না বললেও ভালোকিন্তুবাসি !! Part- 04
মোহনা ভেজার মধ্যে স্লিপ খেয়ে ধিরিম করে পরে গেলো। যথেষ্ট ব্যাথা পেলো। কিন্তু অর্থিকে ছারলোনা। ওকে ১ফোটাও ব্যাথা লাগতে দেয়নি। মোহনা যে উঠবে তাও উঠতে পারছেনা। যদি জোর করে উঠতে যায় তাহলে অর্থি হয়তো ব্যাথা পেতে পারে। তাই খুব সাবধানে ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু পারছেইনা। অর্থি ছোট হওয়াতে ভয় পেয়ে কাদতে লাগলো।
.
ওদিকে…
সাগরের কাজ শেষ হলো।
সাগর: যাক কাজটা শেষ হল…
তখনই সাগর অর্থির কান্নার শব্দ পেলো। সব ফেলে ছুটে এলো। এসে দেখে মোহনা ওঠার চেষ্টা করছে। মানে নিচে পরে আছে। ছুটে গিয়ে অর্থিকে আগে কোলে নিলো। অর্থি ভীষন কান্না করছে। মোহনা পায়ে আর কোমড়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছে। খুব কষ্ট করে উঠে দারালো।
সাগর: সোনামনি…. বাবা কোথায় কষ্ট হচ্ছে? কাদেনা কাদেনা বাচ্চা।
মোহনা মনে মনে অনেক ভয় পেতে লাগলো। তখন শিখা আর শ্রাবনীও এলো।
শ্রাবনী: কি হয়েছে? দেখি… দেখি…
শ্রাবনী অর্থিকে কোলে নিলো।
শিখা : কাদছে কেন? কি হয়েছে?
সাগর: তোমরা কি dumb যে এই idiot এর সাথে ওকে ঘুম পারিয়ে রেখে গিয়েছিলে…
শ্রাবনী: আহ… সাগর। বাইরে যা। ওকে খাওয়াবো।
সাগর হন হন করে বেরিয়ে গেলো। শিখাও বেরিয়ে গেলো। মোহনা তো সেই লেভেলের ব্যাথা পেয়েছে। তাই খুব ধীরে ধীরে হেটে যেতে লাগলো।
.
শিখা: সাগর মাথা ঠান্ডা কর। ছোটমানুষ…
সাগর: ছোট মানুষ…. ওকে কোলে নিতে বলেছিলো কে? কতোবার বলেছি যেন অর্থিকে কোলে না নেয়…
মোহনা খুব সাবধানে ওখানে এলো। মোহনাকে দেখে সাগরের মেজাজ আর বিগরে গেলো।
সাগর মোহনার বাহু ধরে টেনে নিজের সামনে দার করালো ।
সাগর; কি সমস্যাটা কি তোমার? কেন কোন কথা শুনোনা? কেন এতো অবাধ্য তুমি?
মোহনা: ….
সাগর: কেন আমার হাজারবার নিষেধ করা সত্তেও অর্থিকে কোলে নিয়েছো?
মোহনা: ও কককা…
সাগর: shut up… কোনো কথা বলবানা তুমি। তোমার জন্য আজকে অর্থি এমন ব্যাথা পেয়েছে।
মোহনা: বববিশ্বাস কককরুন আমি অর্থিকে ববব্যাথা পপপেতে দদেইনি।
সাগর: oh really ? তাহলে ও কাদছিলো কেন? কিছু না বলতে বলতে তুমি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো। ওকে নিয়ে পরে গেছে আর বলছে ব্যাথা পায়নি।
সাগর অনেক বকতে লাগলো। মোহনা আর মেনে নিতে পারলোনা।
মোহনা: enough is enough সাগর। কে হন আপনি আমাকে এভাবে dominate করার? আপনি always আমার সাথে এমন ব্যাবহার কেন করেন? কি মনে করেন আপনি নিজেকে? আমাকে? আপনার খেলার পুতুল? আমি কি আপনার রোবট নাকি? যে আপনি উঠতে বললে উঠবো আর বসতে বললে বসবো? যেখানে আমার বাবা-ভাইয়া-ছোটআম্মু-ছোটআব্বু কখনো আমার সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেনা সেখানে আপনি কে এমন করে কথা বলার? কে আপনি? নাকি আপনাদের বাসায় এসেছি বলে,,, থাকছি,,, খাচ্ছি বলে….? যদি এমনটা হয় তাহলে আমি আজই এখনি চলে যাবো। আর চিন্তা করবেন না… যাওয়ার আগে একদিনে আপনি যতো টাকা খরচ করেছেন সব টাকা দিয়েই যা…
আর বলতে পারলোনা। সাগর ঠাস করে ১টা থাপ্পর মারলো। এরপর হনহন করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মোহনাও ঘরে ঢুকে দরজা লাগালো। জীবনেও থাপ্পর খায়নি ও । আজকে খেলো। ঘরে যা যা পেলো সব ভাঙলো। শিখা জানে যে ভাঙাচুরা শেষ না হলে মোহনার রাগ কমবেনা।
.
রাতে…
সাগর বাসায় ফিরলো। অনেক ধরনের অনেক গুলো চকোলেট আর বেলুন নিয়ে।
শিখা: এগুলো নিয়ে ঢং করতে এসেছিস? মেয়েটাকে তখন ওভাবে মারলি কি করে রে? হাত কাপলো না?
সাগর: মামনি… ও আমার মোহো। আমার মতো handle করতে দাও।
শিখা: তোমার মোহো হতে পারে কিন্তু ভুলে যেওনা তার আগে আমার মেয়ে। তোমার সকল ধরনের সব রাগ মেনে নিতে পারবো কিন্তু মিষ্টির গায়ে হাত তোলা আমি কখনোই মেনে নিবোনা। got it? অশিক্ষিত তুমি? যে এভাবে মারামারি করবে?
সাগর:sorry মামনি…
সাগর চাবি নিয়ে দরজা খুলল। কিন্তু দেখে মোহনা ঘরে নেই। বেডে কেবল টাকা রাখা আছে। সব জায়গায় খুজলো। কিন্তু কোথাও মোহো নেই। পাগল হয়ে গেলো সাগর । কখনো না বলে বাসা থেকে বের হয়না। তাহলে আজকে? দারোয়ানের কাছে জানতে পারলো যে মোহনা বাসা থেকে বের হয়েছে।
.
ওদিকে…
দীপ্তি বাবার বাসায় যাওয়ার পর শুভ্র নারায়নগঞ্জ ওদের গ্রামের বাড়িতে গেছে । ওর মায়ের কাছে। তাই মোহনা অহনাদের বাড়ি মানে অহনার শশুড় বাড়িতে গেছে। সৌরভকে ফোন করেছে আসার জন্য। সৌরভ এসে চৌরাস্তা থেকে নিয়ে গেছে।
মোহনা পরে যাওয়াতে পায়ে যথেষ্ট ব্যাথা পেয়েছে। যখন পরেছে তখন কম হলেও পরে পা অনেক ফুলে গিয়েছে। পায়ে হারভাঙার ব্যান্ডেজের মতো ব্যান্ডেজ করতে
হয়েছে। আর কোমড়েও অনেক ব্যাথা….
মোহনা শুয়ে আছে।
মিসেস জাবিন (অহনার শাশুড়ি। আবুল type মহিলা। সেই সাথে আজিরা ভালো) : বউমা…
অহনা: হ্যা মা…
জাবিন: মোহনা মা… কি ঘুমিয়েছে?
অহনা: হ্যা মা।
জাবিন: না হলে সৌরভ কো বলো ডক্টরকে আরেকবার ডাকতে।
অহনা: না মা তা লাগবেনা।
সায়ান: ভাবি… ভাইয়া কোথায়?
অহনা: মিষ্টির কাছে।
সায়ান: oh…
অহনা ২কাপ কফি নিয়ে রুমে গেলো । দেখলো
কোলের ওপর বালিশ নিয়ে তাতে মোহনার মাথা রেখে সৌরভ মোহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
.
অহনা: তুমি এখনো fresh হওনি?
সৌরভ:🤫। আস্তে কথা বলো । অনেক কষ্টে ঘুম পারিয়েছি।
অহনা: oh.. যাও তুমি fresh হয়ে নাও।
সৌরভ: যাচ্ছি দারাও। মাত্র ঘুমটা ধরেছে । কাচা ঘুমটা ভাঙলে অযথাই পাগলামি করবে।
অহনা:…
সৌরভ: কি হলো হাতে কফি নিয়ে দারি়য়ে আছো কেন? ২কাপই কি নিজে খাবে? দাও আমাকে। thanks god যে জ্বরটা কমেছে। যে জ্বর উঠেছিলো।
অহনা কফিটা সৌরভকে দিলো।
অহনা: thanks …
সৌরভ: what? why?
অহনা : আমার পরিবারকে নিজের পরিবার মনে করে ভালোবাসার জন্য । specially আমার মোহোপাখি টাকে এতো আদর করার জন্য।
সৌরভ: মোহো কি আমার কিছু হয়না? ওকে পেয়ে আমি।
আমার ছোটবোন পেয়েছি। এ আমার কলিজা টুকরা।
অহনা: ☺️।
সৌরভ: নিশ্চয়ই পরে যাওয়ার জন্য সাগর কিছু বলেছে। আর তাই রেগে টম হয়ে গেছে ।
অহনা: কিন্তু ছোটআম্মু ছোটআব্বু সাগর ওরাতো চিন্তায় আছে। এখন তো ও ঘুম । এখন ১টা ফোন করার দরকার।
সৌরভ: হ্যা করে ফেলো।
.
সকালে…
১২টা…
মোহনার ঘুম ভাঙলো । উঠে বসলো। চোখ মেলে তাকিয়ে
দেখে : আআআ…📢📢…
কারন এটা সাগরদের বাসা।
মোহনা: আমি এখানে কি করে এলাম?
সাগর: কোলে শুয়ে…
মোহনা পাশে ফিরে দেখে যে সাগর ল্যাপটপে কাজ করছে। সাগরকে দেখে মোহনার কি ইচ্ছা করছে সেটা ও নিজেও জানেনা।
তখনই শিখা নাস্তা নিয়ে এলো।
শিখা : কেমন আছে আমার মা টা…
শিখা এসে মোহনার পাশে বসলো।
শিখা : ব্যাথা কমেছে মা… দেখি দেখি জ্বর কমেছে কিনা? যাক আল্লাহর রহমতে এখন জ্বর নেই। রাতে তোর যে জ্বর উঠেছিলো না… যে কি বলবো?
মোহনা: …
শিখা: চল fresh হয়ে নিবি…
শিখা ধরে ধরে মোহনাকে washroom এ নিয়ে গেলো। নিয়ে এলো।
.
শিখা : মামনি হা কর খেয়ে নে।
মোহনা চুপচাপ blanket মুরি দিয়ে শুয়ে পরলো।
সাগর শিখাকে ইশারা দিয়ে বলল চলে যেতে। শিখা ভালো মতোই জানে যে মোহনাকে handle একমাত্র সাগরই পারে। তাই ও চলে গেলো।
সাগর:ওই ওঠো…
মোহনা: …
সাগর: মোহো … ওঠো…
মোহনা: …
সাগর : উঠতে বলেছি কিন্তু….
মোহনা: ….
সাগর : শেষবারের মতো ভালোভাবে বলছি ওঠো।
মোহনা : ….
সাগর মোহনাকে টেনে ওঠালো।
সাগর: হা করো….
মোহনা সাগরের হাত থেকে ধাক্কা দিয়ে খাবার ফেলে দিলো। সাগরের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে
বলল: খাবার ফেলা কি ঠিক?
মোহনা : …
সাগর : দেখো কালকে তুমি ভুল করেছো তাই থাপ্পর মেরেছি। সেটা নিয়ে এমন react করার কিছু নেই… আর না আমি এর জন্য sorry torry বলবো। এমন ভুল করবা আবার শাস্তি পাবে। got it… এগুলো clean করে আমি আবার খাবার নিয়ে আসছি। চুপচাপ খাবে।
সাগর পরিষ্কার করে আবার খাবার এনে মোহনাকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে ঔষধও খাইয়ে দিলো।
সাগর : এখন rest করো। কিছু লাগলে ডাক দিও। তোমার পা এখন ঠিক আছে তবুও একা হাটার চেষ্টা করবেনা।
.
১ঘন্টাপর…
শ্রাবনী: আরে বড়আব্বু…
শুভ্র: ভালো আছো মা। সবাই ভালো আছো?
শ্রাবনী: হ্যা বড়আব্বু…
শুভ্র: মামনি কোথায়?
শ্রাবনী: রুমে বড়আব্বু…
শুভ্র ছুটে মেয়ের কাছে গেলো। দেখে মোহনা ঘুমিয়ে আছে। মোহনা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এরপর কপালে চুমু একে দিলো। ঘুমিয়ে আছে বলে আর ডাক দিলোনা। বেরিয়ে এলো।
রেদোয়ান : sorry … শুভ্র… যা হয়েছে তারজন্য আমি সত্যিই অনেক লজ্জিত।
শুভ্র: কটা দিনতো রইলোই… এখন বাসায় নিয়ে যাই। আবার আসবেনে।
শিখা: দুলাভাই… নিয়ে যাবেন ভালো কথা। কিন্তু দীপ্তি মামনি তো বাসায় নেই… ওর খেয়াল কি করে রাখবেন?
শুভ্র: মিতা আছে।
সাগর: বড়আব্বু … মোহোকে এখন নিওনা please … ও সুস্থ হোক then নিয়ে যেও।
শুভ্র: ও আমার মেয়ে সাগর। so let me decide ….
সাগর বুঝতে পারলো শুভ্র ওর ওপর সেই লেভেলের ক্ষেপে আছে। সাগর গিয়ে শুভ্রর সামনে বসলো। নিচে…
সাগর: বড়আব্বু… i know what have i done… that was wrong … but…
তুমি তো জানো যে মোহোর ক্ষতি হোক এমন কিছুই আমি কখনোই করতে পারিনা… রাগ টা একটু বেশি আমার… control করতে পারিনা। কিন্তু তুমি যদি ওকে এখন নিয়ে যাও তবে না তো ও মেডিসিন ঠিক মতো নেবে আর না খাবার ঠিক মতো খাবে। আর তুমি, ভাবি, ভাইয়া & others কেউই ওকে জোর করে খাওয়াতে পারবেনা। কারন ওর মধ্যে ভয় জিনিস টা ওর মধ্যে নেই। ও কেবল…
মোহনা: আপনাকেই ভয় পায়…
.
সবাই পিছে ঘুরলো। দেখলো মোহনা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে দারিয়ে আছে।
মোহনা: মোহনা একমাত্র সাগরকেই ভয় পায়… আর সেটাই আপনার advantage … whatever … বাবা আমি বাসায় যাবো তো যাবো।
সাগর: তুমি যাবেনা। সুস্থ হও আমি নিজে গিয়ে তোমাকে দিয়ে আসবো।
মোহনা : বাবা আমি তোমাকে বলেছি…
শুভ্র জানে যে সাগর যা বলছে ঠিকই বলছে। মোহনাকে বাসায় নেয়া মানেই খাওয়া-দাওয়া মেডিসিন নেয়া সব তো তুঙ্গে উঠবেই সেই সাথে এই পা আর কোমড় ব্যাথা নিয়েই বাচ্চাদের সাথে খেলতে চলে যাবে। আর যদি না নিয়ে যায় তো মোহনা কেয়ামত শুরু করতে পারে। শুভ্র সাগরের দিকে তাকালো। সাগর চোখ বুজে ওকে ভরসা দিলো।
শুভ্র: মামনি…
সাগর: তুমি কোথাও যাচ্ছোনা।
মোহনা: বাবা আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি।
সাগর: don’t you understand the meaning of “No”…
মোহনা: বাবা যদি আমাকে আজকে বাসায় না নিয়ে যাও আমি কিন্তু suicide করবো…
সাগর: do whatever you want…
সাগর সহ সবাই জানে যে মোহনা জীবনটাকে কতোটা ভালোবাসে। তাই ওর কথাটা হালকাভাবে নিলো। ভুলেই গেলো মোহনার জেদের কথা।
.
রাতে…
সবাই ঘুমিয়ে আছে। শিখাও ঘুম। মোহনা তো ঘুমায়নি। যখনই দেখলো শিখাও ঘুম তখন মোহনা উঠে ওর সব ওরনা joint করে ড্রয়িংরুমে গেলো। ওখানে থাকা সেন্টার টেবিলটা সরিয়ে চেয়ারের ওপর টুল বসালো। এরপর তারওপর দারালো ফ্যানের সাথে ওরনার ১পার্ট বাধলো।
মোহনা: বাবাগো… এই টুল এতো নরছে কেন? by at any chance যদি পরে যাই কোমড় তো ভাঙবেই সেই সাথে জল্লাদের গলা কাটা বোনাস। তাহলে কি suicide cancel … ??!!! no no… cancel করলে কেউ তোর কথা seriously নিবেনা… you have to do this মোহনা…
.
ওদিকে…
সাগর: ঘুম আসছেনা কেন? আমার মনে হয় ১বার মোহোকে চেক করে আসলে ভালো হয়….
সাগর মোহোকে চেক করতে বের হলো। যেই ড্রয়িংরুমে গেলো তখন সেখানের দৃশ্য দেখে সাগরের হাত-পা জমে গেলো। কারন মোহনা ফাসি দেয়ার চেষ্টা করছে।
সাগর: মোহো…
সাগর ছুটে গিয়ে মোহনাকে ধরার আগেই মোহনা ধপাস করে নিচে পরে গেলো। কারন… ওরনার যে partটা ও ওর গলায় পেচিয়েছিলো সেখানে যে গিট দিয়েছিলো সেটা loose হয়েছিলো। তাইজন্য গিট খুলে যায় আর মোহনা পরে যায়। ওর ওপর চেয়াক টেয়ারও পরে।
মোহনা : ouch…
এখন তোমরা ভাবো যে সাগর মোহনার সাথে কি করতে পারে? 😁