The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 70
সেদিন বেশ রাত করে যার যার ঘরে ফিরে গেলো ফেন্সি আর অর্পন।অর্পন ঘরে ফিরতেই মায়ের সামনা সামনি হলো।সাদিয়া আজহার ছেলের দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে।
-কই ছিলি সারাদিন?
-(মা ফেন্সিকে পছন্দ করেনা।কয়েকটাদিন যাক বুঝিয়ে বলবো)মা একটা ফ্রেন্ডের বাসায় ছিলাম।ও ইন্ভাইট করেছিলো।
-তোর বাবা খুব রেগে ছিলো।অন্তত ফোন কল পিক করতে পারতি।
-সরি মা।এতো জোরে গান বাজছিলো।
-যাহ।ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়।
-ওকে।
অর্পন রুমে চলে গেলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে ফেন্সিকে কল দিলো।ফেন্সি খাটে এসে বসতেই ফোনে অর্পনের কল পেলো।ফেন্সির ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি দেখা গেলো।
-হ্যালো!!!ফেন্সি কই তুমি?
-মাত্র ফ্রেশ হয়ে এলাম।তুমি?
-আমি ও।আজকের দিন স্বপ্নের মতো ছিলো।
-আমার কাছে ও স্বপ্নের মতো লেগেছে।
-হুম।সামনের রবিবার আবার দেখা হচ্ছে তো।
-হুম।আমার গেস্ট হাউজে।
-ইন্টেশন কি ম্যাডামের? দুষ্টু হাসে অর্পন।
-আ রোমান্টিক ডিনার ফর মাই লাভলি অর্পন।
-ওহহো।আজই এতো মিষ্টি করে কথা বলা হচ্ছে।বিয়ের পর আমার জীবন প্রেমে প্রেমে পরিপূর্ন করে দেবে তুমি।
-হুম।অবশ্যই।
এভাবে প্রায় সারাটারাত কথা বলার মাঝেই কেঁটে গেলো।
-আরাভ!!!এই শুনেন!!! আরাভ!!!!!
আরাভ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।হঠাৎ ইয়ারাবীর কান্নায় ঘুম কিছুটা কেঁটে গেলে ও পুরোপুরিভাবে কাঁটতে পারছেনা।
-আরাভ প্লিজ উঠেন কষ্ট হচ্ছে আমার!!
এবার কথা যতোটুকুই শুনলো মেয়েটা সমস্যায় আছে বুঝতে দেরি হলো না ওর।চটজলদি উঠে দেখলো ইয়ারাবী পেট ধরে শুয়ে আছে খুব কাঁদছে।আরাভ প্রচন্ড ভয় পেলো।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ও।ইয়ারাবীর শরীর ঘেমে একাকার।
-ইয়ারাবী!!কি হলো তোমার?
-পেট ব্যাথ আআআআ!!!জোরে কান্না করছে ইয়ারাবী।
-কিছু হবেনা। আমি দেখছি কি করা যায়।
ইয়ারাবীর গালের পানি মুছে আরাভ ফোন হাতে নিলো।কাকে ফোন দিবে চিন্তা করছে আরাভ। এতো রাতে কে জাগনা থাকবে।কিন্তু বেচারী তো ঘুমোতে পারছেনা।আরাভ গাইনোকোলোজিস্ট সম্পা কে কল দিলো।
রাতে গোসল সেড়ে বিছানায় মাত্র শুয়েছে সম্পা।রাব্বি ফ্রেশ হতে গেছে।হঠাৎ আরাভের কল পেয়ে কিছুটা অবাক হলো সম্পা।এভাবে এতো রাতে কল দিচ্ছে কেন ওনি?হঠাৎ রাব্বি এসে সম্পাকে জড়িয়ে ধরে।
-রাব্বি!!
-হুম!!
-স্যারের ছেলে আরাভ ভাই কল করেছে।
-এখন!!!
-হুম।
-ধরো তো।ইয়ারাবী ভাবির কিছু হলো কিনা।
সম্পা ফোন ধরলো।ফোন ধরতেই ইয়ারাবীর কান্না সম্পার কানে এলো।
-ডাক্তার ওর পেটে প্রচুর পেইন হচ্ছে খুব কাঁদছে।
-বাথরুম হয়েছে?
-বলল গেছে কয়েকবার।
-স্যার ইটস নরমাল।এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবেনা।ওনার যেহেতু খাবারের রুচি চেঞ্জ হয়েছে হরমোন চেঞ্জ হয়েছে।এমনটা হতে পারে।ভিটামিনস নেয়ার কারনে ও এমন হতে পারে।পারলে ওনাকে একটা স্যালাইন খাওয়ান।তারপর ঘুমাতে বলেন।ব্যাথা কমে যাবে।
-আচ্ছা।
-আর হ্যা দু একদিনের মধ্যে ভালো না হলে হাসপাতালে নিয়ে আসবেন।
-ওকে।
আরাভ নিচে নেমে জলদি স্যালাইন বানিয়ে ইয়ারাবীর কাছে এলো।মেয়েটা বাথরুমে বসে আছে।ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।
-ইয়ারাবী বের হয়ে আসো।
-আরাভ খুব পেট ব্যাথা করছে।
-বাথরুম পাতলা?
-মানে?অপর পাশ থেকে চিৎকার করে বলল ইয়ারাবী।
-আস্তে বলো।পায়খানা কি পাতলা?
-আরাভ আমি মরে যাচ্ছি এসব নিয়ে পড়ে আছেন আপনি।
-আরে বাবা জানতে হবে আমার বলো।
-লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ইয়ারাবী বলল হুম।
-বের হয়ে স্যালাইন খেয়ে নাও।ভালো হয়ে যাবে।
-আচ্ছা আসছি।
কিছুক্ষনের মাঝে বেরিয়ে এলো ইয়ারাবী।তারপর স্যালাইন খেয়ে পেট ধরে শুয়ে পড়লো।আরাভ ওর পাচে এসে শুয়ে বলল,
-ঘুমাও।
-আসছেনা।
-বুকে আসো।
-ভালো লাগছেনা।
-গল্প শুনবে।
-হুম।ইয়ারাবী আরাভের কোলের মাঝে ঢুকে বলল বলুন।
আরাভ গল্প বলতে লাগে।গল্প শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
.
.
.
.
এদিকে আরাবী আর্ভিন বেশ ভালো সময় কাঁটাচ্ছে গ্রীসে।সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে বেরিয়ে প্রেমজড়ানো রাত পার করে দেয় ওরা।এ্যাথেন্সে দুদিন কাঁটানোর পর ঠিক হলো এক্রোপোলিস মিউজিয়ামে ঘুরে আসবে।
যেই কথা সেই কাজ।আরাবী আর আর্ভিন নাস্তা সেড়ে বেরিয়ে পড়লো মিউজিয়ামের উদ্দেশ্যে।মিউজিয়ামে পৌছাতে একঘন্টা চল্লিশ মিনিটের মতো লাগলো।
আরাবী বেগুনী রং এর শাড়ী পরেছে আর আর্ভিন কালো শার্ট আর ডার্ক ব্লু ডেনিম প্যান্ট।
মিউজিয়ামে পৌছে ওরা এটা ওটা দেখতে লাগে।একটা লোক এসে ওদের পাশে দাঁড়ায়।লোকটা ইন্ডিয়ান। নাম সুবর্ন রয়।লোকটা ওদের জানালো ওনি গাইড এখানকার।ওদের হেল্প করবে।
তারপর সে ওদের চিনাতে থাকে।এখানে সব মাইথিকাল দেব দেবীদের মুর্তি।
সুবর্ন বলল,
-এটা এ্যাপোলো। ওনি জিউস।দেবতাদের রাজা।
-আরাবী কিছুটা হাসলো।দেবতাদের ও আবার রাজা আল্লাহ!!
-ম্যাম ওদের রিলিজিয়নের ঠিক নেই।অনেক দেব দেবি।তারপর ওনি হলেন ডায়োনাইসাস।ওয়াইনের দেবতা।ফাইন আর্টসের দেবতা ওনাকে মানা হয়।
-ওহ। বলে উঠে আর্ভিন।
-ওরা আরো সামনে গিয়ে দেখলো খুব সুন্দরী এক রমনীর মুর্তি।লোকটা বলল ওনি হেলেন।ওনার জন্য ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়।প্যারিস ম্যানেলোসের ওয়াইফ কে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। যার কারনে আগামেমনন এখিলিস আরো অনেকে এক সাথে যুদ্ধে নেমে পড়ে। যেখানে এখিলিস হেক্টরকে মেরে ফেলে।এই যে ওনি হলো হেক্টর। প্যারিসের বড় ভাই।
আরাবী দেখলো বেশ সুদর্শন পুরুষ হেক্টর।
-আর এই যে দেখছেন নওজোয়ানকে।ওনি প্যারিস।
-ওহ।বেশ দেখতে আরাবী বলে আর্ভিনের দিকে আড় চোখে তাকায়।
আর্ভিন মৃদুহেসে সামনে তাকায়।আরাবী বুঝতে পারলো আর্ভিন জ্বলছে।তারপর আরো সামনে এলো ওরা।সেখানে এখিলিস,হেরোডোটাস,এফ্রোডিটি(ভালোবাসার দেবী),এ্যাথেনা(বুদ্ধিমত্তার দেবী),ব্রিসেয়িস (প্যারিসের কাজিন আর এখিলিসের প্রেমিকা)।হঠাৎ আরাবীর চোখ আটকা পড়লো একটা পুরুষ মুর্তির ওপর।তার দুচোখ বেয়ে রক্ত পড়ছে।বেশ অবাক লাগে আরাবীর।
-ওনি কে?
-ওনি হলেন ইডিপাস।কিং ইডিপাস।ওনার কাহিনী বেশ আলাদা।
ইডিপাস এ্যাথেনসের রাজা,কিং লুইস আর রানী জোকাস্টার সন্তান।কিং ইডিপাসের জন্মের আগেই টায়রেসিয়াস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ইডিপাস নিজের পিতাকে হত্যা করে মাতা কে বিবাহ করবেন।যার কারনে সন্তান জন্মের পর কিং লুইস একজন রাখালের হাতে দিলেন ইডিপাসকে হত্যা করতে।রাখাল পারেনি হত্যা করতে।ইডিপাস পাশ্ববর্তী রাজ্য কোরিন্থে বড় হয়।একদিন এক মাতাল লোক ইডিপাসকে বলল সে এই রাজ্যের রাজকুমার নয়।ইডিপাস সত্যতা যাচাই করতে এ্যাপোলোর মন্দিরে গেলো।সেখানে গিয়ে শুনলো ওনি তার পিতাকে হত্যা করে মাতাকে বিয়ে করবেন।সেটা শুনে ইডিপাস নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।কোরিন্থ ত্যাগ করে এ্যাথেন্সের দিকে ছুটে চলল।ওনি বাস্তবতা কে এড়াতে চাইছিলো।পথিমধ্যে কিং লুইসের সাথে দেখা হয়।সেখানে বাকবিতন্ডা হয় যার কারনে এক পর্যায়ে ইডিপাস না জেনে পিতাকে খুন করে।আর এ্যাথেন্সে গিয়ে মাতাকে বিয়ে করলো।
-ছি!!আরাবী মৃদুস্বরে বলল।
সেখানে পাঁচ সন্তান হয়।টায়রেসিয়াস ইডিপাস কে সত্যতা জানায়।যার কারনে কুইন জোকাস্টা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে।আর কিং জোকাস্টার কাপড়ের পিন দিয়ে নিজের দুচোখ অন্ধ করে ফেলল।এবং এ্যাথেন্স থেকে বিতাড়িত হলো।
-কি একটা অবস্থা।বলে উঠে আরাবী।
মিউজিয়ামে কিছুটা সময় কাঁটিয়ে ওরা হোটেলে চলে গেলো।এদিকে সকালে আরাভ ইয়ারাবীকে খুঁজে পেলো না বিছানায়।খাট থেকে নামার সময় রোয়েন কল দিলো আরাভের নম্বরে।
-জি বাবাই।
-আচ্ছা শোন তোর মা বাসায় আট আমি হসপিটালে।তোরা ও চলে যা।।
-ওকে বাবাই।
ফোন কেঁটে আরাভ নিচে এলো।ইয়ারাবী কে কোথাও পাচ্ছেনা ও।রাতে এতো অসুস্থ ছিলো এখন কই গেলো মেয়েটা।হঠাৎ কিচেনে নজর গেলো আরাভের। ইয়ারাবী পাস্তা বানাচ্ছে।কাজের লোকগুলো ওকে থামাতে চাইছে কিন্তু ও করবেই।
-ইয়ারাবী এগুলো কেন করছো?
-আপনার জন্য।
-এ অবস্থায় কেন করতে গেলে এসব?
-বিয়ের কর কিছু করে খাওয়াতে পারিনি।
আরাভের মন খুশিতে ভরে উঠলো।পাকঘরে ঢুকে ইয়ারাবী কে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
-কি করছেন? পুড়ে যাবে পাস্তা।
-থ্যাংকস ইয়ারাবী।
-ওয়েলকাম।এবার সরুন।নামাতে হবে এগুলো।
-এগুলো বক্সে ভরে নাও বাসায় মা আছে।সবাই মিলে খাবো।
-ওকে।
আরাভ সার্ভেন্টসদের খাবার প্যাক করতে বলে ইয়ারাবীকে সুইমিংপুলের সামনে নিয়ে এলো।দুজনে কিছু সময় পার করলো সেখানে।আরাভ জানতে পারলো ওর পেট ব্যাথা নেই।সকাল থেকে দুবার বাথরুম গেছে।
এদিকে পাঁচদিন গ্রীসে কাঁটানোর পর আরাবী আর্ভিন বাংলাদেশে ফিরে এলো।
চলবে