পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 39
কালো চুলগুলো অনেকটাই সাদা হয়েগেছে।ফর্সা গালজোড়া দুপাশে ভেঙে পরেছে।অনেকটা কুঁচকেছে শরীরের চামড়া।গায়ের রং টাও ময়লা হয়েগেছে।আগের সেই ফর্সা ভাবটা আর নেই।কপাল কুঁচকে গেছে।ভাঁজ পরেছে দু’তিনটা।কেমন রোগা রোগা শরীর।ওয়াসেনাতের মাথা তার মায়ের কোলে।কোল থেকে তাকিয়ে সে এক অবিশ্বাস্য সত্যি দেখছে।ওয়াসেনাত লাফিয়ে উঠে বসলো ।মায়ের মুখমুখি মুখ করে বসেছে।ওয়াসেনাত মায়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।কি শুকিয়ে গেছে হাতটা।হাড্ডি গুলো দেখা যাচ্ছে।গলার হাড্ডি দেখা যাচ্ছে।এতো রোগা কেন তার মা??কিভাবে হলো??এতো দিন কোথায় ছিলো??সবাই তাকে মৃত কেনো বললো???কেন সে এতো দিন তাকে মৃত হিসেবে জেনে এসেছে??কে করেছে তার মায়ের এমন বাজে অবস্থা???এতো এতো প্রশ্নকে ঠেলে দেয় ওয়াসেনাত।কোনো কথা না বলেই হামলে পরে মায়ের বুকের উপরে।চিৎকার করে কাঁদছে সে।মুখে আম্মু আম্মু ডাক।ওয়াসিকা নিজেও কাঁদছে।তার এতো বেশি আনন্দ হচ্ছে যে ,হাত পা কাঁপছে,দু’হাত তুলে সে মেয়েকে জড়িয়েও নিতে পারছে না।কত বছর পরে মেয়েকে পেয়েছে বুকে!তার সবই শান্তি ময় লাগছে।ওয়াসেনাতের কথা বুঝাই যাচ্ছে না।সে কত কথা যে বলছে বলার বাহিরে।অরিত্রান দাড়িঁয়ে আছে তৌফিকের পাশে।চোখ তার মা মেয়ের দিকে।ওয়াসিকা মেয়েকে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।এতো শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছে যে ছাড়ানোর শক্তই নেই কারো।ওয়াসেনাত অনুভব করছে তার মা কাঁপছে।অরিত্রান একটু দেয়াল ঘেঁষে দাড়াঁতেই তৌফিকের সাথে বেসামান ভাবে হালকা ধাক্কা লেগে যায়।তৌফিক ভ্রু কুঁচকে তাকায়।অরিত্রান ভড়কে যায়।একদম পাশ থেকে সরে বহু দূরে চলে যায় সে।তৌফিককে যে অরিত্রান নিজের অজান্তেই ভয় পায় এটা অরিত্রানের জানা নেই।তৌফিক তিক্ষ্ন চোখে তাকায় অরিত্রানের দিকে।অরিত্রানের চোখে চোখ পড়তেই অরিত্রান দ্রুত সরিয়ে নেয়।লোকটার চোখে তার মতই আগুন।দুই আগুন মিলে ভয়ংকর অবস্থা হয় চোখে চোখ পরলে।
ওয়াসেনাতের এমন বেসামাল কান্না দেখে হতবাক অরিত্রান!!সে ভাবছে এই মেয়ের চোখে কি সাগর আছে??কান্নার সাগর!!তাহলে এক সাগর কান্না সে ধার চাইবে।কারন তার চোখে তো পানিই নেই।ওয়াসেনাতের কান্না থামে ঘন্টা খানেক পরে।চোখ ফুলিয়ে লাল।তার মায়ের অবস্থাও একুই।অরিত্রান এবার এই কান্নায় অতিষ্ট হয়ে সামনে এগিয়ে এসে বললো,
—-“ উনাকে হসপিটালে নেও উঁচিত।যদিও এখানে আমি ডাক্তার রেখেছি।তবুও আজ হসপিটালে নিয়ে যেতে বলেছে ডাক্তার।অবস্থা ভালো না।খাওয়া দাওয়া কয়নি অনেক দিন।যদিও হতো খুবই কম।”
ওয়াসেনাতের অনেক প্রশ্ন চেপে যেতে হয়েছে।পাশের রুম থেকে চিৎকারের শব্দ আসছে অনেক।ওয়াসেনাত এতোটাই শকড ছিলো যে সেদিকে তার মন ছিলো না।এখন মনে পরেছে ।চিৎকার আরো বাড়ছে।ওয়াসেনাত মায়ের হাত ধরে বললো,
—-“ আম্মু তুমি কোথায় ছিলা??আর আমরা তো সবাই ভেবেছি তুমি….”
ওয়াসেনাত আর বললো না।সে আবার কেঁদে উঠেছে।ওয়াসিকা এবার হালকা হাসার চেষ্টা করলো।বললো,
—-“ সে অনেক কাহিনী।বললে প্রথম থেকে বলতে হবে।তোমারও শুনতে ভালো লাগবে না মামনি।আমার তো বাঁচারই কথা ছিলো না।ইমান শয়তান জেলে ছিলো তাই তো বেঁচে ছিলাম।ওই শয়তান আমার জন্য এক নিরিহ মেয়েকে খুন করেছে।যাকে তোমরা আমি রূপে দেখেছ সে আমি নই।”
কৌতুহলি চোখে মায়ের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থাকে ওয়াসেনাত।তার এসব কথা শুনতে ভালো লাগছে না।যে মরেছে তার জন্য তার দুঃখ হলেও সে যে তার মা নয় এটা ভেবে সে খুবই খুশি।অরিত্রান আর কথা বাড়াতে দিলো না।তার লোকেরা সবার চোখ বেধে দিলো।এই ঘরের অবস্থা দেখলে ওয়াসেনাত বা তার মা আবার সেন্সলেস হয়ে যেতে পারে।আর সে এটা চায় না।ওয়াসেনাত তার মায়ের সাথে গাড়িতে উঠে বসেছে।তৌফিক অরিত্রানের দিকে কাট কাট চোখে তাকিয়ে বললো,
—-“ আমার ইমানের সাথে বুঝাপড়া আছে।আমি এখানেই থাকবো।”
অরিত্রান কিছুই বললো না।পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাড়িঁয়ে আছে সে।ওয়াসেনাতের এতো সময় পরে মনে পরেছে অরিত্রান তার মাকে বাঁচিয়েছে।তার মাই কিছুক্ষণ আগে বলেছে।ওয়াসেনাত আনন্দে আত্তহারা হয়ে সব কিছু ভুলে গাড়ি থেকে লাফিয়ে অরিত্রানকে জড়িয়ে ধরে।কান্না কান্না সুরে বলে,
—-“ আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো জানা নেই আমার।আপনি আমার জীবনের সেরা সারপ্রাইজটা দিলেন।জীবনেও আপনার ঋণ শোধ করতে পারবো না।জীবনেও না।”
চোখ ঘুরিয়ে একবার তৌফিকের দিকে তাকালো অরিত্রান।তৌফিকের চোখ কটোর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।অরিত্রান ওয়াসেনাতের গায়ে হাত লাগালো না।শত হোক তৌফিক এতে মহা রাগা রেগে যাবে।বাবা মেয়ের মাঝে রাগের জন্ম দিতে সে চায় না।তাই ফিসফিস করে বললো,
—-“ পরীজা তোমার বাবা দেখছে।আমার ধন্যবাদটা তুলে রাখ আমি পরে এসে নিয়ে যাবো।এখন যাও।”
বাবার কথা কানে যেতেই চট করে ওয়াসেনাত অরিত্রানকে ছেড়ে দিলো।ভীতু ভীতু চোখে বাবার দিকে একবার তাকিয়েই সে চোখ সরিয়ে নিলো।লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।অরিত্রান হেসে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য বললো,
—-“ আপনার মেয়ে খুশিতে পাগল পাগল হয়ে যায় রাইট!!”
তৌফিক আগুন চোখে তাকায়।অরিত্রান চোখ সরিয়ে হাসে।ওয়াসেনাত মায়ের পাশে বসে পরে।ওয়াসিকা হাত দিয়ে অরিত্রানকে ইশারা করে।অরিত্রান অবাক হয়।আঙ্গুল তুলে নিজেকে দেখায়।ওয়াসিকা মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।অরিত্রান তার পাশে দাড়ায়।অদ্ভুত কান্ডের মতো তিনি অরিত্রানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।মুচকি হাসি হাসে।অরিত্রান হতবাক!!সাথে তৌফিক!!
বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে তৌফিক বললো,
—-“ কত খুন করেছেন??মিষ্টার অরিত্রান!!”
তৌফিকের এমন কথায় অরিত্রান হাসলো।বললো,
—-“ সেটা যেনে কি হবে বলুন তো??দু’একটা কম বেশি বললেও আপনার মতের পরিবর্তন হবে না আমি জানি।”
তিক্ষ্ন চোখে তাকায় তৌফিক।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে,
—-“ আমাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ অনেক কম হবে।আপনার মত মানুষ আমাদের হেল্প করেছেন তার জন্য সত্যি কৃতজ্ঞ।”
কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো,
—-“ তবে আমার মেয়েকে দিয়ে আমি আপনার ঋণ পরিশোধ করবো তা আপনার ভুল ধারণা।আমার মেয়ে আমার জীবন।তাকে আমি কখনো আপনার মত ঝুঁকিপূর্ন মানুষের হাতে তুলে দিবো না।কখনোই না।আমার জীবন থাকতে তো নয়ই।”
তৌফিকের কথায় পূর্ন রাগ খুঁজে পাচ্ছে অরিত্রান।তৌফিক ফোঁস ফোঁস করছে রাগে।ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অরিত্রান বললো,
—-“ আমি কেমন যেনেই যদি আপনার মেয়ের আমাকে পছন্দ হয়???”
তৌফিক আরো ফোঁস করে উঠলো।রাগে তার শরীর জ্বলছে।তেজি একটা শ্বাস ফেলে সে বললো,
—-“ আমার মেয়ে আপনার মত ছেলেকে কখনো পছন্দ করবে না।আর করলেও আমি তা মেনে নিবো না।আমি মেনে নিবো না মানে সেও আমার কথার অবাধ্য হবে না।ও আমার মেয়ে আমার।আপনি আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবেন আশা করি।বহু দূরে।যাতে খারাপ ছায়াও না পরে তার জীবনে।”লাল চোখে তাকালো তৌফিক।
আমার” কথাটা অরিত্রানের গায়ে লাগছে খুব।সে তো চাইলেও এমন অধিকার লাগিয়ে কথা বলতে পারছে না!!!এতেই তার রাগ উঠছে।ওয়াসেনাতকে তো তার লাগবেই!!জীবনের প্রথম ভালোবাসা!!একে কিভাবে হারাবে সে!!!তার প্রথম প্রেম!!প্রথম আবেগ!!প্রথম অনুভুতি!!!তাকে অন্য কারো হতে দিতে পারে না!কিছুতেই না!!অরিত্রান নিজের চুল পিছনে টেনে নেয়।ভয় ভীতি তাকে আকঁড়ে নিচ্ছে নিজেদের মাঝে!!ওয়াসেনাতের বাবা রাজি না হলে সে কখনোই ওয়াসেনাতকে পাবে না!!!কখনই না!!এটা ভাবতেই কেমন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে তার।অরিত্রান দাড়িঁয়ে পরলো।আর সামনে এগলোনা।তার লোকেরা পানি নিয়ে এসেছে।তৌফিক অরিত্রানকে পর্যবেক্ষণ করছে।দেখছে ঘুরে ঘুরে।বাড়িটা দেখছে।না এই ছেলে তার মেয়ের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ন্য হবে তার জানা হয়ে গেছে।যে এতো এতো মানুষ মারে সে নিশ্চুয় তার মেয়েকে ইউজ করছে!!নিশ্চুয়ই না অবশ্যই মনে হচ্ছে তার!
________________________________
অরিত্রান কেন যেন তৌফিকে খুবই সম্মান দেখাচ্ছে।ব্যাপারটা সে নিজেও জানে না।কোথাও যেন অনেক সম্মান কাজ করছে এই লোকটার জন্য।নিজের সাদা সোফা ছেড়ে দিয়েছে তৌফিককে।অরিত্রান টেবিলের উপরে উঠে বসেছে।তার সামনেই বসে আছে ইমান।দেশ ছাড়তে তো চেয়েছে কিন্তু অরিত্রানের কারনে তা আর পারলো না।ইমানের পাশেই ইহানকে বেঁধে রাখা হয়েছে।ইহান চিৎকার চেঁচামেচি করছে।অরিত্রানের লোকেরা তার মুখে রুমাল ঢুকিয়ে দিয়েছে।অরিত্রানের হাতে ধাঁরালো ছুরি দেখে চোখ উল্টে তাকালো তৌফিক।অরিত্রান বেশ স্বাভাবিক।পা গুলোকে সে সামনের চেয়ারে তুলে দিয়েছে।হাতের ছুরি ইমানের সামনে ঘুরিয়ে বললো,
—-“ তা শুরু কর।”
ইমান রেগে বললো,
—-“ কি শুরু করবো??তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো??কেন???আমার বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন??তোমার জন্য যেতে পারছি না।”
হো হো করে হেসে উঠে অরিত্রান।নিজের হাসি না দমিয়ে বললো,
—-“ তোর কাজ বিদেশে না তো।আমার কাছে।তা তোর এতো কিসের তাড়া বলতো???আমি নিজে বরং তোরে নিয়ে দিয়ে আসবো।নিজের প্রাইভেট বিনানে করে।বল!!”
—- “দেখ যেতে দে।ভালো হবে না কিন্তু আমার সাথে পাঙ্গা নিলে???”
অরিত্রান চোখ বড় করে ফেললো।ভয় পাওয়ার একটা ভাব নিয়ে বললো,
—-“ ভয় পেয়ে গেছি আঙ্কেল!!ওহহহ্ এখন কি হবে??এতো ভয় কোথায় রাখি বলো তো??”
অরিত্রান ছুরি বসিয়ে গিয়েছে ইমানের আঙ্গুলে।এক টানে বৃদ্ধা আঙ্গুল নিচে পরে গেছে।তৌফিক লাফিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াঁয়।এমন মজার ছলে অরিত্রান এই কাজ করবে তার জানা ছিলো না।অরিত্রান স্বাভাবিক ভাবে আবার বসে পর টেবিলের উপরে।তৌফিক নির্বাক।ইমান চিৎকার করতে করতে বললো,
—-“ আমার আঙ্গুল।”
অরিত্রান চুক চুক করে শব্দ করে বললো,
—-“ আহ্ আঙ্গুল বেচাঁরা!!আচ্ছা এবার কি বাকি গুলোও ফেলে দিবো???”
আঁতকে উঠে ইমান।চেঁচিয়ে বললো,
—-“ তুই যা চাস তাই হবে।আমার আঙ্গুলের কিছু করিস না।বল কি জানতে চাস???”
হাসতে হাসতে অরিত্রান বললো,
—-“ প্রথম থেকে শুনতে চাই।আশিক খানের সাথে পরিচয় থেকে শুরু করে সব।বল!!!”
ভয়ে, আতঁকে উঠা চোখে তৌফিক তাকিয়ে আছে।অরিত্রান তৌফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ ইশশশ আপনি ভয় পেয়ে গেছেন না??আমি কিন্তু আপনাকে থাকতে বলি নি।আপনি নিজে থাকতে চেয়েছেন।আর আপনার ওয়াইফের সাথে এই তিন বছর কি কি হয়েছে আপনারও জানার অধিকার আছে তাই আমিও আর নিষেধ করিনি।এতে আমার কি দোষ মিষ্টার তৌফিক!!”
তীর ছুড়া কথায় তৌফিক দাঁতে দাঁত চাপলো।তার নিজেরই ভয় লাগছে এই ছেলেকে।অরিত্রান নিজের লোকেদের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ মেহমানদারি করতে পারছ না না কি??না কি বাংলাদেশে এই নিয়ম নেই।”
উপস্থিত সবাই দৌড়ে বাহিরে গেলো।কোথেকে যেন কোল্ডড্রিংক্সের বোতল নিয়ে এসে তৌফিকের সামনে দিলো।তৌফিক বিস্ময়ে হতবাক।তার বুক কাঁপছে।হার্টের প্রবলেম আছে তার।এসব দেখতে পারে না তিনি।দুর্বল হার্টের অধিকারী তিনি।তৌফিক হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গরিয়ে পরা ঘাম মুছে নিলো।অরিত্রান হুংকার তুলে ইমানকে বললো,
—-“ বলা শুরু করবি না কি বাকি আঙ্গুল ফেলে দিবো??”
—-“ না না।” করে চেচিঁয়ে উঠলো ইমান।
—-“ তো বল!!” শান্ত কন্ঠ অরিত্রানের।
তৌফিক বুঝে উঠতে পারছে না কোনটা অরিত্রানের আসল রূপ।ইমান বললো,
—-“ আশিকের সাথে আমি একসাথে জব করতাম।প্রথমে বন্ধুত্ব করি সে বড় লোকের ছেলে ভেবে।পরে যানতে পারি তাকে তার বাবা মেনে নিচ্ছে না।তাই দূরে সরে যেতে চাই।টাকা নেই তো বন্ধুত্ব দিয়ে কি কাম।কিন্তু তখনই আশিক নিজের বড় অংকের টাকা বের করে।তার জমানো অনেক টাকা আছে।প্রথমে সেগুলো চুরি করতে চেয়েছিলাম।পরে প্ল্যান চেঞ্জ করলাম।ব্যবসায় তার সঙ্গী হলাম।প্রচন্ড বুদ্ধিমান ছিলো আশিক।কম সময়ে বেশ নাম কামিয়ে ফেললো সে।গাড়ি বাড়ি সব হলো।আমারও কম হয়নি।কিন্তু তার বেশি এটা আমি সহ্য করতে পারলাম না।তার উপর অমিতাকে আমি পছন্দ করতাম।”
অরিত্রান কিছু বলছে না।সে এমন ভাবে সব শুনছে যেন এই সবই সে জানতো।তৌফিক নিজেই অবাক হয়ে বললো,
—-“ কি???”
—-“ হুম।অমিতা তুর্কি মেয়ে।রূপ তার ঝড়ে পরার মত।প্রথম দেখায় মাথা খারাপ আমার।তার জন্যই নিজের বউকে খুন করেছি।ভেবেছি আশিক আর অরিত্রানকে সরিয়ে আমি,সে আর ইহান পরিবার তৈরি করবো।তাই তো নিজের স্ত্রীকে আগে সরিয়ে দিয়েছি।”
ইহান হতভম্ভ নয়নে তাকিয়ে আছে।এতক্ষণের নড়চড় বন্ধ তার।চোখ তার লাল লাল হয়ে আছে।তার মা,নিজের মা,যিনি তাকে জন্ম দিয়েছে তাকে তার বাবা নিজে মেরেছে??কিন্তু তার বাবা তাকে কেন বললো,তার মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো??কেন??ছিঃ!!এতো জঘন্য তার বাবা??বাবা কথাটা মনে মনে ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে ইহানের।তৌফিক তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।তিনি অরিত্রানকে বুঝতে চাচ্ছে।কি করবে অরিত্রান দেখতে চাচ্ছে।ইহানের থেমে যাওয়া দেখে তিনি তার দিকে তাকায়।ইহান বাকরূদ্ধ তো অনেক আগেই হয়েছে!!সাথে এখন অনুভুতি শূন্য।একদম শূন্য হয়ে বসে আছে সে!চোখ তার ইমানের দিকে।তার বাবা তার মাকে মেরেছে??তাও অন্যের স্ত্রীরির জন্য???রাগে ফেটে পরছে সে।ভিতর থেকে রাগের ফোঁস ফোঁস শব্দ বেরিয়ে আসছে তার।এতো রাগ এই জীবনে আর কখনোই হয়নি তার।ওয়াসেনাতকে অরিত্রানের বাহুতে দেখেও না।
#চলবে_________