আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 13

এদিকে অনেক সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অনু বাড়িতে আসছে না।
বাড়িতে সবাই তো খুব টেনশনে পড়ে যায়।
রিদির বাবা মা তো চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাবে এমন অবস্থা।
এখন যদি অনুর কোনো সমস্যা হয় তাহলে আবিরদের কাছে সবাই কি জবাব দিবে।
অনেক আশা ভরসা করে মেয়েটাকে এখানে পাঠিয়েছিলো এখন যদি অবেলায় কোনো অঘটন ঘটে তখন কি হবে?
রিমা তো কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ।
অনুর সাথে সে কেনো গেলো না।
এমন খারাপ মানুষের ভিড়ে কোনো মতেই একা ছাড়া ঠিক হয় নি।
রিমা বলে,”আমরা যে চলে যাবো এই খবর তো কেউ জানে না তাহলে অনুর সাথে খারাপ কিছু হবে কি করে? ”
রিদি এবার রিমার সামনে বসে বলে,”আমার ভুলের জন্য আজ এই অবস্থা।”
রিমা বলে,”কেনো আপু তুমি আবার কি করেছো?”
রিদি বলে,”সেদিন ভার্সিটিতে চিৎকার করে রাজ কে বলেছিলাম অনু শুক্রবার চলে যাবে।
কেউ অনুর কিছু করতে পারবে না।”

রিমা রিদির কাধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,”তুমি কি ভাবে সবাই কে বলতে পারলে আমরা চলে যাবো? তুমি কাহিনী এমন করেছো,
ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে খাবার দিয়ে তাকে বলেছ খাবেনা।এমনটা করলে কি বাঘ কারো কথা শুনবে? এখন আমার বোনকে কোথায় পাবো আমি? ”
রিদি বলে,”আবেগের বসে মুখ থেকে কথা বেড়িয়ে গিয়েছিল।
তার জন্য যে এমনটা হবে তা কখনো আমি ভাবতে পারি নাই।”
রিমা বলে,”এখানে আবির ভাইয়া নেই।
যে তার কলিজার টুকরো বোনকে বাঁচাতে আসবে এখন কি হবে বাড়ির কেউ যদি জানতে পারে তখন খুব সমস্যা হবে।”
এমন সময় আবির কল করে।
রিদি কাপা-কাপা কন্ঠে বলে,”আবির ভাইয়া কল দিয়েছে রিমা! ”
রিমা বলে,”ভাইয়া শিউর বুঝতে পারছে তার অনু মনু ভালো নেই।”
রিদি বলে,”এখন কি করবো সবাই তো জেনে যাবে! ”
রিমা ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে আবির বলে,”রিদি অনু মনু কই আমার খুব টেনশন হচ্ছে ওর জন্য।”
পাশে থেকে রিমা নিজের কন্ঠ ঠিক করে বলে,”ভাইয়া অনুর মন খারাপ সে কারো সাথে কথা বলবে না।একদম বাড়িতে গিয়ে যা কথা বলার বলবে।”
অাবির বলে,”কি বলিস তুই?বুড়ির মন খারাপ কেনো? ”

রিমা বলে,”আজব মন খারাপ হবে না।এতোদিন এখানে লেখাপড়া করছি সেখানে থেকে যাবার সময় কি খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক না বলেন ভাইয়া? ”
আবির বলে,”তোমার কথা ঠিক তারপর ও অনুর জন্য কেনো জানি টেনশন হচ্ছে প্লিজ ওকে একটু কথা বলতে বলনা রিমা।
বেশি না একবার ভাইয়া বলে ডাক দিলেই আমার কলিজায় শান্তি পাবে।”
রিমা বলে, “ভাইয়া আপনি তো জানেন অনু কতোটা জেদি একবার জেদ ধরেছে তো আর কারো রিকুয়েস্ট সে শুনবে না।”
আবির বলে,”আচ্ছা রিমা আমি তাহলে রাখছি তুই প্লিজ অনুর খেয়াল রাখবি।
আমার বোনটাকে তোর ভরসা তে ওখানে পাঠিয়েছি এটা মনে রাখবি।”
আবির ফোনের লাইন কাটার পরে রিমা অনু বলে চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে দেয়।
রিদি কি করবে বুঝতে পারে না তখন হঠাৎ করে রিদি ফোনটা হাতে নিয়ে সিয়ামের নাম্বারে কল করে।
সিয়াম ফোন রিসিভ করে বলে,”আরে রিদি যে হঠাৎ কি মনে করে কোন রাস্তা ভুল করে আমার নাম্বারে কল দিয়েছো গো?”
রিদি ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বলে,”সিয়াম ভাইয়া!”
সিয়াম রিদির কান্না মাখা কন্ঠ শুনে বিচলিত হয়ে বলে,”রিদি তুমি ঠিক আছো তো তোমার কোনো সমস্যা হয় নি তো? তুমি কান্না করছো কেনো? ”
রিদি বলে,”ভাইয়া অ অ নু কে খুঁজে পাচ্ছি না।”
সিয়াম বলে,”what?? মানে কি?
অনু কি ছোট বাচ্চা যে অনুকে খুঁজে পাচ্ছো না?”
রিদি বলে,”ওর আজ পরিক্ষা ছিলো সেই পরিক্ষার শেষে আর অনু বাড়িতে আসে নাই।
কি করবো আমরা কেউ তা বুঝতে পারছি না।”
সিয়াম বলে, “আচ্ছা তোমাদের চিন্তা করতে হবে না আমরা সবাই দেখছি কি করা যায।”
সিয়াম খুব টেনশনে পড়ে যায়।

কি করবে কার থেকে সাহায্য চাইবে জানে না কেউ।
সিয়াম আরিয়ানের নাম্বারে কল করে জানে আরিয়ান কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারবে না তারপর ও আরিয়ান কে সবটা জানাতে কল দেয়।
আরিয়ান ফোন রিসিভ করে বলে,”আর সিয়াম যে হঠাৎ জিএফ দের রেখে আমাকে কল দিয়েছো বেপার কি? ”
সিয়াম খুব চিন্তিত হয়ে বলে,”দোস্ত অনুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আমরা কি করবো বুঝতে পারছি না।”
আরিয়ান বলে,”আমি তো চিটাগাং নেই যে অনুকে খুঁজতে যাবো তোদের সাথে নিয়ে দেখ এখন তোরা কি করবি! ”
সিয়াম বলে,”হুম বুঝলাম না হঠাৎ করে তোদের ফাইনাল পরিক্ষার আগে বাড়িতে কেনো যেতে হলো? আর রাজকে তো ব্লেইম করতে পারবো না।কারণ রাজ ও সেদিন রিদির সাথে ঝগড়া করার পর তোকে সাথে নিয়ে চলে গেছে।”
আরিয়ান বলে,”এইসব কথা বাদ দে। এখন অনু জানে ওর ভাগ্যে কি আছে।আমি আর তুই অযথা আফসোস করে কিছু করতে পারবোনা। ”
সিয়াম বলে,”তাই বলে একদম হাট গুটিয়ে বসে থাকবো? ”
আরিয়ান বলে,”জানি না তোরা কি করবি বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়।”
আরিয়ানের বুকের মাঝে মনে হচ্ছে কেউ ছুঁড়ি দিয়ে ক্ষতো বিক্ষতো করে দিয়েছে।
এখন যদি কেউ আরিয়ানের হৃদয়ের মাঝে ঢুকে দেখতে পারতো তাহলে সে জানতো আরিয়ানের হৃদয়ের মাঝে কতোটা রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।
নিজের ভালোবাসা বিপদে আছে।
কিন্তু সে তাকে বাঁচাতে পারবেনা।
তার কোনো কাজে লাগবে না।
এটা কোনো প্রেমিক কখনো মেনে নিতে পারে না।
তার প্রিয় মানুষ অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকিতে আছে।

এদিকে অনুর হঠাৎ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে নোংরা একটা ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে।
অনুর হাত পা বাধা।
অনুর সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি এখানে আসলাম কি ভাবে?পরিক্ষার শেষে তো আমি বাড়ির জন্য রিকশাওয়ালা কে উঠছিলাম এমন সময় কেমনে কি?
তখন অনুর সামনে রুবি এসে অনুর মাথার চুলের মুঠি ধরে বলে,”কি রে সেদিন তো তুই খুব আমাকে উড়ে ছিলি আরিয়ানের ভরসা তে।
আজ তোকে কে বাঁচাতে আসবে? ”
অনু বলে,”আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো এই রকম খারাপ কাজ তুই আর তোর ভাই ছাড়া কেউ করবে না।”
রুবি বলে,”আরে আমার ভাইকে বললে তো সে তোকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে কয়েক মিনিটের মাঝে। তবে তোকে আমি সে ভাবে মারতে চায় না। তিলে তিলে তোকে মরার জন্য রেখে দিবো।”
অনু বলে,”এভাবে পেছন থেকে আঘাত করেছিস বলে আমাকে ঘায়েল করতে পেরেছিস। যদি সামনে থেকে করতিস তাহলে তোদের কারো হাতে অনু পরাজিত হতো না।”
রুবি মনের সুখে অনুর দুই গালে কয়েক টা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
তারপর বলে,”বেয়াদব মেয়ে কথার উত্তাপ এখনো কমে না।ভবিষ্যৎ অন্ধকার জেনেও।”
অনুর ঠোঁটের কণা দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে।
অনু অশ্রুসিক্ত নয়নে রুবিকে বলে,”আমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে।
তোর মতো খারাপ মেয়ে চাইলেও আমার কোনো কিছু করতে পারবে না।
যদি এই অন্ধকার ঘরে বন্দী হয়ে আমার মৃত্যু লেখা থাকে তাহলে তাই হবে তাতে আমি রাজি। ”
রুবি বলে,”তাহলে তাই হোক!

আজ তোর শেষ ইচ্ছা টা না হয় পূরণ করে দেয়।”
রুবি অনুর জামার কিছু অংশ ছিঁড়ে দেয়।
যাতে অনুর মৃত্যুর পর মানুষ বোঝে ওর মৃত্যু কোনো নরপশুর হাতে হয়েছে।
বলে রুবিকে একা ফেলে রেখে চলে যায়।
অনু হাত পা বাধা অবস্থায় সেখানে পড়ে নিজের মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে।
এদিকে রিদির পরিবার পুলিশের কাছে যায়।
অনুর মিসিং রিপোর্ট লেখাতে। সেখানে গিয়ে তাদের যতোটা মানসিক টর্চার সহ্য করতে হয়েছে তার অন্য কোন মানুষকে যেন কখনো সহ্য করতে না হয়।
পুলিশের উল্টা তাদের বলেছে,”দেখেন পরিক্ষার শেষে আপনাদের মেয়ে হয়তো তার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে।আর নয়তো কোনো রাস্তার পাশে তার লাশ পড়ে থাকতে পাওয়া যাবে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে। ”
তারপর তারা নামে মাএ মিসিং ডায়েরি লিখে রাখে।
সেখানে থেকে তারা অপমানিত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
রিমা বলে,”আমি জানতাম না এখানে আসবো দু বোন আর যাবার সময় আমাকে একা ফিরে যেতে হবে।”
রিদি বলে,”আমার আবেগের জোয়ারে অনু ভেসে গেছে।”
সবাই আশাহত হয়ে গেছে।
তারা বুঝতে পেরেছে অনুকে আর কোনোদিন ফিরে পাবে না।
এখন এই খবর তারা অনুর বাবা মা কে কি ভাবে দেবে তাই জানে না।
রিমা বলে,”অনুকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমার ছিলো।তা যখন সঠিক ভাবে পালন করতে পারি নাই। এই খারাপ খবর টাও না হয় আমি তাদের কে দিবো।”
রিদি বলে,”আচ্ছা তাদের এক মেয়ে তো ফিরে যাক।চাইনা অনুর মতো তোমার সাথে কিছু হোক।যদি অনুর কোনো খবর পাওয়া যায় সেই জন্য না হয় আমরা এখানে থাকবো।অনুকে খুঁজবো।”

রিদির পরিবারের উপর ভরসা করে যথারীতি রিমা শুক্রবার সন্ধায় অনুর সব কিছু আর নিজের সব কিছু নিয়ে প্ল্যাটফর্মের উপর বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
রিমা ভাবতে থাকে দুই বছর আগে যেদিন এসেছিলাম দু বোন একসাথে এখানে নেমেছিলাম।সেদিন অনু নামার সময় পরে গিয়েছিলো।তখন যদি বুঝতে পারতাম অনুকে হারাতে হবে তাহলে কখনো এ শহরে থাকতাম না। সেদিন ফিরে চলে যেতাম আমার বোন কে নিয়ে।
এমন সময় ট্রেনের আগমন হয়।
রিমা এক বুক কষ্ট নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ে উদ্দেশ্যে এখন ঢাকা। জানি না ঢাকা গিয়ে কি হবে।
রিমা জানালার পাশে বসে ভাবতে থাকে এখুনি যদি অনু টা দৌড়ে চলে আসতো তাহলে কতো ভালো হতো।
অনু যদি থাকতো তাহলে আমার চুল টেনে বলতো বেয়াদব রিমা আমাকে একা রেখে গিয়ে তুই বাড়ির সবার আদর একা খাবি তাই না।
তোর সে ইচ্ছের মুখে ছাই দিতে আমি ফিরে আসলাম।
তারপর রিমা চোখের পানি মুছে ভাবে সবাই যখন আমাকে একা দেখবে তখন তাদের
কেমন করে কে সামাল দিবে আমি।
জীবনের কাহিনী রং বদলায়।

অনুর জীবনের কাহিনী বদলে গেছে ছোট একটা ভুলে।
অনুকে ছাড়া নতুন পথের উদ্দেশ্যে যাএা করছে রিমা।
বদলে যাওয়া জীবনের নতুন ভাবে শুরু করবে তারা।
কি থাকবে নতুন যাত্রা পথে কেউ জানে না।
পাঁচ বছর পরে…..
(এই পাঁচ বছরে কি কি পরিবর্তন হতে পারে কারো ধারণা আছে?🙄🙄
আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে গল্প লেখায় আগ্রহী করে।
তাই প্লিজ সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।)



চলবে….