আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 12

হঠাৎ একদিন ভার্সিটিতে রাজ রিদির হাত খুব শক্ত করে ধরে বলে,”সেদিন তো দুই বোন মিলে আমার সম্মানের চল্লিশা বাহির করেছিলে।”
রিদি বলে,”তোমার মতো খারাপ মানুষ যে এতো তাড়াতাড়ি সব অপমান ভুলে যাবে এটা বুঝতে পারি নাই।”
রাজ বলে,”এই রাজ তার অপমান কোনোদিন ভুলে যায় না।তোমার ঐ বোন কে আমি তো শিক্ষা দিয়ে ছাড়াবো।”
রিদি এক ঝটকানি দিয়ে রাজের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”তোমার মতো শয়তান কোনোদিন সে সুযোগ আর কোনোদিন পাবে না।”
রাজ বলে,”কেনো তোমার বোন কি আমার ভয়ে উড়াল দিবে না কি?”
রিদি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”আমার অনু করবে তাও তোমার মতো ফালতু ছেলেকে ভয়? তোমার মতো ছেলেদের তো এই হাতের তুড়িতে অনু সোজা করতে জানে।”

রাজ বলে,”তাই না কি?তোমার বোন থাকবে তো এই শহরে! জলে থেকে কি ভাবে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে তা আমিও দেখবো! ”
রিদি বলে,”কে বলছে! অনু এখানে থাকবে? কি মনে হয় অনু এখানে এতো শয়তানের মাঝে থাকবে? ”
রাজ বলে,”কেনো তোমার বোন কি আমার ভয়ে পালিয়ে যাবে না কি? ”
রিদি বলে,”উঁহুম আমার বোন পালিয়ে কেনো যাবে? সে তো কখনো কোনো অন্যায় করে নাই।সে তার নিজের শহরে ফিরে যাবে।”
রাজ বলে,”তাই নাকি? তা সে কবে এ শহর থেকে চলে যাবে? ”
রিদি বলে,”সামনে শুক্রবার অনু এই অভিশপ্ত শহর থেকে চলে যাবে।”
রাজ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”তোমার বোনের এ শহর ছেড়ে যাওয়ার রাস্তা এতো সরল হবে না।”
রিদি বলে,”তোমার মতো শয়তান আমার বোনের কিছু করতে পারবে না।তাই অযথা নিজের এই বাহাদুরি অন্য কোনো মেয়ের জন্য উঠিয়ে রাখো।অন্য কেনো মেয়েকে পটাতে কাজে আসবে! ”
রাজ বলে,”যে অপমানিত আমি হয়েছি সেই অপমানের শোধ না করে তোমার বোন এ শহর ছাড়তে পারবে না।”
রিদি রাজের শার্টের কলার ধরে বলে,”বেয়াদব লুচ্চা পোলা তুই যদি ভুল করেও আমার বোনের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করিস তো তোকে আমি জীবন্ত পুড়িয়ে ছাই করে দিবো।

এটা ভুলে যাবি না তোকে যতোটা ভালোবাসি এখন তার থেকে বেশী ঘৃণা করি।
ভালোবাসা যতোটা মিষ্টি ছিলো ঘৃণাটা ঠিক ততোটা বিষাক্ত এটা মনে রাখবি এখন বলে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।”
রাজ পেছন ঘুরে বলে,”যাচ্ছো যাও,,তবে দেখবো নিজের বোনকে বাঁচাতে তুমি কি করো? ”
রিদি রাজের কথায় কান না দিয়ে সোজা চলে যায়।
রিদি যাবার পর রাজের পেছন থেকে কাধের উপর হাত দিয়ে আরিয়ান বলে,”তুই আর যাই করিশ রাজ আমার কলিজার দিকে ভুলেও হাত বাড়াতে চেষ্টা করবি না! ”
রাজ বলে,”কেনো অনু তোর কি হয়?”
অারিয়ান বলে,”হয়তো হলে আমার পুরো পৃথিবী হবে সে আর না হলে সে আমার হৃদয়ের রানী হবে।”
রাজ বলে,”তোর হৃদয়ের রানী বড্ড বেশী বিপদজনক। তাকে তো আমি কোনোদিন ও তোর হতে দিতে পারবো না।অনুকে তোর জীবন থেকে যেতেই হবে।”
আরিয়ান বলে,”ঘুমন্ত সিংহ কে জাগিয়ে তোলার ভুল করিস না রাজ।আমার অনুর দিকে যদি তুই খারাপ নজর দিলে অথবা ওর ক্ষতি করতে চাইলে তোর কপালে খুব দুঃখ অাছে এই বলে দিলাম।জানিস তো আমি যা বলি তা করতে পারি।সো আমার অনুর যদি তুই কোনো ক্ষতি করিস তাহলে তোকে আমি জীবন্ত কবর দিতে একবার ও ভাব্বো না বলে চলে যায়। ”

রাজ বলে,”ওহ আমি ক্ষতি করবোই তোর অনুর তা হোক না কেনো সামনে থেকে অথবা পিছন থেকে।নিজে করি বা মানুষ দিয়ে করাই অনুর জীবনের খুশীর দিন গুলো শেষ আরিয়ান। ”
রিদি বাড়িতে এসে দেখে অনু তার সব কিছু গুছিয়ে রাখছে।
রিদি সোজা গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ এভাবে রিদি অনুকে জড়িয়ে ধরাতে অনু একটু অবাক হয়ে যায়।
অনু বলে,”আপু তুমি ঠিক আছো তো? ”
রিদি বলে,”হুম আমি ঠিক আছি বনু।”
অনু বলে,”তাহলে হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরলে যে আপু? ”
রিদি বলে,”তুই যে মাএ কিছুদিনের মেহমান। এতোদিন এখানে আছিস তুই চলে গেলে আমরা সবাই তোকে খুব বেশি মিস করবো রে।”
অনু বলে,”আরে আপুনি চিন্তা করো কেনো?
তোমার ভার্সিটিতে ছুটি দিলে তুমি ঢাকা চলে যাবে আর না হয় আমার যখন ছুটি হবে আমি তখন তোমার কাছে বেড়াতে চলে আসবো।”
রিদি বলে,”নাহ তুই ভুল করেও আর কোনোদিন চিটাগাং ফিরে আসবি না।আমি চাই না তুই এখানে আর কোনোদিন ফিরে আসিস।এ দুই তিন দিন ভালো ভাবে পার হয়ে গেলে আমরা সবাই চিন্তা মুক্ত হতে পারবো।”
অনু বলে,”ওহ আপু তোমারা সবাই আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করো।
ওরা কি সারাজীবন আমাকে মনে রাখবে না কি?
তাই অযথা ওদের ভয় করে লাভ নেই।
ভয় পেয়ে বেঁচে থাকতে তোমার বোন অনু কখনো রাজী না।তাই সবার মাথা থেকে আমাকে নিয়ে ভয় মুছে ফেলে যে কয়দিন আছি হাসি খুশী থাকি সবাই কি বলো আপু? ”

রিদি অনুকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমো দেয়।
পেছন থেকে রিমা এসে বলে,”বাহ দারুণ আমে দুধে মিলে যায় আঁটি শালা পর হয় তাইনা। এই জন্য আমাকে তোমরা ভুলে গেছে।”
অনু বলে,”হিংসুক পেটুক। ”
রিদি বলে,”আরে তেমন কেনো হবে তোমরা দুজনে আমার কাছে সমান।”
তাই বলে রিমার হাত ধরে টান দিয়ে এনে তিনজন মিলে গ্রূপ হাগ করে।
এরপর তিনজন নিজেদের রুমে চলে যায়।
রাতের বেলা অনু তার রুমে বসে পরছিলো এমন সময় হঠাৎ বারান্দা থেকে শব্দ পেয়ে সে বারান্দায় গিয়ে চমকে ওঠে।
দেখে সেখানে আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
অনু বলে,”আপনি এখান! কি ভাবে আসলেন? ”
আরিয়ান বলে,”এই তো হোস্টেল থেকে গাড়িতে করে এখানে এসে বড় মই দিয়ে তোমার বারান্দায় এসেছি।”
অনু বলে,”আপনি মই দিয়ে বারান্দায় উঠে আসছেন? ”
আরিয়ান বলে, “হুম, কেনো আমি কি কোনো ছবির হিরো না কি যে তোমার সাথে রোমান্স করতে আমি পাইপ টপকে,সাদ টপকে হিরোদের স্টাইলে আসবো।”
অনু বলে,”হুম আমার হিরো তো আসছেন যখন তখন একটু হিরোদের মতো দেওয়াল বেঁয়ে আসতেন। ”
আরিয়ান অনুর মাথায় টোকা দিয়ে বলে,”মাথা ঠিকঠাক আছে তো? আমাকে কি পঙ্গু বানানোর শখ আছে তোমার? ”
অনু বলে,”আরে আপনাকে পঙ্গু বানিয়ে কি আমি সারাজীবন জেলখানাতে থাকতে যাবো? ”
অারিয়ান বলে, “হুম তাহলে সমস্যা নাই।তা শুনলাম তুমি না কি এখান থেকে চলে যাচ্ছো?”
অনু মন খারাপ করে বলে,”জ্বি শুক্রবার চলে যাবো।”
আরিয়ান বলে,”তুমি কি মামুন,রুবি,রাজ কে ভয় পেয়ে পালিয়ে চলে যাচ্ছো?”
অনু বলে,”আমি যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাতে শিখি নাই।আমার এখানে বনবাসের মেয়াদ কমপ্লিট তাই চলে যাচ্ছি।আমার জন্য বেচারি রিমা অনেক কষ্ট করেছে দু বছর।সে অযথা আমার জন্য তার পরিবার কে ছেড়ে এখানে আমার সাথে পড়ে আছে।”
আরিয়ান বল,”কেনো তুমি এখান বনবাস করতে আসছো মানে? ”
অনু বলে,”আর বলেন না হঠাৎ করে বাবা আমাকে এখানে দুই বছরের জন্য পাঠিয়ে দেয়।আমি একা আসবো দেখে চাচাজি রিমাকে সাথে পাঠিয়ে দেয়।এখন কাল আমার প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষাটা শেষ হলেই পরশুদিন আমরা চলে যাব। তারপর আমাদের পরিবারের সবার সাথে থাকবো।”
আরিয়ান বলে,”হুম তুমি তো অনেক সাহসী। তোমার বাড়ির মানুষ তোমাকে পেয়ে তো খুব খুশী তাই না? ”
অনু বলে,”ওরা খুশি না ছাই ওরা তো আমার উপর বিরক্ত হয়ে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছিল বনবাস করার জন্য তবে আমিও কিন্তু একটুও বদলায়নি দেখেছেন তো তার নমুনা।
তারা ভেবেছিল তাদের মেয়ে তাদের থেকে দূরে থেকে ভদ্র সভ্য শান্তশিষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু তাদের সে গুড়ে বালি। আমাকে বদলানো সোজা নয়।”
আরিয়ান বলে,”তাই না,তা এখান থেকে চলে গেলে এই শহর কে মিস করবে না তো? ”
অনু বলে,”এই শহরকে মিস করবো কি’না জানিনা তবে শহরের কিছু মানুষকে খুব মিস করব! ”
আরিয়ান বলে,”তারা কে তাদের নাম কি জানতে পারি?”
অনু বলে, “আমার খালা-খালু রিদি আপু কলেজের কিছু বান্ধবী আর আপনাকে।”
আরিয়ান বলে,”তাই তাহলে তুমি আমাকে মিস করবে? ”
অনু বলে,”হুম অবশ্যই করবো।”

আরিয়ানের কেনো জানি আর অনুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না ওর খুব কষ্ট হচ্ছিলো।তাই তাড়াতাড়ি অনুর হাতে একটা কাগজে ফোন নাম্বার দিয়ে বলে,”এটা আমার নাম্বার যদি কখনো মনে পড়ে তো কল দিও।”
অনু তো খুশীতে গদগদ হয়ে যায়।
আরিয়ান সেখানে থেকে তাড়াতাড়ি চলে যায়।
অনু তো খুশিতে রাতে শান্তির একটা ঘুম দেয়।
পরেরদিন সকালে উঠে খুশি মনে সে একা পরিক্ষা দিতে চলে যায়।
কারণ রিমার পরিক্ষা শেষ আজ অনুর হলে পরশুদিন চলে যাবে।
এদিকে অনেক সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অনু বাড়িতে আসছে না।
(প্লিজ সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)



চলবে….