বিনিময়ে তোমায় চাই

বিনিময়ে তোমায় চাই !! Part- 09

রিফা আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেলেছে। কারণ সারারাত ইমনের দেওয়া স্মৃতি ভাংগা ফোনটিকে নিয়ে কেদেছে।এমনকি রাতে কিছুই খায়নি।কাদতে কাদতে অনেক দেরিতে ঘুমিয়েছিলো।আর উঠতে দেরি করেছে।রিফা তড়িঘড়ি করে অফিসে ঢুকলো। তারপর তাড়াতাড়ি নিজের কেবিনে চলে গেলো।নিজের কেবিনে গিয়ে সিটে বসতে নিবে ওমনি একটা দামী শপিং ব্যাগ পেলো।সেটাতে ছোট্ট একটা চিরকুট দিয়ে লেখা, ‘This is for You’ এটা দেখে রিফা অবাক হয়ে যায়।তারপর শপিং থেকে একটা বক্স দেখলো সেটাও গিফ্ট প্যাপারে মোড়ানো।তারপর রিফা গিফ্ট পেপারটাও খুলে দেখলো এবং যা দেখলো তা দেখে অবাক।ভাবছে কে দিলো তাকে এতো দামি একটা ফোন?
এগুলোই ভাবছিলো তখনই আনাফ বলে উঠলো
আনাফ-ফোনটা পছন্দ হয়েছে?
আমাফের কন্ঠ শুনে রিফা বসা থেকে উঠে দাড়ালো,
রিফা-স্যা…স্যার আপনি আর ফোনটা……
আনাফ-হ্যা ফোনটা আমি তোমায় দিয়েছি।
রিফা-সরি স্যার আমি এই ফোন নিতে পারবো না।
আনাফ-কেন নিয়ে পারবে না তুমি?
রিফা-এমনি স্যার আমি পারবো না নিতে।
আনাফ-নিতে আপনার হবেই ইটস মাই অর্ডার মিস রিফা।
রিফা-বাট স্যার আমি নিতে পারবো না।

আনাফ-আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে এখন আপনিই বলুন কোনটা করবেন?
রিফা-নায়ায়া স্যার আমি ফোন নিবো তবুও প্লিজ চাকরি টা নিবেন না প্লিজ।
আমাফ মনে মনে অনেকটা খুশি হলো।
আনাফ-ওকে।
বলেই আনাফ কেবিনে চলে গেলো আর নিজের কেবিনে গিয়ে রিফাকে এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখছে।আর রিফা তো কাজই করছে।
এভাবেই দিন যেতে লাগলো। হঠাৎ একদিন আনাফের কল আসলো লন্ডন থেকে ২ মাসের জন্য।সেখানে নাকি এক ক্যাম্পিং হবে তার জন্য।আনাফ যেতে চাচ্ছে না কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই।তাই নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে এয়ারপোর্টে পৌঁছালো।আর ভাবতে লাগলো যদি একবার হলেও শেষ বারের মতো তার প্রিয়তমাকে দেখতে পেতো।কিন্তু সেই রিফা কেন আসবে তার সাথে দেখা করতে।
আনিফা-ভালো থাকিস ভাই নিজের খেয়াল রাখিস আর হ্যা রিফার কথা তেমন মনে করা লাগবে না।
আনাফ-কিন্তু আপু ওকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে? (অসহায় ভাবে)
আনিফা-আহা এতো বকবক করিস কেন আমি আর রায়হান থাকছি কি করে হ্যা?
আনাফ-তোদের ব্যাপার আমি জানিনা এবং জানতে চাইও না।আমি আমারটা ভেবেই কুল পাইনা।
আনিফা-হয়েছে এখন যা লেট হয়ে যাচ্ছে।
আনাফ-আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।
আনিফা-হুম আল্লাহ হাফেজ।
তারপর চলে গেলো আনাফ।আনিফা কিছুক্ষন সেখানে থেকে বাসায় চলে গেলো।
এভাবেই ২মাস কেটে গেলো, এই দুই মাসে আনাফ তো রিফাকে ছাড়া থুকে থুকে মরেছে। সারাক্ষণ শুধু রিফাকে নিয়ে ভেবেছে। রিফা কি করছে ভালো আছে কিনা এসবই। রিফাকে ছাড়া আনাফের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। আনাফের অনুপস্থিতিতে আনিফাই অফিস সামলাচ্ছে। রিফারও কোনো ইচ্ছা নেই আনাফের খবর নেওয়ার সে শুধু তার কাজ আর ইমনকেই বেশি মূল্য দিচ্ছে।এদিকে নিধিও একদিন হুট করে নাহিদকে প্রপোজ করে বসে কিন্তু নাহিদ ক্লিয়ারলি বলে দেয় যে “আমি আমার লাইফে আমি কোনো মেয়েকে জায়গা দিতে পারবো না।” এটা শুনে নিধি অনেকটাই কষ্ট পায়।তারপর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”জানেন কোথায় যেন শুনেছি সত্যি ভালোবাসার মূল্য নেই কিন্তু বিশ্বাস করতাম না আর এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। এনিওয়ে কারো জীবনে কাটা হয়ে থাকতে চাইনা। ভালো থাকবেন হয়তো আজই আপনার সাথে আমার শেষ দেখা। তবে হ্যা যদি কখনো আমার জন্য আপনার মনে ভালোবাসা জম্মায় তাহলে আমার কাছে আসবেন আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।”
বলেই সেদিনের মতো নিধি নাহিদের থেকে নিজের বাসায় চলে আসে। নাহিদের কেন জানিনা বুকে চিনচিন ব্যথা করছিলো কিন্তু একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজেও বাসায় চলে যায়।এরপর থেকে আর নাহিদের সামনে নিধি একবারের জন্যেও যায়না। নিধি এখন আগের মতো নেই সবসময় চুপচাপ আর একা থাকে। মুক্তার সাথেও তেমন আড্ডা দেয়না। এতে মুক্তাও চিন্তিত। তাই মুক্তা নিজে থেকে কথা বলতে আসলে নিধি শুধু হ্যা না বলে কথা শেষ করে দেয়।
এইদিকে আনিফার বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে যায়। আনাফ আসলেই আনিফার বিয়ে হবে। আনাফ দেশে পৌছতেই আগে রিফার জন্য অফিসে যেতে লাগলো। সে যে তার প্রিয়তমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে। রিফার জন্য সারপ্রাইজ প্লেন করে। সেটাই আনাফ নিজের হাতে রেডি করবে। আজই তাকে প্রপোজ করবে এবং খুব শীঘ্রই বিয়েও করে নিবে।সে যে আর অপেক্ষা করতে পারছে না তার মায়াপরিকে পাবার জন্য। কিন্তু আনাফ তো আর এটা জানে না রিফার মন প্রাণ জুড়ে যে একজনই আছে আর রিফা বিবাহিত।

রিফা কাজ করছিলো এমন সময়ই নিধি আর মুক্তা কেবিনে ঢুকলো একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে। নিধি আর মুক্তা কে দেখে রিফা বলে উঠলো,
রিফা- কি হলো দুইজন একসাথে কি মনে করে?
মুক্তা- ওও কিছু না নে ধর এটা পড়ে নে।(শপিং ব্যাগ টা এগিয়ে)
রিফা- কেনই বা এটা পরতে যাবো আমি?
নিধি- আরে পড় তো আজ আনাফ স্যার আসছেন পার্টি হবে তাই বলেছি পড়ে নে।
রিফা- ওওওওহ তা আমি কেন এটা পড়তে যাবো আমি তো অলরেডি একটা ড্রেস পড়েছিই।
নিধি- ওহ কাম অন এতো বড় পার্টিতে তুমি জাস্ট এই সাধারণ ড্রেস পড়ে যাবা তাও স্যারের পিএএএ? হাউ ফানি।
রিফা- কেন এই জামা পড়লে কি এমন হবে।
নিধি- রিফায়া এখানে অনেক বড় বড় বিজন্যাসমেন রা থাকবে তারা যদি তোমায় এই পোশাকে দেখে তো অনেক হাসাহাসি করবে এতে স্যারের কতোটা মানহানি হবে ভাবতে পারছো??
রিফা ঢোক গিলে বলে,
রিফা- তো এখন আমি কি করবো?(ভয়ার্ত দৃষ্টিতে)
মুক্তা- চুপচাপ রেডি হয়ে আয়।
রিফা- আচ্ছা।
বলেই রিফা ড্রেস টা নিয়ে চলে গেলো। এতে নিধি আর মুক্তা তালি দিয়ে ইয়েএস বলে চিল্লিয়ে উঠলো। এমন সময়ই আনাফের কল আসলো।
আনাফ- কি রাজি করাতে পেরেছো??
নিধি- ইয়েস স্যার একদম নিখুঁত ভাবে।
আনাফ- গুড এখানেও সব রেডি তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো রিফাকে কেমন?
নিধি- ওকে স্যার ঠিক আছে।
আনাফ- হুম রাখছি।

বলেই আনাফ ফোন রেখে দিলো এবং অপেক্ষা করতে লাগলো তার মায়াপরির জন্য। এইদিকে নিধি আর মুক্তা কিছুক্ষণ অপেহ্মা করার পর সামনে তাকিয়ে পুরো অবাক হয়ে গেলো। সামনে রিফা শাড়ি শাড়ি ঠিক করতে করতে আসছে। রিফা একটা বেগুনি জর্জেট শাড়ি পড়েছে,চুলগুলো ছাড়া,কোনো সাজ নেই। এতেই খুব সুন্দর লাগছে রিফাকে। মনে হচ্ছে যেন কোনো বেগুনি পরি আকাশ থেকে নেমে এসেছে। নিধি আর মুক্তা তো হা হয়ে আছে রিফাকে দেখে। ওদের দুজনের হা হওয়া দেখে রিফা বলে উঠলো,
রিফা- কি হলো এভাবে হা হয়ে আছিস কেন তোরা কোনো ভূত দেখেছিস নাকি?
মুক্তা- ভূত নয় কোনো এক আকাশ থেকে পড়া বেগুনি পরিকে দেখছি।(হা হয়ে)
মুক্তার কথায় রিফা হেসে দিলো এবং বললো,
রিফা- তুই না সত্যিই একটা পাগল।
মুক্তা- চুপ তুই এতো সুন্দর কেন রে বলতো?মেয়ে হয়েও তোকে দেখে ক্রাশের উপর ব্রাশ হচ্ছি আর ছেলে হলে নির্ঘাত হার্ট এ্যাটেক করতাম।
রিফা- হয়েছে খুব তো পাম মারতে পারিস দেখছি।
নিধি- পাম নয় সত্যি দোস্ত ওকে যে কি লাগছে না ওপ্স।
রিফা- হয়েছে এখন চল।
নিধি- ওহ হুম চল।
বলেই ৩জন একসাথে হলরুমে নিয়ে গেলো যেখানে পার্টি হচ্ছে।
,
,
,
,
,
চলবে💙