আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 02
অনুর তাকিয়ে দেখে সামনে চেঞ্জিং রুমের সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটা মাশাআল্লাহ!!
সেই রকমের সুন্দর।
নেভি ব্লু শার্ট পরে আছে।মনে হচ্ছে রংটা তার ফর্শা গায়ের জন্য তৈরি।
অনুর মনে হচ্ছে সব সৌন্দর্য ছেলেটার জন্য তৈরি করা।
এসব দেখে অনুর মনে হচ্ছিল ছেলেটাকে চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলতে।
অনু তো অবাক হয়ে ছেলেটাকে চোখ দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে।
রিমা অনুকে এক টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।
এমন সময় কেউ ছেলেটার নাম ধরে ডাক দেয় এই রাজ!
রিমা অনুকে নিয়ে নিচে গাড়ির কাছে আসতেই অনু রিয়াকে মারতে শুরু করে দেয়।
রিয়া বলে,”আজব তো তুই আমাকে মারছিস কেনো? ”
অনু বলতে থাকে, “বেয়াদব মেয়ে অবশেষে আমি আমার মনের মতো ক্রাশ খুঁজে পাইছিলাম।
যাকে বড় হয়ে বিয়ে করে আমার ক্রাশ বর বানাবো।”
এই তোর জন্য তুই আমাকে গরুর মতো টানতে টানতে নিয়ে চলে আসলি কেনো?
শয়তান মেয়ে আমার মুখে চকলেট ভরে দিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলি তাই তোকে বলতে পারি নাই।
আজ যদি আমি আমার ক্রাশকে হারিয়ে ফেলি তার বিনা পরিচয়ে তাহলে তোর একদিন তো আমার একদিন কথাটা মনে রাখবি বলে এক দৌড় দিয়ে সে শপিং মলের ভেতরে চলে যায়।
গিয়ে দেখে সেই চেঞ্জিং রুমের সামনে ছেলেটা আর নেই
অনু মনে মনে বলে,”আল্লাহ গো ওরে পাবার আগে হারাতে পারবো না।আমি মরে যাবো কিন্তু প্লিজ রাজকে সামনে এনে দাও আমার।”
তারপর অনু পুরো মার্কেট এর সব স্থানে খুঁজতে থাকে কিন্তু তার ক্রাশের দেখা আর পাই না।
অবশেষে মন ভারী খারাপ করে শপিং মল থেকে বাহিরে গাড়ির কাছে চলে অাশে।
এদিকে আবির অনুকে দেখে বলে,”আরে বুড়ি তোর মন খারাপ কেনো রে? ”
অনু বলে,”এমনি মন খারাপের আবহাওয়া চলছে এখন তাই।”
অাবির বলে,”অনু মনু কি হয়েছে ভাইয়া কে বলবি না? ”
অনু বলে,”বুড়ি বলো ঠিক আছে একদম অনু মনু বলে ডাকবে না বলে মন খারাপ করে গাড়ির ভেতর বসে পড়ে।”
এদিকে আবির অনুর মন খারাপ দেখে ওর জন্য চকলেট আইসক্রিম আনতে যায়।
রিমা ভয়ে ভয়ে বলে,”অনু তোর ক্রাশ তোকে কিছু বলেছে? ”
অনু রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলে,”শয়তান ইবলিশ মেয়ে তোর জন্য আমি রাজ কে খুঁজে পাই নি।ছাগলের মতো টেনে নিয়ে আসছিস বলে।”
রিমা বলে,”তুই তো রাস্তায় চলতে ফিরতে ক্রাশ খাস! কোনটা যে আসল ক্রাশ তা না বোঝা বদল প্রাণী আমি।তোর ক্রাশের চক্কোরে আমি কোনদিন না নিজেকে ভুলে যায়।”
অনু বলে,”তুই হাটু পানিতে ডুবে মর তাতে এখন আমার আফসোস নাই।আমার রাজ কে লাগবে মানে রাজ কেই চাই! ”
রিমা :রাজ মনে হচ্ছে দোকানে সাজিয়ে রাখা কোনো টেডিবিয়ার যে তোর পছন্দ হয়েছে তা বেশি দাম দিয়ে কিনে তোর হাতে ধরিয়ে দিবো!”
অনু বলে,”এমন সুন্দর ছেলে আমি আগে কখনো দেখি নাই,,রাত দিন যার স্বপ্নে বিভোর থাকি সে আর কেউ না আমার রাজ।”
রিমা বলে,”আচ্ছা বুবু আমার ভুল হয়েছে তুই আমাকে মাফ করে দে।আগে থেকে আর ভুল করবো না।ছেলেটা যখন শপিং মলে আসছিলো তারমানে সে ঢাকার।তাকে খুঁজে ঠিক পেয়ে যাবি।তাই এখন আর মন খারাপ করে থাকিস না প্লিজ।”
অনু এবার একটু হেসে বলে,”তাই তো ঢাকার পোলাকে খুঁজে বাহির করতে সময় লাগবে না।”
এমন সময় আবির অনু আর রিমাকে চকলেট আইসক্রিম দেয়।
অনু আইসক্রিম পেয়ে সাথে সাথে খেতে শুরু করে দেয়।
এরপর দুজন আইসক্রিম খেতে থাকে আর আবির গাড়ি ড্রাইভ করে ওদের দু জন কে নিয়ে বাড়িতে চলে আসো।
বাড়িতে আসার পর দেখে সবাই অনু আর রিমার সাথে দেখা করতে চলে অাসছে।
রিমার পরিবার ও চলে আসে একসাথে মেয়েদের খুশী সেলিব্রেট করতে।
রিমাদের বাড়ি আলাদা হতে পারে তাতে কি ওদের কারো মনের দূরত্ব নেই।
(রিমা অনুর শুধু বান্ধবী না চাচাতো বোন ও হয়।)
অনুষ্ঠানের শেষে অনুর বাবা বলে,”আমি অনুকে চিটাগাং ওর খালার কাছে পাঠাতে চাই! ”
অনু ইয়ায়য়য় হু বলে চিৎকার করে দৌড়ে ওর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, “আমার কতো দিনের শখ পূরণ হবে বাবা।খালাম্মার বাড়িতে বেড়াতে যাবো এর থেকে ভালো উপহার আর অন্য কিছু হতে পারে না। ”
অনুর বাবা বলে,”আমি কি একবার ও বলেছি তুমি সেখানে বেড়াতে যাবে? ”
অনু বলে,”বেড়াতে যাবো না তো কি করতে যাবো সেখানে? ”
অনুর বাবা বলে,”তোমার খালার মেয়ে রিদি তো সম বয়সী, ওর সাথে সেখানে থাকবে।
দু বোন একসাথে লেখা পড়া করবা।
তাই সেখানে পাঠাবো তোমাকে।”
অনু এ কথা শোনার পর বাবার গলা ছেড়ে উঠে এসে বলে,”ইম্পসিবল!!
আমি তোমাদের থেকে দূরে কোথাও যাবো না।”
অনুর বাবা বলে,”তোমার ঘাড় সহ সেখানে পড়তে যাবে। এখানে আদরে আদরে বাদর হয়ে যাচ্ছো দিনে দিনে।
দুই বছর ওখানে থেকে এইচ এস সি কমপ্লিট করে তারপর এখানে এসে ভার্সিটি তে পড়াশোনা করবে।
তার আগে পর্যন্ত তোমার আর ঢাকা আসা হবে না।
আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হবে।
আমি কারো কথায় নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবো না এটা সবাই ভালো করে জানো।”
রিমার বাবা বলে,”ভাইজান অনু মা একা কেনো যাবে আমি অনুর সাথে রিমা কেও সেখানে পাঠাতে চাই তিন বোন একসাথে লেখাপড়া করবে এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না।”
অনুর বাবা তার ভাইয়ের কথা শুনে খুব খুশী হয়।
কিন্তু অনু আর রিমা মোটেই খুশি না।
নিজের পরিবার কে ছেড়ে তারা দুই বছর দূরে থাকবে এটা কি তাদের পক্ষে সম্ভব?
কিন্তু পরিবারের কেউ অনু বা রিযার কথায় কান দেয় না।
এরপর সবাই মেয়েদের বিদায় করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেয়।
অনু যেতে চাই না তাই ভাইয়ার কাছে বলে।
কিন্তু আবির বাবার উপর দিয়ে কিছু বলতে পারছে না।।
আবার তার দুষ্টু বুড়ি অনু মনু কে ছাড়া যে সে থাকতে পারবে না।
হয়তো বাবা মা কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা করে অনুর ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনুর মা চুপচাপ আছে,কারণ অনুর ভালোর জন্য মেয়েকে তারা দূরে পাঠাবে।
তাকে যতো কষ্ট হোক সহ্য করে নিবে।
একসপ্তাহ পরে বিকালে রিমা আর অনুকে ট্রেনে তুলে দিতে বাড়ির সবাই আসে।
ট্রেনে উঠে অনু বাড়ির কারো সাথে রাগ করে কোনো কথা বলে না।
শুধু মাএ আবির কে বলে,”দুই বছর পর যখন ফিরে আসবো তখন তোমার সাথে করা দুষ্টুমি গুলো সুদে আসলে উশুল করে নিবো।
বলে চলে যায়।”
সবাই রিমাকে বলে,”অনুর দিকে খেয়াল রাখতে সে যে বড্ড অভিমান করে যাচ্ছে সবার উপর।”
ট্রেন তার নিজ গতিবেগে ছুটতে শুরু করে দেয়।
এদিকে অনু তার চেনা শহর নিজের সব আপন মানুষ দের ছেড়ে কোথায় কোন দূর শহরে যাচ্ছে। না জানি সেখানে খারাপ কিছু হবে না কি ভালো কিছু হবে।
বাড়ির মানুষের একবুক আশা ভরসা রক্ষা করতে পারবে তো অনু?
ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আর এদিকে বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে দূরে চলে যাচ্ছে।
অনুর দু নয়ন ভরা অশ্রু,শুধু অপেক্ষা গড়িয়ে পড়ার।
এরপর চুপচাপ মন খারাপ করে ট্রেনের জানালা পাশে বসে অনু দূরে সবুজ প্রকৃতি দেখতে শুরু করে।
এভাবে দু বোন সারা পথ চুপচাপ থাকে।
দুজন এক সাথে ঠিক আছে তবে আপনজন দের থেকে দূরে থাকবে এটা ঠিক নয়।
হঠাৎ রিমাকে উদ্দেশ্য করে অনু বলে,”বুঝলি রিমা আমরা বনবাসে যাচ্ছি দু বছরের জন্য বেপার না।তারা কি ভেবেছে আমি বদলে যাবো? এতো সোজা আমাকে চেঞ্জড করা?
উহুঁ সে গুড়ে বালি বুঝলি রে।”
রিমা একগাল হেসে বলে,”তুই যেখানে আছিস সেখানে আবার কিসের চিন্তা রে।
সব স্থানে সেই আকারে মজা করবো।
বাড়ির মানুষ ঘোড়ার ডিম বুঝতে পারবে।
আমরা যে কতো বড় মাপের শয়তান।”
অনু বলে,”ভালো হবে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবো
আর সুন্দর সুন্দর পোলা দেখে ক্রাশ খাবো।
কিন্তু আফসোস দু বছর আমার রাজের দেখা পাবো না।”
রিমা বলে,”আরে দু বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে তুই চিন্তা করিস না।”
অনু :হুম আমার দিন প্রতিদিন রঙিন।
দু বছর তো চোখের পলকে পার করে দিবো শুধু রাজ কে ছাড়া।
রিমা বলে,”বইন আমার এবার তো রাজ নাম করা বন্ধ কর।ওদিকে রিদি যদি রাজ নাম জানতে পারো তাহলে মান সম্মান আর রইবে না মোদের।”
অনু :আরে হ তাই তো।রিদির সামনে আমরা একদম ভদ্র থাকবো ওর আড়ালে যা মন চাই তাই করবো।কেউ কোনোদিন বুঝতে পারবে।
এরপর সারারাত এইভাবে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় বুঝতে পারে না
জানালা দিয়ে সকালের আলো চোখে পড়তে দু জনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
তার কিছু সময় পর ওদের ট্রেন এসে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে থামে।
অনু রিমাকে বলে,” চল বোন আমার দু বছরের জন্য বনবাসী হতে এই শহরের মাটিতে পা রাখি।”
অনু জানালার বাহিরে তাকিয়ে দেখে ওদের নিতে
তাদের খালামনি এবং খালু এসেছে তাদের সাথে রিদি কেও দেখা যাচ্ছে।
এরপর সব ওদের সব কিছু ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর রিমা আগে নেমে আসে।
তারপর অনু ট্রেন থেকে নামতে….
(সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো।
আপনাদের সুন্দর মন্তব্য আমাকে গল্প লেখতে আগ্রহী করে)
‘
‘
‘
চলবে….