The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 66
কয়েকদিন ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছেনা তাজোয়ার শোহরাবের।প্রায় জ্বর থাকে।বুকে ব্যাথা হয়।খেতে ও পারছেননা।খেতে গেলেই বমি হচ্ছে।প্রায়ই বুক ব্যাথা হয় ওনার।খেলে প্রচন্ড বমি ও হয়।তবে ওনার সব কষ্টের ওপর চিন্তা হয় কন্যা আনিলার জন্য।বয়স তো কম হয়নি মেয়েটার।কিন্তু বিয়েই করতে চায়না মেয়েটা।তাজোয়ার শোহরাবের কিছু হলে মেয়ে আনিলার কি হবে তা নিয়ে ভেবে বড় নিশ্বাস ছাড়েন।ওনার চিন্তা শুধু আনিলাকে নিয়েই।আর কোন চিন্তা নেই।মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচেন।এ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে আসা পানিটুকু মুছে নেন।আনিলা শোহরাব কাজের যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো।তাই তাজোয়ার শোহরাব কে নাস্তা দিতে আসেন।তাজোয়ার শোহরাব পেপার পড়ছিলেন।আনিলা শোহরাব বাবার সামনে নাস্তা দিয়ে তার পাশে বসেন।তারপর বলেন,
.
.
-”বাবা ডাক্তারটা তো দেখাতে পারো।কিছুই খেতে পারছোনা কয়েকদিন যাবৎ।”
.
.
মেয়ের কথায় পেপার থেকে মনযোগ সরে যায় তাজোয়ার সাহেবের।মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,
.
.
-”হুম ভাবছিলাম যাবো।তোর কি হবে আমার কিছু হলে?”
-”বাবা আমি ঠিক থাকবো।বাবা চিন্তা করোনা ভালো থাকবে তুমি।”
-”মারে মানুষ তো সারাজীবন বেঁচে থাকেনা।আমি ও থাকবোনা।দেখ মা জেদ ছাড় ছাড় বলে কতোটা বছর পার হয়ে গেলো।”
-”আর কোন কথাই শুনবোনা।তুমি আজকেই হাসপাতালে যাবে।আমাদের কলোনিরটায় ঠিক আছে?”
-”আচ্ছা যাবো।তুই তাহলে কাজে যা।”
.
.
আনিলা শোহরাব উঠে দাঁড়ান।তারপর ব্যাগ গুছিয়ে বললেন,
.
.
-”নাস্তা খেয়েই বেরোবে।”
-”আচ্ছা মা।”
.
.
আনিলা শোহরাব বেরিয়ে পড়েন।নাস্তা শেষ করে চা খেয়ে উঠে দাঁড়ান তাজোয়ার শোহরাব।তারপর বেরিয়ে পড়েন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো রুহী কথা বলেনা রোয়েনের সাথে।কেমন অসহনীয় লাগছে সেটা রোয়েন ভালো বুঝতে পারছে।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে রোয়েন।সবসময়কার মতো কাজের লোক কফি নিয়ে এলো।আর টেবিলে নাস্তা রাখা।রোয়েন নাস্তা না খেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে আসে।আবার পিছনে ফিরে তাকায় রুহীর রুমের পানে।খেয়াল করলো রুহী দরজার কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।হয়ত বলতে চাচ্ছিলো নাস্তা না করে যাবেননা।রোয়েনের চোখে চোখ পড়তেই রুহী সরে যায় সেখান থেকে।রোয়েন কাজে চলে আসে।রামীন কে আজকাল অনেক চুপচাপ দেখা যায়।তেমন কিছু বলে ও না।রোয়েন অনেক জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও উত্তর পায়না।কয়েকটা দিন কেঁটে গেলো।তাজোয়ার শোহরাব কে রোয়েনের অফিসে আসতে দেখা গেলো।বেশ দূর্বল লাগে ওনাকে।রোয়েনের কেবিনে আসেন ওনি।তাজোয়ার সাহেবকে দেখে রোয়েন তাকে বসতে বলল।ওনি বসে পড়েন রোয়েনের সামনে।রোয়েন বলল,
.
.
-”হঠাৎ এখানে?”
-”তোমাকে কিছু বলতে এসেছি রোয়েন।”
-”জি বলুন।”
-”আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।হাতে সময় খুব কম।আমার মেয়েটা রেজোয়ান কে খুব ভালোবাসে।তুমি তোমার শ্বশুর কে বলে বিয়েটা করাও।আমি মারা গেলে আমার মেয়েটার কি হবে বলো।দেখো রোয়েন তুমি ছাড়া কেউ পারবেনা কাজ টা।দয়া করে আনিলার সাথে রেজোয়ানের বিয়ে করাতে সাহায্য করো।”
.
.
রোয়েন তাজোয়ার শোহরাবের দিকে তাকায়।কথাটা তাজোয়ার শোহরাব না একজন বাবা বলছেন।যার হাতে সময় সীমিত।রোয়েন ভাবছে রুহীকে কথাটা শুনিয়ে লাভ নেই ও বুঝবেনা।এর চেয়ে এই বাবার সাহায্য করাই ভালো।রোয়েন বলল,
.
.
-”কালো বারোটায় কোর্ট ম্যারেজ হবে।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”
-”ধন্যবাদ বাবা।বড় বাঁচালে আমাকে।”
.
.
কথাটা বলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান তাজোয়ার মাহবুব।রোয়েন ওনার যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে।তারপর রেজোয়ান মাহবুবকে ডেকে পাঠায়।রেজোয়ান মাহবুব এসে রোয়েনের সামনে বসে।ওনি বললেন,
.
.
-”বাবা ডেকেছেন?”
-”বাবা আজ আপনার বস না আপনার মেয়ের জামাই না আজ আপনার ছেলে হয়ে কিছু চাইবো।দিতে হবে।”
-”বাবা কি যে বলেন।আপনি যা বলবেন আমি দিবো।”
-”প্রতিজ্ঞা করেন।”
-”প্রতিজ্ঞা করলাম।এখন বলেন।”
-”তাজোয়ার শোহরাবকে চিনেন তো।ওনার ক্যান্সার লাস্ট স্টেজে।ওনি আজ এসেছিলেন।ওনি চাইছেন ওনার মেয়ের বিয়েটা আপনার সাথে হবে।ওনার মেয়ে আনিলা আপনাকে অনেক পছন্দ করেন।”
-”কিন্তু রুহী!!!ও রাজি হবেনা।”
-”সে চিন্তা আপনার করতে হবেনা।রুহীকে আমি ম্যানেজ করবো।কাল বারোটায় কোর্ট ম্যারেজ।আপনার ঘরে গাড়ি পৌছে যাবে।”
-”জি।আমি আসি তাহলে।”
.
.
রেজোয়ান মাহবুব উঠে চলে গেলেন।এদিকে আনিলা শোহরাব ঘরে ফিরে আসেন সন্ধ্যা সাতটায়।তাজোয়ার শোহরাব মেয়েকে দেখে একটু হাসেন।আনিলা হাত মুখ ধুয়ে বাবার কাছে এসে বসেন।ওনি বলেন,
.
.
-”তোর আর রেজোয়ানের বিয়ে ঠিক করে আসলাম রোয়েনের সাথে কথা বলে।”
-”বাবা কি বলছো এসব?”
-”দেখ এখন আর না করতে পারবিনা।অনেক শুনেছি তোর কথা আর না।আমি চলে গেলে কার সাথে থাকবি?একা একা আর কতো থাকবি বল?”
-”বাবা কিন্তু,,,,,,,,,,,”
-”কসম করে বলছি।আর কোন কথা বলবিনা।”
.
.
উঠে গেলেন তাজোয়ার শোহরাব।এদিকে ঘরে ফিরে আসে রোয়েন।রুহী রান্না করে বেরুলো পাকঘর থেকে।রোয়েন কে দেখে রুহী চুপচাপ রুমে চলে যায়।রাতে খাওয়ার সময় রুহী প্লেট নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।রোয়েন একা একা খেয়ে রুমে চলে যায়।রাত পেরিয়ে দিন আসে।আজ রোয়েন আর রুহী দুজনের অফ ডে।নাস্তা শেষে রুমে বসে কিছুসময় কাজ করে রোয়েন।এগারোটা বাজে রুমে আসে রোয়েন।রুহী বসে আছে খাটে।রোয়েন বলল,
.
.
-”রেডি হয়ে নাও বের হবো।”
-”আমি কোথা ও যাবোনা আপনার সাথে।”
.
.
কথাটা বলে উঠে যাচ্ছিলো রুহী।রোয়েন ওর হাত চেঁপে নিজের সাথে লাগায়।তারপর রেগে বলল,
.
.
-”একদম তর্ক করবানা।যা বলছি করো।জলদি রেডি হয়ে নাও।”
-”বলছি তো যাবোনা।আমি কোথাও যাবোনা।”
.
.
প্রচন্ড রেগে গেলো রোয়েন।তারপর ও খুব কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
.
.
-”বলছি জলদি রেডি হয়ে নাও।কোন না শুনতে চাই।পাঁচ মিনিটে তোমাকে রেডি দেখতে চাই।”
.
.
কথা গুলো বলে বেরিয়ে আসে রোয়েন।রুহী রেগে খাটে বসে পড়ে।তারপর অনিচ্ছাস্বত্তেও রেডি হয়ে নেয় বেরিয়ে আসে রুহী।রোয়েন উঠে রুহীর কাছে এসে দাঁড়ায়।রুহীকে সবসময়কার মতো।মায়াবতী লাগছে।রোয়েন পাশে দাঁড়িয়ে রুহীর গায়ের ঘ্রান নেয় লম্বা নিশ্বাস টেনে।রুহী যেন আবার নেশায় জড়িয়ে যেতে চায়।রোয়েন বলল,
.
.
-”যেখানে নিচ্ছি একদম চুপ থাকবে।কোন সিনক্রিয়েট চাই না।যা হবে চুপ করে দেখবে।কিছু বলতে হলে আমাকে ঘরে এসে বলবে।”
.
.
রুহী ভেংচি কেঁটে বেরিয়ে যায়।রোয়েন ও রুহীর পিছু বেরিয়ে আসে।শেষমেষ রুহীকে নিয়ে কাজী অফিসে আসে রোয়েন।কাজী অফিস দেখে চমকে যায় রুহী।রোয়েন ওকে নিয়ে ভিতরে।ভিতরে শামীম রামীন আরো অনেককে দেখতে পায় রুহী।এমনকি নিজের বাবাকে ও।রুহী রেজোয়ান মাহবুবের কাছে এসে দাঁড়ায়।
.
.
-”বাবা কি হচ্ছে এখানে?”
.
.
রেজোয়ান মাহবুব কিছু বলতে পারেননা।রুহী কি করবে বুঝতে পারছেনা।হঠাৎ ওকে অবাক করে তাজোয়ার শোহরাবের সাথে আনিলা ভিতরে আসে।রুহীর আনিলাকে একদম পছন্দ না।তাই মুখ ফিরিয়ে নেয় ও।এর পর যা হলো রুহীর কল্পনাতীত।রেজোয়ান মাহবুব আর আনিলাকে সাইন করতে দেয়া হয়।এই সাইনের পরেই ওনারা স্বামী স্ত্রী হয়ে যাবেন। রেজোয়ান মাহবুব সাইন করতেই রুহী দৌড়ে বেরিয়ে যায়।ওর পিছু নিতে রোয়েন ও বেরিয়ে আসে।রুহী গাড়িতে বসে আছে।রোয়েন জানে এখন কিছু বললে রিয়্যাকশন উল্টো হবে।ঘরে পৌছেই রুহী দৌড়ে ঘরে চলে যায়।রোয়েন ও দ্রুত হেঁটে ঘরে ঢুকে পড়ে।রুহী ভাঙ্গচুর করছে বাসায়।
চিৎকার করে কান্না করছে।
.
.
-”রুহী কি করছো এসব?”
-একদম কথা বলবেননা।আপনার এত বড় সাহস কি করে হয় এ কাজ করার।আমার বাবাকে আবার বিয়ে দিলেন আমার অনুমতি ছাড়া।”
-”রুহী শুনো তুমি!!!!”
-”কিছু শুনবোনা।ওই মহিলা আমার পছন্দ না।আপনি কেন করলেন এ কাজটা?একবার ও কি আমার কথা ভাবেননাই?”
.
.
রুহীর কথায় রাগ হয় রোয়েনের।চিৎকার করে করে বলতে থাকে,
.
.
-”তুমি কি ভেবেছো তোমার বাবার কথা?একবার ও ভেবেছিলে লোকটা একা একা বাইশ বছর কিভাবে কাঁটিয়েছে?একবার ও তার কথা ভাবোনাই?বুঝোনাই কতোটা অসহায় সে।একা একা সে কিভাবে থাকছে কখনো ভেবেছো?সবসময় নিজের কথা কেন ভাবতে থাকো?তোমার বিয়ে হয়ে গেছে সংসার হয়েছে।কখনো ভেবেছো বাবার খেয়াল কে রাখে।ওনি অসুস্থ ছিলো তখন তুমি ওনার কাছে ছিলে।ওনি আগে ও অসুস্থ হতো তুমি জানতে ও না।জানতে চাও নি।ওনার বয়স হয়েছে।সঙ্গীর দরকার পড়ে।সেটা তুমি বুঝবেনা।বয়স্ক মানুষ তার সেবার দরকার পড়ে।সেই সেবা একজন স্ত্রী ছাড়া কেউ দিতে পারেনা।মানলাম তুমি তোমার বাবার সেবা করবে তার দেখা শুনা করবে এতে সে হয়ত শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকবে কিন্তু মানসিক ভাবে কখনোই ভালো থাকবেননা ওনি।মনের শান্তির জন্য স্ত্রীর দরকার পড়ে সন্তান না।”
.
.
রুহী কান্না জড়িত চোখে রোয়েনের দিকে তাকায়।রোয়েন এবার শান্ত গলায় বলল,
.
.
-”রুহী যা করেছি ওনার সুখের জন্য।ভালো থাকার জন্য।এতে তোমার আমার কোন কল্যান নেই।বুঝতে চেষ্টা করো রুহী।আমি জানি তোমার জন্য মোটেই সহজ না ব্যাপারটাকে গ্রহন করা।আমার জন্য ও হতো না।কথাটা বাস্তব।কেউ একা বাঁচতে পারেনা।কিন্তু বাইশ বছর একা ছিলো তোমার কারনে।তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।তুমি ও বুঝতে শিখেছো।তোমার ও উচিৎ তোমার বাবার জন্য কিছু করা।”
.
.
রুহী কিছু না বলে কান্না জড়িত চোখে রোয়েনের দিকে তাকায়।তারপর দৌড়ে রুমে চলে যায়।
চলবে