The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 63
→রোয়েন রুহীর দিকে প্রচন্ড রাগী চোখে তাকায়।রুহী এবার যেন সটান হয়ে গেছে,নড়তে পারছেনা ও।লোকটা এতো রেগে আছো কেন?রোয়েন রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুহীর কাছে এসে দাঁড়ায় রুহী একটু সরে যেতে নিলে রোয়েন রুহীর হাত মঁচকে ধরলো তারপর রেগে বলতে শুরু করলো,
.
.
-”কই ছিলে এতক্ষন? ”
-”আ আ আমি,,,,,,,,,,”
.
.
রুহীকে কথা শেষ করতে না দিয়ে রোয়েন ওর ব্যাগ থেকে ফোনটা নিয়ে সেখানকার কল লগে গিয়ে সেটা রুহীর সামনে ধরে বলল,
.
.
-”কতো বার কল করে ছিলাম।ফোন ধরছিলেনা কেন?”
-”আ,,,,মি আসলে,,,,,,,,,,”
.
.
রোয়েন এবার রুহীর ফোনটাকে সজোরে আছড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল,
.
.
-”যদি ফোন ধরতেই পারোনা তাহলে ব্যাবহার করো কেন?”
-”না রোয়েন আমি……….”
.
.
রোয়েন এবার জোরে চিৎকার করে বলল,
.
.
-”কি তুমি কি? কলেজ ছুটি হয়েছে চারটা বাজে তুমি আসছো ছয়টার পরে। কই ছিলে সারাদিন?তোমার টিচারকে কল করেছিলাম সে বলল তুমি অনেক আগেই বেরিয়েছো তাহলে কই ছিলে এতক্ষন?জানো কতোটা টেনশনে ছিলাম।”
-”কলেজ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম কিন্তু,,,,,,,,,,,,”
-”আর কোন কথা না।আর কিছু শুনতে চাইনা তোমার কথা।আমার সামনে থেকে যাও।খেয়ে পড়তে বসো।”
.
.
রুহীকে আর কথা বলতে দেয়না রোয়েন।এমনিতেই ওর মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে।কতটা চিন্তায় ছিলো সেটা ও জানে।রুহীকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে যায় রোয়েন।রুহী কাঁদতে থাকে। লোকটা ওকে কথা বলতে দেয়নি।রুহী কাঁদতে কাঁদতে পিছন ফিরে রোয়েনের যাওয়ার দিকে তাকায়।রুহী কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসে।তারপর খাটে শুয়ে কাঁদতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে যায় রুহী।অনেক রাত করে ঘরে ফিরে আসে রোয়েন।রেগে বারে গিয়েছিলো।সেখানে ড্রিংকস করে এসেছে।টলতেটলতে রুমে আসে ও।রুহী শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে।রোয়েন গায়ের শার্ট খুলে খাটে এসে বসে একটু উপুড় হয়ে রুহীকে দেখার চেষ্টা করে।রুহীর মুখের ওপর চুল পড়ে আছে।রোয়েন চুল গুলো আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে ওর চেহারাটা দেখে।রোয়েন এবার একটু এগিয়ে এসে রুহীর গালের কাছে মুখ নিয়ে তারপর চোখ বুজে ওর শরীরের ঘ্রান নেয়।রুহী বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।রোয়েন এবার শুয়ে পড়ে।রুহীর দিকে ফিরে। রুহীর পিঠ রোয়েনের দিকে।রুহীকে দেখতে দেখতেই জ্ঞান হারায় রোয়েন।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রুহীকে পাশে পায় না রোয়েন। শোয়া থেকে উঠে বসে ও।মাথাটা একদম ভার হয়ে আছে।খাট থেকে নেমে খেয়াল করলো খাটের একপাশে ওর গোসলের কাপড় চোপড় বের করা।রোয়েন কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে গায়ে শার্ট জড়াচ্ছিলো রোয়েন।এর মাঝে রুহী কফি নিয়ে আসে ওর রুমে।রোয়েন একবার রুহীকে দেখে শার্টের বোতাম লাগাতে থাকে একমনে।রুহী এসে কফি মগটা টি টেবিলে রেখে ওর শার্টের বোতাম লাগাতে চাইলো।কিন্তু রোয়েন ওর হাত সরিয়ে দেয়।রুহী এবার কেঁদে বলতে লাগলো,
.
.
-”প্লিজ শুনেন আমার কথা রোয়েন।”
-”দেখো এখন তোমার কোন কথা শুনার সময় কিংবা ইচ্ছে কোনটিই আমার নেই।”
.
.
রুহী কে আর কিছু বলতে না দিয়ে বেরিয়ে যায় রোয়েন।নাস্তা না করেই চলে যায় রোয়েন।রুহীর মন খুব খারাপ হয়ে যায়।সামনে পরীক্ষা তাই খুব কষ্টে নিজের মনকে স্থির করলো কলেজে যাওয়ার জন্য।এদিকে রামীন সহ সবাই দেখছে রোয়েন প্রচন্ড রেগে আছে।রামীন এসে রোয়েনের সামনে বসে।রোয়েনের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। বন্ধুকে এমনটা দেখতে একদম ভালো লাগেনা রামীনের।আর সহ্য করতে না পেরে বলতে লাগলো,
.
.
-”কি হয়েছে তোর?”
-”কিছুনা।যা কাজ কর।”
-”রুহীর সাথে ঝগড়া??? ”
-”কাল ওকে কতোবার কল করেছিলাম ও একটা বার ও কল রিসিভ করছিলোনা।চারটায় কলেজ ছুটি হয়েছিলো ও এসেছিলো ছয়টার পর।তুই বুঝতে পারছিস কেমন লাগছিলো আমার?না পারতে ওর টিচারকে কল করেছিলাম।সে বলে রুহী অনেক আগে বেরিয়েছে।এমনিতেই শত্রুর অভাব নেই।”
-”ইচ্ছে মতো বকেছিস তাইনা?”
-”তো কি করবো?সালাম দিবো?”
-”রোয়েন তুই কখনো চেঞ্জ হবিনা।কতো বুঝালাম তোকে কিন্তু তুই সবসময় একই কাজ করিস।কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলি?জানি দিসনাই?ওনি হয়ত কোন প্রবলেমে ছিলো।জানতে চাওয়ার দরকার ছিলো তোর।সবসময় নিজের রাগকে উপরে রেখে ওকে বকে দিস।কখনো জানার প্রয়োজন মনে করিস না তুই।একবার শুনে তো দেখতি।”
.
.
রামীনের কথায় রোয়েন আর কিছু বলতে পারেনা।আসলেই ও কখনো কথা শুনতে চায়না।কিন্তু মেয়েটা ওর ফোন রিসিভ করছিলো না কতোটা ভয় পেয়েছিলো বলার মতো না।কিছুক্ষন পর শামীম রোয়েনের রুমে এসে বলল,
.
.
-”স্যার একটু ছুটি লাগতো।”
.
.
রোয়েন বেশ রেগে তাকায় শামীমের দিকে।তারপর বলল,
.
.
-”কেন?”
-”স্যার কাল রুহীকে আনার সময় একটা বাইক এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো।সেখানে আর কেউ ছিলোনা তাই আমি রুহীকে নিয়ে ঐ লোককে হাসপাতালে ভর্তি করাই।হাসপাতালে আমার ফোন রেখে আসছি।রিসিপশনে জমা রেখেছে ফোন।”
-”ওহ যাও।”
.
.
শামীম বেরিয়ে গেলো।রোয়েন কি বলবে বুঝতে পারছেনা।শুধু শুধু রুহীকে বকে দিলো ও?রয়মীন বলল,
.
.
-”কি করবি এখন?”
.
.
রোয়েন কিছু না বলে কাজে মন দেয়।ও বুঝতে পারছে ওর কতোটা খারাপ লাগছে।মায়াবতীকে কতোটা ভালবাসে। ভালোবাসে বলেই তো ওর চিন্তা হচ্ছিলো।বাকিটা সময় অফিসে অস্থিরতার মাঝেই কেঁটে যায় রোয়েনের।এদিকে আশফিনা কলেজ থেকে ফিরে রুমে যাওয়ার সময় বাবা মায়ের রুমে ওদের কিছু কথা শুনতে পায়।ওর মনে হচ্ছিলো হয়ত ওকে নিয়ে কথা হচ্ছে ওদের।অতিরিক্ত ক্লান্তির কারনে আশফিনা বুঝতে পারেনা ওনাদের কথা।বিকেলে রুহীর ছুটির সময় শামীম যেতে নিলে রোয়েন ওকে আটকায়।শামীম বলল,
.
.
-”স্যার রুহী কে আনবো কলেজ থেকে।”
-”তুমি বাসায় যাও।আমি যাবো ওকে আনতে।”
.
.
শামীম কিছু বলেনা আর। রোয়েন বেরিয়ে পড়ে রুহীকে আনতে।রুহী কলেজ ছুটি হওয়ার পর শামীমের অপেক্ষা করছে।হঠাৎ খুব পরিচিত গাড়ি দেখে রুহী বেশ অবাক হয়।তারপর ও নিজেকে কোনমতে সামলে গাড়ির কাছে আসে।গাড়ির ভিতর খুব প্রিয় মানুষটির ছায়া দেখতে পায় রুহী।চুপচাপ গাড়িতে ঢুকে বসে ও।রুহী খেয়াল করলো রোয়েন গাড়ি নিয়ে বসে আছে।স্টার্ট করছেনা।অনেক্ষন অপেক্ষা করে রোয়েন বলল,
.
.
-”কেমন কাঁটলো সারাদিন?”
-”ভালো।”
-”রুহী আ’ম সরি।আমার এমনটা করা উচিৎ হয়নি।তুমি ফোন রিসিভ করছিলেনা তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।প্লিজ মাফ করে দাও।”
-”আমি রাগ করিনি।”
.
.
রুহীর কন্ঠটাকে বেশ অভিমানী মনে হয় রোয়েনের।ও আবার বলল,
.
.
-”রুহী সরি।আর হবেনা এমন।”
-”বাসায় চলুন।”
.
.
রোয়েন এবার রুহীর দুকাঁধ চেঁপে ধরে বলল,
.
.
-”রুহী তুমি জানো আমি কতোটা ভালবাসি তোমাকে বলেই রাগ করি।বুঝো আমাকে রুহী প্লিজ বুঝো।”
.
.
এবার রোয়েনের চোখজোড়ায় রুহী তাকায়।লোকটার চোখজোড়ায় অনুতপ্ততা ছলছল করছে।আর দুচোখ যেন ভালোবাসার অতল সমুদ্র।এই সমুদ্রে রুহী হাজার বার ডুবে যেতে রাজি।বড় ভালবাসে তার স্বামীকে। কিন্তু এবার রুহী রোয়েনকে শাস্তি দিবে চরম শাস্তি দিবে।হঠাৎ রোয়েনকে অবাক করে দিয়ে ওর হাত নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে রুহী বলে উঠে,
.
.
-”বাসায় চলুন আমার টায়ার্ড লাগছে।”
-”রুহী কথা শুনো আমার।”
-”আপনি কি গাড়ি স্টার্ট দিবেন নাকি আমি নেমে বাসায় যাবো।”
-”রুহী প্লিজ আমার কথা শুনো। ”
.
.
রোয়েনকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুহী গাড়ি থেকে নেমে যায়।রোয়েন ও নেমে পড়ে।পিছন থেকে ডাকতে থাকে।রোয়েন বুঝতে পারছেনা কি করতে যাচ্ছে রুহী।রুহী এবার ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যায়।রোয়েন এবার বিস্ময়ের চরম শিখরে।রুহী কি করে করলো এমনটা?
এদিকে সেদিন রাতে আশফিনা রামীনের সাথে কথা বলছিলো।কথার মাঝেই আশফিনার মা রুমে প্রবেশ করে।আশফিনা চটজলদি ফোন সরিয়ে রাখে।মিসেস সানজিদা রুমে এসে বলল,
.
.
-”কারোর সাথে কথা বলছিলি?”
-”জি মা ফ্রেন্ডের সাথে।”
-”আচ্ছা শুন তোর বাবা একটা প্রপোজাল এনেছে।ছেলে সেনাবাহিনীতে জব করে।কমান্ডার সে।বয়স শুনেছি একটু বেশি কিন্তু ছেলে ভালো তুই শান্তিতে থাকবি।ছেলেরা কাল দেখতে আসবে।কাল তোকে দেখেই ছেলে আবার কাজে চলে যাবে।সাত দিনের ছুটিতে আসছিলো সে।”
.
.
এতসময় ধরে মায়ের কথা গুলো শুনে মাথাটা ঘুরতে শুরু করে আশফিনার।ও অন্য কাউকে নিজের জীবনে ভাবতেই পারেনা রামীনকে ছাড়া।কি করবে এখন ও?বাবাকে ও ভালমতো বুঝে।বাবা নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে সবসময়।এদিকে রুহী ঘরে ফিরে আসে।তার পরপরই রোয়েন ভিতরে ঢুকে।রুহীকে দেখে রোয়েন আর নিজেকে সামলাতে পারেনা।রুহীর হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে।আর দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে,
.
.
-”এতো সাহস কি করে হলো রাস্তায় এমন করার?”
.
.
রোয়েনের কথা শেষ হতেই রুহী প্রায় ধাক্কা দিয়ে রোয়োনকে সরিয়ে বলল,
.
.
-”এখানে সাহসের কিছুই হয়নি।যা করেছি ভালোই করেছি।ভালো শুধু আপনিই বাসেন না।আমি ও ভালবাসি।তাই বলে আপনার সাথে কয় দিন খারাপ ব্যাবহার করেছি?কোন দিন এমন হয়েছে যে আপনি কোন ভুল করেছেন আর আমি আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেইনি?সবসময় আপনাকে গুরুত্ব দিয়েছি।কোন কাজ কেন করেছেন কিভাবে করেছেন তা কখনো জানতে চেয়েছি?আপনার প্রত্যেক কাজের জন্য কৈফিয়ত দেয়ার সুযোগ দিয়েছি।কিন্তু আমার কোন ভুল হলে আপনি যা তা ব্যাবহার করেন।জানতে ও চান না যে কেন করেছি কিভাবে করেছি।আপনি যা বুঝেন তাই করেন তাই বলেন।নিজের কথার ওপর কারোর কথাকে গুরুত্ব দেননা।ভালো আমি বাসি রোয়েন কিন্তু খারাপ ব্যাবহার করিনা।আপনার খারাপ ব্যাবহারের মাঝে আমি ভালবাসা খুঁজে পাই।কিন্তু অনেক হয়েছে আর না।অনেক সহ্য করেছি।আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছেন কিন্তু কিনে নেন নাই।আমি ও মানুষ আমার ও মন আছে কষ্ট আছে।আজ থেকে আমার কাছে আসবেননা আপনি।আপনার রুমে আপনি থাকেন।আমি ওই আগের রুমে থাকবো।সেটাই আমার রুম।”
.
.
বলে রুহী চলে যাচ্ছিলো।রোয়েন ওর হাত টেনে ধরে আবার বলল,
.
.
-”রুহী,,,,,,,,,”
-প্লিজ একবার বলে দিয়েছি তো বলে দিয়েছি।
.
.
কথাটা বলে রুহী রুমে চলে যায়।
চলবে