The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 92

দুপুরে সূর্যের আলোর তীব্রতা কাঁটিয়ে বিকেলে যখন সূর্য ডুবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন কলেজ গেট থেকে বে।রিয়ে আসে সামায়রা।নিজেকে কেমন স্বাধীন স্বাধীন লাগছে।অন্তত কিছু বান্ধুবী হয়েছে ওর।মেয়েগুলা ও বেশ।ওকে অনেক হেল্প করছে।কথা গুলো ভাবতে থাকে আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলো সামায়রা।ঠিক তখনই অভ্যাস বশত বেরিয়ে আসে ফাহমিন।তবে সামায়রা সবসময়কার মতো খেয়ালই করেনি।যখন গাড়ি এসে সামায়রার জন্য দাঁড়ায় তখন ইশারাকৃত ফাহমিনকে কে দেখতে পায় ও।লোকটা এভাবে ওর পিছনে লেগে আছে কেন?বোন বানাবে নাকি?ওনার মনে হয় নিজের বোন নেই।আর ওনার চেহারার সাথে ও সামায়রার চেহারার কি কোন মিল আছে যে ওনি ওকে বোন বানাতে চাইছে।নাকি ওর বাবার সম্পদে অধিকার ফলাতে চাইছে।ছি কি ভাবছে ও?লোকটাকে তো মিসকিন মনে হয়না তারওপর ওর বাবার বয়সী ওর দুলাভাইয়ের বন্ধু সে নিশ্চিত কারোর সম্পত্তি মেরে খাবেনা।যাকগে কারো সম্পত্তি মেরে খাক আর নাই বা খাক ওর কি?সামায়রা গাড়িতে ঢুকে বসে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে।এদিকে ফাহমিন আজো পাত্তা না পাওয়ায় ভীষন কষ্টবোধ করে বুকের বাম দিকটায়।
আজ দুপুরে ঘরে ফিরে আসে রামীন।আশফিনা দেখেই বেশ অবাক।ও ছুটে গেলো রামীনের পিছু পিছু ওদের রুমে।রামীন রুমে এসে বলল,
.
.
-”একগ্লাাস পানি খাওয়াবে?”
-”জি আনছি”
.
.
বলে আর অপেক্ষা করেনা রুমে।দৌড়ে গ্লাসে পানি ভরে আসে রুমে।রামীন পানি খেয়ে বলল,
.
.
-”দারুন ভয় পেয়েছি।”
-”দারুন ভয় পায় কিভাবে?”
-”কেউ না পেলে ও আমি পাই।”
-”আচ্ছা বলুন কিসে ভয় পেয়েছেন?”
-”শালার কুকুর কিং দৌড়ে যেভাবে এসেছিলো।আমি তো দৌড়ে বাঁচি।”
-”কি?”অবাক হয়ে।
-”কি আবার কি?কুকুরটা যেভাবে তেড়ে।এলো শালা বাঁদর।বাপরে বাপ।কামড়ে দিলে কি হতো।”
.
.
রামীন ভাবলো বৌ টা হয়ত ঘাম মুছে দিয়ে সান্তনা দিবে কিন্তু কই কার সান্তনা রামীন অনুভব করলো আশফিনা হাসছে শব্দ করে।গড়িয়ে যাচ্ছে হাসতে হাসতে।রামীন অবাক হাসছে কেন মেয়েটা?ও ভয় পেয়েছে সেটার কোন খবর নেই হেসেই চলেছে ম্যাডাম।
রামীন ধমক দিলো,
.
.
-”হাসছো কেন?”
-”তো কি করবো বলুন।আপনার কাছে এটা আশা করিনি।”
-”মানে?”
-”যে মানুষটা সারাক্ষন খুন করতে থাকে সে কুকুর কে ভয় পায়?সিরিয়াসলি রামীন আপনি এতো কাউয়ার্ড আমি জানতাম না।রোয়েন ভাই কি জানে তার সাহসী বন্ধু প্রিয় কুকুরটি কে ভয় পায়?”
-”চুপ একদম চুপ।কোন কথা বলবানা।তোমাকে না বলে বাসার কলসটা কে বললে ও দুঃখ লাঘব হতো।আশফিনা হাসতে হাসতেই শেষ।রামীন খেয়াল করলো ওর বৌয়ের হাসিটা ঝুব সুন্দর।একেবারেই মন ভুলানো।হাসিটা কে ভালবেসে ফেলেছে ও খুব ভালবাসে হাসিটাকে।আশফিনা হেসে হেসে বলল,
.
.
-”সুরা ইখলাস তিনবার পড়ে বুকে থুতু দিন।”
-”আচ্ছা।”
.
.
গলা ছেড়ে সুরা পড়ে বুকে একদলা থুতু ছিটায় রামীন।আশফিনা কান ধরে বলল,
.
.
-”এতো জোরে কেউ পড়ে?আর এতগুলো থুতু দিলেন কেন?”
-”তো কি করবো?”
-”কি করবেন মানে?আস্তে করে পড়ে অল্প থুতু দিবেন।কিন্তু আপনি তো জোরে পড়েন সমস্যা নেই তাই বলেকি খাচ্চরের মতো নিজের গায়ে এতগুলো থুতু দিবেন?”
-”আচ্ছা বাবা আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
.
উঠে দাঁড়িয়ে আলমারির দিকে এগুতে থাকে রামীন।পিছন থেকে আশফিনা বলল,
.
.
-”এসে চা খাবেন না কফি?”
-”যেটা তুমি দিবে সেটাই।ভালবাসা পূর্ন থাকা চাই কিন্তু। ”
.
.
আশফিনা হেসে নিচে চলে গেলো।রুহী সে রাতটায় একটু ও ঘুমুতে পারেনি।রোয়েন এসে অপর পাশ ফিরে শুয়ে ছিলো।রুহীর ঘুম আসছেনা।লোকটার বুক ছাড়া তো ঘুম হয়না ওর।পাশে লোকটাকে দেখতে পায়।ওরদিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে।রুহীর চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।ডুকরে কেঁদে উঠে ও।ঘড়িতে দুটো বেজে চল্লিশ মিনিট।ঘুম যেন হারিয়ে গেছে রোয়েনের চোখ থেকে।এদিকে মেয়েটা কাঁদছে শুনতে পাচ্ছে রোয়েন।ওর নিজের চোখে ও ঘুম নেই।রুহীর কান্না সহ্য হচ্ছে না রোয়েনের।তাই পাশ ফিরে বুকে টেনে নেয় রুহীকে।দুজনের মুখে কোন কথা নেই।রুহী মাথা উঠিয়ে রোয়েনকে দেখে না।ঘুমিয়ে পড়ে সেভাবেই ওরা।
সকালে রোয়েন কোন কথা বার্তা না বলে চলে যায়।রুহী আর নিতে পারেনা। কেন হচ্ছে এসব?কি দোষ ছিলো ওর।নিজের মায়ের জায়গায় আরেকজনকে কিভাবে সহ্য করবে ও?
কিভাবে পারবে তাকে দেখতে নিজের বাবার স্ত্রী হিসেবে যেখানে শুধু ওর মায়েরই জায়গা।দুদিন পার হয়ে গেলো এই দূরুত্বের।রোয়েন সেদিন আনিলাকে কল দেয়।আনিলা ফোন রিসিভ করে জিজ্ঞেস করে,
.
.
-”রুহী কেমন আছে?”
-”ভালো। আপনি কই চলে গেলেন?”
-”বাবার বাসায় আছি।বাবা অসুস্থ তো।”
-”রুহীর কারনে আপনি ঐ বাসায়।”
-”না স্যার।ওর দোষ নেই।এটা স্বাভাবিক।আমি ও হয়ত এমনটাই করতাম।”
-”আপনি ফিরে আসুন।বাবা ভালো নেই।”
-”অল্প কিছুদিনইতো থাকবো স্যার।আপনি বুঝি রুহীকে খুব বকেছেন?”
-”বকবো না তো কি করবো?অন্তত একজন বড় মানুষ হিসেবে আপনাকে সম্মান দিতে পারতো।”
-”স্যার কাজটা ঠিক করেননি।খুব সরল মেয়ে আমার মেয়েটা।সৎ মা কখনো আপন মায়ের মতো হয়না।নিজের মায়ের জায়গায় অন্য কাউকে দেখা তাকে মেনে নেয়া খুব কঠিন একটা মেয়ের জন্য। আর রুহী এখন খুব নাজুক হয়ে গেছে।ওর ভালবাসা আর যত্নের দরকার সেটা আপনি দিতে পারবেন আর কেউনা।আপনি ছাড়া ওকে কে ভাল বুঝবে বলুন?আপনি নিজে ও তো ভালো নেই।ওর সাথে কথা বলুন।সময় দিন বুঝবে ও।”
-”জি।আচ্ছা রাখছি।”
.
.
কল কেঁটে দেয় রোয়েন।আনিলা মা ঠিক বলেছেন।খুব বেশি শুনিয়ে দিয়েছে ও।ও রুহীকে সময় দিবে।অবশ্যই নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে রুহী।বুঝতে হবে ওকে।নিজের বাবার জন্য বুঝতে হবে।এদিকে রুহী যতোবার কথা বলেছে ওর বাবার সাথে তার মুখে আনিলার নামটা শুনতে পায়নি রুহী।সেটা ভালো লাগলে ও বাবাকে ভিতর থেকে সুখী মনে হয়নি।সন্ধ্যায় পাকঘরে লিছু কাজ করছিলো রুহী।তখনই কলিংবেল বেজে উঠে।গায়ে স্কার্ফ জড়িয়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসে ও।দরজা খুলে দেখলো রোয়েন দাঁড়িয়ে হাতে অনেক বড় একটা টেডি বিয়ার আর বড় একটা ব্যাগ।রুহী কিছু বলছেনা।রোয়েন পুতুল টা রুহীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
.
.
-”আ’ম সরি।বলবো না যে আর হবেনা।বলবো নিজেকে এর পর থেকে নিয়ন্ত্রনো রাখবো।তোমাকে কাঁদতে দিবোনা।”
.
.
রুহী কিছু বলতে পারেনা।ওর চোখের পানিই সব বলে দিলো।রুহী দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে রোয়েনকে।রোয়েন ও জড়িয়ে ধরে বৌকে।অনেকক্ষন পর সরে আসে ওরা।রুহী পুতুলটা নিয়ে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেসে দেয় রোয়েনের দিকে তাকিয়ে।রুহীকে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে রোয়েন।তারপর ওর সামনে খাটে অনেকগুলো চকলেট রাখলো।রুহীকে আর পায় কে?খুশিতে হেসে বলল,
.
.
-”আমার জন্য?”
-”হুম।”
-”থ্যাংকস রোয়েন।আমার খুব পছন্দের ডেইরিমিল্ক আর হারশিজ এর চকলেট।”
.
.
রোয়েন মৃদু হাসে রুহীর কথায়।রুহী অনূভব করতে পারলো ওকে ভালবাসে রোয়েন তবে আগের মতো না।কেমন দূরুত্ব আছে।যত্নে কমতি নেই তবু ও মনের দূরুত্বটা ওকে ক্ষনে ক্ষনে মারছে।রোয়েন আগের মতো ওকে ভালবেসে কাছে টেনে নেয় না।কেমন যেন সরে সরে থাকে।রুহীর কপালের যখন চুমু খায় তখন আর আগের মতো ফিল পায়না রুহী।আনিলা চলে গেছে সপ্তাহখানিক পেরিয়ে গেলো।
রোয়েন অফিসে চলে গেছে।রুহী রেজোয়ান মাহবুবের ঘরে আসে।কেউ নেই তাই এসেছে।কেমন যেন একটা নীরবতা একাকিত্বতা গ্রাস করে আছে ঘরটায়।রুহী হেঁটে হেঁটে রুম গুলো দেখছে।ওর রুমটা দেখে বেশ ভালো লাগে।খুব সুন্দর করে গুছানো।নতুন পর্দা লাগানো।রুহী হেসে রুমে ঢুকে।
কারোর অনুপস্থিতি ওকে যেন কষ্ট দিচ্ছে।এখন আনিলা ঘরে থাকলে ঘর মাথায় তুলে ফেলতো।রুহী এসেছে কি রান্না করবে কি খাওয়াবে তা নিয়ে অস্থির হয়ে যেতো।সেদিন যখন এসেছিলো কলেজ থেকে এ বাসায় তৎখনাৎ আনিলা বিরিয়ানী,চিকেন কারি,সবজি রান্না করে নিলো। রুহীকে অনেকবার বলেছিলো খেতে কিন্তু খেতে চায়নি ও।চলে গিয়েছিলো।এখন এভাবে অস্থির হওয়ার মতো কেউ নেই।ও আসলে কেউ ওর প্রিয় রান্না গুলো করবেনা।রুহীর খারাপ লাগতে থাকে।রুম থেকে বেরিয়ে আসে রুহী।রেজোয়ান মাহবুবের ঘরে গিয়ে দেখলো শূন্য অগোছালো রুম।কেন যেন কান্না আসে রুহীর।বাবা কি খুব কষ্টে আছে?ও কি খুব বড় অন্যায় করেছে বাবার সাথে?পাকঘরে আসে রুহী।রান্না করা কিছু নেই।বাবা সন্ধ্যায় আসলে কি খাবে?রুহীর খুব খারাপ লাগছে আনিলার জন্য।ও ভাবতে থাকে আনিলা কি করেছিলো ওর জন্য।গভীর রাতে ফুচকা বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো,যখন তখন রান্না করে পাঠিয়ে দিতো।সেগুলো কি আসলেই ভালোবাসা ছিলো?রুহী রান্না করে দেয় বাবার জন্য।বিকেল হয়ে গেছে।বাবার রুম সহ বাকি রুম গুলো গুছিয়ে বেরিয়ে আসে রুহী।কিছুক্ষনের মাঝেই লোকটা ঘরে ফিরবে।ওকে ঘরে না দেখলে রেগে যাবে।
চলবে