The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 89
→চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছে আশফিনা।ও ভাবতে ও পারছেনা এভাবে নিজের দোষে নিজেকে শেষ করে দেবে ও।লোকটা ওকে ছেড়ে দেবে সত্যি সত্যি?নাকি এটা স্বপ্ন।লোকটাতো ওর কাপড় বোঝাই করে ফেলেছে লাগেজে।আশফিনা কিছু বলতে পারলোনা।গলা আটকে আসছে।চোখজোড়া দিয়ে অশ্রু অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। চোখের সামনে মুহূর্তেই রামীন ওর ব্যাগ গুছিয়ে আশফিনার সামনে রেখে শুধু এটুকুই বলল,
.
.
-”সামনে এসোনা কখনো।কারন আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবোনা।কারন ভালবাসি। হয়ত আর কখনো মনের মতো করে তোমাকে ভালবাসতে পারবোনা।আমাকে বুঝোনি তুমি।নিজেকে সরিয়ে রেখেছো আমার থেকে।বুঝতে পারোনি এই রামীন তোমাকে যেকোন অবস্থাতেই ভালবাসবে।যাইহোক ওসব কথা বলে লাভ নেই।তুমি চলে যাও।তালাকের নোটিশ পেয়ে যাবে।গাড়ি নিচে রেডি আছে।”
.
.
আশফিনা কিছু বলতে পারেনা।ওর গলা আটকে আসছে।দম বন্ধ হয়ে আসছে।চোখ জোড়া ভারি হয়ে গেছে।লোকটার কি সত্যি ওকে আটকাবেনা?ওকে কি ছেড়ে দিচ্ছে?কি করে লোকটাকে ছেড়ে থাকবে ও?ও তো ভুল করেছিলো।এর মাশুল কি এভাবেই দিতে হবে ওকে?জীবন বিয়ে মৃত্যু তো জীবনে একবারই আসে।তাহলে কি ও শেষ হয়ে গেলো?ওর বাঁচার কোন উদ্দেশ্য নেই তাহলে।রামীন আশফিনাকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলে দেয়।আশফিনা রামীনের দিক অশ্রুজড়িত চাহনিতে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে আসে।কেউ জাগেনি এখনো।ভাবি হয়ত জেগে গেলে ওকে থামাতো রামীন কে বুঝাতো।কিন্তু যে থামানোর সেই তো দরজা লাগিয়ে দিলো শব্দ করে।গুমরে কেঁদে উঠে আশফিনা।রুহীর চোখ লেগে আসছে।বুকটা কেমন ভার ভার লাগছে।কেমন অদ্ভুত ফিল হচ্ছে।উঠে বসতেই মাথা ঘুরিয়ে এলো।উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে শুরু করলো।পেটে যা খাবার ছিলো সব বেরিয়ে এলো।রুহী অনূভব করছে ওর গা কাঁপছে।দেয়াল ধরে ফেলল ও তারপর খুব ধীরে পা টিপে টিপে ভিতরে এসে খাটে ধুপ করে বসে পড়লো।তখনই রুমে ঢুকলো রোয়েন।হাতে একটা বাটি আর রুমাল।রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
.
.
-”কেমন লাগছে?”
-”মাথা ঘুরাচ্ছে।কি হয়েছে আমার?”
-”জ্বর এসেছে রাতে।তুমি কোঁকাচ্ছিলে তাই ডাকিনি তোমাকে।ডাক্তার আসবে কিছুক্ষনের মাঝে।”
-”জ্বর হলে ডাক্তার কি করবে?”
-”দেখো তোমাদের বেলায় কোন রিস্ক নিতে পারবো না।আমার সোনা বাচ্চারা সুস্থ সবল ভাবে যেন পৃথিবীর আলো দেখতে পায়।সে জন্য আমার যা করার আমি করবো।”
.
.
বলেই খাটের ওপর এসে বসে রোয়েন।রুহীর কি যে ভালো লাগে যখন রোয়েন বাবুদের জন্য এতোটা চিন্তা করে।রুহী এসে রোয়েনকে জড়িয়ে বলল,
.
.
-”বাবুরা কতো টা সৌভাগ্যবান যে তোমাকে বাবা হিসেবে পাচ্ছে।জানো মাঝে মাঝে নিজের ওপর হিংসে হয় আমার।মনে হয় তোমাকে নিজের থেকে ছিনিয়ে নেই।”
-”রুহী পাগল হয়ে গেলে?জানো কি বলছো এসব?এতো টা ভালবেসোনা।হারিয়ে গেলে সইতে পারবেনা।”
.
.
সরে আসে রুহী।রোয়েনের শার্ট খামঁচে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো,
.
.
-”কই হারাবে তুমি?কিভাবে বলতে পারলে?তুমি কি জানো না এ কথা গুলো আমাকে কতোটা কষ্ট দেয়?।”
-”এটা বাস্তব।মেনে নিতে হবে।”
.
.
রেগে গেলো রুহী।চেঁচিয়ে বলল,
.
.
-”এতো বাস্তব টাস্তব বুঝিনা।আমরা একসাথে থাকবো সবসময় এটাই সত্যি।”
.
.
কথা গুলো বলতে গিয়ে রুহী আবার ও কেঁদে ফেলল।রোয়েন খেয়াল করলো রুহীর পুরো শরীর কাঁপছে।চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে।
রুহীকে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে দেয় রোয়েন।তারপর বলল,
.
.
-”একসাথে থাকবো সবসময়।তুমি শুয়ে থাকো।ঠান্ডা পানির পট্টি দিচ্ছি ভালো লাগবে।”
.
.
রুহী রোয়েনের একটা হাত নিজের পেটের ওপর রাখলো।রোয়েন হেসে রুহীর কপালে পানিতে ভেজানো রুমাল রাখে।সারা শরীর বেয়ে শান্তির ছোঁয়া লাগে রুহীর।সাত সকালে মেয়েকে দেখে চমকে যান ওর মা।বলে উঠেন,
.
.
-”এসময়ে তুই?”
-”ঘুরতে আসলাম।”
-”ওহ জামাই কই?”
-”ঘরে মা।”
.
.
আশফিনার লাগেজ দেখে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায় মা।ওনি বললেন,
.
.
-”সব ঠিক আছে তো মা?এভাবে এসময়ে?জামাই জানে তুই এখানে?”
-”তোমার কি ভালো লাগছেনা আমি এখানে?সব কথায় জামাইকে কেন আনতে হবে মা?আমি কি আসতে পারিনা?নাকি অধিকার নেই?”
.
.
মেয়েকে হঠাৎ রেগে যেতে দেখে মা অবাক হয়ে বললেন,
.
.
-”সেটা ঠিক আছে।বাট রেগে যাওয়ার মতো কিছু বলিনি।”
-”মা আমার টায়ার্ড লাগছে।আই ওয়ান্ট টু স্লিপ।”
.
.
সামনে অনেকটা দূর হেঁটে থেমে গেলো আশফিনা।ও এখন সব না সামলালে মা ওনাকে কল দিবে।ওনি যদি সব বলে দেয় তাহলে খুব বড় সমস্যা হবে।ওকে ঠিক করতে হবে।আশফিনা মায়ের কাছে এসে বলল,
.
.
-”ওনি জানি আমি আসবো।ইনফ্যাক্ট ভাইয়া ভাবি ও জানে।আমার মাথা পেইন করছে। এক কাপ কড়া চা দিও মা।”
-”আচ্ছা ঠিক আছে।যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।চা করে দিচ্ছি।”
.
.
আশফিনা রুমে এসে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে শুরু করে।মিথ্যে বলল মাকে।কয়দিন পর মা তো এমনিই জানবে।কতোটা কষ্ট মা পাবে সেটা চিন্তা ও করা যায়না।আশফিনা মুখ চেঁপে কাঁদতে থাকে।রুহীর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে সরে আসে রোয়েন।রুহীর ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি।রোয়েন রুহীর চুলে হাত বুলাচ্ছে।কিছুক্ষন পর ডাক্তার চলে এলো।রুহীকে চেক আপ করে জানালো কোন ভয়ের কিছু নেই।ঋতু পরিবর্তনের কারনে হচ্ছে।তবে ঠান্ডা পানি কিংবা যেকোন ঠান্ডা খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।রোয়েন সব কিছু শুনে নেয়। ডাক্তার চলে গেলে রুহীর জন্য স্যুপ বানিয়ে আনে আর সাথে এক গ্লাস দুধ।স্যুপ খেলে ও দুধ খেতে যেয়েই খুব খারাপ লাগতে শুরু করে রুহীর।মুখের ভিতরটা তেতো হয়ে আছে।তবে রোয়েনের ধমক খেয়ে দুধটুকু খেয়ে নেয় রুহী।রুহীর মাথা রোায়েন নিজের কোলে রাখে।রুহীর চুল হাতিয়ে দিতে থাকে।রুহী হঠাৎ বলল,
.
.
-”একটু আদর করে দিন তো।”
.
.
রোয়েন হেসে রুহীর কপালে গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে নিজেকে বিলীন করে করে দেয় অনেকটা সময়ের জন্য।”
.
.
সবসময়কার মতো রুহী আজ ও অন্য এক দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলো মুহূর্তের জন্য।রোয়েনের ছোঁয়া গুলো ওকে সুখের চরম মুহূর্তে নিয়ে যায় যেখান থেকে ফিরে আসতে ইচ্ছে হয়না।এদিকে ফাহমিনের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।সামায়রা ওকে দেখেই পালিয়ে বেড়ায়।ফাহমিন জানে পর ক্লাশ শুরু ও শেষের সময়টা।তাই ব্যাস্ততার মাঝে বাহিরে এসে দাঁড়ায় মেয়েটাকে দেখার জন্য।এইতো সেদিন নিচে নেমে ছিলো ফাহমিন।সামায়রা ও নেমেছে টিফিন টাইমে।ফুচকা খাচ্ছে বান্ধুবীদের সাথে।ফাহমিন ডাকতেই সামায়রা ওকে দেখে কলেজের ভিতরে ঢুকে গেলো।ফাহমিন কি বলবে বুঝে পেলোনা।
ওর বান্ধুবী গুলো ফাহমিন কে দেখে কি যেন বলে হাসছিলো।ফাহমিন হাসপাতালের ভিতর ঢুকে গেলো।এদিকে মেয়ের মনের অবস্থা দেখে সন্দেহ হয় আশফিনার মায়ের।মায়ের মন তো সব হয়ত আগের থেকেই আঁচ করতে পারে।তাই মেয়ের পাশে এসে বসেন ওনি।তারপর বলতে লাগলেন,
.
.
-”সব ঠিক আছে আশফিনা?”
-”জি মা।কেন?”
-”বুঝিসই তো তোর মা আমি।ভয় হয় তোকে নিয়ে।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
-”নামা তোমাকে অনেকদিন দেখিনা তো তাই এসেছি।”
-”তুই খুশি তো রামীনের সাথে?”
-”জি মা খুব ভালো ওনি।অনেক খেয়াল রাখেন আমার।”
-”আলহামদুলিল্লাহ ”
.
.
কিন্তু আসলেই কি সব ঠিক আছে।একদমই না বরং দুজনে তো দূরে থেকে ও একে অপরের মাঝে জড়িয়ে আছে।রামীন শুয়ে আছে।রাত দুটো।বুকটা খুব ছটফট করছে।খাট থেকে নেমে বুক শেলফে বই খুঁজতে থাকে।এবং পেয়ে ও যায় প্রিয় একটি বই।বই টা নিয়ে খাটে এসে বসে তারপর ছোট্ট বাতিটা জ্বালিয়ে পড়তে আরম্ভ করে।অজান্তেই চোখজোড়া ভিজে আসে রামীনের।অথচ এটায় কষ্টের কিছুই নেই।এটিতো একটা লাভ পোয়েম প্রেমের কবিতা।কিন্তু রামীন যে এর প্রতিটা অক্ষরে আশফিনাকে খুঁজে নিচ্ছে।এটাই হয়ত ভালোবাসা।হঠাৎ একটা কাগজ পায় রামীন। সেটা ভাজ করা অবস্থায় বইয়ের পাতায় গোঁজা।প্রায়ই রাতে বইটি পড়তো রামীন।আগে কখনো কাগজ টা দেখেনি ও তাহলে?
রুহীকে নিয়ে শুয়ে আছে রোয়েন।গা পুঁড়ে যাচ্ছে জ্বরে।কিন্তু মেয়েটার অদ্ভুত সব প্রলাম জারি আছে।ও বলছে,
.
.
-” খুব পঁচা তুমি।তোমার দাঁড়ি নেই।তোমাকে না খুব মানাবে দাঁড়িতে।আমার দাঁড়ি খেতে ইচ্ছে হয়।তুমি দাঁড়ি রাখো প্লিজ।শেইভ করতে হবেনা আমি কামড়ে উঠিয়ে নেবো।”
-”রুহী কি বলছো এসব?দাঁড়ি খাওয়ার জিনিস না তুমি ঘুমাও।”
-”দাঁড়ি কিভাবে খায় জানো?”
.
.
একটু উঁচু হয় রুহী।রোয়েন বলতে পারলো না কিভাবে।তার আগেই রুহী রোয়েনের গাল কামড়াতে লাগলো।ওর খোঁচা দাঁড়ি গুলো খেতে চেষ্টা করছে।হঠাৎ রুহী মুখে উঠিয়ে দেখে রোয়েনের গাল লাল হয়ে গেছে।রুহী এবার রোয়েনের গালের সাথে নিজের গাল ঘষতে শুরু করে।রোয়েনের এবার বেশ হাসি পেলো।পাগলীটা ওর ব্যাথা কমাতে চাইছে।রোয়েন রুহীর কোমড় দুহাতে জড়িয়ে নিজের সাথে রুহীকে শক্ত করে ধরে রাখলো।
চলবে