The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2)

The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 52

ইয়ারাবী এক মিনিট ও ওয়েট করতে পারলোনা।খাট থেকে নেমে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আকরাম আজহারের রুমে চলে এলো।মিসেস আজহার নামাজের সালাম ফিরিয়ে ইয়ারাবী কে দেখে চমকে গেলেন।খুব কাঁদছে মেয়েটা।মিসেস আজহার মোনাজাত করে ইয়ারাবীকে ধরে বসালেন।তারপর এক গ্লাস পানি খাইয়ে বললেন,
-কি হলো ইয়ারাবী? কি হয়েছে তোমার?
-কান্না করছে ইয়ারাবী।কথা বলতে পারছেনা।
-ইয়ারাবী কি হলো আম্মু বলো।কি হয়েছে?কাঁদছো কেন?
-মা আমাকে জেঠুর কাছে যেতে দিন প্লিজ।ফুঁপিয়ে বলছিলো।
-রোয়েন ভাইয়ের কি হয়েছে?জিজ্ঞাস করেন মিসেেস আজহার।
-জেঠু খুব অসুস্থ।ওনার হার্ট এটাক এসেছে।প্লিজ মা যেতে দিন। কেঁদে কেঁদে বলছে ইয়ারাবী।
মিসেস আজহার ড্রাইভার কে কল দিয়ে গাড়ি বের করতে বললেন।তারপর ইয়ারাবীকে বলেন রেডি হতে।কিন্তু ও কোনভাবেই কাপড় পাল্টাবেনা।আসলে কাপঢ বদলানোর অবস্থা মন মানসিকতাই নেই ওর।অবশেষে হাসপাতালে পৌছালো ওরা।রোয়েনের নিজের হাসপাতালেই এডমিট করানো হয়েছে ওকে।ডাক্তার নাকি বলেছেন ওনি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করছিলেন যার পরিনতিতে এ অবস্থা।রুহী কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।রুপন্তী বোনকে সামলাচ্ছে আর রেহান ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।অপরদিকে আরাবী কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে আর কাঁদছে।
ইয়ারাবীকে রুপন্তী আর রেহান দেখে কিছু বললনা।মিসেস আজহার রুপন্তী আর রুহীর কাছে এগুলো ইয়ারাবীকে নিয়ে।ইয়ারাবী রুপন্তীকে ধরতেই রুপন্তী সরে গেলো।
তারপর মিসেস আজহার রুপন্তী কে জিজ্ঞাস করলেন,
-কখন হলো এসব?
– কাল রাত থেকে ছটফট করছিলো বুক ব্যাথায়।কতোবার জিজ্ঞাস করলাম কি হলো এমন করতেছো কেন?বলে না কিছু না।এমনি ভাল লাগছেনা।সকালেও কেমন ছটফট করছিলো।বাথরুমে গেছে সেখানে যেয়ে আর বের হয়না।আমি দরজা নক করি।কথা ও বলছিলো না।কিন্তু ওর হাঁপানির শব্দ শুনতে পাই।চাবি এনে দরজা খুলে দেখি ফ্লোরে শুয়ে পড়েছে।আমি যাওয়ার সাথে সাথে বলে আমাকে হসপিটালে এডমিট করো রুহী মরে যাচ্ছি আমি।জোরে কাঁদতে শুরু করে রুহী কথা গুলো বলে।
কিছুক্ষন পর আরাবী এসে রুপন্তীর পাশে দাঁড়ায়।ওর চোখ ফুলে গেছে।ইয়ারাবীকে দেখে আরাবী বোনকে জড়িয়ে ধরে। দুই বোন কাঁদতে লাগে।মিসেস আজহারের খুব খারাপ লাগছে।কিছুক্ষন কর আর্ভিন আর ইসরাত মাহবুব দৌড়ে এলো।আর্ভিন মিটিং এ ছিলো।মিটিং অসমাপ্ত রেখে এসে গেছে।
রেহানকে আর্ভিন বলল,
-চাচ্চু বাবার কি অবস্থা?
-রেহানের চোখে পানি।বেশি ভালো না ভাইয়ের অবস্থা।
আর্ভিন এবার রুহীর কাছে এলো।রুহী আর্ভিনকে দেখে মাথায় কাপড় টানে।ইসরাত মাহবুব আরাবীকে এটা ওটা জিজ্ঞাস করছে।আর্ভিন রুপন্তী কে বলল,
-আন্টি মা কিছু খাইছে?
-না বলে উঠে রুপন্তী।
-মা কিছু খান অসুস্থ হয়ে যাবেন আপনি।কি আনবো মা আপনার জন্য?
-না আর্ভিন কিছু খাবোনা।তোমার বাবার সাথেই খাবো।
-আর্ভিন কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।
ডাক্তার এসে রেহানকে বললেন,
– ওনাদের কাঁদতে বারন করুন।স্যার কে মেডিসিন দিয়েছি আমরা ঘুমোচ্ছে স্যার।
-ওকে আমরা তাহলে কেবিনে যাচ্ছি।বলে রুহী আর বাকি সবাইকে নিয়ে কেবিনে এলো রেহান।
রুহীকে শুইয়ে দেয়া হয়েছে।অস্থির হয়ে গেছে ও। কাঁদতে ও পারছেনা।গলা থেকে কথা ও বেরুচ্ছে না।ইয়ারাবী রুহীর মাথার কাছে বসে আছে।ওর চোখে ভেসে উঠলো ওর দশম জন্মদিনের কথা।সেদিন জেঠু হাসপাতাল থেকে ওকে নিয়ে শপিং মলে যায়।তারপর জোর করে কিছু জামা আর একটা বার্বি ডল যেটা ইয়ারাবী অনেক আগ থেকেই কিনতে চাইছিলো।সেটার একটা সেট কিনে দেয়।জেঠু ওকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরে।কখনো ধমক দিয়ে ও কথা বলতেননা।ভীষন মায়া করেন।আরাবী ইয়ারাবীর মাথায় হাত রাখে।ইয়ারাবী বোনের দিকে তাকায়।
-কিছু খেয়ে নে ইয়ারাবী।
-না আপু ভালো লাগছেনা।
-তুই নিজেই অসুস্থ।এসময়ে টাইমলি খেতে হয়।নাহলে সমস্যা হবে।চল ক্যান্টিনে যাই।
ঠিক সেই সময়ে আর্ভিন অনেক গুলো প্যাকেট নিয়ে ভিতরে এলো।রুহীকে জোর করে খাওয়ালো রুপন্তী।আরাবী ইয়ারাবীকে খাইয়েছে।ইসরাত মাহবুব আর মিসেস আজহার খাবেননা কিছু।ওনাদের একদমই খিদে নেই।আরাবীর সামনে আর্ভিন বিরিয়ানীর একটা বক্স ধরে বলল,
-খেয়ে নাও।
-নাহ খেতে হবেনা আমার।
-সবাইকে খাওয়াচ্ছো। তুমি তো অসুস্থ হয়ে যাবে।তারপর সবাইকে দেখবে কি করে?
-সেটা নিয়ে আপনার না ভাবলে ও চলবে।
-তিনবার কবুল বলে বিয়ে করেছি।আমি ভাববোনা তো কে ভাববে বলো।কি বলো শালি?ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলল আর্ভিন।
-ইয়ারাবী মলিন হেসে বলল আপু খেয়ে নাও।
-পরে খাবো বলে সরে গেলো আরাবী।
এদিকে ইয়ারাবী কে বাসায় পাঠানো গেলোনা।জেঠুকে ছাড়া কোথা ও যাবেনা ও।এদিকে আরাবী ও যাবেনা।কারন রুহী ইয়ারাবীর খেয়াল রাখতে হবে।আর ডাক্তার দের সাথে কথা বলার ও ব্যাপার স্যাপার আছে।তাই থেকে গেলো ও।
পরদিন সকাল বেলা রুহীকে ডাক্তার জানালো রোয়েনের সাথে দেখা করা যাবে তবে শুধু একজন।আরাবী মাকে পাঠায় রোয়েনের কাছে।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
রুহী রুমে ঢুকতেই রোয়েন মাথা ঘুরিয়ে রুহীর দিকে তাকায়।স্বামীর কাছে এসে দাঁড়ায় রুহী।রোয়েন রুহীর হাত ধরে বলল,
-একটু বসো আমার পাশে।
রুহী রোয়েনের সামনে বসলো।দুজনেই চুপচাপ।রুহী রোয়েনের চুলে হাত বুলাচ্ছে।রোয়েন কিছু বলতে যাবে তখনই রুহী বলল,
-বেশি কথা বলোনা।ডাক্তার কথা বলতে মানা করেছে।
-মাথা ঝাঁকায় রোয়েন।
-তুমি কেন তোমার সমস্যা গুলো আমার সাথে শেয়ার করোনা।করলে আরো আগে আমরা হাসপাতালে এডমিট করতাম তোমাকে।প্লিজ অন্তত একটা বার আমাদের কথা চিন্তা করো তুমি।মন খারাপ করে বলল রুহী।
রোয়েন রুহীর হাত টেনে বুকে শুইয়ে দিলো।রুহী উঠতে চাইতেই ওকে ধরে রোয়েন বলল,
-নড়বেনা একদম।
রুহী আর কিছু বললনা।এদিকে ইয়ারাবী নিচে গেছিলো একটু হাঁটতে।আরাবী আপু ঘুমোচ্ছে।তাই একাই নিচে চলে এসেছে।হঠাৎ মাথা কেমন যেন করে উঠে ইয়ারাবীর।ঘুরে পড়ে যায় ও।চোখ খুলার পর নিজেকে বেডে অাবিষ্কার করে ইয়ারাবী।একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছেন।
-আপনি প্রেগন্যন্ট আর প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশনস আছে।
-ইয়ারাবী মাথা ঝাঁকিয়ে বলল আমি জানি আছে।
-আপনি বেবিটা এবরট করে নিন।বেবি টা ডেলিভারি হলে আপনার বাঁচার সম্ভাবনা ২০%।
-নাহ আমি এটা করবোনা।কিছু হবেনা আমার।
-আপনার হাসবেন্ডের সাথে কথা বলতে হবে।বলে উঠেন ডাক্তার।
-ওনি দেশের বাহিরে গেছেন।বলে উঠে ইয়ারাবী।
-আপনার ফেমেলি মেম্বাররা এখানে আছেন।ওনাদের সাথে কথা বলতে হবে।
-স্যার আমার জেঠু এমনিতেই খুব অসুস্থ।সময় সুযোগ বুঝে সবাইকে জানাবো ব্যাপারটা।প্লিজ আপনি কিছু বলবেননা।কথা গুলো বলে বিল পে করে বেরিয়ে নিজেদের কেবিনে এলো ইয়ারাবী।
আরাবী বোন কে দেখে দৌড়ে এলো,
– কই ছিলি তুই?
-নিচে হাঁটছিলাম কেন আপু?
-নাহ এমনি।খুঁজছিলাম তোকে।এ অবস্থায় নিচে গেলি কেন?
-হাঁটতে গিয়েছিলাম।বলে উঠে ইয়ারাবী।
এদিকে আরাভ চলে গেছে দুদিন পার হয়ে গেলো।ইয়ারাবী রোয়েনের বাসায় চলে গেছে।অবশ্য মিসেস আজহারই বলেছিলেন কিছুদিন কাঁটিয়ে আসতে রোয়েন সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ।ইয়ারাবীর ফোন রিসিভ না হওয়ায় আরাভ মিসেস আজহার কে কল দিলো।
-হ্যালো আরাভ কি খবর আব্বু?
-জি আন্টি ভালো।আপনারা ভালো আছেন?
-জি আব্বু ভালো।
-আন্টি ইয়ারাবী কই?ও ফোন ধরছেনা কেন?জিজ্ঞাস করে আরাভ।
-ইয়ারাবী রোয়েন ভাইয়ের বাসায়।ওনি খুব অসুস্থ হয়ে গেছিলেন তুই যাওয়ার পর দিন।
-বাবাইয়ের কি হয়েছে আন্টি?আতঙ্কিত গলায় বলল আরাভ।
-ওনি হার্ট এ্যাটাক করেছেন।এখন আগের থেকে একটু ভালো আছেন।
আরাভের মাথা কাজ করছেনা।কি হলো বাবাইয়ের?
মাথা কাজ করছেনা আরাভের এ কয়েকদিন কিভাবে কাঁটাবে ও এখানে?বাবাই অসুস্থ ওর জন্যই হয়েছে।আরাভ ফ্লোরে বসে হা্টুর ওপর মাথা গুঁজে দিলো।
এদিকে অর্পনের মিটিং আছে ব্রাদার্স কোম্পানী এন্ড লিমিটেড দের সাথে। শুনেছে সেখানাকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নতুন এসেছে।মিটিং টা হবে ধানমন্ডির একটা রেস্টুরেন্টে। সময় মতো সেখানে পৌছে গেলো অর্পন অারো কিছু এমপ্লয়িদের নিয়ে।
কিছুসময় পর দুজন লোক এসে পৌছায়।ওরা জানালো ওদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর একটু পরেই পৌছাবেন।অর্পন তাদের বসতে বলল।
সাতদিন পর আরাভ বাংলাদেশে এসে পৌছুলো।আরাভের ড্রাইভার ওর লাগেজ নিয়ে গাড়িতে ঢুকালো।
আরাভ গাড়িতে বসে বলল
-আমাদের বাসায় চলো।
-স্যার কোন বাসা?
-আমার বাবাইয়ের বাসায়।গম্ভীর কন্ঠে বলল আরাভ।
ঘন্টাখানিকের মাঝে রোয়েনের বাসায় পৌছে গেলো আরাভ।কলিংবেল বাজাতেই কাজের লোক দরজা খুলে দিলো।আরাভ ভিতরে ঢুকে সিড়ি বেয়ে রোয়েনের রুমের দিকে আসতেই দেখলো ইয়ারাবী রুম থেকে বপর হচ্ছে খালি বাটি নিয়ে।ইয়ারাবী সামনে তাকিয়ে চমকে যায়।
-আ আপনি!!!!
-আরাভ ইয়ারাবীর হাত থেকে বাটি নিয়ে ওর হাত ধরে রোয়েনের রুমে এলো।
রুহী নামাজে মোনাজাত ধরে আছে।রোয়েন আধশোয়া হয়ে আছে।আরাভ যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
-সরি বাবাই মাফ করে দাও।আমি তোমার ছেলে বাবাই।
-আ আরাভ বাবা আমার সোনা আমার বাবারে তুই আসছোস বাবা?
-জি বাবাই।আমি আসছি।
রোয়েন ছেলেকে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো।রুহী নামাজ ছেড়ে উঠে গেছে।ইয়ারাবী এসে রুহী কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আরাভ অনেকক্ষন পরে সরে এলো।পিছন ফিরে রুহীর দিকে তাকায়।রুহী এসে ছেলেকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে।
-মা কাঁদেনা।আমি এসে গেছি মা।প্লিজ কেঁদোনা।
রুহী কাঁদছে।আরাভ রুহীর পিছে ইয়ারাবীকে দেখতে পায়।ইয়ারাবী ওর দিকে চেয়ে একটু হাসলো।তবে সেই হাসিতে পরিপূর্নতা আছে।।
চলবে