পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 38

___________________________
রাত ২টা ছুঁই ছুঁই হবে।রুমের ভিতর থেকে এতো রাতে চিৎকার শুনে ধরফরিয়ে উঠে পরে এই ঘরে থাকা মানুষ গুলো।চোখে মুখে আঁতক নিয়ে নিজেদের ছুরি,রিভলবার হাতরাতে হাতরাতে হাতে নেয়।এই বাড়িতে এতো রাতে একজনই আসতে পারে।আর সে তো তাদের বস।তাদের গুরুত্বপূর্ন একটা কাজ দিয়ে গেছে তিনি।আর তারা ঘুমাচ্ছে জানতে পারলে নিশ্চিত আজ বাকিদের মত তারদেরও কপালে খারাপ কিছু আছে ।কিন্তু আজ রাতে তার আর আসার কথা না।তাহলে কে এসেছে??বাড়িটা একদম অন্ধকার।মাটির নিচে হওয়াই এই বাড়িটা এতো অন্ধকার।মানুষের কঙ্কাল ঝুলে আছে বিভিন্ন জায়গায়।পরে আছে অনেক মানুষের লাশের কঙ্কাল ফ্লোরে।রক্ত জমে জমে কালো হয়ে আছে নিচের ফ্লোর।বিশ্রী বিদঘুটে একটা গন্ধ চারপাশে।কয়েকটা রুম এগিয়ে যাওয়ার পরে আর সেই গন্ধ পাওয়া যায় না তেমন।কারন এখান থেকে বসের রুম শুরু।এই রুম একদম নিট এন্ড ক্লিন।কোনো ময়লা বা গন্ধ নেই।রক্তের ছোঁয়া নেই।সব রক্তের শুরুটা এই জায়গা থেকে শুরু হলেও এই জায়গা পরিষ্কার করে রাখা হয় সব সময়।এই কয়েক মাসে তা আরো বেশি করে রাখতে হয়।
অরিত্রান ছুঁড়ে মারে এক এক করে ছেলেগুলোকে।রাগে গিজ গিজ করছে সে।এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজছে সে।লম্বা ড্রয়ার থেকে হকস্টিক খুঁজে বের করে ।পরপর সাতটা বের করে টেবিলের উপরে রাখে।ছেলেগুলোর চোখ কপালে।ভয়ে কাঁপছে।অরিত্রান জ্যাকেটের হাতা গুটিয়ে নেয়।তিনটা লাঠি এক সাথে করে উড়াধুনা পাটানো শুরু করে সবকটাকে একসাথে।অরিত্রানের মুখ লাল হয়ে আছে।কপাল থেকে চুপচুপ করে ঘাম বেয়ে পরছে।লাঠিগুলোও ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে।আবার লাঠি নিয়ে পিটাচ্ছে সে।থামছেই না।এই ঘরের লোকেরা অরিত্রানকে দেখে অবাক হয়ে উঠে।দ্রুত ছুঁটে এসে বলে,
—-“ স্যার কি হয়েছে??”
অরিত্রান ক্ষীপ্ত।লাল চোখে তাকায় সে।চোখ দেখে যে কত কথা বুঝা যায় তা অরিত্রানের লোকেরা হারে হারে বুঝে।চোখের ইশারাই যথেষ্ট বুঝার জন্য।কয়েকজন দ্রুত এগিয়ে এসে নিচে পড়ে থাকা ছেলে গুলোকে টেনে উঠায়।চেয়ার টেনে দ্রুত বেঁধে দেয়।অরিত্রান জ্যাকেট খুলে রাখে।তারপর সাদা সিঙ্গেল সোফায় বসে।পা তুলে দেয় সামনের টেবিলে।তার সামনে ছুরি।বেঁধে রাখা ছেলেগুলো চিৎকার করে বলছে ক্ষমা করে দিতে।অরিত্রানের হাতের আঙ্গুলে রিভলবার ঘুরিয়ে একজনের পা বরাবর গুলি ছুঁড়ে দেয়।গরগর করে রক্ত পরতে শুরু করে।চিৎকার বাড়ে।কান্নার শব্দ বারে।অরিত্রান কানে নেয় না।তার ভাব এমন যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।একে একে কারো হাত কারো পায়ে গুলি ছুঁড়ে।তারপর উঠে দাড়িয়ে টেবিল থেকে জ্যাকেট উঠিয়ে ছেলেগুলোর সামনে দাড়িয়ে বললো ,
—-“ এবার পারফেক্ট।তোদের এর চেয়ে ভালো অবস্থা হওয়ার কথা না।আমগো জিনিস না??”
অরিত্রান ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।চেঁচিয়ে বলে,
—-“ এদের মুখ বন্ধ কর।পাশের রুমে যাতে এই কন্ঠ না যায়।আর হসপিটালে নিয়ে ফেলে রাখ।”
কিছুটা সামনে এগিয়ে আবার পিছনে এসে অরিত্রান বললো,
—-“ জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করবি।কালকে স্পেশাল মানুষকে নিয়ে আসবো।খাতিলদাড়ি ভালো করে করতে হবে বলে কথা।”
অরিত্রান কঠিন হাসি হাসলো।সবাই যে যার মুখ চাওয়া চাই করছে।হাসি থামিয়ে অরিত্রান গম্ভীর গলায় বললো,
—-“ ঘুমাতে তো তোদের রাখা হয়নি তোহলে ঘুমালি কেন??”
সবাই এবার ভীতু হয়ে কাঁপছে।দু’একজন কাঁপা গলায় বললো,
—-“ স্যরি স্যার।আজই প্রথম ছিলো আর আজই শেষ।মাফ করে দেন।”
অরিত্রান জ্যাকেট কাঁধে চাপিয়ে যে দিক দিয়ে এসেছে সেই দিকে আবার চলে গেছে।সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো ।এবার এদের ব্যবস্থা করতে হবে।চিকিৎসা খরচ যদিও অরিত্রান দেয়।এরা বুঝেনা এতো মারারই বা কি দরকার আর এতো খরচ করে চিকিৎসা দেওয়ারই বা কি দরকার!কে জানে সবই অরিত্রান স্টাইল।সবাই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছেলেগুলোর মুখ বেঁধে দেয়।যাতে শব্দ পাশের রুমে না যায়।

______________________
সাদা পাঞ্জাবি।সাদা পাঞ্জাবিতে ছোট ছোট সাদা সুতার গোল গোল কাজ।পাঞ্জাবির একটা পাশে লাল কাপড়ের তৈরি লতা ফুল।ছোট কয়েকটা লাল ফুলও আছে।হুব হু দু’টি সাদা পাঞ্জাবিতে ডিজাইন করেছে ওয়াসেনাত।গলার কলার, হাতের চিকন অংশে আবার লালের কাজ।বিছানার কোণে বসে শেষ সেলাই দেয় সে।দুটি পাঞ্জাবি বিছানায় মেলে রাখে পাশা পাশি।দু’হাত দু’পাশের কোমড়ে রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় সে।মুখে হাসি মাখিয়ে জানালার দিকে তাকায়।আজকের সকাল অদ্ভুত সুন্দর।পাখিরা ডাকছে মিষ্টি সুর তুলে।বাতাসে ভিঁজা একটা গন্ধ।কাল গভীর রাতে হয় তো অনেক বৃষ্টি হয়েছে।চারপাশ ভিঁজে আছে।স্নিগ্ধ একটা ছোঁয়া চারদিকে।কালকের ঘুম তো অরিত্রানের পিঠ জাপ্টেই শুরু হয়েছে।বিরক্ত আর ভালো লাগা মিশানো একটা অনুভুতি হচ্ছে ওয়াসেনাতের।ইশশ্ সে কেন যে ঘুমিয়ে পরেছিলো।সময়টা তো আর থমকে থাকেনি।ঘুমিয়েই এতো সুন্দর একটা সময় শেষ করেছে সে।মোটেও উঁচিত হয়নি।মোটেও না।ওয়াসেনাত সচ্ছ নীল চোখে একবার চারদিক চোখবুলিয়ে ছোট ছোট কিছু নিঃশ্বাস নেয়।লম্বা চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে কানের পাশে গুঁচে দেয়।সকালের মুগ্ধ বাতাসে প্রান খুলে নিঃশ্বাস নিয়ে সে ফ্লোর থেকে নিজের চুলগুলো টেনে বিছানায় রাখে।এই চুলগুলোর প্রতি সে প্রচন্ড বিরক্ত।এতো লম্বা চুল দেখতে সুন্দর লাগলেও এই চুল সামলানো দায়।খুবই কষ্ট সাথে।ওয়াসেনাত একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিজের হাতে কোনো মতে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ক্লিপ লাগায়।তারপর একটা পাঞ্জাবি তুলে নেয়।ভাজঁ করে আলমারিতে রেখে দেয় গোপনে।আর একটা পাঞ্জাবি নিয়ে হাটা দেয় বাবার রুমের দিকে।তৌফিক তৈরি হচ্ছে।অরিত্রান তাকে একটা জায়গায় যেতে বলেছে।কিন্তু কেন??তৌফিকের চোখে মুখে বিরক্তি।সাথে রাগ।একজন জার্নালিষ্টের বড় শত্রু অন্যায়কারী।আর এই অরিত্রান যে কত বড় অন্যায়কারী তা তিনি বেশ ভালো করে যানে।কিন্তু তার কাছে প্রমান নেই।তা না হলে এই অরিত্রানকে জেলে ঢুকিয়ে নিঃশ্বাস নিতেন।যদিও তিনি প্রমান খুঁজেন না।এই অরিত্রান থেকে তিনি দূরে থাকতে চান।এবং নিজের মেয়েকেও দূরে রাখতে চান।
ওয়াসেনাত বাবার রুমে কাঁত হয়ে উঁকি দেয়।তৌফিক মেয়ের দিকে না তাকিয়ে শার্টের হাতার নিচের দিকের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,
—-“ এসে পরো।”
ওয়াসেনাত হাত গুলো পিছনের দিকে নিয়ে বাবার সামনে এসে দাড়িয়ে পরে।তৌফিক ভ্রু জোড়া কিঞ্চিত কুঁচকিত করে মেয়ের দিকে একবার তাকায়।চোখ সরিয়ে হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে চশমাটা নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।হালকা মৃদু গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—-“ এতো সকালে আমার মামনি তো আমার রুমে খুব কম আসে ।নিশ্চুয়ই গুরুত্বপূর্ন্য কিছু!!”
মুচকি হেসে বাবার সামনে দাড়িঁয়ে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ আমার কাছে তো খুবই গুরুত্বপূর্ন্য কিছু তবে তোমারটা জানি না।”
তৌফিক কৌতুহলি চোখে তাকালো।ওয়াসেনাত বললো,
—-“ বাবা চোখ বন্ধ করো।”
বিস্ময়ে চিন্তিত গলায় তৌফিক বললো,
—-“ কেন??”
ওয়াসেনাত চুক করে শব্দ করে।চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে,
—-“ বাবা তুমি এতো প্রশ্ন করো কেন??আমি কি ক্রিমিনাল??যে এতো প্রশ্ন করছো??বন্ধ করতে বলেছি বন্ধ করো।”
তৌফিক ঠোঁট মেলে হাসলো।চোখ বুজে বললো,
—-“ চোখ বন্ধ করলাম।এবার বলো কি হয়েছে??”
পিছন থেকে পাঞ্জাবি বের করে ওয়াসেনাত বাবার চোখের সামনে ধরে।উৎসুক কন্ঠে মৃদু শব্দে বলে,
—-“ এবার চোখ খুলো।”
সাদা পাঞ্জাবির উপরের লাল কাজটা তৌফিকের দারুন লাগছে।তার নিজের মেয়ে যে এত সুন্দর কাজ পারে এটা তার নিজেরই জানা ছিলো না।মেয়েদের মাঝে কত কত ছোট ছোট গুন থাকে।ছোট বলেই চোখে কম পরে।কিন্তু ছোট ছোট সব গুন মিলিয়ে যে এক একটা মেয়ে কত গুনের অধিকারী তা অনেকেরই চোখের আড়ালে রয়ে যায়।তৌফিকের নিজেরই খুব আনন্দ হচ্ছে।নিজের মেয়ের তৈরি করা পাঞ্জাবি তিনি পড়বে।এটা সত্যি যে কতটা আনন্দের বলে বুঝাতে পারবে না তিনি।পাঞ্জাবিটা আলমারিতে খুব যত্নে রেখে দিলেন তিনি।মেয়ের কপালে একটা চুমু খেলেন।তারপর বেরিয়ে পরলেন।বাবার চলে যাওয়া দেখে ওয়াসেনাতের সকল অনুভুতি ফুঁস করে উড়ে গেলো।এতো কষ্ট করে বানালো।বাবা একটু তারিফও করলো না!!একটু বললোও না সুন্দর হয়েছে কি না!!মুখ থেকে ঠুস করে বেরিয়ে এলো,আশ্চর্য্য!!!কথাটা।পরক্ষণেই হেঁসে দিলো সে।বাবারা এমনই হয়।মুখে বললো না তো কি হয়েছে তার চোখে মুখে দারুন আনন্দ ছিলো। রিটার্ন গিফট হিসেবে একটা চুমুও দিলো।ওয়াসেনাত এবার ২য় পাঞ্জাবি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।যার জন্য তৈরি করা সে তো কলই করলো না আজ সকাল থেকে।ওয়াসেনাতের মন খারাপ হয়।পৃথিবীর বেশির ভাগ মন খারাপের কোন কারন নেই।ওয়াসেনাতের এই মন খারাপেরও নির্দিষ্ট কোন কারণ যানা নেই তার।
__________________________
একের পর এক থাপ্পড়ে সাদা গাল জোড়া লাল হয়ে আছে ইহানের।বাবার হাতে এই প্রথম থাপ্পড় খাচ্ছে সে।রাগ হচ্ছে খুব।তবে নিজের উপরেই বেশি।সে কি করে কারো ফাঁদে পা দিয়েছে??নিজেই বুঝতে পারছে না সে।এতো বড় চালাকি করবে তার সাথে অরিত্রান সে ভাবতে পারেনি।অরিত্রানকে কাঁচা চিবাতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু তাকে ধরা কি এতোটা সহজ??ইহান থাপ্পড়ের মাঝেও চিন্তিত।তার বাবা সামান্য একজন মহিলার জন্য এতোটা ডেসপারেট কেন??তিন তিনটা বছর তাকে এই একটা কাজই দিয়ে রেখেছে তাও খুবই সিরিয়েস ভাব নিয়ে কিন্তু কেন??বাবার অনেক কিছুই সে জানে না।বাবা তার কাছে অনেক কথা গোপন করে রেখেছে।প্রশ্ন করে জবাব পায় না সে।তাই বিরক্ত হয়ে আর প্রশ্নই করে না।তবে সে কারণ যানতে চায়।ঈমানের রাগে শরীর কাঁপছে।নিজের ছেলে এত বড় আহাম্মক হবে সে জানতো না।সামান্য একজন মহিলাকে আটকে রাখতে পারলো না!!!এই মহিলাই ছিলো তার জীবনের সবচাইতে বড় টপ।একবার যদি এই মহিলা পুলিশের কাছে চলে যায়!!তবে তার কি অবস্থা হবে ভাবতে তার যতটা না ভয় লাগছে অরিত্রান সব শুনে তার অবস্থা কি করবে সেটা ভেবে নিজের জীবন এখনি যাচ্ছে যাচ্ছে।ইহান বেশ কঠিন গলায় বললো,
—-“ হুম আমি জানি আমার ভুল হয়েছে কিন্তু তার আগে বলো ঐ মহিলা তোমার কে হয়???”
ঈমান বেশ চিন্তিত।চোখে মুখে যেন তিনি নিজের মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে।ইহানের কথা তার কানে গেলো না।ইহান বাবার কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলেন তিনি।ইহান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,
—-“ আসল কাহিনী কি বলো তো বাবা??কে ওই মহিলা??কি সম্পর্ক তার সাথে তোমার??তিন বছর ধরে কেন তুমি তাকে বন্দী করে রেখেছো??কেন??”
রাগি কর্কশ গলায় ঈমান বললো,
—-“ তোর এতো জানতে হবে না।জামা কাপড় কি কি নেওয়ার নিয়ে নে।আর চল তাড়াতাড়ি।এখানে থেকে জীবন দেওয়ার দরকার নেই।দ্রুত দেশ ছাড়তে হবে।”
ইহান কটাক্য করে বললো,
—-“ না বাবা।আমি দেশ ছাড়তে পারবো না।ওয়াসেনাত এখনো আমার হয়নি।আর তুমি বলছো দেশ ছাড়তে??ইম্পসিবল!এটা হয় না।তোমার যদি এতোই দেশ ছাড়ার হয় তাহলে তুমি যেতে পারো আমি যাবো না।”
—-“ তাহলে কি অরিত্রানের হাতে মরতে চাস!!”
ইহান গাল ঘোঁষে হালকা হাসলো।বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ অরিত্রান আমাকে মারবে কেন??ওয়াসেনাতের জন্য??আরে কোন এক কারণে সেটাও মেনে নিচ্ছে সে।মারবে না আমাকে অরিত্রান।”
—-“ গাঁধা একটা।এতক্ষণেও বুঝলি না ওই মহিলার জন্যই তোকে এতো ছাড় দিয়েছে।ওকে পেয়েগেছে এখন তোরেও ছাড়বে না।”
—-“ পাগলের মত কথা বলোনা তো।কে ওই মহিলা যে এতো প্রয়োজন হবে ওর!” বিরক্ত মুখে বললো ইহান।
ইমার বিরক্ত।দ্রুত নিজের জামা কাপড় ভাজ করছে সে।এই গাধাঁ মার্কা পোলা তো প্রেমে মরে আছে।এর জন্য নিজের জীবন তিনি কেন অরিত্রানের হাতে দিবে।মায়ের মত হয়েছে একদম।

রিপা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে রুমের দিকে।রিপাকে দেখেই ইহানের মেজাজ গরম।বিরক্তি সাথে রাগ নিয়ে একটা ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে।রিপা চিন্তিত হয়ে বললো,
—-“ তোমারা কোথায় যাচ্ছো??”
ইহান কিছুই বললো না।নিজের চেয়ারে পা তুলে বসে পরে সে।রিপা খুবই হতাশ।সাথে তার মনে পীড়া দায়ক দুঃখ।ইদানিং ইহান তাকে আর ডাকে না।ইদানিং বললে ভুল হবে সেই বারি শেষ ছিলো।ইহান এখন আর কোনো মেয়েকেই ডাকে না।এই খবর সে পেয়েছে।এতে তার খুশি হওয়ার কথা।কিন্তু সে খুশি হতে পারছে না।কারন ইহান তার জন্য নয় ওয়াসেনাত নামক মেয়ের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করছে।রিপা এগিয়ে গেলো ইহানের কাছে।ঈমান কিছু না বলেই নিজের জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।যে করেই হোক এই দেশ তাকে ছাড়তেই হবে।ইহানের গালে হাত রাখতেই ইহান রেগে হাত ঝাড়া দিয়ে বললো,
—-“ সমস্যা কি তোমার রিপা।বার বার এখানে কেন আসছো??”
রিপা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
—-“ কতবার বলবো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না।আমি তোমাকে কত ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারবো না।”
—-“ তাহলে বুঝাতে কে বলেছে??” ইহানের শান্ত গলা।
—-“ আমি বুঝাতে চাই।তুমি না বুঝলেও আমি তোমাকে বুঝাতে চাই।আমি তোমাকে কত ভালোবাসি সেটাই বোঝাতে চাচ্ছি।সামান্য একটা মেয়ের জন্য তুমি আমাকে সরিয়ে দিচ্ছো??আমার ভালোবাসাকে অপমান করছো??কেন??”
ইহান হাসলো।বললো,
—-“ কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না।ওই সামান্য মেয়েকেই আমি ভালোবাসি।তাই তাকেই চাই।”
—-“ কিন্তু সে তোমাকে চায় না।” চেঁচিয়ে বললো রিপা।
—-“ তাতে কি??পৃথিবীর সবাই নিজের ভালোবাসা পেতে চায়।নিজের ভালোবাসাকে সবার আগে প্রধান্য দেয়।সে হিসেবে আমিও আমার ভালোবাসাকে সব কিছুর আগে বিবেচনা করবো।তোমারটা দেখা বা ওয়াসেনাতেরটা দেখা আমার কাজ না।”
—-“ কিন্তু একতরফা ভালোবাসা জিতে না।”
ইহান ক্ষেপে গেলো।উঠে দাড়িয়ে রিপার চুলের মুঠো ধরে বললো,
—-“ তোরটাও তো একতরফা।”
—-“ তাকেই ভালোবাসা উঁচিত যে তোমাকে ভালোবাসে।তাকে নয় যাকে শুধু তুমি ভালোবাসো।এটা মাথায় ঢুকিয়ে নেও তুমি।”
ইহান রিপাকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
—-“ মন নিজের কথা মত চলে না।তা না হলে তুমি এখানে ছুটে আসতে না।ওয়াসেনাতের থাপ্পড় খাওয়ার পরেও আমি তার প্রেমে পড়তাম না।তাই নিজের ফালতু কথা রেখে চলে যাও।”
রিপা উঠে দাঁড়ালো না।চলেও গেলো না।সেখানে বসেই কেঁদে চলেছে।ইহান নিজেই বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।এখানে থাকা মানে ন্যাকামি সহ্য করা যা সে করতে পারবে না।তাই নিজে থেকে চলে যাওয়াই ভালো।
________________________
সকাশের স্নিগ্ধ হাওয়া গেলো,দুপুরের উত্তাপ ঝরে পড়লো,নিভল সূর্যের তেজ।শুরু হলো বিকেল।পরন্ত বিকেল।গোধূলি লগ্ন।জানালার পাশ ঘেঁষে খুবই এলোমেলো চুলে বসে আছে ওয়াসেনাত।ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিত উঁচু হয়ে আছে তার।চোখে মুখে বিষন্ন একটা ভাব।বিকেলটাই তার কাছে বিষন্ন মনে হচ্ছে।সব নীরব নীরব।দুপুরের দিকে কোন কাজ ছিলো না।তাই সে একটু ঘুমিয়ে ছিলো।ঘুম থেকে উঠেই তার কেমন যেন বুক ভার ভার লাগছে।আবার বিষন্নও লাগছে খুব।হঠাৎ আবার হাতে চুড়ি পড়তে হচ্ছে হয়েছে।সাদা রেশমি চুড়ি।মাঝে মাঝেই যখন খুব বিষন্ন লাগে সে চুড়ি পরে।ব্যাপারটায় রূপালি দারুন ভাবে হাসে।কিন্তু কি করার আছে।তার ভালো লাগে।মানুষ যেমন ভিন্ন তার পছন্দও ভিন্ন।মন খারাপের কারণ যেমন ভিন্ন মন ভালো করার কারনও ভিন্ন।সবাই একুই হলেও সত্তা সবার ভিন্ন।ওয়াসেনাতের চোখ আকাশে।এই নীল আকাশ যদি তার বিশাল বুকটায় তাকে একটু জায়গা দিতো তাহলে মাথা রেখে সে আকাশের বুকেও ঘুমাতে পারতো।ঘুমের কথায় তার মনে পড়লো অরিত্রান কিভাবে তার নিজের জ্যাকেট দিয়ে ওয়াসেনাতের পিঠের সাথে নিজের শরীর বেঁধে রেখেছিলো।যাতে সে পরে না যায়।লাজুক হাসি হাসলো ওয়াসেনাত।নিজের কান্ডের কথা মনে পরতেই চোখমুখ দু’হাতে ঢেকে নিলো সে।হালকা নিচু হয়ে ঝুঁকতেই দুপাশের গুচ্ছো গুচ্ছো চুল সামনে চলে আসে তার।অবাধ্য চুলের গুঁচ্ছো গুলো ওয়াসেনাতের দু’হাত ঢেকে দিলো।বিষন্ন বিকেলে কত স্মিতিই না জেগে উঠে!!!এতো সুন্দর একটা লাজুক লাজুক মুহূর্তেই বিছানার উপরের ফোন বেজে উঠলো।ওয়াসেনাত চমকে উঠলো।মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো সে।চুলগুলো একদম গালে লেপ্টে গেলো তার।বিকেলে ভেপসা একটা গরম পরে।সেই গরমে ঘামে মুখ ভিঁজে উঠেছে ওয়াসেনাতের।দু’হাতে চোখমুখ মুছে ওয়াসেনাত চুল পিছনে ঠেলে দেয়।লাফিয়ে জানালার পাশ থেকে নেমে ফোন হাতে নেয়।রুডি সাহেব নামটা দেখেই অদ্ভুত অনুভুতি হয়।তবে সাথে কাজ করছে একটা চাপা অভিমান ।মেয়ে মানুষের বাজে রোগ!!কারণে অকারণে এরা শুধু অভিমান করতে জানে।এটা তাদের বাজে রোগ হলেও তাদের কাছে খুব প্রিয় এটা।তাও দারুন ভাবে!ওয়াসেনাত প্রথম কয়েক বার ফোন ধরলো না।মনে মনে ভয় ও পাচ্ছে সে।যদি অরিত্রান বিরক্ত হয়ে আর কল না করে!!কিন্তু পর পর চার পাঁচ বার কলের পরে ওয়াসেনাত বুঝেছে আর যাই হোক আজ কল থামবে না।মিটিমিটি হেসে বিছানায় উবু হয়ে সে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।রুডি সাহেব নামটা দেখতে তার অদ্ভুত ভালো লাগা মিশ্রীত অনুভুতি হচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে নাম না পুরো আস্ত মানুষটাই বসে আছে তার সামনে।আজ এই অবাধ্য বাজে খিটখিটে বিরক্তি কর ফোনের টুন টাও ওয়াসেনাতের কানে মিষ্টি করে বাজছে।কলের শব্দ বন্ধ হয়ে টুং করে একটা ম্যাসেজ ভেসে উঠে।ওয়াসেনাত দ্রুত চোখ তুলে চায়।তাতে ইংরেজি অক্ষরে লেখা,

“ What happened? Why aren’t you receiving calls? Are you in trouble? Well, I’m coming in now.”
ওয়াসেনাত ভড়কে যায়।বাসায় রূপালি আপু আছে।দেখলেই সর্বনাশ হবে।দ্রুত ফোন তুলে অরিত্রানের নাম্বারে কল লাগালো সে।একবার রিং হতেই অরিত্রান কল কেটে দিলো।তার প্রায় সাথে সাথেই সে আবার কল ব্যাক করে খুবই উত্তেজিত হয়ে বললো,
—-“ আ’র ইউ ফাইন??”
—-“ আমি একদম ঠিক আছি আপনি চিন্তা করবেন না।আর প্লিজ হিরো গিরি দেখিয়ে দেওয়াল টপকে বাসায় আসবেন না।আপনি তো এই একটা দিকে নাম্বার ওয়ান।”ওয়াসেনাতের উদ্বেগী গলা।
ওয়াসেনাতের এতো উদ্বেগী ভাব দেখে অরিত্রান ওপাশ থেকে নিঃশব্দে হাসলো।শান্ত গলায় বললো,
—-“ ওকে ওকে আসবো না।তুমি নিজেই চলে এসো।”
অবাকের উপরে অবাক হয়ে চিৎকার করে ওয়াসেনাত প্রশ্ন করলো,
—-“ কেন???”
—-“ কি হয়েছে বলো তো আজ এতো চিৎকার করে কথা বলছো কেন??যদিও আজকের দিনটা স্পেশাল।তবুও তুমি এখনো সেই স্পেশালিটি দেখনি।এতো উত্তেজিত কেন??”
—-“ জানি না।”ছোট করে বললো ওয়াসেনাত।
—-“ নিচে নেমে এসো।১০মিনিট সময় দিলাম।”
—-“ আমি আসতে পারবো না।আপনাকে কত বার বলেছি প্রেমিক প্রেমিক আবদার করতে না।তবুও আপনি প্রেমিক হয়ে উঠছেন??আমি আসবো না।”
ওয়াসেনাতের তেড়া কথা শুনে অরিত্রান বললো,
—-“ মেয়েরা এতো তেড়া হয় কেন বলবে??সব কিছুতে তেড়া মি।তুমি না আসলে সমস্যা নেই আমি নিজে এসে নিচে নিয়ে আসবো।আমি আসছি।”
—-“ লাভ নেই আমি একচুলও নড়বো না।”
—-“ আমি কোলে তুলে নিবো।শক্তিতে আমি এগিয়ে।রাইট!!”
অরিত্রানের কথায় ওয়াসেনাত চোখ বড় করলো।অরিত্রান আবার বললো,
—-“ তোমার ওজন খুব একটা বেশি না।আমি তো তোমাকে কোলে নিয়ে সারা জীবন পার করে দিতে পারবো।আমার কিন্তু দারুন লাগে।” অরিত্রানের কন্ঠে দুষ্টুমি।
ওয়াসেনাত লজ্জায় লাল হয়ে উঠে।অরিত্রান ওপাশ থেকেই হাসলো।বললো,
—-“ আমি আসছি।”

ওয়াসেনাত নিজের লজ্জা ভাব ঠেলে রেখে বললো,
—-“ না না আমি নিজে আসছি।”
ওয়াসেনাতের ভীতু কন্ঠ শুনে অরিত্রান মৃদু শব্দে হাসলো।
সাদা থ্রি-পিজের উড়না উড়িয়ে ওয়াসেনাত দ্রুত গেটের বাহিরে পা রাখে।সম্পূর্ন সাদা আজ সে।সাদা হিজাব,সাদা জামা,সাদা চুড়ি।চুড়িগুলো আর খোলা হয়নি।হাতে একটা পেকেট দেখে ভ্রু কুঁচকাল অরিত্রান।ওয়াসেনাত হাপাচ্ছে।দ্রুত দৌড়ে আসার কারণে ঘেমে গেছে।লাল হয়ে আছে গালের দু’পাশ।হাঁটুতে এক’হাত দিয়ে কিছুক্ষণ শ্বাস নেয় সে।অরিত্রান ঘড়ি দেখে ,৫মিনিটে এসেছে ওয়াসেনাত।অরিত্রান পানির বোতল এগিয়ে দেয় ওয়াসেনাতের সামনে।ওয়াসেনাত টগটগ করে বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে নিঃশ্বাস নেয়।মুখটা পানি দিয়ে ঝাপ্টে নেয় সে।অরিত্রানের হাতে বোতল দিতে দিতে বললো,
—-“ কি বলবেন বলেন দ্রুত।”
অরিত্রান এক ভ্রু তুলে তাকিয়ে আছে।কিছু বলছে না।ওয়াসেনাত তাড়া দেয়।বলে,
—-“ আরে বলছেন না কেন??”
অরিত্রান গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললো,
—-“ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে বলেছিলাম না।চলো দেখবে!!”
ওয়াসেনাত চমকিত হলো।পরক্ষণেই বললো,
—-“ আমি যেতে পারবো না।বাবা দুপুরে আসেনি হয় তো এখন আসবে।আমাকে না দেখলে কষ্ট পাবে।”
অরিত্রানের কেন যেন তৌফিকে খুবই হিংসে হচ্ছে।মনে মনে সে দোয়া করছে তার যেন ওয়াসেনাতের মতই মেয়ে হয়।মায়ের মত মেয়ে হলে তো আর দোষের কিছু না।সেও অরিত্রানকে তৌফিকের মত ভালোবাসবে।কত লাকি তৌফিক সাহেব!!অরিত্রান বিড়বিড় করে বললো।ওয়াসেনাত নিজের হাতের পেকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
—-“ এটা আপনার জন্য।”
অরিত্রান চোখ ছোট করে।কৌতুহলি হয়ে কয়েক সেকেন্ড পেকেটের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-“ কি এতে??”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের হাত টেনে ধরে।অরিত্রান চমকিত হয়ে হা করে তাকায়।পেকেট হাতে ধোরিয়ে ওয়াসেনাত মৃদু হাসে।বলে,
—-“ এখন দেখবেন না কিন্তু।বাসায় গিয়ে দেখবেন।এখন আমি যাই।”
ওয়াসেনাত গেটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।অরিত্রানের হাতের ঘড়িতে আবার নাটকিয় ভাবে আটকা পরে ওয়াসেনাতের উড়না।ওয়াসেনাত অবাক হয়ে ভাবে অরিত্রান টেনে ধরেছে!!!বুকের পাশে উড়না টেনে আবার তাকায় অরিত্রানের দিকে।অরিত্রান হাত উঁচিয়ে দেখায় তার দোষ নেই।নিজের এমন একটা বাজে চিন্তাভাবনার জন্য ওয়াসেনাত আবার লজ্জায় লাল হয়।চোখ কুঁচকে ছোট করে হালকা জিভ কাটে সে।অরিত্রান শব্দ বিহিন ভাবে হাসে।ওয়াসেনাতের লাল হওয়া গালের দিয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বললো,

—-“ এটা এভাবেই থাক।তুমি গাড়িতে উঠে বসো।তোমার বাবা এখন আসবে না।আর আমার সাথে যাওয়াটা খুব প্রয়োজন।”
ওয়াসেনাত গাড়িতে উঠে বসে।অরিত্রান এগিয়ে এসে সিটবেল্ট বেঁধে দেয়।ওয়াসেনাতের দিকে হালকা ঝুঁকে অরিত্রান আবেগী গলায় বলে,
—-“ তোমার একার মাঝে হাজারো পরীর রূপ লুকানো।কিভাবে বলবে??প্রতি রঙে তুমি রঙিন।আজ সাদায় সাদা পরী লাগছে পরীজা।এতো রূপে পাগল করলে আমাকে হসপিটালেও নিবে না।তবুও একটু পাগল হলে ক্ষতি নেই।কি বলো??”
ওয়াসেনাত লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।অরিত্রানের আবেগী মিশানো কথা তার রঞ্জে রঞ্জে কাঁপনের জন্ম দেয়।গভীর অনুভুতিতে তলিয়ে নেয় তাকে।মনে হয় এই কথা গুলোর মাঝেই ডুবে থাকুক তার সারাটা বেলা।অরিত্রান আর একটু ঝুঁকে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
—-“ আমার শত রঙ্গা প্রজাপতি আমি তোমাতেই মরি মরি।”❣️
ওয়াসেনাতের কাঁপনি ধরা বুকের সাথে মুখের অবস্থা লজ্জায় মরিমরি।মেয়েরা নিজের রূপের তারিফ পছন্দ করে।সেই তারিফে আবার লজ্জাও পায় দারুন ভাবে।যদিও এই রূপে তাদের হাত থাকে না।সবাই নিজ নিজ জায়গায় সুন্দর।সবার মাঝে কিছু না কিছু সৌন্দর্য্য লুকোনো থাকে ।আর সেই লুকোনো সৌন্দর্য্য দেখার জন্য একটা সুন্দর পবিত্র মনের প্রয়োজন।সেই মনের তারিফেই মেয়েদের লজ্জা।ওয়াসেনাতের অবস্থা একুই ।লজ্জায় তার সারা দেহ থেকে উত্তাপ বের হচ্ছে।গরম হচ্ছে কানের লতি।মাথা নতজানু করে নিজের হাত কচলাতে ব্যস্ত সে।অরিত্রান হাতের দিকে একবার তাকিয়ে সরে বসে।ওয়াসেনাত এক হাতে চুড়ি পরে।এটাই তার ভালো লাগে।অরিত্রান চুড়ি পড়া বাম হাতটা ধরে।নিজের মুঠোয় নিয়ে কিছুক্ষণ চুড়ি গুলো নাচিয়ে দেখে।প্রশ্ন ছুঁড়ে বলে,
—-“ তুমি খুব চুড়ি প্রেমি না!!”
ওয়াসেনাত নিজেকে সামলে বললো,
—-“ হুম।কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন??”
—-“ যার কাছে সাদার মত একটা রঙের চুড়ি থাকে সে প্রকৃত চুড়ি প্রেমি।এটা অরিত্রান খান বুঝে এবং যানে।যদিও আমি মেয়েদের ব্যাপারে কম বুঝি।তবে তোমার ব্যাপারে সব বুঝি।আমার পরীজা বলে কথা।”
ওয়াসেনাতের চুড়ির মাঝে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় অরিত্রান।হাতে একটুও ছোঁয়া লাগেনি।তবুও কেঁপে উঠেছে ওয়াসেনাত।অরিত্রান হাত ছেড়ে ড্রাইভ শুরু করে।ওয়াসেনাত হেলে বসে নিঃশ্বাস নেয়।লোকটার আশেপাশে থাকলেই দম বন্ধ দম বন্ধ অবস্থা।যেন জান যায় যায়।
গাড়ি এসে থেমেছে একটা অদ্ভুত বাড়ির সামনে।ওয়াসেনাত ঘাড় কাত করে পূর্ন দৃষ্টি মেলে অরিত্রানকে দেখল।অরিত্রান মৃদু হাসলো।রহস্যময় সে হাসি।ভারি অদ্ভুতও বটে।ওয়াসেনাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিত্রান বেরিয়ে পরলো।ওয়াসেনাতের উড়নায় টান পড়লো।অরিত্রান নিজের দামি ঘড়ি খুলে দিলো ।উড়ানায় ঝুলছে ঘড়ি।মন্দ লাগছে না তার কাছে।ওয়াসেনাত অবাক।অরিত্রান ওয়াসেনাতের পাশে এসে তাকে নামিয়ে নেয়।লাল একটা কাপড় নিয়ে এসে ওয়াসেনাতের সামনে দাড়াঁয়।ওয়াসেনাত কিছুই বুঝলো না।হা করে তাকিয়ে শুধু দেখছে।অরিত্রান হুট করে চোখ বেঁধে দেয়।ওয়াসেনাত লাল কাপড়ে হাত গিয়ে বললো,
—-“ কি করছেন??কেন করছেন??”
কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে অরিত্রান বললো,
—-“ সারপ্রাইজ!!”
—-“ আরে সেটা তো বুঝলাম তার জন্য চোখ কেন বাঁধছেন।”
—-“ সারপ্রাইজের কাছে পৌছানোর আগে যাতে তুমি সেন্সলেস না হও তাই।এবার কথা বলা বন্ধ।”
অরিত্রান আচমকা ওয়াসেনাতকে কোলে তুলে নেয়।ওয়াসেনাত জাপ্টে ধরে অরিত্রানের কলার।বলে,
—-“ এই এই কোলে কেন নিচ্ছেন?
—-“ আমার ইচ্ছে হলো তাই।”
ওয়াসেনাতকে কোলে নিয়েই অরিত্রান অন্ধকার ঘরে নেমে আসে।ওয়াসেনাতের কেমন ভূতুরে ফিলিংস হচ্ছে।অরিত্রানের ছোঁয়ায় তার শরীরও কাঁপছে।অরিত্রান ভয় কমাতে অন্য কথা বলে,

—-“ তুমি কিন্তু খুব কাঁপো পরীজা।তোমার কাঁপনি দেখলে আমার নিজের হৃৎপিণ্ডও কাঁপে।নিষিদ্ধ ইচ্ছে জাগে।যা এই জীবনে আর কোনো মেয়ের প্রতি জাগেনি।”
ওয়াসেনাতের কান গরম হয়।শরীর থেকে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে তার।অরিত্রানের পিঠে খাঁমছি দিতে দিতে বললো,
—-“ সমস্যা কি আপনার??কি সব নির্লজ্জের মতো কথা বলছেন।ছিঃ!!”
কিছু দূর এসে অরিত্রান ওয়াসেনাতকে নামিয়ে দেয়।হালকা গলায় বলে,
—-“ আর কোলে নিয়ে যাওয়া যাবে না পরীজা।তোমার হিটলার বাবা তোমাকে আমার কোলে দেখলে পানি ছাড়া চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে।যদি এটা সম্ভব না তবুও বলা তো যায় না বেষ্ট জার্নালিষ্ট বলে কথা!!”
ওয়াসেনাত ক্ষেপে অরিত্রানের বাহুতে আরো খাঁমছি দেয় আর বলে,
—-“ আমার বাবাকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেন না।খুন করে দিবো কিন্তু।”
হাসতে হাসতে অরিত্রান আস্তে করে বললো,
—-“ খুন তো হয়েছি বহু আগে তোমার ওই সর্বনাশা কাজল চোখে!” নীলাভ সেই হৃদয় কাড়া সর্বনাশা চোখে আমি আমার মরণ দেখি প্রতি সকালে।সেই লম্বা চুলের ঘ্রাণ না নিয়ে আমি পাগল হই প্রতি বিকেলে।এক মাতাল করা গন্ধে মিশে থাকি প্রতি রাতে।তুমি নামক নেশায় ডুবে ভোর হয়ে সকাল তো হয় তবুও আমার কাটেনা ওয়াইনের চেয়ে কড়া অদ্ভুত নেশাটা।”
ওয়াসেনাতের হাত ধরে বাকি পথ এসব কথায় কাটিয়ে দেয় অরিত্রান।একটা জায়গায় নিয়ে এসে ওয়াসেনাতের চোখ খুলে দেয় সে।ওয়াসেনাত প্রথমে ঝাপসা দেখে।চোখ কচলাতে কচলাতে ভালো করে দেখে।সামনের সোফায় বসে থাকা মানুষ দু’জনকে দেখে মুহূর্তে নির্বাক হয়ে পরে সে।কিছু বলার শক্তি তার নেই।সে তাকিয়ে আছে।নিঃশ্বাসের গতি বাড়ছে।হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে।অরিত্রান উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাতের অনুভুতি দেখতে চায় সে।কিন্তু ওয়াসেনাত নিশ্চুপ!!অরিত্রান বুঝতে পারছে না ওয়াসেনাত কিছু কেন বলছে না।ওয়াসেনাত ঘামছে।একি দেখছে সে??অরিত্রান ওয়াসেনাতের ধরা হাত শক্ত করে ধরে।হাত একদম বরফ হয়ে আছে।অরিত্রান চমকে দু’হাতে জাপ্টে ধরে ওয়াসেনাতকে!এটা কি হলো???অরিত্রান কিছু বুঝে উঠতে পারলো না এর আগেই ওয়াসেনাত শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে অরিত্রানের উপর।অরিত্রান দু’হাতে শক্ত করে বাহুতে চেপে নেয় ওয়াসেনাতকে।পিঠ জড়িয়ে বুকে মাথাটা রাখায়।অরিত্রান টের পাচ্ছে ওয়াসেনাত কাপঁছে।প্রচন্ড শীতে যেভাবে কাঁপে সেভাবে।বুকের তুমুল শব্দ তার কানে আসছে।কি আশ্চর্য্য!!ওয়াসেনাত সেন্সলেস হয়ে পরেছে!!!
#চলবে__________