The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 90
পরপর দুটো রাত তীব্র যন্ত্রনায় কেঁটে গেল রামীনের।বুকটা একদম অস্থির হয়ে আছে।না পারছে ঘুমুতে না পারছে মনকে শান্তি দিতে।রাত পৌনে তিনটা।ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে ও।খোলা আকাশের নিচে হাঁটবে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে এসেছে।রোয়েনের ঘরের কিছুটা সামনে।আশফিনার ঘর দেখা যাচ্ছে।রামীন চোখ সরিয়ে নিচে তাকিয়ে সামনে এগুতে শুরু করে।হঠাৎ ওর চোখ আটকে যায় কাঁচের চুড়ির হালকা আওয়াজে।চোখ তুলে তাকিয়ে বিস্ময়ের রেশ যেন কাঁটছেইনা।ঠিক ওর দিকে মুখ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আশফিনা ওর আশু।রামীন আশফিনাকে দেখছে আর আশফিনা আকাশকে।পূর্নিমার রাত।আশফিনার জ্বলজ্বলে চোখ জোড়া কোনভাবেই রামীন থেকে আড়ালো হলোনা।ওর কেঁপে কেঁপে উঠা রামীন কে অস্থির করে তুলছে।আশফিনাকে আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে ঘরে যাবার জন্য সামনে তাকিয়ে অবাক।তারপর দ্রুত পদে ঘরে যেতে নিলেই রামীন ওকে পিছন থেকে জাপটে ধরে বুকে টেনে নেয়।আশফিনা সরে যাচ্ছেনা।হয়ত এটাই চাইছিলো ও।কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে।ওকে ঘরে ফিরতে হবে।আশফিনা কওছু বলতে গেলে রামীন বলল,
.
.
-”তুমি ঘরে চলে এসো প্লিজ।”
-”আমাকে তো দেখতে চাননা আপনি।তাই তো বের করে দিয়েছেন।”
.
.
মাথা তুলে তাকায় রামীন।তারপর বলল,
.
.
-”তুমি জানো কতোটা অপেক্ষা করেছিলাম তোমার।কবে আমাকে আমার মতো করে ভালবাসবে তুমি।নিজের ভুল ধারনা থেকে সরে আসবে।”
-”মানলাম।কিন্তু সেদিন নাচে আপনি আমাকে কথাটা বলার সুযোগ দেননাই।”
-”প্রচুর রাগ উঠেছিলো আমার।খুব শখ করে শাড়ীটা এনেছিলাম তোমার জন্য।কিন্তু অন্য শাড়ী পরে এসেছিলে।”
-”সেটার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।আপনাকে না জেনে কষ্ট দিয়েছি।কিন্তু আমি ও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যখন আমার কথা না শুনে নাচে বলেছিলেন আমি যেন মায়ের কাছে চলে আসি।সেদিন ঘরেই এলেননা।ঘরে ফিরেই কাপড় গুছালেন।কিছু জানতে ও চাইলেননা।বুঝতে ও চাইলেননা কিভাবে কাঁটিয়েছি সে রাতটা।দুটো দিন পেরিয়ে গেলো কিন্তু খবর নেন নাই আপনি।”
-”খবর নিয়েছি কি নেই নি সেটা কেমনে বুঝলে?এতো পাষান নই আমি।”
-”আমাকে ঘরে ফিরতে হবে রামীন।ভোর হতে যাচ্ছে।”
.
.
আশফিনা ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে রামীন ওর হাত চেঁপে ধরে বলল,
.
.
-”বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে থাকাটাই শ্রেয় তাই নয় কি?”
-”যেখানে স্বামী তাড়িয়ে দিয়েছে।স্ত্রীর মন বুঝেনি সেখানে কি যাবো।ছেড়ে দিন।”
-”সেই স্বামীই বলছে তার সাথে এখন ঘরে ফিরবে তুমি।আর সরি ও বলছে সে।”
.
.
আশফিনা অশ্রুসজল চোখে রামীনের দিকে তাকায়।তারপর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে বলল,
.
.
-”ঘরে যাবো।”
-”আমার ঘরে।এক্ষুনি যাবে তুমি।”
-”না প্লিজ।আমাকে সময় দিন।”
-”দেখো কথা বললে কথা বাড়বে।তুমি এখন যাবে আমার সাথে এটাই ফাইনাল।”
-”মা আছে ঘরে।”
-”ওনাকে জানিয়ে দিবো।ওনার চিন্তা আমার।এখন চলো।”
-”না।অনেক রাত হয়েছে ঘরে যান আপনি।”
-”তুমি যদি না আসো।আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো।সাথে তুমি ও দাঁড়িয়ে থাকবে।সকালে যখন সবাই আমাদের দেখবে।তখন বলবে ঘর বাড়ি ছেড়ে ভালবাসতে আকাশের নিচে এসেছি আরো কতো কি?তখন লজ্জা তুমি পাবে আমি না।যখন সবাই জিজ্ঞেস করবে এখানে কি করছিলাম আমরা?তখন আমি বলবো বৌকে ঘরে আদর করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বৌ আবদার করলো আকাশের নিচে চাঁদের আলোয় আদর নিবে।এখন বৌয়ের কথা কি না মানতে পারি।তাই চলে এলাম আকাশের নিচে।এখন বলো লজ্জা কে পাবে তুমি না আমি?”
-”আমি।অন্যমনষ্ক ভাবে।”
-”তাহলে চলো এক্ষুনি।”
.
.
আর অপেক্ষা না করে আশফিনাকে কোলে তুলে নেয় রামীন।এদিকে রুহী কি নিয়ে যেন ভাবছে খেয়াল করে রোয়েন।দুপুর থেকে ভাবছিলো জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি।রাতে ও একই অবস্থা দেখে রুহী কে জিজ্ঞেস করলো,
.
.
-”কি হয়েছে বলবে?”
-”কেন কি হবে?”
-”কাল থেকে আজ সারাদিন কি যেন ভাবছো।কি ভাবছো অতো?”
.
.
রুহীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে এলো।আমতা আমতা করতে করতে বলল,
.
.
-”একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
-”কি?”
-”পরশুদিন তোমার বুক শেলফের বই গুলো গুছাচ্ছিলাম।সেখানে লাল ডায়েরী পেলাম।পুরো ডায়েরী ভর্তি কি যেন লেখা।মাঝে একটা পেজ দেখে অবাক লাগলো।সেখানে লেখা ছিলো ব্র্যাডলি ফ্লোরা।এটা একটা মহিলার নাম।কিন্তু তুমি এই নাম দিয়ে কি…….?”
.
.
রুহীকে পুরো কথা বলতে দেয়না রোয়েন।ওর ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
.
.
-”তোমার ঘুমানো উচিৎ।ওনি কেও নন।তোমার ওসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।ঘুমাও।”
-”সত্যিই কেউ নন ওনি?”
-”নো।”
-”ওনি তো খুুব ফেমাস ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন।”
-”রুহী ইটস টু মাচ।তোমাকে ঘুমোতে বলছি আর কিসব নিয়ে বসে পড়লে বলতো?”
.
.
হঠাৎ ভীষন রেগে চিৎকার করলো রোয়েন।রুহী কেঁপে উঠে।এভাবে কেন বলল রোয়েন?রুহী তো খারাপ কিছুই বলেনি।তাহলে এমন করলো কেন সে?রুহীর কান্না চলে এলে ও নিজেকে সামলে নিয়ে অলরপাশ ফিরে শোয়।রোয়েন ওকে পিছন থেকে বুকে জড়িয়ে নেয়।কিন্তু রুহীর হাত রোয়েনের হাত স্পর্শ করেনি।পরদিন সকাল রুহী খুব জলদি উঠে গেলো।রোয়েনের নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রেখে দেয়।রোয়েন খেয়াল করছে রুহী কথা বলছেনা।রোয়েনের সহ্য হচ্ছেনা।এভাবে রেগে যাওয়া উচিৎ হয়নি।খুব বেশি সেনসিটিভ হয়ে গেছে রুহী।ওর নিজের রাগ কন্ট্রোল করা উচিৎ ছিলো।কিন্তু উল্টো ধমক দিলো রুহীকে।কাজ টা ঠিক হয়নি।রুহী রোয়েনের কফি নিয়ে আসলে রোয়েন ওকে কাছে টেনে বলল,
.
.
-”সরি রুহী।ওভাবে রিয়্যাক্ট করতে চাইনি।জানোই তো কতো তা টেনশনে থাকতে হয় আমার। তারওপর তুমি ঘুমোচ্ছিলেনা।এসময়ে তোমার পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম দরকার।নাহলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে আর রামীলা কে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারিনা।তাই যতোটাসময় আমি তোমার কাছে থাকি তোমাকে হাসি খুশি সুস্থ দেখতে চাই।”
-”সরি রোয়েন।একটু আকর্ষন ছিলো ম্যাডাম ফ্লোরার প্রতি।তাই তোমাকে বিরক্ত করছিলাম।”
-”ইটস ওকে।কই আমার কফি?”
.
.
রুহী হেসে কফির মগ রোয়েনের হাতে তুলে দিয়ে বলল,
.
.
-”শেভ করোনি?
-”না।করবো না।”
-”কেন?”
-”তোমাকে দাঁড়ি খাওয়াবো।”
-”ধুর কি যে বলো।যাও করে নাও শেভ।”
-”তুমিই তো বললে দাঁড়ি খাবে।”
-”এখন আমিই বলছি শেভ করে নাও যাও।”
.
.
রোয়েন হেসে রুহীর সাথে কফি শেষ করে শেভ করে অফিসে চলে যায়।রুহী গুগলে ব্র্যাডলি ফ্লোরাকে সার্চ করে।ব্র্যাডলি ফ্লোরার বাঙ্গালী একজনের সাথে বিয়ে হয়েছিলো।এবং তুমি মুসলিম ধর্ম ও গ্রহন করেন।কিন্তু তার মুসলিম নাম টা প্রকাশ হয়নি।তিনি নিজের বাঙ্গালী স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যান বিয়ের সাত বছর লর যখন তাদের একমাত্র সন্তানের বয়স ছয়মাস ছিলো।এবং তাকে নাকি তার আগের স্বামীই মেরেছিলো বলে জানা যায়।রুহী কিছুটা চিন্তিত হয়।কেন ও ভাবছে এগুলো?কেন বিষয় টা ওকে আকর্ষন করছে এতো?এখানে সব তথ্য নেই।ধোঁয়াশা অনেক কিছুই।রামীন আর আশফিনা দীর্ঘ ভালবাসাময় একটা রাত পার করে দিলো।নিজেরা নিজেদের মাঝেই ডুবেছিলো বাকিটা রাত।রামীনের প্রত্যেকটা স্পর্শ আশফিনা কে সুখের সাগরে ডুবিয়ে নিয়েছিলো।তাদের শরীর না মন আর আত্মার পবিত্র মিলন হয়েছে রাতে।আজ ওরা এক।কোন দূরত্ব নেই।আশফিনার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় রামীন।আশফিনা হেসে খাট ছেড়ে উঠে বসে।রামীন বলল,
.
.
-”মাকে বলেছি তোমাকে নিয়ে এসেছি।ওনি তোমার কাপড় পাঠিয়ে দেবেন।”
-”থ্যাংকস।বড় চিন্তা মুক্ত করলেন?আমার তো ভয়ই লাগছিলো।”
-”ইটস ওকে ডার্লিং।জানো মা খুব অবাক হয়েছিলেন।কিভাবে তার ঝগড়ুটে মেয়ে কে পেলাম আমি?
-”আপনি কি বললেন?কিছু টা ভয় পেয়ে?
-”বললাম আপনার মেয়ে আমাকে কল করেছিলো রাত তিনটায় আপনাদের বাসার সামনে গিয়ে আপনার মেয়েকে যেন আদর করে আসি।কিন্তু আমি তো ভদ্র ছেলে তাই ঘরেই নিয়ে এলাম আদর করতে।মজা না?
-”ধুর!!!রামীনের দিকে বালিশ ছুড়ে দিলো আশফিনা।”
.
.
রামীন হাসতে হাসতে সরে যায়।আশফিনা কিছু বলে না।হাসতে থাকে।রামীন বলল,
.
.
-”আমি কাজে যাচ্ছি। উঠে ফ্রেশ হও।ভাবি অফিসে যাবে।তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন নাস্তার টেবিলে।”
-”ইসস এতো দেরি হয়ে যাবে উঠতে বুঝতে পারিনি।”
.
.
ছটফট করতে লাগলো আশফিনা।রামীন ওকে বলল,
.
.
-”চিন্তা করোনা।ভাবি জানে তোমার শরীর ভালো নেই।”
-”মিথ্যে বললেন?”
-”কতোই বলি?”
-”আর কি কি বলেছেন?”
-”আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা,তোমার কেয়ার করি।”
.
.
আশফিনার হাসি পেয়ে যায়।লোকটা কি যে আসলে।ওনি তো ভালোবাসেনই।দুষ্টুমি করেন শুধু।ওকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন এখনো।আশফিনা বলল,
.
.
-”বুঝলাম মিথ্যা বলতে পারেন অনেক। এখন কাজে যান তাড়াতাড়ি। ”
.
.
আশফিনার হাত ধরে ওকে থামিয়ে রামীন বলল,
.
.
-”মিথ্যামিথ্যি একটু আদর করে দাও।”
.
.
আশফিনা দূর থেকে চুমুর শব্দ করে বলল,
.
.
-”এই যে দিলাম।এখন বের হন।”
-”ওকে।সি ইউ।”
-”সি ইউ টু।আই লাভ ইউ।”
-”হুম আই লাভ ইউ টু।”
.
.
রামীন বেরিয়ে যায়।এদিকে ফাহমিন সবসময় সামায়রার কলেজের দিকে তাকিয়ে থাকে ওকে দেখতে পায় কিন্তু সামায়রা ওকে দেখলেই পালায়।ওর বড় অশান্তি লাগতে থাকে এসব?আর কতোদিন সহ্য করতে হবে কে জানে?রুহী খেয়াল করে রোয়েন ঘরে দেরিতে ফিরে।আর ঘরে থাকলে ও রুমে সময় কম কাঁটায়।ওকে নানান কাজে ব্যাস্ত রাখে যা আগে করেনি। রুহীর চিন্তা হয় কি করছে রোয়েন?আগে তো কখনো করেনি এমনটা?কি লুকোচ্ছে সে?দুদিন পার হয়ে গেলো আরো।রাতে ঘরে ফিরে রোয়েন রুহীকে বলল,
.
.
-”চলো আমার সাথে?”
-”কই যাবো?”
-”আসতে বলেছি আসো।”
.
.
রুহী চুপচাপ রোয়েনের সাথে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।ওদের দোতালার ডান সাইডের রুমটার সামনে রুহীকে এনে ওর চোখ আটকে দেয় রোয়েন।রুহী বলল,
.
.
-”কি করছেন?”
-”শশশ সারপ্রাইজ!!!! ”
চলবে