The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 69

রুহী ফোন রেখে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো।ওর বাবা আজকাল যখনই কল দেয় তখনই আনিলা এই করেছে আনিলা সেই করেছে।রুহীর চোখ ভরে আসে।গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে।ডুকরে উঠে রুহী।বুকটা দুহাতে চেঁপে ধরে রুহী।চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে।খুব কষ্ট হয় ওর।এই কষ্ট কাকে দেখাবে ও?কে বুঝবে?মায়ের জায়াগায় অন্য কাউকে দেখা বাবার পাশে অন্যএক মহিলা কে দেখা যে কিনা বাবারই স্ত্রী।সে কখনো মা হতে পারেনা।পারেনা মায়ের জায়গা দখল করতে। পারেনা মাথায় মাতৃসুলভ ছোঁয়া দিতে।সে আসে শুধু বাবা আর মেয়ের মাঝে অপর এক ব্যাক্তি হয়ে যা মৃত মায়ের অস্তিত্ব নিমিষে বিলীন করে দেয়।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুহী ফ্লোরে বসে পড়ে।বুকের মাঝে আটকে থাকা মায়ের ছবিটা বের করে মায়ের দিকে তাকায়।ওর মা নির্ঝরা খুব সুন্দরী ছিলেন।তার হাসিটা ও খুব সুন্দর।শুনেছিলো মা বাবার নাকি প্রেমের বিয়ে ছিলো।তাহলে বাবা এতো সহজে অন্য কাউকে মায়ের জায়গা কিভাবে দিলো?ভেবেই কান্না পায় রুহীর।ভালবাসার মানুষটাকি তাহলে মনের অজান্তে কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো?সেই ভালবাসার অংশীদার কি অন্যজন হয়ে গেলো?উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে রুহী।ওর কান্নায় পুরো পরিবেশ যেন বেদনাময় হয়ে উঠলো।ফোনের রিংটোন বাজতেই আশফিনা মোবাইল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।আজকাল এভাবেই ওকে কথা বলতে হয়। কারন বাবা জানতে পারলে মেরে ফেলবে ওকে।ওয়াশরুমে ঢুকে কমোডের ওপর বসে আশফিনা।তারপর ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রামীন কল করেছে।আশফিনা থমকে রইলো।হঠাৎ এতদিন পর রামীনের কল পাবে।মানুষটাতো ওকে প্রায় ভুলেই গেছিলো।তাহলে হঠাৎ কেন কল করছে আজ?
আশফিনা কল ধরছেনা।বারবার কল আসছে।আশফিনা ফোনের দিকে চেয়ে আছে।একপর্যায়ে কল আসা বন্ধ হলো।তখনই মেসেজ এলো রামীনের।
”এতো রেগে থেকোনা।প্লিজ ফোনটা ধরো।অনেক কথা আছে আশফিনা।পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।ভালোছিলাম না এতোদিন।তুমি হয়ত ভেবেছো তোমার জন্য আমার ভালবাসা কমে গেছে।কমে নি।অনেক ভালোবাসি তোমাকে আশফিনা।প্লিজ কলটা ধরো।”এরপর আবার কল আসে।আশফিনা এবার কল রিসিভ করে।অপর পাশ থেকে রামীন হ্যালো হ্যালো করছে।কিন্তু নিশ্চুপ আশফিনা।চুপ করে রামীনের কন্ঠ শুনছে ও।চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।রামীন বলল,
.
.
-”কি হলো কথা বলছো না কেন?”
-”বলেন।”
-”এতক্ষন কথা বলছিলাম।চুপ করে ছিলে কেন?”
-”কি বলবো।কি বলার দরকার বুঝতে পারছিনা।এতদিন পর আমাকে কল দিলেন।তাই বুঝতেই পারছিনা কি বলবো?কি বলে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো এতো কষ্ট করে কল করেছেন আমাকে।”
-”আমি বুঝতে পারছি প্রচন্ড রাগ তুমি।রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।তোমার জায়গায় থাকলে আমি হয়ত এমনটাই করতাম।কিন্তু জানো আশফিনা ভাল নেই আমি।একা হয়ে গেছি অনেকটা।সারাক্ষন ঘরেই থাকি।বের হতে ইচ্ছে করেনা।তোমার সাথে অন্যায় করেছি।সেটার শাস্তি দিচ্ছি নিজেকে।তোমাকে না আটকে ভুল করেছি আমি।তোমাকে হয়ত সেদিন আটকালে আজ একসাথে থাকতাম আমরা।তোমার বাবা কখনো আমাকে মানবেনা।কারন তুমি জানো আমি কি?কি করি আমি?খুন করা আমার কাজ।আর তোমার বাবা হয়ত চাইবেননা এমন একজনের কাছে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেয়া।আমি তোমাকে এখন ও চাই আশফিনা সবসময় চাইবো।”
-”আপনি ভীরু।এতো সহজে হার মেনে নিলেন কিভাবে বলুন?ভালবাাসায় কিভাবে এতোটা কাপুরুষ হলেন আপনি?কেন বাবার কাছে এসে আমাকে চেয়ে নিচ্ছেননা?আপনার কাছে এটা আশা করিনি আমি।”
-”ঠিকই বলেছো আশফিনা।আমি কাপুরুষ।তোমার কাছে যাওয়ার সাহস নেই।কয়রন ওনার সম্পর্কে যতোটুকু ধারনা হয়েছে কখনোই মেনে নিবেননা আমাকে।খালি হাতে ফিরতে হবে।তোমাকে ভুলে চলে আসতে হবে।এটা কিভাবে মানবো বলো।এর চেয়ে মরে যাওয়াটাই অনেক ভালো তাইনা?”
-”তাহলে আমার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন আপনি?আমাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন?কিন্তু আপনাকে পাওয়ার আশা যে ছাড়তে পারছিনা।প্রত্যেকটা রাত যে আপনাকে পাওয়ার আশায় বসে থাকি।ঘুম হয় না আমার আপনার চিন্তায়।দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি বেঁচে ও মৃত হয়ে আছি রামীন।”
-”এভাবে বলো না আশফিনা।তোমাকে জীবনে এগুতে হবে।তোমাকে ভাল থাকতে হবে।ভালভাবে বাঁচতে হবে।”
-”সেটা আপনাকে ছাড়া অসম্ভব।আপনি হয়ত আমাকে ছেড়ে ভাল থাকবেন।কিন্তু বাঁচতে পারবোনা আমি।”
-”আমি ও ভাল থাকবোনা আশফিনা।তোমাকে ছেড়ে জীবন পার করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।এখন একটাই উপায় সেটা হলো মহান আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা।উনি চাইলে আমাদের এক করতে পারেন।”
-”ওনার ভরসায় তো এখনো বেঁচে আছি রামীন।আপনি জলদি আসুন।বাবার কাছে এসে আমাকে জিতে নিন।কোন বাহানা মানবোনা রামীন।আপনার অপেক্ষায় থাকবো।”
-”হুম।”
.
.
ফোনের অপরপাশ থেকে দীর্ঘ নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পায় আশফিনা।ও আবার বলল,
.
.
-”এখনো কাপুরুষের মতো দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ছেন।”
-”আমি আসবো আশফিনা।তোমার জন্য অবশ্যই আসবো।চিন্তা করোনা।”
.
.
রামীন আর আশফিনার ফোনালাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।কারন দরজায় নক শুনতে পায় আশফিনা।দ্রুত ফোন লুকিয়ে ফ্লাশ ছেড়ে দেয় ও।তারপর হাত ধুয়ে বেরিয়ে আসে দরজা খুলে।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ওর বাবা।আশফিনা মাথা নিচু করে বিছানায় এসে বসে পড়ে।বাবা বেরিয়ে যেতেই দরজা লাগিয়ে দেয় রুমের তারপর কাঁদতে থাকে খাটে শুয়ে।অপরদিকে রামীন আজ বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।আশফিনাকে ভরসা দেয়ার জন্য কথাটা হয়ত বলে ছিলো কিন্তু আদৌ কি ও পারবে আশফিনাকে নিজের করে নিতে।আশফিনার বাবা কি কখনো ওকে মেনে নিতে পারবে?পড়াশুনা করেছিলো ও।কিন্তু সেটাকে কাজে লাগায়নি ও। প্রানের বন্ধুর জন্য সব ছেড়ে দিয়েছেও।সেদিন রাতে রোয়েন ঘরে ফিরে আসে।রুহী এশার নামাজ আদায় করছে।রোয়েন রুহীর রুমে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে আসে।ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে খেয়াল করে রুহী পাকঘরে খাবার গরম করছে।রোয়েন রুহীর পিছে দাঁড়ায়।রোয়েনের উপস্থিতি টের পেয়ে যায় রুহী।কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখে ও।রোয়েন এবার রুহীর কাঁধে গাঢ় চুমু খেয়ে দুহাতে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে।রুহী কিছু বলতে পারছেনা।আর কতো বলবে লোকটাকে ওর থেকে দূরে থাকতে?ওর নিজের ও যে ভাল লাগেনা।রুহীর খাবার গরম হলে রোয়েন টেবিলে এসে বসে।রুহী খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।রোয়েন খাবার খেয়ে রুহীর রুমে আসে।রুহী খাটে আধশোয়া হয়ে আছে।রোয়েন এসে কোলে তুলে নেয় ওকে।রুহী রাগী চোখে তাকায় রোয়েনের দিকে।এবার কথা বলল ও।
.
.
-”কই নিচ্ছেন আমাকে?”
-”আমাদের রুমে।”
-”আমাকে নামান।এখানে ঘুমাবো আমি।এটাই আমার রুম।”
-”রুহী আরো একটা ত্যাড়া মার্কা কথা বললে এমন আছাড় মারবো যেন প্রত্যেকটা হাড় ভেঙ্গে যাবে।
.
.
রোয়েনের কথায় অবাক রুহী।নিজের বউ কে কেউ এভাবে বলতে কখনো শুনেনি।রুহী রেগে পড়ে রইলো রোয়েনের কোলে।রুহীকে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয় রোয়েন।তারপর রুহীর সামনের থেকে সরে বিছানায় শুতে যাবে রোয়েন তখনই রুহী বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।হঠাৎ প্রচন্ড রোয়েন রুহীর হাত টেনে নিজের বুকের ওপর নিয়ে আসে।রুহী ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কিছুসময়ের জন্য।রোয়েন রেগে বলল,
.
.
-”যতো রেগে থাকোনা কেন?অন্য রুমে গিয়ে ঘুমানোর চিন্তা ও করবানা।”
-”ঐ রুমেই ঘুমাবো আমি।”
-”রুহী তুমি জানো যেটা আমি চাই সেটা কিভাবে আদায় করে নেই।সো তোমাকে আর বলে বুঝাতে হবেনা রাইট?”
-”হুহ।”
.
.
মুখ সরিয়ে নেয় রুহী।রোয়েন এবার রুহীকে নিয়ে শুয়ে পড়ে।রুহীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
.
.
-”কাল তোমার বাবার বাসায় দাওয়াত দিয়েছে জানো তুমি?”
.
.
রুহী রেগে চুপ করে আছে।এদিকে জবাব না পেয়ে ধমক দেয় রোয়েন।
.
.
-”কি হলো বলো।”
-”জি।মিস আনিলা কল করেছিলেন।”
-”ওহ।তুমি ও যাবে।কোনরকমের ত্যাড়ামী চাইনা আমি।”
.
.
রুহী কিছু বলতে পারলোনা।শুধু মাথা ঝাঁকায়।রোয়েন এবার রুহীকে শুইয়ে দেয় বালিশে।রুহী অবাক হয়ে তাকায় রোয়েনের দিকে।রোয়েন কিছু না বলে রুহীর গালে ঠোঁটে চুমু খেয়ে ওর গলায় মুখ ডুবায়।রুহী মাথা অন্যদিকে কাঁত করে নেয়।সারারাত এভাবে শুয়ে থাকে রোয়েন।কিছু বলতে পারেনা রুহী।গভীর রাতে মনের অজান্তেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো নিজের স্বামীকে।রাত পেরিয়ে সকালের আভা চারিদিকে ফুঁটে উঠে।রুহীর ঘুম ভাঙ্গে।চোখ খুলে দেখে ওর সামনে বসে প্রিয় পুরুষটি।রুহী উঠে বসতে নিলে রোয়েন আচমকা ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
.
.
-”গুড মর্নিং।”
-”হুম গুড মর্নিং।”
.
.
থমথমে গলায় জবাব দেয় রুহী।তারপর রুম থেকে বের হবার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে রোয়েন বলল,
.
.
-”কফি নিয়ে তোমাকে রুমে দেখতে চাই।সার্ভেন্ট নয়।নাহলে বুঝো কি হতে পারে তোমার সাথে।”
.
.
রুহী রেগে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।রুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসে রোয়েন।মেয়েটা না চাইতে ও রোয়েনের সকল আবদার পূরন করতে বাধ্য। কোব্রা পুরির রানী বলে কথা।রাজা যা বলবে যা চাইবে তাই তো করতে হবে রানীকে।কারন এই রাজা যে তার রানীকে বড্ড ভালবাসে।
চলবে