The villain lover ।। পার্ট : ০৯
অতীত
– ভাইয়া আপনি ছোয়াকে সামলান ও কিন্তু কখনো পাহাড়ে ওঠেনি,(মিম)
– হ্যা দেখছি, কিন্তু পরে গেলে কিন্তু ধরতে পাড়বো না, তোমার বন্ধবীর যা ওজন মনে হয় ৬০/৭০ কেজি হবে,কাল ওকে কোলে নিয়ে হেটে কোমর ব্যাথায় রাতে ঘুমাতে পারিনি।
– রুদ্রের কথা শুনে ছোয়া, তো রেগেমেগে আগুন।
– এইযে ভাইয়া কি বললেন?আমার ওজন ৬০/ ৭০ কেজি?( রেগে বললো ছোয়া) আমি ৪৬ কেজি লম্বার দিক দিয়ে ফিট আছি বুঝতে পেরেছেন?
– হ্যা, হ্যা কোলে নিয়েই বুঝেছি( দুষ্টুমি করে)
– মিম আমাকে কারো ধরা লাগবে না,আমি তো অনেক মোটা তাইনা। নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারবো,আমি যাচ্ছি দোয়া করে আমাকে নিয়ে আর ভাবিস না। (একপ্রকার রেগেই কথাগুলো বললো ছোয়া।)
– একা একা উঠছে ছোয়া, আর বক বক করছে। বেটাকে ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু,আমাকে বলে আমি নাকি মোটা কেনো রে আমিকি তোকে বলেছিলাম আমাকে কোলে নিতে নিজেই কোলে নিলি আবার নিজেই আমাকে কথা।শুনাস, বিয়ের দিন তোর বউ পালাবে হুম, বলে দিলাম,মনে, মনে এসব কথা বলছে আর রুদ্রকে গালাগালি করছে ছোয়া।
– আমাকে গালাগালি করছো?
– পাশে তাকাতেই রুদ্রকে দেখে হা হয়ে রইলো ছোয়া,( মনে,মনে বলতে লাগলো। আমি তাকে গালাগালি করছিলাম ব্যাটা বুঝলো কিভাবে, কি ডেঞ্জারাস রে বাবা)
– কি হলো,
– (নিজেকে সামলে)
– ক কই না তোহ। আমি আপনাকে কেনো গালাগালি করবো।
– না করলেই ভালো, আচ্ছা একটা কথা ছিলো তোমার সাথে।
-( এখন বলবে আমি তো তোমাকে মজা করে মোটা বলেছি আর বলবে আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও,মনে মনে বলছে ছোয়া)
কিন্তু রুদ্র যা বললো তাতে ছোয়া আরো রেগে গেলো।
– আসলে বলছিলাম, একটু কম, কম খাও। কাল কিন্তু তোমাকে কোলে নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে আমার।
– ভাইয়া, আমি বলেছিলাম কোলে নিতে? এখন কথা শোনাচ্ছেন? আর একদিন কোলে নিয়েই এই অবস্থা বাকি জীবন তো পরেই আছে,কথাটা বলা ঠোটে কামড় দিলো ছোয়া,
এটা সে কি বললো সারাজীবন কেনো রুদ্র তাকে কোলে নিবে, কথা বলার ঠেলায় কি বলে নিজেও বুঝতে পারেনি ছোয়া।( মনে,মনে)
– রুদ্র ও বড়, বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ছোয়ার দিকে।
– আসলে ভাইয়া মুখে এসে গিয়েছে, আচ্ছা কম,কম খাবো এরপর থেকে( মন খারাপ করে)
রুদ্র শুধু ভাবছে শুনেছি মনে যা থাকে মুখেও তা এসে পরে আর ছোয়াও কথা বলতে, বলতে এই কথাটা বলে ফেললো। তবেকি ছোয়াও তাকে মনে, মনে, ভাবতেই ভালো লাগছে রুদ্রের।
জান তুমি ঠিক বলেছো সারাজীবন তোমাকে আমার বুকে রাখবো।
অনেকক্ষন হাটার পর অবশেষ সবাই পাহাড়ে উঠলো।
– ওয়াও, কতো সুন্দর।আমার তো নাচতে ইচ্ছা করছে।( ছোয়া)
-তো নাচ( মুখ বাকিয়ে মিম)
– ছোয়া পাহাড়ের অনেক কিনারায় চলে গিয়েছে ছবি তুলতে, তুলতে।
– ছোয়া বেশিদুর যাস না ( মিম)
– আচ্ছা!!!
রুদ্র দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে ছোয়ার কান্ড দেখছে।
হঠাৎ রুদ্র খেয়াল করলো ছোয়া অনেকটা কাছে চলে গিয়েছে পাহাড়ের।
– ছোয়া, ছোয়া? রুদ্র ডেকে যাচ্ছে ছোয়াকে কিন্তু ছোয়ার তো হুস নেই,সে ব্যাস্ত ছবি তোলায়।
প্রায় অনেকটা কাছে চলে গিয়েছে ছোয়া, রুদ্রের বুকে মাঝে মোচর দিয়ে উঠলো। রুদ্র তাড়াতাড়ি যেয়ে ছোয়াকে একটানে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো,ছোয়া বুঝতেই পাড়ল না।
– ছোয়া আমি কতোক্ষন ধরে ডাকছি তোমাকে, যদি পরে যেতে কি হতো আমার। আমার কথা একবার ও ভাবলে না তুমি? ( একটানা কথাগুলো বলে গেলো রুদ্র) নিজের বুকের থেকে ছোয়ার মাথাটা উঠিয়ে, দুইগাল ধরে রুদ্র আবার বলা শুরু করলো, কি হলো বলো কেনো গিয়েছিলে এতো কাছে যদি পরে যেতে?
– ছোয়া তাকিয়ে আছে রুদ্রের চোখের দিকে,সে চোখে অন্য কিছু দেখছে ছোয়া। যা হয়তো এতো গভীর ভাবে কারো চোখে দেখেনি সে।
– ছোয়ার তাকিয়ে থাকা দেখে রুদ্র বাস্তবে ফিরে এলো।
ছোয়াকে ছেড়ে দিয়ে,
– আসলে!!!!
রুদ্রের কিছু বলার আগেই ছোয়া দৌড়ে চলে গেলো।
রুদ্র বুঝতে পারছেনা কি করবে,
ছোয়া একটা যায়গায় বসে রুদ্রের বলা কথাগুলো ভাবছে!
– কেনো সে আমাকে ওভাবে বললো, আমি ছাড়া সে থাকবে কিভাবে এই কথার মানে নিজেও বুঝতে পারছিনা। কিন্তু ভাইয়ার চোখে আমি কি দেখলাম অনুভূতিটা আমার খুব চেনা তা তো নয়। তবে কেনো বার,বার মনে হচ্ছে যে, ভাইয়ার চোখে আমি অন্য এক আকুতি খুজে পেয়েছিলাম, ( ভাবতে,ভাবতে এক মনে তাকিয়ে থাকে ছোয়া)
– আপু তুমি এখানে একা, একা কি করো?
– ছোয়া তাকিয়ে দেখলো,রোদেলা।
-আরে রোদেলা তুমি? আসো এখানে বসো।
– হুম আপু কি হয়েছে? মন খারাপ??
– না তেমন কিছু না।
– আপু একটা কথা বলবো?
– হুম বলো??
– তুমি আমাদের বাসায় একদিন এসো, আম্মু তোমার কথা অনেক বলে।
– হুম,যাবো একদিন।
এই সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকছে চলে আয়।( মিম)
তারপর সবাই খেয়ে দেয়ে, আবার হোটেলে ফেরার জন্য রওনা দিলো।
কিন্তু ছোয়া আর আগের মতো কথা বলছে না,চুপচাপ হাটছে, আর রুদ্রকেও এড়িয়ে চলছে,বিষয়টা বেস ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে রুদ্র। তবুও ছোয়ার পেছনে, পেছনে হাটছে রুদ্র কারন ছোয়া পরে যেতে পারে।
হোটেলে যেয়ে ফ্রেস হয়ে হোটেলে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় ছোয়া। সারাদিন এতো উচু পাহাড় বেয়ে উঠেছে তাই অনেক ক্লান্ত।
বাহিরের হাওয়াটা ভালোই লাগছে ছোয়ার,
– কিরে একা,একা দাঁড়িয়ে আছিস?
– কিছুনা রে এমনি।
– বাসার কথা মনে পড়ছে?
– হুম পড়ছে, যখন চাকরি করবো আম্মু আর দোহাকে নিয়ে এখানে আসবো,অনেক মজা হবে।
– ছোয়া, তোর মন খারাপের কারন কি শুধু আন্টি আর দোহা, নাকি অন্য কিছু?
– মানে কি বলতে চাইছিস?
– শোন আমার সাথে সেয়ার কর,জানিস কথা সেয়ার করলে কষ্ট কমে যায়। আর সলিউসন ও পাওয়া যায়।
– ছোয়া, তাকায় মিমের দিকে। মিম আমার জীবনে সবসময় এমন কেনো হয় বলতো? তুই তো জানিস লাইফের শুরুতেই কতো কিছু সইতে হয়েছে আমাকে, তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়েছে খুব ছোট বেলা থেকেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে, কারন আমি জানি আমি যদি শক্ত না হই আম্মু আর দোহাকে কে দেখবে। বিয়ে, ভালোবাসা, এগুলোর ওপরে বিশ্বাস তো অনেক আগেই উঠে গিয়েছে। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি অনেক ভুল করে ফেলছি। আমি আমার লক্ষ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি।
– কিন্ত তোর এমন কেনো মনে হচ্ছে ছোয়া??
তারপর ছোয়া আজকে ঘটনা মিমকে বললো,
– জানিস মিম মানুষ নাকি মিথ্যা বলতে পারে,কিন্তু চোখ নাকি কখনো মিথ্যা বলেনা।
আর আজ আমি রুদ্র ভাইয়ার চোখে অন্য কিছু দেখেছি।
– কি দেখেছিস??
– জানিনা( কেঁদে দিয়ে)
– আমি জানি ছোয়া!
– মানে? কি জানিস তুই??
– মানে ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।
মানে? তুই কিভাবে জানিস?
তারপর মিম আগেরদিন রাতের সব কথা ছোয়াকে বললো
ছোয়া অবাক হয়ে আছে এতোকিছু হয়ে গেলো কিন্তু সব সে আজ জানতে পারলো, ভাবতেই অবাক লাগছে।
– ছোয়া ভাইয়া অনেক ভালো, দেখ সেদিন তোকে ভাইয়া একা পেয়েছিলো চাইলে তোর সাথে খারাপ কিছু করতে পারতো কিন্তু করেনি কেনো জানিস তোকে ভালোবাসে বলে, ভাইয়া তোকে মন থেকে ভালোবাসে আর ভাইয়াও খুব ভালো একটা মানুষ তাই তার মন পবিত্র। দেখ সবার সাথে সবাইকে মিলিয়ে ফেলিস না, হয়তো ভাইয়াই তোর লাইফে লাকি চাম্প হয়ে আসতে পারে। আমি দেখেছি তুই অসুস্থ ছিলে ভাইয়া কতো চিন্তা করছিলো,প্লিজ সব কিছু বাদ দিয়ে পসেটিভ ভাবে ভাইয়াকে নিয়ে ভাব। আশা করি যা হবে ভালোই হবে।
– মিমের কথা শুনে একমনে তাকিয়ে আছে ছোয়া।
ওদিকে,
রুমে বসে বসে রুদ্র ভাবছে আজ কি হলো, আজকের পরে হয়তো ছোয়া আর তার সাথে কথাই বলবে না। ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে। কি হবে ভাবতে পারছেনা রুদ্র।
অনেক কিছু চিন্তা করার পর রুদ্র সিদ্ধান্ত নিলো,যে যাই হয়ে যাক না কেনো আজই রুদ্র তার ভালোবাসার কথা ছোয়াকে জানাবে, কারন একটু ভুল বোঝাবোঝির জন্য রুদ্র ছোয়াকে হারাতে পারবে না।
-📱
– হ্যালো
– ছোয়া প্লিজ একটু বাহিরে এসো! আর যদি না আসো!
– না আসলে কি?
– জানিনা বলেই ফোন রেখে দিলো রুদ্র।
– বিষয়টা এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে হবে না। ক্লিয়ার হতে হবে। তাই ছোয়াও রুদ্রের সাথে দেখা করতে গেলো।
রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে, ছোয়া ডাকতেই পেছনে ফিরলো রুদ্র।
– ভাইয়া?
– এসেছো, আসলে কিছু কথা ছিলো।
– কাল ও তো বলা যেতো।
– আমি কালকের আশায় থাকিনা ছোয়া, যা হবার আজ হবে।
– মানে???
– ছোয়া I Love you
– মানে??
– অবাক হওয়ার তো কিছু নেই ছোয়া, তুমি হয়তো আজ কিছুটা বুঝতেও পেরেছো, হয়তো কিছুটা ভুল ও বুঝেছো, তাই ক্লিয়ার করে নিলাম।
– এটা সম্ভব না ভাইয়া,
– কেনো?
– আমার মা,বোনকে রেখে আমি বিয়ে করবো না।
– ছোয়া এটা হয়না,একদিন না একদিন তোমাকে বিয়ে করতেই হবে, কারন কোনো মা চায়না তার কথা ভেবে তার মেয়ে নিজের জীবন নষ্ট করুক। একদিন না একদিন তো কাউকে আপন করতেই হবে,সেই মানুষটা কি আমি হতে পারিনা।
রুদ্রের কথা কোনো ভুল খুজে পাচ্ছেনা ছোয়া,কারন রুদ্র একদম বাস্তব কথা বলছে।
– ভাইয়া আমাকে সময় দিন,আমার অনেক কিছু ভাবতে হবে বলেই ছোয়া চলে গেলো।
আর রুদ্র শুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
ছোয়াকে আজ সে একদম বুঝতে পারছেনা।
রাতে ছোয়া অনেক কিছু ভাবলো, ঠিকই তো সবাই একরকম হয়না। তবে আমি বিয়ে করে নিলে আম্মু আর দোহার কি হবে,নাহ এসব নিয়ে এতো ভাবার কি আছে? কাল রুদ্র ভাইয়াকে বলবো এসব নিয়ে এখন ভাববো না যদি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পাড়ে তাইলে করুক।( নানান কথা ভাবতে, ভাবতে ছোয়া তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে).
আর রুদ্র ছোটফোটানি যেন শেষ হচ্ছেই না, হাজারো ভাবনার মাঝে রুদ্র।
পরেরদিন সকালে,,,
রোদের মিষ্টি আভা ছোয়াকে ছুয়ে দিতেই ঘুম ভাঙলো ছোয়ার।ছোয়া উঠেই একটা মিষ্টি হাশি দিলো।
হাটতে, হাটতে এদিক ওদিক দেখছে
সত্যি যায়গাটা অনেক সুন্দর।
তবে আজকের দিনটাই যে ছোয়ার জীবনের বড় অভিশাপ হবে ভাবেনি ছোয়া,,,
হাটতে, হাটতে কারো রুম থেকে জোরে হাসাহাসির শব্দ আসছে,
ছোয়া একপলক তাকিয়ে দেখলো, রোদেলা। হাসছে,কৌতুহল বসত ছোয়া একটু উকি মেরে দেখলো রুদ্র।( প্লিজ আপনারা আপনাদের মতামত আমাকে জানাবেন,আপনারা গল্পটা কিভাবে নিচ্ছেন জানাটা আমার জন্য খুব প্রয়োজন)
ছোয়া বেশ অবাক রুদ্র এখানে!!!
রুমের লোকটা দেয়া হয়নি তাই দরজাটা আধ খোলা ভাবে রয়েছে,আর সেদিক থেকেই দাঁড়িয়ে সব দেখছে ছোয়া।
তারপর ছোয়া যা শুনল তা শুনে ছোয়ার সারা শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে….
চলবে,,,