The villain lover

The villain lover ।। পার্ট : ১৩

– আপনার সাহস কি করে হয় আবার আমার কাছে আসার?
– মানে আজ তো কাছে আসতে তুমি কোনো বাধা দিচ্ছেলেনা ছোয়া? হঠাৎ কি হলো তোমার?
– আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম আপনি কে, আপনাকে আমার চেনা রুদ্র ভাবছিলাম, যাকে আমি!
– যাকে আমি কি ছোয়া?
– কিছুনা,আপনি আমার বাবার খুনি। আর একটা খুনির সাথে সুখে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনাকে দেখে আমার বাবার রক্তমাখা মুখটা ভেসে ওঠে প্লিজ আপনি চলে যান, আপনাকে আমার দেখতে ইচ্ছা করছেনা, চলে যান আপনি। (চিৎকার করে কথাগুলো বলছে ছোয়া)
– তোমাদের এই ভুল বোঝার জন্য আমি আমার জীবনের ৭ টা বছর কি যে যন্ত্রণা ভোগ করেছি আমি নিজেই জানি, পরিবার থাকা সত্তেও আমি অনাথের মতো থেকেছি।আজ যখন তোমাকে নিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করতে চাই তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো?
ছোয়া খুব তাড়াতাড়ি তোমার ভুল ভাঙবে সেদিন তুমি আমার কাছে ছুটে আসবে, আমার একটু ভালোবাসার স্পর্শ পাওয়ার জন্য তুমি তেমন ভাবেই ব্যাকুল হয়ে থাকবে যেমন আমি এখন হয়ে থাকি।
কথাগুলো বলেই রুদ্র ব্যালকনিতে চলে গেলো।
ছোয়া রুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়য়ে আছে, এতো কনফিডেন্স নিয়ে কিভাবে কথা বলছে রুদ্র ছোয়া তা নিজেও বুঝতে পারছেনা।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র,
ছোয়ার দেয়া প্রতিটা কষ্ট যেন বুকের খুব গভীরে যেয়ে লাগছে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্র,
আজ অনেকদিন পর ধোয়া জাতীয় কিছু নিতে ইচ্ছা করছে,রুদ্র ভাবছে যে বুকের মাঝে ছোয়া থাকে সেখানে কোনো ধোয়া সে কিভাবে প্রবেশ করাবে, ভাবনাগুলো রুদ্রকে গিলে খাচ্ছে।
চোখ বুজে ভাবছে আগের দিনগুলোর কথা, ছোয়া তখন খুব ছোট, একবার রুদ্রদের বাড়ি যেয়ে ছোয়া দুষ্টুমি করতে যেয়ে পরে গিয়েছিলো, রুদ্র বাগানে যেতেই দেখলো ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে বসে, বসে কাঁদছে। রুদ্র মেয়েটার কাছে যেয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে,
– এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার,
– ভাইয়া, পলে গেতি।
বাচ্চামেয়েটার কাঁদো, কাঁদো মুখটা রুদ্রের কাছে সেদিন খুব মায়াময় লেগেছিলো, রুদ্র তাকে ধরে নিয়ে পায়ে মলম লাগিয়ে দিলো। তারপর বাসার ভেতরে যেতেই জানতে পারলো মেয়েটা তার বন্ধুর বাবার মেয়ে।
তারপর ছোয়ার সাথে তার দেখা হয়নি, কারন ছোয়া তার নানুবাড়ি থাকতো। তারপর ছোয়ার সাথে, একেবারে বিয়ে, হয়তো তখন মেয়েটাকে কাছে থেকে জানলে,তখনি রুদ্র ছোয়ার প্রেমে পরে যেতো। কিন্তু ওতোটুকু বয়সে অনেককিছু বোঝার ক্ষমতা রুদ্রের ছিলোনা। বুঝলে আজ গল্পটা অন্যরকম হতো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ষশ্বাস নিলো রুদ্র।
আজ শুধু আকাশে মেঘ জমেনি রুদ্রের মনেও জমেছে ঘন কালো মেঘ,
প্রায় অনেকক্ষন ব্যালকনিতে দাড়িয়ে রুদ্র, আস্তে,আস্তে নিজেকে শান্ত করে । আবার রুমে ফিরলো রুদ্র।

বিছানায় বেশ গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোয়া, কিন্তু এই ভেজা শাড়ি নিয়ে ঘুমালে তো জ্বর আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে রুদ্র একটা নাইটি নিয়ে আসলো ছোয়ার জন্য।
নিজেই বদলে দিলো ছোয়ার ড্রেস।
ছোয়া ড্রেস বদলে দেয়ার জন্য রুদ্র দুষ্টুমি হাসি হাসছিলো, কারন ছোয়া যদি জেগে থাকতো এতোক্ষন ছোয়ার হাতে বলি হতে হতো রুদ্রের, বিষয়টা মনে করতেই যেন রুদ্রে হাসি পাচ্ছে চরম আকারে।
ছোয়ার ড্রেস বদলে ছোয়াকে আলতো করে শুইয়ে দিলো, আর নিজেও ট্রাইজার পরে খালি গায়ে ছোয়ার পাশে শুয়ে পড়লো।
রাত ৩ টা রুদ্রের ভয়টা সত্যি হলো, রুদ্র টের পেলো ছোয়া শরীর চরম আকারে গরম তার মানে ছোয়ার জোর এসেছে।
এতো রাতে রুদ্র কি করবে বুঝতে পারছে না তাই উঠে নিজেই জলপট্টি দিতে লাগলো, একটানা ২ ঘন্টা জলপট্টি দেয়ার পর জোর কিছুটা কমে এলো ছোয়ার।
– এই তুমিকি আমাকে একটুও ভালোবাসো না,হুম?
ছোয়ার মুখে এমন কথা শুনে রুদ্রের খুব অবাক লাগছে,জোরের ঘোরেই কথাগুলো বলছে ছোয়া।
রুদ্র ছোয়াকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,
– অনেক,অনেক ভালোবাসি জান তোমাকে।

সকালে রোদের আলো গায়ে পড়তেই ছোয়ার জ্ঞান ফিরলো, মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছে,
কাল বৃষ্টি হয়ে চারদিকে একটা ঠান্ডা, ঠান্ডা ভাব ভালোই লাগছে ছোয়ার।
হঠাৎ ছোয়া নিজের দিকে তাকাতেই হা হয়ে আছে,
– একি আমার ড্রেস! তার মানে রুদ্রটা আবার। এই শুনছেন এই জোরে ছোয়া রুদ্রকে ধাক্কা দিচ্ছে।
– উম কি হয়েছে,ঘুমাতে দাও। সারারাত তো ঘুমাতে দাওনি।
– এএএএ আমি দেইনি? আমার তো কিছু মনেও ছিলোনা। ছি আমি এটা কি করলাম শেষ মেস আপনাকে আমি,
– রুদ্র এক চোখ খুললো, আর বললো। জান তুমিতো ইচ্ছা করে করোনি বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলে তাই হয়ে গিয়েছে এতে তোমার দোষ নেই।
– এএএএএএএ( কাঁদো, কাঁদো হয়ে)
আমি এটা কিভাবে করলাম, ছি কি লজ্জা।
– ছি বলার কি আছে বললাম তো তোমার জ্ঞান ছিলোনা।
– এ ছি আপনি আবার বলছেন😭
– এবার রুদ্র লাফ দিয়ে উঠে বসলো,ছি বলার কি আছে,
জান তোমার জ্বর এসেছে এতে আবার তোমাকে ডেকে মনে করানোর কি আছে, তখন তোমার জ্ঞান ছিলোনা। আমি ডাকলেও তুমি কোনো সাড়া দিতেনা।
এবার ছোয়া ঠোঁটে কামড় দিলো,তার মানে এই ব্যাপার ছিলো, তার জ্বর এসেছিলো তাই রুদ্র ড্রেস বদলে দিয়েছি,অন্য কিছুনা। আর ছোয়া এতোক্ষন কি সব ভাবছিলো। মনে করতেই নিজের প্রতি নিজের লজ্জা হচ্ছে।
– যাক রুদ্র মনে হয় আমার কথা কিছু বোঝেনি, বোঝানোও যাবে না। ইস কি লজ্জা ও বুঝতে পারলে মুখ দেখাতে পারবোনা।( মনে,মনে এসব ভাবছে ছোয়া)
– সারারাত ঘুমাতে দাওনি এখনো কি দিবানা?
– ওকে আপনি ঘুমান আমি ফ্রেস হবো,
বলেই ছোয়া উঠতে চায় তখনি রুদ্র একটানে ছোয়াকে তার বুকের ওপরে ফেলে দেয়,
– জান,কাল রাতে এতো সেবা করলাম কিছু টিপস তো আমার পাওনা তাইনা?
– ম,মানে কি বলতে চান,আর আমাকে ফেলে দিলেন কেনো? আমি ফ্রেস হবো ছাড়ুন।
– হুম ছাড়বো আগে দাও, নিজের ঠোট দেখিয়ে বললো রুদ্র।
– পারবোনা ছাড়ুন,
– কি বললা পারবা না? ওকে ওই তেলাপোকাটার পোট টা যেন কোথায় রাখলাম।
এবার ছোয়া ভিসন ভয় পেয়ে যায়, রুদ্র উঠতে যাবে তখনি ছোয়া রুদ্রজে টান দিয়ে ঠোটে একটা কিস করে,রুদ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছোয়া দৌড়ে বাথরুমে যেয়ে দরজা আটকে দেয়।
রুদ্র তো হা হয়ে আছে,
রুদ্রের ফোনে একটা ফোন আসলো,
– হ্যালো,
– হ্যা বলো।
– স্যার আমরা কিছু গোয়েন্দা টিম কে রেডি করে ফেলেছিলাম আপনার কাজটা করার জন্য, এই কয়দিনের ভেতরেই আপনার কাজটা হয়ে যাবে।
– ওকে যতো তাড়াতাড়ি পারো কাজটা করে ফেলো।
– আচ্ছা স্যার।
রুদ্র শান্তি ভরা নিশ্বাস নিলো, এই ভেবে। যে খুব তাড়াতাড়ি ছোয়ার ভুল ভাঙতে চলেছে।
ছোয়া ফ্রেস হয়ে দেখে রুদ্র দুহাত ছোরিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে,
– আপনি শুয়ে আছেন, ফ্রেস হয়ে নিন।
মাথা তুলে তাকাতেই রুদ্রের যেন হা হওয়া অবস্থা ছোয়া, কালো একটা শাড়ি পড়েছে, ছোয়া অনেক ফর্সা কালোর মাঝে ছোয়ার সাদা পেট টা একদম বোঝা যাচ্ছে,
– ওগো আমার প্রিয়দর্শিনী, তোমার অদৃশ্য তির টা দিয়ে আমাকে আর কতো ঘায়েল করবে?
( ছোয়া দাঁড়িয়ে আছে) আর বোঝার চেষ্টা করছে রুদ্র কি বলছে,
– আপনি কি সকাল, সকাল আবার মদ,টদ খেয়েছেন।
এতো রোমান্টিক একটা কথার পাছে ছোয়া যে এমন একটা কথা বলবে রুদ্র তা ভাবেনি।
এই মেয়েটা কি এতো গভীর একটা কথা বললাম অন্য কোনো মেয়ে হলে আমার প্রেমে পরে এতোক্ষন নাচানাচি শুরু করতো এর এই মেয়ের মনে হয় সকাল, সকাল আমি মদ খেয়ে মাতলামো করছি(মনে,মনে ভাবছে রুদ্র)
রুদ্র আবার আগের মতোই বিছানায় শুয়ে পরলো, ছোয়ার কথায় যে সে বেশ হতাস হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।
ছোয়া, মুখ বাকিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো,
বাহ তাকে তো বেশ লাগছে, কিন্তু আমার পিটে তো কোনো তির নেই যার কথা রুদ্র বললো, ওহ রুদ্র তো বললো অদৃশ্য তির, মনে হয় রুদ্রই একা দেখে। ঠোট বাকিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছে ছোয়া।
– তুমি যা ভাবছো তার উত্তর তুমি এখনো পাবেনা বউ।
শোয়া অবস্থায় কথাটা বললো রুদ্র,
রুদ্রের দিকে তাকালো ছোয়া,
– কেনো,কেনো পাবোনা। আপনার থেকে আমার চোখের পাওয়ার অনেক ভালো।
– তাই তো বললাম, এখন তোমার উত্তর তুমি পাবেনা, চোখের পাওয়ার বেশি থাকলেই। এ উত্তরটা তুমি পাবেনা!
– কিন্তু কেনো??
– কারন তুমি এখনো গভীর প্রেমে তলিয়ে যাওনি। যেদিন আমার প্রেমে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইবে সেদিন সব উত্তর পাবে।
– দেখেছেন আমি বলেছিনা!
– কি বলেছো??
– আপনি মনে হয় মদ খেয়েছেন তাই নেশা হয়ে গিয়েছে,আর ভুলভাল বলছেন।
– হুম আমি মদ খেয়েছি নেশাও হয়েছে, ভুলভাল ও বলছি। একদিন তুমিও এই মদ খাবে, তোমারো নেশা হবে তুমিও অনেক ভুলভাল বলবে। মনে রেখো।
– এএএএএএএ
– এ না হ্যা, আমি ফ্রেস হতে যাচ্ছি বের হবো।
যাওয়ার জন্য রুদ্র পা বাড়ালেও গেলো না,
হেচকা টান দিলো ছোয়ার পেট ধরে, ছোয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
আর ছোয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বড়, বড় চোখ করে।
– আমার সামনে এই কালো শাড়িটা পরে আসবে না,আমি চাইনা যতোদিন না তুমি আমাকে, আমার কাছে বিলিয়ে দাও। ততোদিন জোর করে আবার কিছু করতে।
বলেই ছোয়াকে ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলো রুদ্র।
ফ্রেস হয়ে বের হয়ে গেলো রুদ্র।
যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলো, আজ দোহাকে ছোয়ার কাছে নিয়ে আসবে রুদ্রের পি এ শামিম।

ছোয়া তো মহা খুশি আজ বোনটাকে দেখবে মন ভরে আদর করবে। ১২ টার দিকে দোহাকে নিয়ে আশা হলো,
সারাদিন ছোয়া দোহার সাথে অনেক মজার সময় কাটালো,
রাত ১০ টার দিকে রুদ্র বাসায় ফিরলো, কিন্তু আজ আর ছোয়াকে ডাকলো না, নিজেই ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আর এদিকে ছোয়া দোহাকে ঘুম পাড়িয়ে দেখতে আসলো রুদ্র ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা,
ছোয়া এসে দেখলো রুদ্র ঘুমায়নি বিছানায় শুয়ে ওপর দিকে তাকিয়ে আছে, আর কিছু একটা নিয়ে খুব গভীরে ভাবছে।
ছোয়া গুটি, গুটি পায়ে রুদ্রের কাছে আসলো।
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
ছোয়ার কথা শুনে রুদ্র ছোয়ার দিকে তাকাতেই দেখলো, ছোয়া সকালের শাড়িটা বদলে ফেলেছে,
বাহ বউ আমার আর কোনো কথা শোনো না, কিন্তু শাড়ি বদলানোর কথাটা শুনে নিয়েছো, যাক ভালো লাগলো দেখে।
– ছোয়া কিছু বললো না, ছোয়া আস্তে করে বললো।
খাবেন না?
– রুদ্র এবার হাসি দিলো, কিন্তু সেই হাসিতে ভালোলাগার কোনো আচ পেলোনা ছোয়া।
দয়া করছো তাইনা? করুনা? তোমার বোনকে আজ তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম বলে?
কই এই দয়াটা তো এই কয়দিন হয়নি!তবে আজ কেনো ছোয়া? সবাই স্বার্থপর, সবাই।
রুদ্রের কথাগুলো ছোয়ার খুব গভীরে কোথাও আঘাত হানছে,যা টের পাচ্ছে ছোয়া। এর আগে রুদ্র তার সাথে এমন ভাবে কখনো কথা বলেনি।
রুদ্রকে তো ছোয়া ভালোবাসে না,তবে কেনো রুদ্রের কথায় এতো কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছেনা ছোয়া। ছোয়া কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি রুদ্র ছোয়াকে ডেকে বললো,
– ছোয়া, পরশু তোমাকে একটা গিফট দিবো তুমি রেডি থেকো,
ছোয়ার আজ জানতে ইচ্ছা করছে না কি গিফট, অন্য সময় হলে এতোক্ষন ছোয়া অনেক প্রশ্ন করে ফেলতো। কিন্তু আজ তা করছেনা।
ছোয়া যে অন্য রুমে ঘুমাতে যাচ্ছে সেই বিষয়টা রুদ্র খেয়াল করেও কিছু বললো না। আচ্ছা রুদ্রের হয়েছেটা কি??

( আমি কিন্তু বুঝতেই পারছিনা, সামনে হয়তো বড় কোনো চমক আছে)
চলবে,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *