The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 46

→খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে।রুহী এখন ও খায়নি কিছুৃ।শুধু কান্না করছে।কতোটা দিন হয়ে গেলো লোকটার মুখে ভালোবেসে রুহী ডাক শুনা হয়না তার রাগ মাখা ভালোবাসা পাওয়া হয়না।তার জোর করে নেয়া আদর গুলো পেতে বড্ড ইচ্ছে হয়।রুহী খুব চায় রোয়েনকে খুব ভালোবাসতে চায়।আর এসময় গুলো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ওদের জন্য কতো টা স্পেশাল।রুহী নিজের হাতেই সব শেষ করে দিলো নষ্ট করে দিলো।এসময়টাতে আজ ওরা একসাথে থাকলে কতোইনা ভাল হতো একসাথে শপিং করতো কিছু সুন্দর মুহূর্ত একসাথে কাঁটাতো।কিন্তু সব শেষ মনে হচ্ছে।রুহীর মন বলছে এখন হয়ত ওনি এসে ডাকবেন,নিজ হাতে খাওয়াবেন,বুঝাবেন বুকে নিয়ে ঘুমাবেন।সব এখন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।সে যখন সামনে দিয়ে হেঁটে যায় রুহীর ইচ্ছে হয় জোরে জড়িয়ে ধরতে তাকে।তার বুকে মুখ গুঁজে নতুন স্বপ্ন বুনতে কিন্তু স্বপ্ন গুলোকে হয়ত খুন করে ফেলেছে রুহী।ওদের একটা সংসার হবে ভালবাসার সংসার কিন্তু রোয়েন হয়ত কখনো ওকে কাছে টেনে নিবেনা হয়ত কখনো একসাথে জোছনা বিলাস করা হবেনা।রুহী কেন ওনাকে সেদিন এসব বলতে গেলো?ভাবতেই রুহীর নিজের ওপর রাগ লাগছে।প্লেট হাতে নিয়ে রুহী কথা গুলো ভাবতে থাকে।আর যাই হোক ওর গলা দিয়ে খাবার নামবেনা।রুহীর চোখজোড়ায় ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুর আশ্রয় হচ্ছে।রুহীর পাশে বসে নীরা হামিদ খাবার শেষ করে রুহীর দিকে তাকায়।মাথা নিচু করে আছে মেয়েটা।নীরা হামিদ রুহীর কাঁধে হাত রেখে ওকে ডাক দেন,
.
.
-”রুহী!!খাচ্ছিস না কেন?”
.
.
নীরা হামিদ অনূভব করলেন রুহীর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।ভিতর থেকে ফোঁস ফোঁস শব্দ ভেসে আসছে।নীরা হামিদ রুহীর চিবুক ধরে ওর মুখ তুলে ধরেন।নীরা হামিদ চমকে যান।মেয়েটা এতসময় পর্যন্ত কাঁদছিলো।অবশ্য কয়েকদিনে রুহীর চোখ মুখ ফুঁলে গেছে।সাজানোর সময় খেয়াল করেন চোখের নিচে কালি।নীরা হামিদের খুব কষ্ট লাগে।বেচারী বড় কষ্টে আছে।নীরা হামিদ এবার আস্তে বললেন,
.
.
-”একটু খেয়ে নেয় রুহী!!!”
-”না মামী আমার একদম ভালো লাগছেনা।গলা দিয়ে খাবার নামবেনা।”
.
.
রুহীর হাত থেকে প্লেটটা টেনে নিলেন নীরা।তারপর এক লোকমা তুলে ধরেন ওর দিকে,
.
.
-”জানিস ছোট বেলায় আমার হাতে খেতে খুব পছন্দ করতি।যখন বলতাম রুহী এখন না আমার কাজ আছে তুই কেঁদে বুক ভাসাতি।জোর করতি মামী আমাকে খাইয়ে দাও।আজ আমার বড় মেয়েটা বউ হচ্ছে।তাই মামী আজ বড় মেয়েটাকে খাইয়ে দিবে।ধর মা খেয়ে নেয়।”
.
.
কথা গুলো বলার মাঝেই মামীর চোখজোড়া ছলছল করে উঠে।রুহী ও না করতে পারেনা আর।খেয়ে নেয় মামীর হাতে।রোয়েন পুরো ব্যাপারটাই দেখেছে ডাইনিং রুমে বসে।রামীন রোয়েন রেজোয়ান মাহবুব আর শামীম একসাথে খেতে বসেছে।সবাই খেয়াল করে রোয়েন খেতে পারছেনা অথচ সারাদিনে এক মগ কফি ছাড়া কিছুই খাওয়া হয়নি ওর।কিন্তু খেতে পারছেনা।সবাই ওকে এটা ওটা নিতে বলছে কিন্তু যেখানে মনের ক্ষুধায় মরমর অবস্থা সেখানে পেটের ক্ষুধা কিছুনা।রামীন রেজোয়ান অনেক বলে একটু খাওয়ায় রোয়েনকে।এগারোটার পর সবাই বেরিয়ে যায়।নানা নানুকে পাঠানো যাচ্ছিলোনা।মামা বড় কষ্টে ওনাদের নিয়ে গেছেন।ওনারা বারবার বলছিলো রুহীকে ছেড়ে যাবেনা।কারন ওনাদের অনুপস্থিতিতে রোয়েন যদি রুহীর সাথে অসভ্যতা করে।তবে আরমান হামিদ মা বাবাকে জোর করে নিয়ে যান।সবাই চলে যায়।রোয়েন আর রুহীই থেকে যায়।রোয়েন চুপচাপ রুমে চলে যায়।রুহী ও রুমে চলে আসে।রুমে এসে দরজা লাগিয়ে হাতটা দেখে অনামিকা আঙ্গুলের আংটিতে বেশ বড় সাদা ডায়মন্ড লাগানো।বেশ সুন্দর লাগছে ওর হাত টাকে।হঠাৎ রুহী খেয়াল করে ওর হাতের কবজি টায় ব্যাথা অনূভব হচ্ছে।রুহী দেখে কবজিটা লাল হয়ে আছে।ওনিই তো জোরে ধরে ছিলেন আংটি পরাতে।রোয়েন প্রায়ই এভাবে জোরে ধরে।তখন ব্যাথা থাকেনা।আজকেরটা এখন ও আছে।আংটি পরিয়েছিলো নয়টায়।যেখানে বাজে এখন সাড়ে এগারোটা।রুহী ব্যাথার জায়গায় অশ্রুসিক্ত চুমু খায় যেন রোয়েনের হাতে চুমু দিলো।আংটি টাতে ও চুমু খেয়েছে কারন ওনিই পরিয়েছেন।রুহী দরজা ঘেঁষে ফ্লোরে বসে হাঁটুর ওপর মুখ গুঁজে দেয়।কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে ওর হালকা শরীর খানা।
এদিকে সকালে রোয়েনের জন্য ঠিকই নাস্তা বানায় কিন্তু সে না খেয়েই চলে যায়।রোয়েন অফিসে এসে দেখলো ওর লোকেরা হাসাহাসি করছে।রোয়েন ভিতরে ঢুকতেই শামীম আঙ্গুল মুখের সামনে রেখে সবাই চুপ করতে ইশারা করে কাজের জায়গায় চলে যায়।রামীন রাসেল,ফাহিম গল্প করছে।রামীন বলল,
.
.
-”হলুদ তো রোয়েনের বাসায় হবে। ও কোথায় ঠিক করে কে জানে?তবে সব গুলো দালানে লাইটিং করতে হবে।মসজিদ ছাড়া।রুহী আমাদের সবার বোন।সো সবার বিল্ডিং এ লাইটিং হবে।”
.
.
মাঝে রাসেল বলল,
.
.
-”স্যার লাইটিং এর লোকদের আজকেই খবর দেই। কারন কতো গুলো বিল্ডিং সময়ের ব্যাপার।”
-”হুম ঠিক বলেছো।তাহলে এখনই কল দাও।ওনারা নাহলে এসে বিল্ডিং দেখে খরচ নির্ধারন করবে।”
.
.
রাসেল বলল,
.
.
-”বড় স্যারের ঘরে ফুল লাগাইতে হবে।
.
.
রামীন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল,
.
.
-”হুম।তারপর ও যদি তোদের বস একটু নরম হয়।”
.
.
কথাটা বলার মাঝেই রামীন রাসেল আর ফাহিমের পিছে রোয়েনকে দেখতে পায়।রোয়েন রাগী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।রামীন বলল,
.
.
-”রোয়েন তুই যা আমি আসতেছি।”
.
.
রোয়েনের কথা শুনে রাসেল আর ফাহিম দ্রুত পদে সরে গেলো।কাজ বাদ দিয়ে গল্প করা বের করবে রোয়েন।রামীন উঠে রোয়েনের রুমে আসতেই রোয়েন বলল,
.
.
-”ওসব কি বলছিলি ওদের সামনে?”
-”ওই বলছিলাম আরকি,,,,,,,,,,!!!’
-”আমি সাড়ু????”রেগে যায় রোয়েন।
-”দেখ আমি ফাজলামো করছিলাম।বাট রুহীর দিকে একটা বার দেখেছিস কি হাল করেছে মেয়েটা নিজের?রোয়েন একটু ওর কথাটা ও ভাব মেয়েটা নানা নানুর কাছেই বড় হয়েছে।ওনাদের প্রতি ওর ভালোবাসা থাকা টাকি স্বাভাবিক নয়?বল?ওনাদের বিরুদ্ধে ওকে আনাটা সহজ হবেনা যতক্ষননা পর্যন্ত ওনাদের আসল রুপ ওর সামনে আসবে।আর তুই কি করছিস?সময় দিসনি মেয়েটাকে।যা বলছিস ওকে এখনই বিশ্বাস করতে হবে।এখনই মানতে হবে।কেন?কিছুটা চিৎকার করে বলল রামীন।”
-”রামীন আমি জানি সেটা।আমি চাইছিলাম ওনারা বিয়েতে না আসুক।কোন রকমের রিস্ক নিতে চাইনা সেটা যখন রুহীর ওপর আসবে।ও কথাই শুনে না আমার।না শুনে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিলো।শুন ও শাস্তির যোগ্য।ওর বুঝতে হবে এই দুনিয়া ওর মতো ভোলাভালা না।সবাই ওর মতো না রামীন।”রেগে গেলো রোয়েন।
-”সুযোগ টাতো দে।”শান্ত ভাবে বলল রামীন।
-”লিসেন এ সময়ে কোন আর্গুমেন্টস চাইনা।একটু শান্তি দিবি আমাকে?”
-”ঠিক আছে রাখ তুই শান্তি আমি চললাম।”
.
.
রামীন উঠে চলে যেতে চায়।রোয়েন দৌড়ে ওকে থামায়।রামীন পিছনে তাকায়।রোয়েনলর চেহারা শান্ত দূর্বল।রোয়েন বলল,
.
.
-”রামীন খুব কষ্ট হচ্ছে ওকে ছাড়া।আমি চাই ও শক্ত হোক।আমি চাই ও মানুষ চিনুক।আমার কিছু হয়ে গেলে ও যেন ও একা বাঁচতে পারে।ফাইট করতে পারে।বড্ড ভালবাসি ওকে।জানিস ওকে বুকে না নিয়ে ঘুমালে ঘুম হয়না আমার।তুই অন্তত বুঝ আমাকে প্লিজ।”
-”কিন্তু মেয়েটাও কষ্ট পাচ্ছে রোয়েন।যা কর জলদি কর।এটা তোর ফ্রেন্ড না রুহীর ভাই বলছে।”
.
.
রোয়েন রামীনকে জড়িয়ে ধরে।এদিকে রুহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নীরা আশফিনা, সামায়রা আর তাঞ্জুম।রুহীর হলুদ মেহেদী আর সংগীতের কেনা কাাটা করবে আজ।কারন তিনটা একসাথে পড়ে গেছে।রুহীকে যাই জিজ্ঞেস করা হচ্ছে মন খারাপ করে উত্তর করছে রুহী।ওদের সবার মন খারাপ হয়ে যায় রুহীকে দেখে।অনেক্ষন কেনাকাটার পর ওরা সবাই খাওয়ার দোকানে ঢুকে।আশফিনা নীরাকে বলল,
.
.
-”মামী অাপনি মাশাল্লাহ খুব সুন্দরী এখনো?মামা বুঝি খুব আদর করে?”
-”যাহ পাজি কি বলিস? ”
-”সত্যি মামী আপনি খুব সুন্দরী।আপনাদের কি লাভ মেরেজ?”
-”আহুম।যখন আমাদের বিয়ে হয় রুহীর ছমাস বয়স ছিলো।”
-”ওহ।”
-”তা কি খাবি তোরা?”জিজ্ঞেস করেন মামী?
.
.
আশফিনা আর সামায়রা বলল,
.
.
-”দই ফুচকা খাবো।”
-”তাঞ্জুম কি খাবে তুমি?তোমার বড় তুমি করে বললাম মাইন্ড করোনা।”
-”না মামী কি যে বলেন।আমি স্যান্ডুইচ নিচ্ছি।”
-আচ্ছা ঠিক আছে।আর রুহী তুই কি খাবি?
.
.
এতো সময় রোয়েনের চিন্তায় বিভোর ছিলো লোকটা কি ভুলটা ভুলে গিয়ে ওকে আপন করে নিতে পারছেনা।বাগদত্তা ও রোয়েনের।তার চেয়ে বড় কথা রোয়েন তো ওকে খুব ভালবাসে।তাহলে এমন করছে কেন?নীরা হামিদ দুবার ডাকেন কিন্তু রুহীর কোন জবাব নেই।মেয়েটা পাথর হয়ে গেছে যেন।তাঞ্জুম রুহীর কাঁধে হাত রেখে ডাকে,
.
.
-”রুহী!!!!”
-”ওনাকে কথা বলতে বলো প্লিজ।আর কিছু চাইনা আমার।”
.
.
রুহীর কথায় ওরা বুঝলো ওদের গল্পে রুহীর মন নেই।থাকবেই কি করে মন টাতো ভালেবাসার মানুষটার কাছে পড়ে আছে।কিন্তু নিজ হাতে নষ্ট করে ফেলেছে ও সব।বিয়েতে যেখানে ওদের দুজনের খুশি থাকার কথা ছিলো ভালবাসায় মাখামাখি হওয়ার কথা ছিলো সেখানে দুজন কাছে থেকে ও দূরে।তবে দুজনের মন দুজনায় জড়িয়ে আছে,ভালবাসায় যত্নে।
চলবে