The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 57
→প্লেন এসে পৌছালো সাড়ে সাতটায়।ওরা প্লেনে এসে বসলো।প্লেন ছাড়বে আটটায়।বার ঘন্টা চল্লিশ মিনিট কিংবা এর বেশি সময় লাগবে ঢাকা থেকে দার্জিলিং যেতে।তারমানে পরদিন সন্ধ্যা সাতটা কিংবা সাড়ে সাতটায় গিয়ে পৌছাবে ওরা।কেবিন ক্রু এসে সবাইকে এয়ারফোন দিয়ে গেলো।রুহী নিজের এয়ারফোনটাকে গুঁটে ব্যাগে রেখে রোয়েনের কাঁধে মাথা রাখে।আটটা বাজার কিছুক্ষন এয়ার হোস্টেজরা এসে সবাইকে বলল সিটবেল্ট লাগাতে।রোয়েন রুহীর আর নিজেরটা লাগিয়ে নেয়।কিছুক্ষন পর হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে প্লেন চলতে আরম্ভ করে।রুহী রোয়েনের সাথে অনেকটা ঘেঁষে বসে।রোয়েন এবার একহাত বাড়িয়ে রুহীকে নিজের সাথে অনেকটা লাগিয়ে নেয়।ওদের সিট পড়েছে জানালার কাছে।প্লেন ছুঁটে চলছে নিজ গন্তব্যে।দশটায় সবাইকে ডিনার দিয়ে দেয়া হয়।এগারোটার মাঝে প্লেনে আঁধার নেমে আসে।রোয়েন এবার রুহীর কানের লতিতে কামড়ে দেয় আলতো করে।রুহী দ্রুত রোয়েনের দিকে তাকায়।তারপর বলল,
.
.
-”হলোটা কি আপনার?”
-”আমাকে না দেখে বাহিরে কি দেখছো?”রেগে গেলো রোয়েন।
-”মেঘ দেখছিলাম।আপনাকে তো সারাদিন দেখি।”
-”তারমানে আর দেখতে ইচ্ছে হয়না আমাকে?”
.
.
রোয়েনের কথায় অভিমানের ছোঁয়া পায় রুহী।এবার রোয়েনের গালে চুমু খেয়ে বলল,
.
.
-”আপনাকে যতো দেখি ততোই দেখতে মন চায়।ভীষন ভালবাসি যে।”
.
.
রোয়েন এবার রুহীকে জড়িয়ে বুকে নিয়ে বলল,
.
.
-”রুহী!!!”
-”জি বলুন।”
-”কিছু শুনতে পাচ্ছো?”
-”আপনার হৃদস্পন্দন। ”
-”জানো তুমি আছো বলেই এর স্পন্দন টা এখনও আছে।”
-”হুম।আমি কখনো যাবোনা আপনাকে ছেড়ে।অনেক ভুল করেছিলাম।কিন্তু আমি সৌভাগ্যবতী বলেই আপনাকে পেলাম আমার জীবনসঙ্গী করে।”
-”অন্য কেউ হলে মাফ করতে পারতামনা।কিন্তু তোমাকে মাফ না করলে হারিয়ে ফেলতাম।তখন তো জীবিত থেকে মৃত থাকতাম আমি।”
.
.
রুহী আলতো হাতে রোয়েনের ঠোঁট স্পর্শ করে বলল,
.
.
-”একদম বাজে বকবেননা।”
-”হুম।”
.
.
রোয়েন এবার রুহীর মুখ উঠিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে ওর ঠোঁটজোড়ায় চুমু দিতেই পাশের সিটের বৃদ্ধ উঠে হন হন করে বাথরুমে চলে যায়।রুহী ভয় পেয়ে বলল,
.
.
-”মনে হয় দেখে নিয়েছে রোয়েন।”
-”তো কি হয়েছে?”
-”মানে কি?ছি ওনি কি মনে করবেন?”
-”আমার বৌকে চুমু খেয়েছি তাতে ওনার কিছু মনে করার কি আছে।”
.
.
রোয়েনের কথায় কিছু বলার ভাষা পায়নি রুহী।রোয়েন রুহীকে জড়িয়ে ওর কপালে চুমু খায়।রুহী এবার সরে এলো বুড়ো লোককে ফিরে আসতে দেখে।তবে একটা ব্যাপার ও খেয়াল করলো লোকটাকে ধরে আনছে একজন কেবিনক্রু।লোকটার হাতে লাঠি।রোয়েন ও সেদিকে তাকায়।রুহী বলল,
.
.
-”ওনি অন্ধ!!!”
-”এমন অনেক কিছু আছে রুহী যেটা তুমি কখনোই করোনা।খুব খারাপ ব্যাপারটা।দুনিয়ায় বাঁচতে হলে চোখ কান খোলা রেখে বাঁচতে হবে।তোমার মতো এমন হলে যে কেউ সহজে ক্ষতি করতে পারবে।”
-”যেমন সামির আর নানা নানু!!”
.
.
আগের করা ভুল গুলো আবার ও রুহীর ভেতর সতেজ হয়ে উঠে।নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনা রুহী।গুঁমড়ে কেঁদে উঠে রোয়েনের বুকে।আসলেই আমাদের আশেপাশে আমাদের আপনজন এমন অনেকেই থাকেন যাদের সুন্দর মুখের আড়ালে তাদের বিষাক্ত সাপময় চিত্রটি লুকানো থাকে।আমরা সময় থাকতে তাদের চিনতে পারিনা।যখন নিজেদের কোন ক্ষতি হয়ে যায় তাদের দ্বারা তখন হুঁশ হয় আমাদের।কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে!!পরদিন যথাসময়ে প্লেন ল্যান্ড করলো দার্জিলিং এয়ারপোর্টে। রুহী আর রোয়েন নেমে পড়ে।সেখানে ইমিগ্রেশন কম্পলিট করে রওনা হয় রোয়েনের ঠিক করা হোটেলের উদ্দেশ্যে।হোটেলটির নাম Chamong chiabari.এটি একটি হানিমুন রিসোর্ট যেটা কিনা পাহাড়ের ওপর বানানো।অবশ্য সেখানে পৌছাতে বেশি কষ্ট হয়নি ওদের।রাস্তাও বেশ মসৃন।হোটেলে পৌছুতে রাত দশটা বেজে গেলো।রুহীর চোখে ঘুম নেমে এসেছে।হোটেলে পৌছে চেয়ারে বসে ঝিমুতে থাকে রুহী।রিসিপশনে আসে রোয়েন।সেখান থেকে চাবি নিয়ে রুহীর দিকে এগিয়ে আসে।রুহী লাগেজের হ্যান্ডেলের দুহাত রেখে সেই হাত জোড়ার ওপর থুতনি চেঁপে চোখ বুজে আছে।রোয়েন ওর পাশে বসে পড়ে।তারপর আস্তে আস্তে ডাকতে শুরু করে।
.
.
-”রুহী উঠো।”
-”উহুম।”
-”রুহী রুমে যেয়ে ঘুমাও।এটা ঘুমের জায়গা না।”
-”উঠতে পারছিনা।”
.
.
রোয়েন উঠে রুহীকে কোলে তুলে নেয়।ওদের লাগেজ রুম সার্ভিসের ছেলেরা পৌছে দেবে।রুহীকে রুমে নিয়ে আসে।ওদের রুমটা নিচতলায়।অবশ্য এ হোটেলের আর ফ্লোর নেই।রুহীকে খাটে শুইয়ে ওর গায়ের কোটটা খুলে নেয় রোয়েন।রুহী ভিতরে শাড়ী পরে আছে লাল রং এর।রোয়েন এবার রুহীর কোটটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে নিজের কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আজ আর বাহিরে খেতে পারবেনা।তাই রুম সার্ভিসের লোকদের কল করে খাওয়া পাঠাতে বলে।ওদের রুমটা বেশ বড় আর সুন্দর।ফ্লোরে লাল পশম ওয়ালা পাপশ।সেটা বেশ বড়।বেড টা হার্ট শেপড।লাল চাদর বিছানো।রুমের ডান সাইডে আছে বড় জানালা।কালো পর্দা টানানো সেখানে।রুম ডেকোরেশন টা ও বেশ।খাওয়া চলে এলো।বিল পে করে এসে বসলো রোয়েন।ওর বৌ ঘুমে বিভোর।রুহীকে ডেকে জোর খাইয়ে দেয় রোয়েন।তারপর নিজে ও খেয়ে নেয়।এয়ারপোর্ট থেকে একটা সিম নিয়ে ছিলো।সেটা ফোনে সেট করে বাংলাদেশে কল দেয়। এদিকে রেজোয়ান মাহবুব কাজ সেড়ে বাসায় ফিরে আসে।সারা বাসা জুড়ে নিস্তব্ধতা বিদ্যমান।বড় একা তিনি খুব একা।অবশ্য রুহীর মা মারা যাওয়ার পর একাকীত্বকে আপন করে নিয়েছেন রেজোয়ান মাহবুব।খাটে শরীর এলিয়ে দিতেই ওনার ফোন বেজে উঠে।ফোন চেক করে দেখেন রোয়েন কল করেছে।দ্রুত কল রিসিভ করেন ওনি।
.
.
-”আপনারা কখন পৌছালেন?”
-”দশটায় আসলাম।দার্জিলিং এ নেমেছিলাম আটটায়।ইমিগ্রেশন শেষ করতে করতে নয়টা বাজলো।হোটেলে দশটায় এসে উঠলাম।”
-”আপনারা ভাল আছেন তো?”
-”হুম।রুহী বেশ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।ওখানকার কি খবর?”
-”এই তো ভাল।কাজ চলছে।তা খেয়েছেন আপনারা?”
-”হুম।আচ্ছা আমার ও খারাপ লাগছে।কাল কথা হবে।”
-”জি। আল্লাহ হাফেজ।”
.
.
রোয়েন ফোন কেঁটে রুহীর দিকে তাকায়।মেয়েটা রোয়েনের হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।রোয়েনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে।রুহীর ঘুম যেন না ভাঙ্গে সেজন্য ওভাবে ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে রুহীর ঘুম ভাঙ্গে।পাশে তাকিয়ে দেখে রোয়েন একদম কিনারে ঘুমুচ্ছে।রুহী উঠে রোয়েনকে টেনে একটু কাছে নিয়ে আসে।নাহলে রুহী সরে গেলে পড়ে যেতো।রুহী উঠে লাগেজ থেকে ব্রাশ,ফেসওয়াশ, সোপ আর জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসে।ওয়াশরুমে ডাবল বাথটব আছে।রুহী নিজের কাজ করতে থাকে।রোয়েনের ঘুম ভেঙ্গে পাশে রুহীকে পায়না।আড়মোড় ভেঙ্গে বিছানায় উঠে বসে।রুহী ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো রোয়েন রুম নেই।বেশ অবাক লাগে ওর।কই গেলো ওনি?ওকে এভাবে একা রুমে ফেলে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে খাটের দিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে রুহী।তখনই রুহীর পেট আর কোমড় দুটো হাত পেঁচিয়ে ধরে।কাজটা এভাবে হওয়ায় রুহীর ভয় পাওয়া উচিৎ ছিলো কিন্তু সেটা মোটেই পায়নি ও।বরং ওর মাঝে একটা গভীর ভালো লাগা কাজ করছে।রুহীর গায়ে সাদা পশমি বাথরোব জড়ানো।রোয়েন আলতো হাতে রুহীর বাথরোবের ফিতাটা খুলে দেয়।তারপর ওর কাঁধ থেকে বাথরোবটা সরিয়ে সেখানে মুখ নামিয়ে আনে।রুহীর কাঁদে ভারি ভারি চুমু ভরিয়ে দিতে থাকে রোয়েন।রুহী নিজেকে সামলাতে পারছেনা।রোয়েন রুহীকে কোলে করে খাটে এনে বসায়।তারপর ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে শুইয়ে দেয় রুহীকে।রুহীর গলায় ঘাড়ে চুমু দিয়ে রুহীর পেট থেকে বাথরোব সরিয়ে সেখানে ঠোঁট ডুবায় রোয়েন।আবার ও একে অপরকে ভালবেসে আপন করে নিতে থাকে।
এদিকে রেজোয়ান মাহবুব সকাল হতেই অসুস্থ বোধ করছেন।তারপর ও বেশ কষ্ট করে অফিসে চলে আসেন।কিন্তু কোনরকমে বসে থাকতে পারছেননা।ভাবলেন এক কাপ কফি খেলে হয়ত ভাল লাগবে।ভেবে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান।কিন্তু একদুপা এগুতেই নিচে পড়ে যান।তারপর আর খেয়াল নেই ওনার।এদিকে রুহী আর রোয়েন দীর্ঘ ভালবাসাবাসির পর উঠে ফ্রেশ হয়ে ক্যাফেতে এসে নাস্তা করে নেয়।একটু পর বের হবে ওরা টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে।ওরা নাস্তা করে রুমে চলে আসে।রুহী কালো একটা সিল্কের শাড়ী পরে নিয়েছে।আর রোয়েন কালো রং এর শার্ট আর ওপর ধূসর বর্নের ব্লেজার।রুহী রোয়েন কে দেখে মুচকি হেসে আয়নার দিকে তাকায়।রোয়েন এবার বাঁকা হেসে বলল,
.
.
-”আজ যে হোটেলে দিনটা কাঁটাতে ইচ্ছে করছে।
.
.
কথাটা বলে রুহীর ঠোঁটে চুমু খেতে গেলে রুহী সরে আসে।
.
.
-”না এখন বের হবো রোয়েন।”
-”রুহী প্লিজ আসো।”
-”এগুলো ঠিক না।আমি বের হবো প্লিজ।”
.
.
রুহীর মুখের দিকে তাকায় রোয়েন।তারপর বলল আচ্ছা চলো।দুজনে বেরিয়ে আসে।এখান থেকে একঘন্টার দুরত্বেই টাইগার হিল।এটার বিশেষত্ব হলো এই পাহাড়ের ওপর থেকে সুর্যটাকে খুব সুন্দর লাগে।পুরো রাস্তায় রোয়েন দুষ্টমি করছিলো।ওরা পৌছে যায় টাইগার হিলে।দুজনে একসাথে সূর্যকে দেখতে থাকে।
এক পর্যায়ে সুর্য অস্ত যায়।রোয়েন রুহী বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।এদিকে রেজোয়ান মাহবুবের জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করেন।বেশ অবাক হয়ে যান ওনি।হঠাৎ ওনার বিস্ময় কাঁটিয়ে রুমে আগমন করেন আনিলা শোহরাব।
চলবে