The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 44
রুহী উঠে রুমে চলে যায় বেশ রাত করে রোয়েনের রুমের সামনে বসে থাকার পর।সেদিন রাতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে না খেয়ে।নির্ঘুম রাত কেঁটে যায় দুজনের।রুহীর চোখের পানি ফেলে আর রোয়েনের সিগারেটের কালো ধোঁয়া উড়িয়ে।পরদিন সকালে উঠে রুহী রোয়েনকে পায়না।এতো সকালে কোথাও যাননা ওনি।তাহলে কোথায় গেলেন?রুহী এবার জানালা দিয়ে বাসার পিছনের সুইৃমিংপুলের দিকে তাকায় যেখানে কোব্রা আর কিং থাকে।রুহী খেয়াল করলো রোয়েন বসে কোব্রা আর কিংকে আদর করছে।রুহী নিচে নেমে এসে সুইৃমিংপুলে ঢুকার গেটটা খুলে সেদিকে তাকায়।রোয়েন নিজ হাতে ওদের মাংস খাওয়াচ্ছে আর কি যেন বলছে।রুহী কথা গুলো শুনার চেষ্টা করলো।রোয়েন বলছে,
.
.
-”তোরা প্রানী হয়ে ও মানুষ থেকে বেশ ভালোই বুঝিস আমাকে।জানিস যাকে এতো বেশি ভালোবাসি সে তার লোভী নানা নানুর জন্য আমাকে ছাড়তে রাজি।বুঝতে পারছিস কেমন লাগছে আমার?হয়ত জীবন্ত দেখাচ্ছে কিন্তু ভিতর থেকে একেবারের মরে গেছি আমি।আমার রুহ টাই চলছে খালি।রুহী কেন বুঝেনা বলতো?কেন ভালোটা বুঝেনা নিজের?কেন আমাকে বিশ্বাস করলোনা ও?প্রত্যেকটা রাত নির্ঘুম কাঁটছে আমার।বুকটা অনেক খালি লাগে।ওকে কাছে পেতে মন চায়।কিন্তু যখন মনে পড়ে আমার রুহী আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে কিন্তু ওর নানা নানুকে ছাড়া না তখন খুব কষ্ট হয়।ইচ্ছে করে সব শেষ করে দেই।কিন্তু পরমুহূর্তে মায়াবতীকে বড্ড মনে পড়ে ওর চেহারাটা দেখতে পাই।জানিস তখন হাত পা অসাড় হয়ে যায়।ছোট বেলায় মাকে দেখিনি।বাবার তো কোন খবরই নেই।তার যে ছেলে আছে তার হয়ত মনেই নেই।ভালবাসার মতো রামীনকে পেয়েছিলাম আর তোদের।কিন্তু জীবনটাকে আলোকিত করে এলো রুহী।সে আমাকে বুঝতে পারছেনা।তার ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে পারছেনা।তোদের এতো কথা বলছি হয়ত বুঝিসনি কিছুই কিন্তু আমার কষ্টটা তোরা ঠিক বুঝতে পেরেছিস।কিন্তু মায়াবতী বুঝবেনা।”
.
.
রোয়েনের কথা গুলো শুনছিলো রুহী। শোনার মাঝেই ওর চোখজোড়া ভরে আসে।মুখে দুহাত চেঁপে কাঁদতে থাকে।আর শুনতে পারেনা কিছু।ওর গা কাঁপছে।কিভাবে সামলাবে নিজেকে?লোকটার কষ্ট আর সহ্য হচ্ছেনা।বড় কোন ভুল কি হয়েই গেলো ওর দ্বারা?রুহী দৌড়ে ঘরে চলে আসে।নিজের রুমে এসে দেয়ালের সাথে ঘেঁষে নিচে বসে কাঁদতে শুরু করে।ও বুঝে লোকটাকে তার কষ্ট বুঝে রুহী।ওর ও খুব কষ্ট হয় লোকটার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে না পারলে।তোর স্পর্শ না পেলে।তার মুখে রুহী ডাকটা না শুনতে পেলে।লোকটাকে ও বুঝে।কিন্তু আজকাল নিজেকে অযোগ্য মনে হয় লোকটার ভালোবাসা হয়ত ওর জন্য ছিলো না।তাই ওর জন্য লোকটা কষ্ট পাচ্ছে খুব কষ্ট পাচ্ছে।খুব কাঁদতে থাকে রুহী।কিছুসময় পর রোয়েন ঘরে ফিরে আসে।রুহী নাস্তা বানিয়ে রাখে টেবিলে কিন্তু না খেয়ে বেরিয়ে যায় রোয়েন।এটা এখন সবসময়ই হয় তবু ও রুহীর বুক ফেঁটে আসে। তবে রুহী সবসময় কার মতো রামীনকে কল দিয়ে জানায় রোয়েনের না খাওয়ার কথা।অফিসে আসে রোয়েন।তার কিছুসময় পর রামীন নাস্তা নিয়ে আসে।রোয়েনের সামনে বসে পড়ে।রোয়েন ভ্রু কুঁচকে রামীনের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
.
.
-”আজ ও নাস্তা করিসনি?”
-”না!!!”
-”ইদানীং খেয়াল করছি ঘরে নাস্তা করিস না তুই।”
-”এতো সকালে খেতে ভালো লাগেনা দোস্ত।চল তুই ও খা।”
-”না আজ খেয়ে নে।ভালো লাগছেনা।”
-”তোর কি হলো?কয়েকদিন যাবৎ মন মরা হয়ে আছিস?চেহারার কেমন হাল করলি?কয়েকদিন পর বিয়ে। ”
-”দেখ এখন এসব ভালো লাগছেনা রামীন।খেয়ে কাজ কর।”
-রোয়েন তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। কি লুকাচ্ছিস বলতো?”
-”রুহীর নানা নানু আসবে।”
-কেন?তোর তো ওনাদের পছন্দ না।”
-”রুহী জেদ করছে।যার কারনে ঝগড়া হয়েছে ওর সাথে।”
-”কথা বলিস না?”
-”না।আর বলবো ও না।”
-”এসব কেমন কথা রোয়েন?ওকে বুঝা।”
-”আর কতো বুঝাবো বল?একুশ বাইশ বছরের মেয়ে ও।কতো বুঝাবো ওকে যে রুহী তোমার নানা নানু ভালো না।তারা তোমাকে না তোমার টাকা কে চায়।কতো বুঝাবো বল?”আচমকা চিৎকার করে উঠে রোয়েন।
.
.
বন্ধুকে এভাবে রেগে যেতে দেখে চমকে উঠে রামীন।রোয়েনের হাত ধরে ও।তারপর বলল,
.
.
-‘রোয়েন বুঝতে পারছি কেমন লাগছে তোর?বাট তুই তো রুহীকে ভালোবাসিস ওকে বিয়ে করবি।”
-”রামীন আমার আর ভালো লাগছেনা।প্লিজ একা ছেড়ে দেয় আমাকে।”
-”ওকে।কাজ কর তুই।”
.
.
রামীন উঠে চলে যাচ্ছিলো রোয়েন ওকে থামায়।
.
.
-”শোন!!”
-”বল।সাতদিন ২৫তারিখে আমাদের এ্যাংগেজমেন্ট রুহী কে জানিয়ে দিবি আজকে।”
-”ঠিক আছে কিন্তু সব যত দ্রুত ঠিক করবি ততো ভালো হবে।”
.
.
কথাটা বলে রামীন নিজের ডেস্কে চলে যায়।রোয়েন কিছু বলে না আর।সেদিন বিকেলে রামীন রোয়েনের বাসায় আসে।রুহী নামাজ পড়ে উঠে রামীনকে দেখতে পায়।সোফায় বসে আছে ও।রুহী রামীনের সামনে এসে দাঁড়ায়।
.
.
-”ভাইয়া আপনি?ভালো আছেন?”
-”হুম।তুমি ভালো আছো?”
-”জি ভাইয়া এইতো আছি।”
.
.
রামীন বুঝতে পারে কতোটা ভালো আছে রুহী।তা ওর চেহারা দেখে বুঝা যায়।রামীন বলল,
.
.
-”তোমার চেহারাই বলে দিচ্ছে খুব খুশি তুমি।তা একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”
.
.
রামীনের কথায় রুহী ভাবে কথাটা ওকে কি হিসেবে বলল ভাইয়া?খোঁচা মেরে নাকি সহানুভূতি ছিলো।রুহী জিজ্ঞাস করলো,
.
.
-”কি ভাইয়া?”
-”রুহী ২৫ তারিখ তেমাদের এ্যাংগেজমেন্ট।”
.
.
রুহী মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে নিঃশব্দে।
.
.
-রুহী কি হয়েছে তোমাদের মাঝে জানিনা।তবে ওকে বুঝাও বুঝবে ও।বড্ড ভালবাসে তোমাকে।”
.
.
রুহী এর প্রতুত্তরে কিছুই বলেনি।বিদায় ও জানায়নি রামীনকে।এদিকে আশফিনার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।পাঁচদিন পরই ওর ফ্লাইট। রামীনকে ছেড়ে যেতে মন চাইছেনা অন্যদিকে রুহীর বিয়ে।আশফিনা মন খারাপ করে খাটে বসে আছে।রামীন ওর পাশে।রামীন আসার পর থেকেই খেয়াল করছে আশফিনার মন খুব খারাপ।রামীন আশফিনার গালের কানের ওপরের চুল গুলো সরিয়ে কানে চুমু দেয়।তারপর বলল,
.
.
-”কি হলো মন খারাপ কেন?”
-”২৩ তারিখ ফ্লাইট।যেতে মন চাইছে না।”
-”কেন?”
-”আরেহ বান্ধুবীর বিয়ে।বিয়ে না খেয়ে চলে যাবো নাকি?”
-”আর কোন কারন নেই?কাউকে মনে পড়বেনা?”
-”পড়বে তো আঙ্কেল কে রুহীকে।”
-”ওহ।”
.
.
রামীন চুপ হয়ে যায়।আশফিনা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।ও বুঝতে পারছে রামীন কি ভাবছে।আশফিনা রামীনের বুকে মাথা রেখে বলল,
.
.
-”আপনাকে ও খুব মনে পড়বে।ভালোবাসি তো। কি করবো বলুননা?আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?”
-”তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে নাও।”
-”ওকে আজ কল দিবো।”
-”আমাকে জানাবে ওনারা কি বলল।”
-”হুম।”
.
.
আশফিনা রামীনকে জড়িয়ে বসে থাকে।এদিকে দুদিন পর তাঞ্জুম,নীরা আর আশফিনা রোয়েনের বাসায় আসে বিকেলে।আশফিনা ও থাকছে রুহীর বিয়েতে।ওর বাবা মা রাজি হয়েছেন।হঠাৎ ওদের দেখে রুহী অবাক হয়ে যায়।আশফিনা বলল,
.
.
-”রেডি হয়ে নে রুহী।”
-”কেন?”
-”ওমমা তোর এ্যাংগেজমেন্ট আর বলছিস কেন?”
-”ওহ ভুলেই গেছিলাম।”মন খারাপ করে বলে রুহী।
-”এটা কি ঠিক রুহী?তোর এ্যাংগেজমেন্ট আর তুই ভুলে গেলি?ভাইয়া জানলে রেগে যাবে।চল জলদি চল”
.
.
রুহী মনে মনে ভাবছে ওনি তো রেগেই আছে। কথাই বলছেনা কতোটা দিন হয়ে গেলো।রুহীর ভালো লাগেনা আর।রুহী উঠে রেডি হয়ে ওদের সাথে বেরিয়ে যায়।আজ এ্যাংগেজমেন্ট এর মার্কেটিং করেছে ওরা।রুহীর জন্য লেহেঙ্গা আর কিছু অর্নামেন্টস,কসমেটিকস।এদিকে রোয়েন নিজের শপিং নিজেই করেছে।দিন গুলো পার হতে থাকে।রুহী অনেক চেষ্টা করে কথা বলার জন্য তাকে মানানোর জন্য।কিন্তু কথাই বলেনা সে একদমই কথা বলেনা।এ্যাংগেজমেন্ট এর বাকি আর তিনদিন আর সেদিনই রুহী জানতে পারলো ওর নানা নানু এসে গেছে।বর্তমানে তারা রেজোয়ান মাহবুবের ঘরে অবস্থান করছে।রুহীর কোন ভাবেই মন সায় দিচ্ছেনা ওনাদের সাথে দেখা করবে কথা বলবে।
চলবে