অবশেষে তুমি আমার !! Part- 14
– দিনগুলো খুব সুন্দর যাচ্ছিলো। হঠাৎ এক কালবৈশাখী ঝড় এসে রাজেদের জীবনটা এলোমেলো করে দেয়। ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগায় একদম পথে বসে পরে তারা। এদিকে রাজের বাবার একমাত্র বোন। রাজের ফুপু জান্নাত ভালোবাসতো অধরার কাকা রিসানকে । একদিন জান্নাত কিচেনে রাজের মাকে সাহায্য করতে করতে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।
– হসপিটালে নিয়ে গেলে, ডাক্তার জান্নাতকে দেখে রাজের বাবাকে বলে, ‘ আপনাদের জন্য খুশির খবর আছে। পেশেন্ট মা হতে চলছে।
– জান্নাতকে আর কিছু বললো না হসপিটালে। বাসায় এসে জান্নাতকে রাজের মা জিজ্ঞেস করলো,’ জান্নাত কে তোর এমন অবস্থা করেছে?”
– জান্নাত তখন তার ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ ভাবী রিসান আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব করেছে। আমরা দু’জন দুজনকে ভালোবাসি। ভাবী আমাকে ক্ষমা করে দাও। ভাইয়া যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়। আমি ভুল করে তোমাদের কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
-জান্নাত তুমি চিন্তা করো না। আজকেই তোমার ভাইকে অধরাদের বাসায় পাঠাচ্ছি। ”
– রাজের বাবা অধরাদের বাসায় গিয়ে দেখে বাড়িতে অনেক মেহমান। কাজের মেয়ে রহিমাকে মানুষ কেন এসেছে জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘ ছোট সাহেবের বিয়ের পাকা কথা দিতে নাকি মেয়ে পক্ষ এসেছে। মেয়েরা অনেক বড় লোক। ছোট সাহেব নাকি ওই মেয়েকে অনেকদিন থেকেই ভালোবাসতো।
– রাজের বাবা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রিসানকে দেখলো সবার সামনে বসে আছে। রাজের বাবা, ‘ সবার সামনে গিয়ে রিসানের কলার ধরে বললো,’ তুই আমার বোনকে নষ্ট করে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিস?”
– দোস্ত তুই এসব কি করছিস? তোর নষ্ট বোনের জন্য আমার ভাইকে দোষারোপ করছিস কেন? তোর বোন কত ছেলের সাথে হোটেলে যেত।
– আবিদ বেশি বলছিস কিন্তু! বিয়ে বাড়ির লোক সবাই আবিদ আর নিবিড় সাহেবের কথা শুনে চলে গেল।
– আবিদ সাহেব রেগে বললো,’ নিবিড় তোর বোনের কি যোগ্যতা আছে আমার ভাইয়ের বউ হওয়ার? আর তোরই বা কি আছে? পথের ফকির হয়ে বসে আছিস? তোদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।
– দোস্ত কি বলছিস এসব? ‘এমন করে বলিস না। সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারবো না। প্লিজ রিসানকে দিয়ে জান্নাতকে বউ করে নিয়ে আয়।
– নিবিড় তোর মতো ফকিরের বোনকে আমার ভাই বিয়ে করবে না। আমার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, সিনহা চৌধুরীর সাথে। আমার ব্যবসাতেও তারা ইনভেস্ট করবে।
– এদিকে অধরা আর রাজ দুজনে মিলে বাসায় এসে দেখ অধরার বাবা আর রাজের বাবা ঝগড়া করছে।
– কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাজের বাবা অধরার বাবার দু’ পা ঝাপটে ধরে বলে,’ বন্ধু আমার মানসম্মানটা রক্ষা কর। প্লিজ সারাজীবন তোর গোলাম হয়ে থাকবো তবু আমাদের পরিবারকে এই অসস্মানের হাত থেকে রক্ষা কর।”
– অাবিদ সাহেব কুকুরের মতো ব্যবহার করে নিবিড় সাহেবকে চলে যেতে বলে। এবং অধরাকেও বলে দেয় রাজের সাথে না মিশতে। কারণ রাজেরা তাদের সমকক্ষ নয়।
– নিবিড় সাহেব রাজকে নিয়ে চলে আসে বাসায়। বাসায় আসতেই রাজের মা মিসেস রাজিয়া বলে, ‘ কি বললো অধরার বাবা বিয়েতে রাজি হয়েছে? ”
– নিবিড় চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,’ জানো রাজের মা আবিদের পা পর্যন্ত ধরেছিলাম। কোন লাভ হয়নি। রিসানকে নাকি তাদের পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়ে দিবে। রিসান আর মেয়েটা দুজন দুজনকে ভালোবেসেই বিয়ে করছে।আমরা তো এখন রাস্তার ফকির। আমাদের না আছে টাকা না আছে প্রাচুর্য!
– দরজার আড়াল থেকে জান্নাত সবকিছু শুনে একটা চিরকুট লিখে নিজেকে সেলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিলো। এ জীবন রেখে তার লাভ কী? যাকে এতটা বিশ্বাস করে সবকিছু দিলো সে মানুষটার জন্য বাবার সমতুল্য ভাইকে এতটা অপমানিত হতে হবে কল্পনাও করতে পারেনি সে।
– এদিকে জান্নাতের রুমে নক করে কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরের তাকাতেই নিবিড় দেখতে পেল তার আদরের বোনটি ফ্যানের সাথে ঝুলছে। রাজ দেখতে পেল তার মায়ের মতো যত্ন ফুপিটি ঝুলে রয়েছে। আর কোনদিন তাকে জোর করে খাইয়ে দিবে না। এক মিনিষেই পরিবারটা একদম লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
– আবিদ সাহেব, অধরার জীবন থেকে রাজকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজের মায়ের সাথে তাদের বাড়ির কাজের লোকের পরকীয়ার কথা এলাকা সহ রটায়। এজন্য এলাকার সবাই যেন তাদের বাহির করে দেয়।
– এদিকে এলাকা সহ ছড়িয়ে যায় রাজের মায়ের নামে মিথ্যা অপবাদ। রাজ অধরাকে দেখতে না পেয়ে লুকিয়ে তাদের বাসায় আসতেই। অধরা রাজকে তার মায়ের বিষয়ে বাজে কথা বলে তাড়িয়ে দেয়। রাজ অধরাকে অনেক ভালোবাসতো। বাসায় এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ মা আমি অধরাকে ছাড়া বাঁচবো না। ” তোমরা আমার অধরাকে এনে দিবে? জানো মা আজ স্বপ্নে দেখেছি অধরাকে অনত্র্য বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।”
– রাজের মা রাজের মাথাটা বুকে নিয়ে বললো,’ বাবা আমাদের বাড়ির পুত্রবধুকে আমাদের বাসায় আনবো চিন্তা করিস না। ” এদিকে রাজের শরীরে জ্বর এসে পড়ে। জ্বরের ঘুরে অধরার নাম জপতে থাকে।
– নিবিড় সাহেব আর তার স্ত্রী রাজিয়া নিজের পুত্র বধুকে নিয়ে আসতে অধরাদের বাড়িতে গেলে। অধরার বাবা বলে পুতুল খেলার বিয়ে সে মানে না। আর কোন বাজে পরিবারে তারা তাদের মেয়েকে যেতে দিতে পারেন না।
– রাজের মা অধরার কাছে গিয়ে বলে, ‘ মা তুই আমাদের কাছে থাকতে পারবি? আমাদের তো মেয়ে নেই। রাজটাও দু’দিন থেকে কিচ্ছু খাচ্ছে না। জ্বরের ঘুরে ছেলেটা তোকে দেখতে চাচ্ছে। যাবি তুই?’ আমার ছেলেটা তোকে ছাড়া বাঁচবে না মা।”
– আন্টি ক্ষমা করবেন আমি যেতে পারবো না। বাবা যা বলবেন আমি তাই মেনে নিবো। আর আপনাদের পরিবার একটা বাজে পরিবার সবাই বলছে। আপনি নাকি রাব্বি আঙ্কেলের সাথে! লোকে এসব বলছে।
– অধরার মুখে এ কথা শুনে রাজের বাবা অধরার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘ কার নামে কি বলছিস? উনি তোর শাশুড়ি!
– শাশুড়ি মানি না। আর বাবা তুমি কিছু বলছো না রাস্তার লোকের কিভাবে সাহস হয় আমাকে চড় মারার?
– নিবিড় সাহেব আর রাজিয়া অধরার কথা শুনে কান্না করে দেয়! নিবিড় সাহেব চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। চোখের পানি টলমল করছে। টলটলে চোখ জোড়া নিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে করুণ সুরে বললো,’ অধরা তোকে নিজের মেয়ে ভেবে শাসন করেছিলাম। আর তুই কি বললি আমরা নাকি রাস্তার মানুষ? তোর বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখিস তোর বাবা আজকে কোটিপতি কার জন্য?
– রাজ জ্বর নিয়ে এসেছিল অধরাকে দেখতে কিন্তু। অধরার এ ভয়ানক রুপ দেখে তার অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে।
– রাজ তার মা-বাবাকে রেখেই বাসায় এসে পড়ে। আর মনে মনে ঠিক করে আর কোনদিন মা -বাবাকে অধরার কথা বলবে না। তার কলিজা যে অধরা ছিল সে মরে গেছে।
– এদিকে নিবিড় সাহেব ও তার স্ত্রীকে অধরার বাবা মা অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। রাস্তা দিয়ে যখন হাটতেছিল তখন এলাকার লোক বিভিন্ন রকমের বাজে কথা বলছিল। হঠাৎ পিছন থেকে একটা বালু ভর্তি ট্রাক এসে দুজনকেই পিষে দেয়! এলাকার সবাই সেদিন বলছিল মা বাবা দু’জন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ট্রাকের নিচে চাঁপা পড়ে!
রাজ সম্পূর্ণ ঘটনাটা বলতেই অধরা অসহায়ের দৃষ্টি নিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,’ সেদিনের ভুলের কি কোন ক্ষমা হবে না?”
– রাজ অধরার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,’ যে আগুন আমার বুকে জ্বালিয়েছিলি সেটা সুদে-আসলে উসূল করবো। তোর এবার্রশন করাবো কাল। রেডি থাকিস। আগামী তিনমাস তোকে দিয়ে কোটি টাকার ডিল সাইন করাবো। আর মা-বাবার বিচার করবো।
– চলবে”””””