তুমি প্রাক্তন নও আমার ভালোবাসা !! Part- 12
চিঠিটা পড়ে ফারহানের আরো বেশি রাগ উঠলো…কফিলকে কল দিয়ে বলে তার বাসায় আসতে,,, অফিস ছুটির কারণে কফিল এখনো রাস্তায় তাই তাড়াতাড়ি চলে আসলো…
কফিল : স্যার আসবো
ফারহান : হুম আসো,,,, আমার সাথে চলো এক জায়গায়,,,
কফিল : আসুন স্যার…..
দুজনে গাড়িতে উঠলো কফিলকে বললো ফারিয়ার হোস্টেলে নিতে গাড়ি,,, কফিলকে সাথে নেওয়ার একমাত্র কারণ হলো ড্রাইভিং করা,,,না হয় ফারহান রাগের মাথায় উলটা পালটা ড্রাইভিং করে কোন দূর্ঘটনা বাঁধিয়ে ফেলবে আর ফারিয়াকেও খোঁজা হবে না,,,,, ফারহান গাড়িতে বসে রাগে ফুঁসছে,,,,
ফারহান : তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে বলা ছাড়া এক পা বাড়ির বাইরে রাখার,,,,তুমি আমার বউ আমার কথাই শেষ কথা আমাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া কেন তুমিববাড়ি ছেড়ে গেছো এর একটা উচিত শিক্ষা তো পাবেই তুমি,,,,কে কি বললো না বললো সেদিকে মাথা ঘামানোর তো কোন দরকার ছিলো না তোমার,,,,এইসব ভাবছে আর রাগে ফুঁসছে এর মধ্যে ফারহান তার মা নেহারকে কল দিলো…
দুই তিন বার রিং হওয়ার পরই রিসিভ করলো নেহার…
নেহার : কেমন আছিস বাবা
ফারহান : আমি কেমন আছি তোমার তো জানার কথা তাই না এখন জিজ্ঞেস করার কি দরকার আছে,,,আমাকে ভালো থাকতে তো তোমরা দিবে না তাই না..(রেগে)
নেহার : কি বলছিস এইসব তুই,,,তুই কি ভুলে গেছিস তুই কার সাথে কথা বলছিস,,, সম্মান করতে ভুলে গেলি নাকি তোর স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে
ফারহান : ওহ প্লিজ মা আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আর আমাকে না ম্যানার শেখাতে এসো না,,, আমি যা বলছি ঠিকি বলছি কেন এসেছিলে আজকে আমার বাসায় আমার আমার ভালো থাকা কি তোমার আর তোমার মেয়ের সহ্য হয় না নাকি,ফারিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ফারিয়ার কিচ্ছু হলে তোমাদের ভালো হবে না… ,(ফারহানের এইসব কথা শুনে নেহার এর গা যেন জ্বলে যাচ্ছি কিন্তু চুপ করে আছে,,,এটা ভেবে খুশি লাগছে যে তার প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে….নেহার এর এমন চুপ করে থাকা দেখে ফারহান আবার বলে উঠে….কালকে সকালে যাতে তোমাকে আর তোমার মেয়েকে আমার বাসায় পাই এটাই শেষ কথা বাই (বলেই ফারহান ফোন কেটে দিলো,,,,বেচারা কফিল ভয়ে কিছু বলছে না,,, কারণ ফারহানের এই রাগের সাথে সে পূর্ব পরিচিত,,, গাড়ি হোস্টেলের সামনে থামতেই ফারহান নেমে ফারিয়াকে খুঁজতে লাগলো,,,কফিল গিয়ে হোস্টেলের ম্যানেজার এর সাথে কথা বললো,,, উনি বললেছে ফারিয়া নাকি অনেক দিন হলো হোস্টেলে আসে না,,,,, ফারহানের বুঝতে বাকি রইলো না ফারিয়া তার বাড়ি চলে গেছে,,,দুজনে গিয়ে গাড়িতে বসলো রাগে ফারহানের শরীর কাঁপছে মনে হচ্ছে,,,ফারহান কফিলকে ফারিয়ার ঠিকানা বললো তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে বললো… কফিল ফারহানের এমন অবস্থা দেখে ভয় ভয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো এর মাঝে ফারহান কফিলকে ধমক দিয়ে বলে উঠলো..
ফারহান : এত আস্তে গাড়ি চালালে কখন যাবো তোমাকে না নিয়ে আসাই বেটার ছিলো(রেগে)
কফিল : স্যরি স্যার (বলে জোরে গাড়ি চালাতে লাগলো ভয়ে…
অন্যদিকে মিসেস মেহতাজ ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন কলিংবেল এর আওয়াজ শুনে বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলে দেখে যে একটা মেয়ে দ দাঁড়িয়ে আছে,,,,ভালো করে খেয়াল করে দেখলো যে এটা তার একমাত্র মেয়ে ফারিয়া,,, ফারিয়াকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন মিসেস মেহতাজ,,, মেহতাজের কান্না শুনে ঘরে থাকা আতিক আব্দুল্লাহ (ফারিয়ার বাবা) থেকে বেরিয়ে আসেন এসে দেখেন ফারিয়া বাসায় এসেছে আর মিসেস মেহতাজ ফারিয়াকে চুমু দিয়ে কান্না করতে করতে বললো,
মেহতাজ : কোথায় চলে গিয়েছিস তুই,,, তোকে কত খুঁজলাম,,, আমাদের কথা কি তোর একটুও মনে পড়েনি মা একটা বছর কেন দূরে ছিলি আমাদের থেকে,,, (এইসব বলতে লাগলো আর কান্না করতে লাগলো…আতিক সাহেন বলে উঠেন…
আতিক : আরে আমার মামুনীটাকে ঘরে আসতে দিবে তো নাকি,,, কত দিন পর বাসায় আসলো,,, (ফারিয়া এগিয়ে গিয়ে তার বাবাকে সালাম করলো…তার বাবা ফারিয়াকে বুকে জড়িয়ে নিলো এবং ভিতরে নিয়ে গেলো………
তার পর ফারিয়া তাদের তার সমস্যার কথা বললো কেন ছেড়ে চলে গেছে তাদের,,, সাথে ফারহানের অফিসে জব করা এবং বিয়ের কথা,,,, ফারহানের মায়ের কথা সব বললো,,,,, সব শুনে মিসেস মেহতাজ বলেন,,,,ফারিয়ার উচিত ছিলো ফারহানকে বিষয়টা জানানো,,,,আতিক সাহেবও বেশি কিছু বললেন না অনেক দিন পর মেয়েকে কাছে পেয়েছেন এতেই অনেক খুশি তারা,,,, মিসেস মেহতাজ নিজের হাতে মেয়েকে খাইয়ে দিলো,,,, আজকে সবাই মিলে এক সাথে খাবার খেলো দুপুরেও রাতে খাবার খেয়ে ফারিয়া তার রুমে চলে গেলো….
ফারহানের একটা ছবি হাতে নিয়ে শুয়ে আছে ফারিয়া আর ভাবছে মানুষের জীবনে না চাইতেও অনেক কিছু হয়ে যায়,,অনেক কিছু পেয়ে যায় আর না চাইতেও অনেক কিছু হারিয়ে ফেলতে হয়,,,,ফারহানকে খুব মনে পড়ছে তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত মনে পড়ছে তার বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে ফারিয়া শোয়া থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষন পর দেখে একটা গাড়ি তাদের বাড়িতে ডুকছে তা দেখে ফারিয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভালো করে খেয়াল করে দেখে এটা ফারহানের গাড়ি ফারহানের গাড়ি দেখে ফারিয়া খুব ভয় পেয়ে গেছে,,,,
ফারহান গাড়ি থেকে নেমে কলিংবেল চাপতে লাগলো এক সাথে,,,, কলিংবেল এর এমন আওয়াজ শুনে মিসেস মেহতাজ এর রাগ হলো তিনি চেঁচিয়ে বলেন…
মেহতাজ : আরে আসছি তো এভাবে কলিংবেল চাপার কি আছে,,,বলেই দরজা খুলতে আসেন তার সাথে আতিক সাহেবও আসেন… মেহতাজ দরজা খুলে দেখে যে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে
মেহতাজ : তুমি(ফারহান কে দেখে)
ফারহান : হুম আমি ফারিয়া কোথায়
মেহতাজ : উপরেই আছে ওর রুমে(বলা মাত্রই ফারহান এক মিনিট ও দেরি না করে উপরে চলে গেলো ফারিয়ার রুমে গিয়ে দেখে ফারিয়া বিছানায় বসে আছে,,,, ফারহানকে দেখে দাড়িয়ে যায় আর বলে
ফারিয়া : আপনি? কেন এসেছেন?
ফারহান : আমি তোকে নিয়ে যেতে এসেছি
ফারিয়া : আমি যাবো না কোথাও আপনার সাথে,,, আপনাকে এখানে কে আসতে বলেছে(ফারহানের মুখে তুই ডাক শুনে ফারিয়া বুঝে যায় ফারহান প্রচণ্ড রেগে আছে,,,, সাথে তার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে)
ফারহান : চল আমার সাথে ( বলেই ফারিয়ার হাত ধরে নিচে নিয়ে যায়,,আর ফারিয়া বলে..
ফারিয়া : আমি কোথাও যাবো না ছেড়ে দিন আমাকে (বলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে…ফারহান ফারিয়াকে নিচে নিয়ে যায় আর আতিক সাহেব ও মিসেহ মেহতাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,
ফারহান : মা বাবা দোয়া করবেন আমার জন্য আমি ফারিয়াকে এখন নিয়ে যাচ্ছি আর আমি বলে দিবো আপনাদের যাওয়ার জন্য (বলেই ফারহান ফারিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়,,, মেহতাজ আর আতিক সাহেবও কিছু বলেনি তারা বুঝে গেছেন তার মেয়ের জন্য ফারহানই উপযুক্ত ছেলে,,,,
ফারহান ফারিয়াকে জোর করে গাড়িতে উঠায় আর কফিলকে বলে যেন তাড়াতাড়ি গাড়ি চালায়,,,,, পুরো রাস্তায়,,, ফারিয়া বার বার চেয়েছে গাড়ি থেকে নামার জন্য,,, ফারহানের সাথে জোরাজুরি করেছে কিন্তু পারেনি..
ফারহানের বাসার সামনে কফিল গাড়ি থামায় ফারহান ফারিয়াকে টেনে গাড়ি থেকে নামায়,,, আর কফিলকে বলে গাড়ি নিয়ে তার বাসায় চলে যেতে কফিল বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যায়… ফারহান কলিংবেল চাপ দিতেই রহিমা খালা দরজা খুলে দেয় মনে হচ্ছিলো দরজা খোলার জন্যই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো,,,
ফারহান ফারিয়াকে উপরে নিজের ঘরে নিয়ে যায় আর হাত ছেড়ে,,,
ফারিয়া : আমি এখানে থাকবো না আমি চলে যাবো,,,, আর আপনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো (বলেই যেতে চাইলে ফারহান রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে…ফারিয়াকে থাপ্পড় মারতে শুরু করে আর বলে..
ফারহান : তোর সাহস কি করে হয় আমার অনুমুতি ছাড়া বাইরে পা রাখার,,, তোকে কে কি বলেছে তুই সব আমাকে বলার দরকার ছিলো কারণ আমি তোর বর,,,তোর সকল ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার,,,, তোকে কি অন্যকেউ বিয়ে করেছে যে তুই তাদের কথা শুনবি,,,, তোর খুব শখ না আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার তোর এই শখ কখনো পূরণ হবে না আমি বেচে থাকতে বুঝলি(ফারহান এইসব বলতে লাগলো আর ফারিয়াকে থাপ্পড় মারতে লাগলো,,,, ফারিয়ার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে থাপ্পড় এর জন্য তাও ফারিয়া কিচ্ছু বলছে না কান্না করে যাচ্ছে,,,, এত জোরে থাপ্পড় দিছে ফারিয়া পড়ে যায় ফারহান ফারিয়ার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায় আর ফারিয়া বলতে থাকে
ফারিয়া : আমার লাগছে প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন,,,,(ফারহান ফারিয়ার কোন কথা শুনছে না ফারিয়াকে ছাদে নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বৃষ্টির মধ্যে ছাদে রেখে আসে দরজা লক করে নিচে এসে ফারহান রাগে অনেক কিছু ভেঙে ফেলে আর অফিসের জামা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বয়াএ আছে সোফায় প্রায় দেড় ঘন্টা পর ফারহানের মনে হলো একি করলো সে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে আজকে,,,, ফারিয়ার কথা কনে পড়তেই দেখে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে ফারহান আর একটুও দেরি না করে দৌড়ে ছারে চলে যায় আর ছাদে দিয়ে দেখে…..
চলবে……