!
চা বানিয়ে নিয়ে আসলো শান্ত
আহানা চা খাচ্ছে আর সেলাই করতেসে
.
সন্ধ্যা হতেই রুপা আর নওশাদ আহানার বাসায় এসে হাজির,হাতে অনেক অনেক খেলনা আর একটা কিউট বেবির দোলনা
.
আমার একটা মাত্র বেস্টফ্রেন্ডের বাবুর জন্য সামান্য কিছু গিফট!!
.
হুম আর আমার একটা মাত্র বেস্টির😎
.
এত কিছু??আচ্ছা রুপা তুই মেয়েদের জামা আনলি যে তুই কি সিউর মেয়েই হবে?
.
আরে মেয়ে হবে দেখিস,আমার আন্দাজ অনেক ভালো হুহ
.
নওশাদ দেখি ছেলেদের জামা আনছে
.
আরে আমার ধারনা ছেলে হবে তোদের!তাই আনলাম,রুপা অনেক ঝগড়া করলো যে মেয়ে হবে কিন্তু আমার মতে ছেলে হবে
.
হইসে ঝগড়া করতে হবে না,বসো তোমরা আমি চা বানাই আনতেসি
.
আরে আহানা বসো,তুমি কাজ করতে হবে না,আজ রুপা রাঁধবে
.
কি বললে তুমি?আমি তো রান্না পারি না
.
আরে আমি আছি না,চলো
.
শান্ত আহানার পাশে বসে একটা খেলনা দিয়ে খেলতে খেলতে বললো “আজ আর নাস্তা করা হবে না,দুটোয় মিলে রান্নাঘরে বোম ব্লাস্ট করে তারপর ফিরবে”
.
আহানা একটা খেলনা গাড়ী হাতে নিয়ে দেখতেসে
“আচ্ছা কোর্সটা এই ৯মাসে করে নিলে হয় না?”
.
শান্ত তার হাতের খেলনাটা রেখে আহানার দিকে তাকালো
“হুমমম!তা করাই যায়,আমি ডাঃ রোস্তমের সাথে কথা বলো দেখতেছি”
শান্ত ডাঃরোস্তমকে ফোন করে ব্যাপারটা সম্পর্কে কথা বললো
উনি বললেন গর্ভকালীন সময়ে এটা করা যাবে না
নওশাদ জানালো তার জানা মতে বিদেশেও এরকম হসপিটাল নেই যে অসম্ভব কে সম্ভবে পরিণত করবে কথাটা শুনে শান্তর কলিজা কেঁপে উঠলো
এদিকে আহানা রুপার সাথে বসে বাচ্চা নিয়ে গল্প করছে
মেজাজ বিগড়ে গেলো শান্তর,রেগে রুম থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে তার বাসার দিকে চলে গেলো সে
গোটা একদিন হয়ে গেছে শান্ত আহানাকে একটিবার দেখতেও আসেনি
আজ অফিস বন্ধ বলে অফিসের বাহানায় ও আহানা তাকে দেখতে পারার সুযোগটা পোলো না
অফিসের রুমে রঙ করতেসে তাই আজ কাজ নেই
আহানা ভাবতেসে শান্ত হঠাৎ এমন কেন করতেসে
বলা নেই কওয়া নেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো?
.
চিন্তায় থাকতে না পেরে আহানা বাসায় তালা দিয়ে শান্তর বাসার দিকে চললো,বাসায় এসে দেখলো পুরো বাসা ফাঁকা শুধু শান্তর রুমে আলো জ্বলতেছে,শান্ত টিভি দেখতেসে কোলে বালিশ নিয়ে
আহানাকে দেখে এমন ভাব করলো যেন সে খুশিই হয়নি
.
কি ব্যাপার??আপনি আজ সারাদিনে বাসা থেকে বের হোন নি কেন?আমার ফোন ও ধরলেন না!
.
কেন ধরবো?তুমি থাকো তোমার বাবু নিয়ে,এমনিতেও বাবু আসলে চলে যাবা তাই আগে থেকেই দূরত্ব রাখছি যাতে পরে কষ্ট না হয়
কথাগুলো শুনে আহানা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
.
কি এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও বাসায় গিয়ে কাঁথা সেলাই করো
.
আহানা মন খারাপ করে চলে গেলো
♣
শান্তর এবার নিজেরই খারাপ লাগতেসে,কিন্তু সে কি করবে?
তার কাছে যে আহানা সব চাইতে বেশি ইম্পরট্যান্ট
রাত ৮টার দিকে শান্ত আহানার বাসায় আসলো,আহানা তার রুমে,বিছানায় গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে
.
আহানা!
.
কি?
.
সরি
.
কেন?
.
বকসি তাই
কথাটা বলে শান্ত আহানাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো ওর পাশে
.
আমি কি করবো বলো,আমি তোমাকে হারাতে চাই না,প্লিস ডিসিশন পাল্টাও
.
কখনওই না
.
শান্ত আর কি করবে,আহানাকে বুঝানোর সব টেকনিক এপ্লাই করে ফেলসে তাও লাভ হলো না,শেষে বাধ্য হয়ে আহানাকে জড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়লো সে
রাত ৯:৪৫এর দিকে আহানা উঠে রান্নাঘরে এসে শান্তর জন্য খাবার নিতেসে
আহানা উঠে যাওয়ার পর পরই শান্ত ও উঠে গেসিলো,গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখতেসে এখন সে
দেখতে দেখতে কখন যে ৬টা মাস হয়ে গেলো বুঝাই গেলো না
এখন আপাতত শান্তই অফিসে যায় আহানা যায় না
তার ছুটি,মাতৃকালীন,একটু আগেই ছুটি পেয়েছে
প্রাইভেট কোম্পানি তো যতদিন কাজ করবে না ততদিন বেতন পাবে না,শান্ত আর আহানা সেটাতেই রাজি হলো
শান্ত এখন সংসার চালায়,আহানা বাসায় থাকে সারাদিন
আজ মাসের এক তারিখ
শান্ত আর আহানা রেডি হচ্ছে,মোহনগঞ্জ যাবে,বাবার কড়া আদেশ আহানা ১মাস মোহনগঞ্জে থাকবেই থাকবে
আহানা সেই শাড়ীটা পরেছে যেটা শান্তর মা রেখে গেসিলেন আহানার জন্য
আজ ৬মাস তাই নিয়মমাফিক সে এটা পরেছে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পেটে হাত দিয়ে চেয়ে আছে সে
শান্ত একটা পাঞ্জাবি পরে হাতে ২টা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে দাদা দাদির বাসার দিকে
দাদি আহানাকে আয়াতুল কুরসি পড়ে ফুঁ দিচ্ছেন আরও অনেক দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বললেন জলদি চলে আসতে,ঢাকার হসপিটাল ভালো,চিকিৎসা ও ভালো
আহানা বললো ডাঃ রোস্তম অপারেশন করবে এখানেই,তারা জলদিই চলে আসবে
শান্ত রাফির সাথে কথা বলে তার বাসায় ল্যাপটপে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবে এটা বলে সে আপাতত মানিয়েছে আর যদি দরকার হয় তাহলে আহানাকে সাথে করে নিয়ে চলে আসবে ঢাকায়
বাবার কথামত এক মাস থাকা কোনো মতেই সম্ভব না
কদিন থেকেই চলে আসতে হবে নাহলে চাকরিটা যাবে
আর এখন শান্তর মাস্টার্স কমপ্লিট!!
সে এখন আহানার সাথে ঝগড়া লাগলেই বলে “ঠিক করে কথা বলবা আমি তোমার চেয়ে অধিক শিক্ষিত”
আহানাও কিছু বলতে পারে না মাঝে মাঝে মনে মনে ভাবে শান্তর থেকে বয়সে এত ছোট না হলেও হতো,এই এক পয়েন্টের জন্য আহানা ঝগড়ায় হেরে যায় বারবার
ট্রেনে বসে আহানা বাইরে তাকিয়ে পেটে হাত দিয়ে বলতেসে “আমার বাবু!!আজ আমরা প্রথমবার তোমাকে নিয়ে তোমার দাদুর বাড়ি যাচ্ছি,তোমার কেমন লাগছে?”
.
আমি বলি?
.
আপনি কি বলবেন?ওর কেমন লাগছে আপনি জানবেন কি করে?
.
ওর ভাল্লাগতেছে না,কারণ ওর বাবার অফিস বাদ দিয়ে যেতে হচ্ছে এইটা ওর কেন ভাল্লাগবে
.
এখন থেকে বাচ্চাকে নিজের সাইডে করে নিচ্ছেন?স্টুপিড!
.
তো কি সারাদিন ম্যা ম্যা করুক তুমি চাও?
.
ব্যা ব্যা করুক সেটাও চাই না
.
হইসে সে তার মতো হবে,খুশি?
হু!!
.
এখন চলেন মোহনগঞ্জ এসে গেসে
.
শান্ত ট্রেন থেকে নেমে আহানার হাত ধরে ওকে নামালো,সকালে রওনা হওয়ায় এখন বিকাল হতে চললো,অনেকটা সময় লেগে গেছে,একটা রিকসা নিয়ে আহানাকে নিয়ে এবার সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে
.
ওমা বাসার গেটে ফুল টুল দিয়ে সাজানো,গেটের সামনে সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,সবার মুখে হাসি,অথচ আনুষ্ঠানিক বিয়ের আগের দিন ওরা যখন এসেছিল তখন বাবা আর ফুফু ছাড়া কেউ ছিল না আর আজ কিনা পুরো ব্যাটালিয়ন??
আহানা রিকসা থেকে নেমে কিছুটা শক খাওয়ার মত দাঁড়িয়ে আছে,মিতু এসে জড়িয়ে ধরলো আহানাকে
রেনু এসে আহানার ডান হাত ধরে ওকে ভিতরে নিয়ে সোফায় বসালো
আহানা তো রীতিমত ভূত দেখার মত করে মুখ করে আছে
শুধু সে না শান্তর ও মুখের ভাবগতি একই,এরকম সবাই বদলে গেলো কেন
ফুফু এসে আহানার কানের পিছনে টিকা লাগিয়ে দিলেন
রেনু একটা গয়নার সেট এনে সেগুলো আহানাকে পরানোর ব্যস্ত হয়ে গেসে
শান্ত ফ্রিজ থেকে জুস নিয়ে খাচ্ছে আর সবার কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে
খালা মিষ্টির প্লেট নিয়ে যাওয়া ধরতেই শান্ত উনাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো সবাই এমন বদলে গেলো কেন
.
আরে শান্ত বাবা একটা বাচ্চা আসতে চলেছে এটার চেয়ে বড় খুশির খবর আর কি হতে পারে?
.
তাই বলে এতো?
আরে এখনও তো হয়নি বলে অল্পসল্প করছে
হলে তো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিবে তোমার বউকে,তবে রেনু আপার এমন বদলে যাওয়াতে আমিও চমকেছি,হুট করে এত বছর পর এমন বদলালেন এখন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়
.
হুমম!সায়ন কোথায়?
.
সে তো তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে পিকনিকে গেসে
.
ওহ,যাক ভালো
.
আহানাকে সাজিয়ে দিয়েছে সবাই,আহানা শান্তর দিকে অসহায়ের মত চেয়ে আছে,ওমা এবার আশেপাশেরর সবাই আহানাকে দেখতে আসতেসে এক এক করে
কি ঝামেলা,আহানার শরীর খারাপ করছে.এত জার্নি করে এসে এখন আবার সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাতে হচ্ছে
.
পাশের বাসার চারু আন্টি বললেন আহানাকে এমন লাগছে কেন
বয়সে প্রবীণ হওয়ায় সবাই উনার কথায় মনোযোগ দিলেন
.
উনি আহানার হাত পা চোখ সব দেখে বললেন “মাইয়ার দেখি শরীরে রক্ত কম”
.
শান্ত কথা কাটিয়ে এসে বললো”হইসে সব বাদ,আমার বাচ্চার মাকে রেস্ট নিতে দাও তোমরা,সেই বিকাল থেকে সবাই খালি দেখেই যাচ্ছো,বাচ্চা হলে তো মনে হয় ২দিন ধরে দেখবা
.
আরে দেখবো না তো কি করবো,গায়ের রঙ কেমন চকচক করতেসে তুই দেখোস না শান্ত?
.
শান্ত চোখ মেরে বললো”ওমা আমার বউকে তো আমি দিনে ৪৫বার দেখি,এটা আবার বলতে হয় নাকি চারু আন্টি?”
.
ওরে বাপরে ৪৫বার??
হ😉
.
শান্ত! যাও আহানাকে নিয়ে তোমার রুমে চলে যাও,ওকে বলো এসব চেঞ্জ করে হালকা পাতলা সুতির শাড়ী পরতে, এসময়ে এত ভারী শাড়ী, গয়না গাটি পরা ভালো নয়
.
আচ্ছা মা
শান্ত আহানার হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে গেলো
আহানা একটা সাদা কালো শাড়ী পরে নিলো সব গয়না খুলে,শান্তর দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করতেসে মনোযোগ দিয়ে
আহানা ওর পাশে এসে বসে ওর পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো “তা মিঃ অশান্ত??আজ কয়বার দেখলেন আমাকে?”
.
হুমমম!৩৪বার
.
ওরে বাপরে তার মানে আর ১১বার দেখবেন?
.
জি
.
সব গুনে গুনে?
.
হ্যাঁ,এখন যাও টেবিলের উপরে রাখা এক ঝুড়ি ফ্রুটস সব খেয়ে শেষ দাও
.
কিহহ,এত কেন?
.
তোমার জন্য না আমার বাবুর জন্য
.
আমি এত খেতে পারবো না
.
তাহলে আজ রাতে একা ঘুমাইও,অন্ধকারে
.
আপনি এমন করেন কেন,আপনার তো আর আমার মত অবস্থা হয়নি তাই এমন করতেসেন,হলে বুঝতেন
.
ল্যাপটপটা রেখে শান্ত একটা কুশন পাঞ্জাবির নিচে দিয়ে পেটে বসিয়ে প্রেগন্যান্ট এক্টিং করতে করতে ঝুড়িটা নিয়ে বিছানায় আসলো
আহানা হাসতেসে মুখে হাত দিয়ে
কি?দেখো এখন সব ফল আমি খেতে পারবো
.
আহানা শান্তর চুল টেনে দিয়ে বললো “আপনি পুরাটাই পাগল!!”
.
আর তুমি মহাপাগল!
.
কেন😒
.
কারন তুমি পুরোটাই পাগল এমন ছেলেকে বিয়ে করছো😁
.
চলবে♥