তুমি প্রাক্তন নও আমার ভালোবাসা

তুমি প্রাক্তন নও আমার ভালোবাসা !! Part- 13

ফারিয়া : আমার লাগছে প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন,,,,(ফারহান ফারিয়ার কোন কথা শুনছে না ফারিয়াকে ছাদে নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বৃষ্টির মধ্যে ছাদে রেখে আসে দরজা লক করে নিচে এসে ফারহান রাগে অনেক কিছু ভেঙে ফেলে আর অফিসের জামা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বয়াএ আছে সোফায় প্রায় দেড় ঘন্টা পর ফারহানের মনে হলো একি করলো সে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে আজকে,,,, ফারিয়ার কথা কনে পড়তেই দেখে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে ফারহান আর একটুও দেরি না করে দৌড়ে ছারে চলে যায় আর ছাদে দিয়ে দেখে…..ফারিয়া নিচে পড়ে আছে সেন্সলেস হয়ে,,, ফারহান কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু ফারিয়া কোন সাড়া দেয় না,,, ফারহান গায়ে হাত দিয়ে দেখে পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে তা দেখে ফারহান পুরোপুরিভাবে ঘাবড়ে যায় দেরি না করেই ফারহান ফারিয়াকে কোলে তুলে নেয় আর রুমে নিয়ে আসে,,,রুমে নিয়ে এসে রহিমা খালাকে ডেকে আনে ফারিয়ার কাপড় চেঞ্জ করে দেওয়ার জন্য,, রহিমা খালা কাপড় চেঞ্জ করিয়ে চলে যায় ফারহানে রুমে ডুকে দেখে ফারিয়ার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে,,,ফারহান ফারিয়ার গায়ে কম্বল দেয় আর ডাক্তার এর কাছে কল করে সব বলে যে ফারিয়া বৃষ্টিতে ভিজে সেন্সলেস হয়ে গেছে ,,,দরজার দাঁড়িয়ে পায়চারী করছে আর ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে ফারহান,, কলিংবেল এর আওয়াজ শুনেই দরজা খুলে দেয় ফারহান…

ফারহান : আসুন ডাক্তার আয়ান (বলেই অস্থিরতা নিয়ে ডাক্তার কে ভিতরে নিয়ে গেলো ফারহানের রুমে…ডাক্তার আয়ান ফারিয়াকে দেখে বলে..

ডাক্তার আয়ান : ভয়ের কোন কারণ নেই বেশি ঠান্ডা লাগার কারণে সেন্সলেস হয়ে গেছে..আর জ্বর আসছে…. তা ফারহান বিয়ে কবে করলে হুম..আর এভাবে একটা মেয়েকে কেউ মারে (ফারিয়ার গালে আঙুলের দাগ ঠোট কেটে ফুলে যাওয়া দেখে বলল)

ফারহান : আসলে..
ডাক্তার আয়ান : থাক আর বলতে হবে না,,, সংসারে এমন অনেক ছোট খাটো সমস্যা হয় বউকে মারতে হয় না,,, ভালোবাসা দিয়ে বুঝাতে হয়,,, মেয়েটাকে তার বাবা মা ভরসা করে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছে এভাবে মারা কি দরকার ছিলো,,,দেখো কত নিষ্পাপ লাগছে দেখতে,,নেক্সট টাইম এমন কিছু করোনা.. আচ্ছা আমি এখানে কিছু ব্যাথার ওষুধ আর জ্বরের ওষুধ দিচ্ছি এগুলা খাওয়াবে ঠিক মত আমি আসছি..

ফারহান : দুঃখিত এত রাতে বিরক্ত করার জন্য
আয়ান : আরে এটা আমাদের দায়িত্ব
ফারহান : চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি
আয়ান : না না আমি একাই চলে যেতে পারবো (বলেই ডাক্তার আয়ান চলে গেলো…

ফারহানের ভিতরে অপরাধ বোধ হতে থাকে খুব,,,, ডাক্তারের কথায় খুব লজ্জা পেয়েছিলো রাগের মাথায় কি করে ফেললো সে,,,, ফারহান ফারিয়ার কাছে এসে দেখে ফারিয়ার শরীর কাঁপছে,,, ফারহান খুব যত্ন করে ফারিয়ার কপালে চুমু দেয় আর ঠোঁটে কাটা জায়গায় মলম লাগিয়ে দেয় ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে রাখে সে সারা রাতে ঘুমায়নি,,,,সকালে ফারিয়ার ঘুম ভেঙে দেখে ফারহানের বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে আর ফারহান তার দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে সারা রাত ঘুমায়নি,,,কাল রাতের কথা মনে পড়তেই ফারিয়া উঠে যেতে নিলে পারে না সারা শরীর ব্যাথা হয়ে আছে তার,,চোখে জল চলে আসে ফারিয়ার,, তা দেখে ফারহান ফারিয়াকে ধরে বসিয়ে দেয় আর যদিও ফারিয়ার রাগ হচ্ছিল খুব,,ফারহান ফারিয়াকে ফ্রেশ করিয়ে দেয় আর ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিয়ে আসে ফারিয়া খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দেয় ওষুধ ও খাইয়ে দেয় ফারহান ফারিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলেও ফারিয়া মুখ ঘুরিয়ে নেয়…….

অন্যদিকে ছেলের কথায় মিসেস নেহার.. দিপ্তি সকাল সকাল চলে এসেছে সাথে নিয়ে এসেছে সুহাকে,,, সুহা হলো মিসেস নেহার এর ভাইয়ের মেয়ে তিনি চায় সুহাই হোক ফারহানের বউ করে নিয়ে অন্য দিকে সুহাও ফারহানকে পছন্দ করে সুহা অনেক খুশি এই প্রথম ফারহানের বাসায় আসছে,,, মিসেস নেহারও মনে মনে অনেক খুশি ফারিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে আজকে ছেলেকে বুঝিয়ে সুহা আর ফারহানের বিয়ে ঠিক করে রাখবে….

কলিংবেল এর আওয়াজ শুনে রহিমা খালা দরজা খুলে দেয়,, দরজা খুলে দেখে নেহার দিপ্তি আরেকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে…রহিমা খালা সবাইকে ভিতরে আসতে বলে সবাই ভিতরে এসে বসে আর রহিমা ফারহানকে ডেকে বলে তার মা এসেছে ফারহান নিচে আসে,,,ফারহানকে দেখে সুহা বলে

সুহা : গুড মর্নিং ফারহান
ফারহান : গুড মর্নিং সুহা কেমন আছো?
সুহা : ভালো তুমি কেমন আছো?
ফারহান : ভালো… (বলেই রহিমা খালাকে ডাকে..

রহিমা : জে স্যার কিছু কইবেন
ফারহান : সবাইকে কফি দাও
রহিমা : আইচ্ছা স্যার (বলেই চলে গেলো…আর মিসেস নেহার বলে উঠে …

নেহার : তা ফারহান আমি চাচ্ছি যে সুহার সাথে তোমার বিয়ে ফাইনাল করতে…
দিপ্তি : হুম ভাইয়া তুমি কি বলো আমরা সবাই চাই ,,, এখন তো আর কোম ঝামেলা নেই তাই না(এর মধ্যে রহিমা খালা সবাইকে কফি দিয়ে যায়…

ফারহান : খালা ফারিকেও দিয়ে আসো কফি
রহিমা : আইচ্ছা
@
সুহা :ফারি কে ফারহান(অবাক হয়ে)
ফারহান : আমার বউ
সুহা : তুমি বিয়ে করেছো ফারহান কিন্তু ফুফি যে আমাকে আজকে নিয়ে আসলো (খুব বেশি অবাক হয়ে)
নেহার : ফারহান এইসব কি বলছিস তুই ওই অলক্ষুণে মেয়ে না কাল চলে গেছে,,,
ফারহান : তুমি কি ভাবছো আমি ওর রুপ গুন দেখে ভালোবেসেছি নাকি যে ওর অসম্পূর্ণতার কথা শুনে ওকে ছুড়ে ফেলে দিবো ভুল ভাবছো তুমি,,,, তোমার কথায় ও বাসা থেকে চলে গিয়েছিলো ঠিকি কাল রাতেই আমি ওকে নিয়ে আসি
দিপ্তি : ভাইয়া তোমার মাথা ঠিক আছে তুমি ওকে আবার নিয়ে এসেছো বাসায়
ফারহান : দিপ্তি তুই চুপ কর বড়দের কথার মাঝে কথা বলবি না
দিপ্তি : চুপ করবো মানে,,,ও চলে যাওয়ার পরো কেন নিয়ে আসছো,,,, আমরা মানুষের কথা শুনতে পারবো না
ফারহান : দিপ্তি তোকে চুপ করতে বলছি
দিপ্তি : এখন তো আমাকে চুপ করতে হবে,,,মানুষ তো আমাদের কথা শুনাবে,,, মা তুমি কিছু বলছো না কেন
দিপ্তি : একটা থাপ্পড় দিবো,,,, 😠মানুষের কথার খবর তুই কি রাখিস তোর যখন বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছিলো তাসিন কি ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে তার পর থেকে যে বাচ্চা হচ্ছে না কই তাসিন তো তোকে ছেড়ে যায়নি,,,, বরং বলেছে আমাদের বাসায় থাকতে যখন তোর শাশুড়ি মেনে নিবে তখন তোকে আবার নিয়ে যাবে এই যে এত দিন বাবার বাসায় পড়ে আছিস মানুষ তো আমাকে কথা শুনায় কি সমস্যা তোমার বোনের তোমার বোন শ্বশুর বাড়ি যায় না কেন,,, আমি কি তোকে কখনো কিছু বলেছি,,পাড়া প্রতিবেশি তো আমাকে কথা শুনায় তোকে নিয়ে কই আমি তো কখনো অভিযোগ করিনি বাসায়,,,, অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের দিকে তোল তুই কেমন তা চিন্তা কর (জোরে রেগে কথা গুলো বললো)
আর মা তোমাকে বলি সব মানুষের সব কিছু ধারণ ক্ষমতা আল্লাহ দেয় নি আল্লাহ চাইলে তো আমাদের বাচ্চা হতেই পারে তাই না তুমি কেন বুঝতে চেষ্টা করছো না তুমি কি চাও না আমি ভালো থাকি,,,, আর অনেক মানুষেরই তো বাচ্চা হয় না তাই না ওদের কি ডিভোর্স দিয়ে দিতে হবে তাই বলে প্রয়োজনে বাচ্চা দত্তক নিবো আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তো আমাদের ঘরে বাচ্চা দিতে পারে তাই না,,, তোমরা একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়ের সংসার কি ভাবে ভাঙতে চাও,,, তোমাদের মত কিছু মহিলার কারণে অনেক নারী শান্তি মত সংসার করতে পারে না যে সংসারে শান্তি নেই সেখানে বাচ্চা দিয়ে কি হবে কখনো ভেবে দেখেছো,,,আমি যদি ফারিয়াকে নিয়ে সুখী হই তাহলে তো তোমার খুশীই হওয়ার কথা তাই দয়া করে ফারিয়াকে আমার থেকে আর আলাদা করার চেষ্টা করো না প্লিজ মা হাত জোড় করে বলছি আমার কোন বাচ্চা লাগবে না আমি ওকে ভালোবাসি বাচ্চা হলেও বাসবো না হলেও বাসবো,,,আমি যদি ১বছর আগে জানতাম ফারিয়া এই সামান্য কারণে আমাকে ছেড়ে গেছে তাহলে তখনি খুজে বের করে বিয়ে করে ফেলতাম একটা বছর আমাকে তিলে তিলে মরতে হতো না যাদি এটা কোন মোহ বা আবেগ হতো তাহলে আমি ওকে ১ বছর আগেই ভুলে যেতে পারতাম আমার নিজের জীবন সম্পর্ক বুঝার যথেষ্ট জ্ঞান আছে,,আমি এখন ছোট নই নিজের ভালো খারাও সব বুঝি তোমরা যদি বলো আমি তোমাদের সব কিছু ছেড়ে চলে যাবো কখনো আর তোমাদের সামনে দাঁড়াবো না সম্পত্তির দাবিও করবো না আমি ফারিয়াকে নিয়েই থাকতে চাই কারণ আমি ওকে খুব ভালোবাসি

সুহা : ফুপি তুমি তো আমাকে আগে বলোনি ফারহান কাউকে ভালোবাসে বা বিয়ে করেছে,,আমাকে বললে তো আমি আর আগ্রহ করতাম না আর ফুপি ফারহান যাকে নিয়ে সুখী হতে চায় হোক না,,, আর সত্যি তো বাচ্চা কাচ্চা এইসব আল্লাহর দান আল্লাহ চাইলে কি না করতে পারে(মিসেস নেহার এতক্ষন পর মুখ খুললেন

নেহার : ফারহান আমি সত্যি দুঃখিত আমি সব সময় ভেবে গেছি সমাজের মানুষ কি বলবে,, প্রতিবেশিরা কি বলবে আমার তোমার দিকটা ভাবার দরকার ছিলো,,,,তোমার খুশিতে আমার খুশি হওয়ার দরকার ছিলো সত্যি তো বাচ্চা হলেই তো সব সম্পর্ক ঠিক থাকে না একটা সম্পর্ক তো ভালোবাসার বন্ধন এর উপর নির্ভর করে,..আমি ফারিয়ার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চাই…(ফারহান তার মাকে জড়িয়ে ধরে মিসেস নেহারও পরম আদরে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেয়,,, আর বলেন… আমার ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে কত কিছু বুঝে (বলেই কপালে চুমু দেয়…

ফারহানের এমন কথার দিপ্তি সোফায় বসে বসে কান্না করছে ফারহান এটা দেখে হাটু গেড়ে দিপ্তি সামনে বসে বলে

ফারহান : লক্ষি বোন কান্না করিস না,,, আমি এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি,,, ক্ষমা করে দে তোর ভাইকে (দিপ্তির গালে হাত দিয়ে)

দিপ্তি : ক্ষমা করতে পারি একটা শর্তে….
ফারহান : আমি সব শর্ত মানতে রাজি আছি বলুন মহারানী

দিপ্তি : তাহলে তোমাকে…

চলবে………..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *