The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 35
→রুহীর কপালে সহস্র চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে রোয়েন।ওর নিজের চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে।রোয়েন তো এমন না।কখনো কাঁদেনা ও।মায়াবতীর সামনে কাঁদতে পারেনা।ও কাঁদলে মেয়েটা কিভাবে থাকবে?রুহীর অজান্তেই নিজের চোখজোড়া মুছে নেয় রোয়েন।তারপর রুহীর দিকে কঠিন চোখে তাকায়।দুহাত দিয়ে রুহীর দু গাল ধরে,
.
.
-রুহী সেখানে তেমার বয়সী অনেক মেয়ে আছে।জাস্ট একবার ভাবো ওদের যদি পাচার করে দেয়া হয় কি কি হতে পারে ওদের সাথে।সেটার সম্পর্কে হয়ত আমাদের ধারনা ও নাই।সেখানে কারোর বাবা কারো মা কারো হাসবেন্ড কি ওয়াইফ থাকবে।ওদের কথা একটাবার ভাবো রুহী।
.
.
রোয়েনের কথা গুলো কোনভাবেই কান্না থামাতে পারছেনা রুহীর।ওর অশ্রুগুলো আরো দ্রুত গতিতে গড়িয়ে পড়ছে।কান্নাজড়িত কন্ঠে রুহী বলল,
.
.
-কিন্তু আপনি?আমার কি হবে রোয়েন?বেঁচে গিয়ে ও মরে যাবো।আমার কি থাকবে?
-সিকিউর লাইফ।তোমার বাবা থাকবে।
-আপনাকে ও লাগবে।
.
.
রোয়েনের হাতজোড়া জড়িয়ে ধরে বলল রুহী।রোয়েন বলল,
.
.
-রুহী তোমাকে শক্ত হতে হবে।তুমি শক্ত থাকলে আমি সাহস পাবো।নাহলে তোমার অশ্রু আমাকে দূর্বল করে দেবে।তুমি কি চাও সেটা?
-না চাইনা।জলদি চলে আসবেন।আপনার অপেক্ষায় থাকবো।
-দ্যাটস মাই গুড গার্ল।
.
.
বলে রুহীর অশ্রুভেজা ঠোঁটজোড়ায় ঠোঁট চেঁপে চুমু খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় রোয়েন।তারপর রুহীর দিকে না তাকিয়ে বলল,
.
.
-যাও ফ্রেশ হয়ে প্যাকিং করে নাও।
-কেন?
-তোমাকে তোমার বাবার কাছে রাখবো।যতদিন আমি থাকবোনা তুমি ওখানেই থাকবে।
-ঠিক আছে।
.
.
রুহী নিজের রুমে চলে আসে ফ্রেশ হতে।বাথরুমে এসে কান্না করে দেয় ও।মুখে দুহাত চেঁপে কাঁদতে শুরু করে যেন লোকটার কানে না পৌছায়।রোয়েন নিজের প্যাকিং করে গান গুলো লোড করে নেয়।কিছু এক্সট্রা বুলেট,বোম ভরে নেয়।রুহী রেডি হয়ে বের হয়ে আসে।ওর চোখজোড়া ফুলে গেছে একদম।রোয়েন রুহীর আর ওর নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে।রুহীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজে ও উঠে যায় রোয়েন।রেজোয়ান মাহবুবের ঘরের সামনে আসতেই দেখলো বড় জিপ দাঁড়িয়ে আছে।সেখানে রামীন শরৎ শামীম আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে।হয়ত অনেককেই দেখা হবেনা।রামীন এসে রুহীর মাথায় হাত রাখে,
.
.
-ভালো থেকো।
-আপনারা ও ভালো থাকবেন নিজেদের খেয়াল রাখবেন।
.
.
এবার শামীমের কাছে যায় রুহী।তখন রেজোয়ান মাহবুব রোয়েনের কাছে আসে।
.
.
-স্যার আমার পাকিং হয়ে গেছে।
-কোথাও যাচ্ছেননা আপনি।
-মানে কি স্যার।আমি আপনাকে কোথাও একা ছাড়বোনা।
-রুহীকে আপনার লাগবে।হয়ত আমি আর ফিরে আসবোনা।ওর দিকে খেয়াল রাখবেন।
-স্যার আমি ও আসবো।
-আমার জন্য ওখানে সবাই আছে।কিন্তু রুহীর আপনি ছাড়া কেউ নেই।
.
.
এদিকে শামীম রুহীকে বলল,
.
.
-ভালো থেকো রুহী।নিজের খেয়াল রাখবে।তোমার ভাবি তোমাকে দেখতে আসবে।আমাদের কথা চিন্তা করোনা।শরৎ কে ফোন দিলে আমাদের ইনফরমেশন পেয়ে যাবে।
.
.
রুহী শামীমকে ধরে কাঁদতে শুরু করে।এদিকে আশফিনা রামীনকে দেখছে।নিঃশব্দে কাঁদছে ও।রামীন এক সুযোগে আশফিনার কাছে আসে।তারপর ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
.
.
-ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে আমার?
-করবো। সারাজীবন করবো।
-তোমার চা টাকে বড্ত মিস করবো।
-আর আমাকে?
-চায়ের মালিককে মিস করবো না আবার?কতেটা ভালবাসি বলতে পারবোনা।
-জলদি ফিরে আসবেন।
-হুম।খেয়াল রেখো।
-জি।
.
.
সবার থেকে বিদায় নিয়ে রোয়েনের পাশে এসে দাঁড়ায় রুহী।রোয়েন ব্যাগ গুলো গাড়িতে রাখছিলো।রুহী চুপচাপ রোয়েনের পিছে দাঁড়িয়ে আছে।রোয়েন ফিরতেই রুহীকে দেখতে পায়।তারপর বলল,
.
.
-বাকি ব্যাগ গুলো ঠিকমতো ডেকিতে রাখো।কোনটা যেন বাদ না পড়ে।
.
.
রুহীর হাত ধরে রেজোয়ান মাহবুবের বাড়ির পিছনে আসে রোয়েন।তারপর ওর দুগালে অনেক গুলো চুৃমু দিয়ে বলল,
.
.
-রুহী আমার জান যতোদিন পর্যন্ত আমার হৃদকম্পন আছে ততোদিন আমি তোমারি থাকবো।
-এভাবে বলবেননা।কিছু হবে না আপনার।যা করতে যাচ্ছেন মন দিয়ে করবেন।আপনার রুহী আপনারই থাকবে।আমার চিন্তা করবেননা।আপনার দূর্বলতা না আপনার সাহস হতে চাই।
.
.
রোয়েন হেসে বুকে টেনে নেয় রুহীকে।এতক্ষন নিজেকে শক্ত রেখেছিলো রুহী তবে অশ্রু গুলো এবার বাঁধা মানলোনা।রোয়েন এবার সরে আসে।তারপর রুহীর হাত ধরে গাড়ির কাছে আসে।রুহী দেখতে পায় ওর সামনেই শামীম রামীন শরৎ গাড়িতে বসছে।রুহীর অশ্রুগুলো ভারি হচ্ছে ক্রমশ।রোয়েন যেই গাড়িতে উঠে বসতে যাবে রুহী দৌড়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রোয়েনকে।তারপর কাঁদতে শুরু করে ও।
রোয়েন ফিসফিসিয়ে বলল,
.
.
-বলেছিলে আমাকে দূর্বল হতে দেবেনা।আমার সাহস হবে তুমি।
-পারছিনা রোয়েন।
.
.
খুব চেষ্টা করে বুকে পাথর রেখে রুহীর হাতজোড়া বুক থেকে সরিয়ে গাড়িতে বসে দরজা লাগায় রোয়েন জোরে।রুহী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।গাড়ির জানালা খোলা।রুহীর চোখের সামনেই রোয়েন জানালা লাগিয়ে দেয়।রুহীর সামনেই গাড়ি চলতে আরম্ভ করে।এবার রুহী দৌড়াতে গেলে রেজোয়ান মাহবুব আর আশফিনা ওকে থামায়।রুহী কাঁদছে।রেজোয়ান মাহবুব আর আশফিনা ওকে ঘরে এনে রুহীর রুমে এনে বসায় খাটের ওপর।রুহী অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।আশফিনা পানি এনে রুহীর পাশে বসে।পানির রুহীর মুখের সামনে ধরতেই মুখ সরিয়ে ফেলে রুহী।
.
.
-খাবোনা আমি।
-রুহী কথা শোন আমার।বলে উঠে আশফিনা।
-না প্লিজ। আমার ভালো লাগছেনা।
-রুহী শুন।ভাইয়া তোকে কাঁদতে দেখে গেছে। ওনার মন এখন তোর দিকে থাকবে।ওনার ভালো লাগবেনা এখন।তোর চিন্তা করলে তো ওনি দূর্বল হয়ে যাবে।
-না দূর্বল হতে দিবোনা।
.
.
রুহী চট করে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ অপশনে যায়।রোয়েন আর রামীন মাঝের সিটে বসে আছে।রামীন রোয়েন কে সহজ করতে বকবক করছে।কিন্তু বেচারা নিজে ও ভিতর থেকে ভেঙ্গেচুরে গেছে।এদিকে রোয়েনের সেদিকে মন নেই।জানালার বাহিরে চেয়ে আছে।আসার সময় মায়াবতীর দিকে একবার ও তাকায়নি।কাঁদছিলো মেয়েটা।
হঠাৎ রোয়েনের ফোনে মেসেজের রিংটোন বাজে।রামীন বলল,
.
.
-দোস্ত চেক কর।কে।যেন মেসেজ করেছে।
-,,,,,,,,,,
-রোয়েন কিছু তো বল।মেসেজ চেক কর।রুহী হয়ত মেসেজ করেছে।
.
.
রুহীর কথা কানে আসতেই ফোন চেক করে রোয়েন।আসলেই রুহীর মেসেজ এসেছে।রুহীর লিখেছে,
”অল দা বেস্ট। আমার চিন্তা একদমই করবেননা। ভালো আছি আমি।মিশনে সাকসেসফুল হয়ে ফিরে আসবেন।বলেছিলামনা আপনার আছি আপনারই থাকবো।এই রুহী সবসময় আপনার পাশেই আছে।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন। ”
রুহীর মেসেজ পেয়ে একটু হাসে রোয়েন।অন্তত একটু শান্তি পেলো রোয়েন।সেদিন সন্ধ্যায় খুলনা পৌছে যায় ওরা।সেখানে পৌছে ওদের ঠিক করা হোটেলে উঠে যায়।সেখানে পৌছে সবাই ফ্রেশ হয়ে হালকা খেয়ে নেয়।এবার রোয়েন ওর এখানকার লোকদের জানিয়ে দেয় ওদের উপস্থিতির কথা এবং কিশানো কোথায় এসে নামবে সব কিছুর সম্পর্কে জেনে নিতে বলে।এদিকে রুহী রোয়েনের নম্বরে কল দিয়ে খেয়াল করে ফেন ধরছেনা।কয়েকবার কল করার পর রুহী শরৎ এর নম্বরে কল দেয়।শরৎ ফোন রিসিভ করে,
.
.
-হ্যালো রেজোয়ান স্যার।
-ভাইয়া আমি রুহী।
-ওহ আপনি?ভালো আছেন আপু?
-জি ভাইয়া।আপনারা কখন পৌছালেন?
-এই ঘন্টাখানেক হবে।
-ভাইয়া একটু ওনাকে ফোন দিননা।
-কারে?
-আপনাদের বস।
.
.
শরৎকে রোয়েন বলেই দিয়েছিলো রুহী কল দিলে যেন ওকে না দেয়।শরৎ বলল,
.
.
-আপু স্যারে ঘুমায়।
-ঘুমায়??হয়ত টায়ার্ড।আচ্ছা ভাইয়া ওনি কে সকালে বইলেন কল করেছিলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
এদিকে রোয়েনের সামনেই শরৎ দাঁড়ানো।রোয়েন জিজ্ঞেস করে,
.
.
-কি বলল?
-আপনারে কল করতে বলছে।
.
.
সেদিন রোয়েন উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
.
.
-সবাই মিশনে এসেছেন সবার মনযোগ যেন মিশনেই থাকে।অযথা পরিবারের কথা চিন্তা করে কেউ পিছপা হবেননা বলে আশা করি।পরিবারের কারোর সাথে যা কথা বলার বলেনিন।আজ রাতটাই শেষ সময়।কাল সবাই কই থাকবো কেউ বলতে পারেননা স্বয়ং আমি ও না।শামীম বলল,
.
.
-স্যার কথা বললে দূর্বল হয়ে পড়বো।কিন্তু সেটা চাইনা।কারন সম্পূর্ন মনযোগ মিশনে থাকলেই ভালো হবে।
.
.
রুহী অনেক চেষ্টা করে ভালোবাসার মানুষটার সাথে কথা বলতে কিন্তু পারেনা।খুব কষ্ট হয় রুহীর।খাওয়াদাওয়া ঘুম সব শেষ হয়ে গেছে।সারাক্ষন মন খারাপ করে থাকে কান্না কাটি করে। নামাজ পড়ে ও কান্না কাটি করে।
চলবে