The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 36

→রোয়েনের কিছু গোপনীয় লোক খুলনার মংলা সমুদ্র বন্দরের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।সেখানকার আবহাওয়া, রাস্তাঘাট,জনমানব সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিয়ে নেয়।এবং সে সব তথ্য রোয়েনের কাছে চলে আসে।রোয়েন জানতে পারে কিশানো পাঁচশত মানুষ নিয়ে আসছে
যেখানে রোয়েনের লোকরা সব মিলে আড়াইশত।তবে ভয় পায়না রোয়েন।হয় মারবে নয় মরবে।তবে পিছপা হবে না ও।রামীন রাইফেল টা বের করে সেদিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।মা বাবা রাইসা, রাজন ভাইয়া এমনকি আশফিনার কথা খুব মনে পড়ছে।রাইসা রামীনের একমাত্র ছোটবোন।সবে ইন্টার পাশ করলো।রামীনের দিকে চোখ পড়ে রোয়েনের।তারপর সামনে তাকিয়ে রোয়েন বলল,
.
.
-”এখন ও সময় আছে।”
-”আমি ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিনা।ভাবছিলাম,,,,,,,”
-”পরিবারকে মিস করছিস।বলেছিলাম দূর্বল হলে চলবেনা।”
-”সরি রোয়েন।কিছুক্ষনের জন্য ভয় লেগে গেছিলো”।এখন ঠিক আছি আমি।রুহীর সাথে কথা বলবিনা আর?
-”না।বেশ কষ্ট হয় রোয়েনের।”
.
.
হৃদয়টা কেঁপে উঠে ওর।কিন্তু দূর্বল হবেনা ও।কোনভাবেই না।কিন্তু মায়াবতীকে বড্ড ভালোবাসে ও।কিভাবে বাকি আটচল্লিশ ঘন্টা কাঁটবে মায়াবতীকে ছাড়া?
এদিকে রুহী সন্ধ্যার নাস্তার সময় রেজোয়ান মাহবুবের রুমে আসে।রেজোয়ান মাহবুব ফোনে কি যেন করছেন।
রুহী সকল লজ্জা ভেঙ্গে বলল,
.
.
-”বাবা তোমার সেলটা দিবে”?
-”কাজ করছি।কেন রে?”
-”শরৎ ভাইকে কল দিবো।”
-”দেখ ওরা ব্যাস্ত আছে।অযথা ঝামেলা পাকাস না”।
-”ওকে”
.
.
রুহী মন খারাপ করে রুমে আসে।আশফিনা রুহীকে দেখে চোখ মুছে নেয়।তারপর বলল,
.
.
-”কই ছিলি”
-”বাবার কাছে গেছিলাম শরৎ ভাইকে কল করতে কিন্তু বাবা দিলোনা”
.
.
কথাটা বলে কাঁদতে লাগে রুহী।একদিনেই চোখ নাক মুখ সব ফুলিয়ে রেখেছে।আগেরদিন সারারাত মাথার ব্যাথায় ঘুমায়নি রুহী।আজ ও তো এর ব্যাতিক্রম হবেনা।আশফিনা রুহীকে খাটে বসিয়ে ওর পাশে বসে।
.
.
-”রুহী জানিস দুবাইতে”
-”আমার কিছু শুনতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।”
.
.
ক্রন্দনজড়িত গলায় বলল রুহী।আশফিনা মলিন চোখে তাকিয়ে থাকে রুহীর দিকে তারপর বলল,
.
.
-”খুব ভালোবাসিস তাইনা?”
-”জানিনা।ওনাকে এক্ষুনি চাই আমার”।
-”রুহী ভাইয়া যখন মিশনে সাকসেসফুল হয়ে আসবে তখন তোর চেয়ে বড় খুশি কেউ হবেনা।একটু ধৈর্য ধর প্লিজ!!”
-”চেষ্টা করছি কিন্তু খুব মনে পড়ছে ওনাকে।”
-”তোর মন ভালো করার একটা উপায় আছে আমার কাছে”।
-”কি”?
-”ওয়েট এক্ষুনি আসছি।”
.
.
আশফিনা বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রুহী ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়ালপেপারে ওর আর রোয়েনের কাপল ছবিটা দেখতে পায়।ওনার মায়ের জন্মদিনের দিন তোলা ছবিটা।রুহী ছবিটায় অসংখ্য চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে।চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে।রুহী ফোনটা সামনে এনে রোয়েনের নম্বরে কল দেয়।কিন্তু ফোন যাচ্ছেনা।একবার রিং হয়েই কেঁটে যাচ্ছে।এর মাঝে আশফিনা রুমে আসে হাতে বড় কাঁচের বাটি নিয়ে।তারপর হেসে বলল,
.
.
-”দেখ কি এনেছি”?
-”কি?”
.
.
দূর্বল গলায় জানতে চায় রুহী।আশফিনা হোয়াইট সস পাস্তাটা রুহীর সামনে রাখে।রুহীর খুব পছন্দের এটি।কিন্তু ওর চেহারায় কোন ধরনের আনন্দ নেই।বরং জ্বলজ্বল করছে চোখজোড়া।আশফিনা চামচে একটু নিয়ে রুহীর মুখের সামনে ধরে কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নেয় রুহী।আশফিনা এবার বলল,
.
.
-”সারাদিন খাসনি কিছু।একটু খেয়ে নেয়।”
-”আমার ভালো লাগছেনা”।
.
.
আশফিনা অনেক জোরাজুরি করলো কিন্তু কিছুতেই খাওয়াতে পারেনি রুহীকে।সেদিন ও সারারাত কেঁদে পার করে রুহী।পরদিন রোয়েনরা জানতে পারে কিশানোর জাহাজ এসে গেছে।কাছাকাছি আছে।রোয়েন সবাইকে তৈরি হতে বলে।নিজে ও কালো কোট জড়িয়ে নেয় গায়ে।আজ শার্ট পরার মুহূর্তে রুহীকে বেশ মনে পড়ছিলো।মেয়েটাতো সারাক্ষণই ওর হৃদয় জুড়ে আছে।কিন্তু কিছু বিশেষ মুহূর্ত আছে যে সময়টায় রুহীকে খুব বেশি মিস করে রোয়েন।রামীন শামীম সবাই রেডি হয়ে নেয়।রোয়েন সব অস্ত্র আরেকবার চেক করে নেয়।তারপর বেরিয়ে যায় ওরা।এদিকে সকাল থেকেই রুহীর বেশ অস্থির লাগছে।কোন ভাবেই কিছুতে মন বসছেনা।এটাই হয়ত ভালোবাসা।রুহী না পেরে বাবার কাছে আসে।তারপর অস্থিরতা জড়ানো কন্ঠে বলল,
.
.
-”বাবা শরৎ ভাইকে কল দিবো।একটু কথা বলবো ওনার সাথে।”
-”ওরা বেরিয়ে পড়েছে।”
.
.
রুহী কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।ওর মাথাটা কাজ করছেনা।সেখান থেকে দৌড়ে রুমে আসে রুহী।ওজু করে নামাজে বসে কান্না জুড়ে দেয়।রোয়েনরা নিজেদের গন্তব্যে পৌছে যায়।অনেক গুলো লঞ্চ দেখা যাচ্ছে।রোয়েনরা জানতে পারে কিশানোরা কিছুসময়য়ের মাঝেই পৌছাবে।এবার রোয়েন সবাইকে জানিয়ে দেয় ওরা আসার সাথে সাথে আক্রমন করবেনা।যখন মানুষদের ওরা উঠাতে থাকবে লঞ্চে তখন ওদের মধ্যে তিনজন মানুষ সরাতে থাকবে আর বাকিরা আক্রমন করবে।হঠাৎ কিশানোর লঞ্চকে আসতে দেখা গেলো।সবাই সতর্ক হয়ে গেলো।এবার রোয়েন দেখলো চার পাঁচজন লোক অনেক মানুষকে দল বেঁধে নিয়ে আসছে।সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আছে। ওদের বুঝতে দেরি হয়না ওদের পাচার করা হবে।রোয়েন সবাই কে ইশারা করে।
কিশানোর লঞ্চ ঘাটে এসে থামলো।সেখান থেকে কয়েকজন বিদেশী লোক বেরিয়ে আসে।তারা মানুষ উঠাবে। এবার রোয়েন কয়েকজন কে ইশারা করে যারা লঞ্চ থেকে বেরিয়েছে ওদের ধরার জন্য আর মানুষ গুলোকে নিরাপদ স্থানে নেয়ার জন্য।রোয়েনের আদেশ মতে সবাই কাজে লেগে যায়।এবার রোয়েন আর বাকিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে লঞ্চের ওপর।বাহিরের কিছু লোককে মেরে লঞ্চে ঢুকে পড়ে ওরা।তিনতলা লঞ্চ।দুতলায় উঠতায় কেউ যেন রোয়েনের পা টেনে ধরে।পিছনে তাকাতেই রোয়েন দেখে রামীন।ওর হাতে গুলি লেগেছে।রোয়েন হাত বাড়াতেই রামীন ওর হাত ধরে উঠে যায়।দুজনে তিনতলায় চলে যায় সেখানে বাকি লোক আর কিশানো আছে।রোয়েনের দলের পঞ্চাশ জন মারা গেছে।সেই মৃতদের মাঝে শরৎ ও আছে।রোয়েনরা উপরে উঠে দেখে কিশানো গুলি তাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে।প্রচুর গোলা গুলি হলো।রোয়েনের বুকের একপাশে গুলি লাগে। মাথায় হাতে পায়ে ভীষন ব্যাথা পায় কিন্তু কিশানোকে নিজ হাতে মেরে জ্ঞান হারায়।রামীনরা শত্রুদের মেরে বের হতে নিবে দেখে রোয়েন পড়ে আছে।রামীন দৌড়ে এলো।তারপর ভয় পেয়ে সবাইকে ডাকে।কয়েকজন এসে রোয়েনের নিথর দেহ তুলে নেয়।রামীনের কান্না পাচ্ছে।বারবার দোয়া করছে অন্তত ওর জীবনের বিনিময়ে রোয়েন বেঁচে ফিরুক।
.
.
খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয় রোয়েনকে।শামীমের কপালে একটু চোট লেগেছে।রামীন আর রোয়েনকে ভর্তি করিয়ে হাসপাতালের বাহিরে এসে রেজোয়ান মাহবুবকে কল দেয় শামীম।
রোজোয়ান মাহবুব খেতে বসেন।রুহী টেবিলে এসে বসে আশফিনার সাথে।
রেজোয়ান মাহবুব মেয়ের দিকে তাকাতে পারছেননা।চেহারাখানা দেখার মতো না।সুন্দর চেহারা দুদিনেই কেমন বার্ধক্যে পরিনত হলো।
রুহীকে কিছু বলতে নিবেন তখনই শামীমের কল আসে রেজোয়ান মাহবুবের ফোনে।তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করেন ওনি।
.
.
-হ্যালো শামীম!!!
.
.
বাবার মুখে শামীম ভাইয়ের নাম শুনে অস্থির হয়ে পড়ে রুহী আর আশফিনা।
.
.
-স্যার রোয়েন স্যারকে খুলনা মেডিকেলে এডমিট করা হয়েছে।কিশানো আর ওর দলকে মারতে সক্ষম হয়েছি আমরা।শরৎ সহ আরো পঞ্চাশ জনের মতো আমাদের লোক মারা গেছেন স্যার।রামীন স্যার একটু আঘাত পেয়েছে।কিন্তু রোয়েন স্যার!!!!
-রোয়েন স্যার!!!!কি হয়েছিলো স্যারের?
-ডাক্তার বলল নেক্সট আটচল্লিশ ঘন্টায় জ্ঞান না ফিরলে কিছু করা যাবেনা।
-শামীম আমি আসবো।
.
.
তৎখনাৎ রুহী আর আশফিনা বলতে শুরু করলো,
.
.
-আমরাও যাবো।একা ছাড়বোনা আপনাকে।আমাদের রেখে কোথাও যাবেননা।
-আচ্ছা তাহলে রেডি হয়ে নাও।কয়েকদিন থাকতে হতে পারে।সেভাবে কাপড় নিয়ে নাও।
-জি।
.
.
আশফিনা রুহীকে নিয়ে রুমে আসে।রুহী কাঁদতে কাঁদতে অস্থির। আশফিনা দুজনের কাপড় গুছিয়ে নেয়।রুহীকে কোন মতে রেডি করিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ে খুলনার উদ্দেশ্যে।সেদিন বেশ রাত করে পৌছায় যার কারনে হাসপাতালে না গিয়ে হোটেলে চলে যায় ওরা।পরদিন সকাল শামীম এসে রুহী রেজোয়ান মাহবুব আর আশফিনাকে নিয়ে যেতে আসে।
রেজোয়ান মাহবুব শামীমকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে সারাগাড়িতে।রোয়েনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি।তবে সামীনের কথা এখন জানতে পারে রুহী আর আশফিনা।আশফিনা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।তবে ওর জন্য ভালো খবর ছিলো।রামীনের তেমন কিছু হয়নি।হাসপাতালে পৌছে সবাইকে দেখতে পায় ওরা।একটু একটু করে সবাই আঘাত পেয়েছে।তিনতলায় উঠেই রোয়েনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় রুহী।লোকটার সাথে।দেখা করতে পারবেনা ও।রুহী জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
চলবে