The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 127 (Last-Part)

part:127 (সমাপ্তি)
→বোনের পাশে বসে আছে সামায়রা।মনটা সকাল থেকেই ভালো নেই রুহীর।খুব কাঁদছে।ফাহমিন যখন জানতে পারলো তখন মনে পড়লো রোয়েনের আজ আটচল্লিশ তম জন্মদিন।সামায়রা বোনের অবস্থা দেখে ভেঙ্গে পড়ছে।সকাল থেকেই চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু ঝড়েই যাচ্ছে।খাচ্ছে ও না। সামায়রা অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু লাভ হয়নি।দ্রিধা আর রাদ্রিন ও ভাল আছে জানতে পেরে নিশ্চিন্ত হলো সামায়রা।বোনের চোখ জোড়া দুহাতে মুছে দিয়ে সামায়রা বলল,
”কাঁদছিস সকাল থেকে।খাচ্ছিস না।”
জবাবে রুহীর চোখজোড়ায় অশ্রু কনা ভারি হয়ে আসে।সামায়রা ডুকরে উঠে তারপর গলা স্বাভাবিক করে বলল,
”বাচ্চা দুটো ভালো আছে।দ্রিধার সাথে কথা হয়েছিলো।”
রুহীর চোখ জোড়ায় কোন অনুভূতি নেই তবে সামায়রার হাতের মাঝে রুহীর হাত কেমন যেন নড়ে উঠলো।সামায়রা হেসে বলল,
”হ্যা ওরা জিজ্ঞেস করেছে তোর খবর।বলেছি ভালো আছিস।”
রুহীর হাত আবার স্বাভাবিক হলো।সামায়রা এবার বলল,
”আপু তোর প্রিয় গানটা শুনবি?ভালো লাগবে তোর।”
রুহীর চোখের পাতা নড়ে উঠে।সামায়রা খাট থেকে নেমে সিডি প্লেয়ারে রুহীর পছন্দের আমার পরান যাহা চায় গানটা ছেড়ে দিলো।মধুর গানটা চলতে থাকে হালকা শব্দ তুলে,
আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গাে।
তােমা ছাড়া আর এ জগতে মাের কেহ নাই, কিছু নাই গাে ॥
তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও—
আমি তােমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে, আর কিছু নাহি চাই গাে ॥
আমি তােমার বিরহে রহিব বিলীন, তােমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-মাস।
যদি আর-কারে ভালােবাস, যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও, আমি যত দুখ পাই গাে ॥
রুহীর চোখজোড়া জলে ভরে গেছে।হয়ত স্বামী নামক মানুষটাকে খুব করে চাইছে ও।অনেকটাই তাকে অনুভব করছে।কি হয়ে গেলো পাঁচ বছরের সংসারে?এমনটা তো গ্রহনযোগ্য ছিলো না তাহলে!!!এদিকে দ্রিধা প্রচন্ড অস্বস্তিতে আছে কেমন লাগছে ওর।বিষয়টা বড় ভাবাচ্ছে ওকে। রাদ্রিনের যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু যেতে দেয়নি দ্রিধা।রাদ্রিনকে এখন লাগবে ওর।কারন যা দেখেছে দুজনেই।দুজনের ধারনা ভুল হতে পারেনা।রাদ্রিন পাশের খাটে নড়া চড়া করছে ঘুমের মাঝে।মাঝরাতে রাদ্রিনের ঘুম ভেঙ্গে যায় কারোর স্পর্শে।চোখ খুলে দেখলো দ্রিধা ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।রাদ্রিন কিছু বলবে তার আগে দ্রিধা বলল,
”তোর ঘুম আসছেনা জানি।আমার ও আসছেনা।নিচের ক্যান্টিনটায় আলো জ্বলছে।নিশ্চয়ই খোলা।যা দুকাপ কফি নিয়ে ছাদে চলে আয়।”
রাদ্রিন উঠে বসে।তারপর ঘুম কন্ঠে বলল,
”রাত অনেক আপু।”
”কিছু হবেনা।আমি ঘুমাতে পারছিনা।ভালো লাগছেনা আমার।”
বোনের কথা শুনে মনের খবর একটু হলে ও বুঝতে পারে রাদ্রিন।ও নিজেও একটু চিন্তিত।নিজে ও একই সমস্যায় আক্রান্ত।তাই আর আপত্তি করেনি রাদ্রিন।গায়ে শার্ট জড়িয়ে বলল,
”ছাদে চলে যা।আমি কফি নিয়ে সেখানে যাচ্ছি।”
”ওকে।”
রাদ্রিন নিচে চলে গেলো।দ্রিধা ছাদে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো গায়ে হালকা চাদর জড়িয়ে।
রাতে রুহীকে শুইয়ে দিলো সামায়রা।রুহীর জামা পাল্টে দিয়েছে ও।তারপর শুইয়ে দিয়ে ওর চুল হাতিয়ে দিতে থাকে।সাইত্রিশ বছর বয়সে ও মনে হচ্ছে বিশটা বছর বেড়ে গেছে।রুহীর খোলা চোখজোড়ায় ঘুম নেমে আসে। সামায়রা রুমের আলো বন্ধ করে বেরিয়ে আসে।রুহী ঘুমালে এরুমের সামনে কারো আসা মানা।কোন শব্দ করা ও যাবেনা।
দ্রিধা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে কোন এক চিন্তায় পড়ে গেলো।রাদ্রিন বলল,
”তুই শিওর থাক আমরা যা ভাবছি তা না।আর সেটা হলে সে বাঁচবেনা। আমি মেরে ফেলবো তাকে।”
দ্রিধা বলল,
”প্লিজ এসব বলিস না।চাইছি ব্যাপারটা ভুলে যেতে।”
”ওহ।তাহলে চল একটা টপিক বের করে সেটা নিয়ে কথা বলি।”
”জানিনা মন দিতে পারবো কিনা।তারপর ও শুরু কর।”
”তোর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে?”
”আমার প্রিয় মানুষ……..?
”হ্যা।সবার থাকে।আমার ও আছে।”
”মা, বাবা,আর তুই।”
”সবচেয়ে বেশি প্রিয় আপু।”
”বাবা।জানিস ছোট বেলার কোন কিছু পড়েনা।কিন্তু পাঁচবছর বয়সের অনেক কিছুই মনে পড়ে।বাবা থাকলে সব ভালো থাকতো ঠিক থাকতো।মা ভালো থাকতো।”
বাবার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে সামায়রা।রাদ্রিন কিছু বলতে পারলো না নিষ্পলক চোখে বোনকে দেখা ছাড়া।
এদিকে পরদিন সকালে ওরা বেরিয়ে সেই অফিসের সামনে দাঁড়ায়।সে গাড়িটা দেখতে পায়না।অনেক রোদ পড়েছে।রাদ্রিন কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বোনের দিকে তাকায়।দ্রিধা অফিসটার দিকে তাকিয়ে আছে।রাদ্রিন বলল,
”আসবেনা।চল হোটেলে।কি গরম!!!”
”আরেকটু দাঁড়া প্লিজ।”
”উফ তোর কথায় আধঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি।কেউ আসেনি।আমি হোটেলে ফিরবো।”
দ্রিধা বিরক্তি নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়।ছেলেটার মুখ আসলেই লাল হয়ে আছে।ঘামে চুপচুপ করছে।
”আচ্ছা চল তাহলে।”
এরপর আরো সাতদিন ওরা সেই অফিসের আশেপাশে এসেছিলো।সেখানে প্রবেশ করার সাহস পাচ্ছিলো না।কি করবে ওরা?মাকে প্রত্যেকদিনই ভিডিও কলে দেখছে।দ্রিধার ক্লাশ ও শুরু হয়ে গেছে।দ্রিধা সেদিন রাদ্রিন কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সেই অফিসের উদ্দেশ্যে।আজ প্রায় বিশদিন যাবৎ ওরা এ অফিসের কর্মচারীদের নাম সংগ্রহ করছিলো।সব গুলো এসেছে কিনা জানেনা তবে এখন ও আশা ছাড়েনি ওরা।আজ অফিসে ঢুকেই ছাড়বে।অফিসের সামনে এসে থামলো ওরা।গেটের দুপাশে দুজন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে।দ্রিধা রাদ্রিন কে নিয়ে সেদিকে পা বাড়ায়।দালানটির সামনে এসে সেটাকে দেখতে থাকে দ্রিধা।হঠাৎ পিছন থেকে রাদ্রিনের চিৎকার শুনতে পায়।পিছে ফিরে দেখলো রাদ্রিন হাঁটু ধরে বসে আছে।দ্রিধা রাদ্রিনের কাছে এগিয়ে এলো।রাদ্রিনকে ধরে উঠিয়ে বলল,
”কিভাবে হলো এমনটা?”
”একটা লোক আসার সময় তার গায়ের সাথে ধাক্কা লাগলো।”
দ্রিধা খেয়াল করলো রাদ্রিনের হাটু ছিলে গেছে।দ্রুত ভাইকে নিয়ে অফিস গেটের সামনে আসতেই গার্ড দুজন আটকালো ওদের।দ্রিধা জার্মানি ভাষায় বলল,
”খুব দরকার ওখানে যাওয়ার।প্লিজ যেতে দিন।”
লোক দুটো বলল,
”কাকে চাই?”
”উইলিয়াম ক্রুজ।”
”ওনার সাথে আপনাদের কি আলাপ?”
দ্রিধা বলল,
”দেখুন ওনি এখানে চাকরী করেন পাশাপাশি একজন চিকিৎসক সেটা আমরা জানি প্লিজ যেতে দিন।”
একজন গার্ড বলল,
”কল দিয়ে জানাচ্ছি।”
দ্রিধা বলল,
”প্লিজ জলদি করুন।”
লোকটা কাকে যেন কল করে ফিরে এসে বলল,
”ভিতরে যান।থার্ড ফ্লোরের ৪৭ নম্বর রুম।”
”থ্যাংকস।”
দ্রিধা রাদ্রিনকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।ওরা সেখানে গিয়ে রিসিপশনে চলে আসে এবং সেখানে কর্মচারীদের লিস্ট দেখতে চায়।রিসিপশনিস্ট কোনমতেই সেটার জন্য রাজি হচ্ছেনা।কারন এটা গ্রহন যোগ্য নয়।ওরা কোন গুপ্তচর ও তো হতে পারে।দ্রিধা না পেরেই বলল,
”আমার এখানে আসার কারন কাউকে দেখেছিলাম ঠিক আমার বাবার মতো।তার সাথে একটাবার দেখা করতে চাই।প্লিজ আমাকে লিস্ট দেখান দয়া করে।”
রিসিপশনিস্টের মায়া হলো।ওদের সামনে লিস্ট খুলে দিলো।সেখানে চোখ বুলাতে বুলাতে পদের চলখের সামনে এমন এক নাম এসে পড়লো যেটা আগে দেখেনি।ওরা যে নাম গুলো সংগ্রহ করেছিলো সেখানে এই নাম ছিলোনা।নামটা ছিলো,
”Triple R Ch.
দ্রিধা বলল,
”ওনি কই আছেন?”
”স্যার খুব জরুরি মিটিংয়ে আছেন। আজ দেখা হতে পারবেনা।”
রাদ্রিন বলল,
”আমরা অপেক্ষা করবো।”
দ্রিধা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
”কই বসতে পারি আমরা?”
”চার তলায় চলে যান সেখানে ওয়েটিং রুম আছে।”
দ্রিধা ধন্যবাদ জানিয়ে রাদ্রিনকে নিয়ে চারতলায় চলে যায়।সেখানে দুটো চেয়ারে বসে যায় ওরা।প্রায় দুঘন্টা পেরিয়ে যায়।হঠাৎ খেয়াল করলো একটা রুম থেকে ১৬ জন বের হলো।তবে সেখানে পরিচিত সেই মুখ পেলোনা।রাদ্রিন বলল,
”আপু তুই শিওর তো আমরা কি ওনাকে পাবো?”
”দোয়া কর প্লিজ।”
লোকগুলো চলে গেলে দ্রিধা উঠে সেই দরজার কাছে চলে আসে।সেখানে ও একজন গার্ড দাঁড়ানো।দ্রিধা বলল,
”ট্রিপল আর সিএইচ স্যারের রুম এটা?”
গার্ড বলল,
”জি।আপনাদের পরিচয়?”
”আমাদের ওনি ভালো মতো চিনেন।ওনার সাথে আমাদের দেখা করার কথা ছিলো।”
”স্যার তো এমন কিছু জানান নাই।”
একটু রেগে যায় রাদ্রিন।ধমকে বলল,
”সব কথা জানাবে নাকি?”
লোকটা বলল,
”মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।কেউ আপনার সাথে তর্ক করছেনা।”
দ্রিধা বলল,
”ওর কথায় কষ্ট নেবেননা।ওনার সাথো দেখা করা আমাদের জন্য খুব জরুরি।”
লোকটা বলল,
”তুমি খুব লক্ষী মেয়ে।স্যারের সাথে কথা বলে এসে জানাচ্ছি।
বলে ভিতরে চলে গেলো গার্ড।দ্রিধা রাদ্রিনের মাথায় থাপড় মেরে বলল,
”সব জায়গায় এমন করতে হয়না।এত রাগ দেখালে চলে না রাদ্রিন।”
লোকটা বেরিয়ে এসে বলল,
”ভিতরে যান আপনারা।”
দ্রিধা রাদ্রিন কে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।ভীষন মিষ্টি ঘ্রান ওদের নাকে এসে লাগলো।সাথে গা কাঁপানো অনুভূতি।এই পারফিউমার ঘ্রান ওদের বাসায় ও পেয়েছিলো।বাবার এমনই পারফিউম আছে।যেটা মা যত্নে রেখে দিয়েছিলো।দ্রিধা প্রায়ই বাবাকে ওটা দিতে দেখেছিলো।ওদের সামনে কালো কোট ওয়ালা একজন লোক পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জানালায় মুখ করে।দ্রিধা বলল,
”আপনার সাথে কথা আছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট। ”
লোকটা বলল,
”বসে রেস্ট করো।কফিটা শেষ করে আসছি আমি।”
তার মুখের কথায় কেঁপে উঠে দ্রিধা।রাদ্রিন খেয়াল করলো দ্রিধার মুখের এক্সপ্রেশন পাল্টে গেছে।লোকটা কফি শেষ করে ওদের কাছে এসে বসে।দ্রিধা রাদ্রিন এখনো তাকে খেয়াল করেনি।লোকটা বলল,
”কি খাবে তোমরা?”
দ্রিধা মাথা উঠিয়ে কিছু বলতে নিয়ে থেমে গেলো।কিছু বলতে পারেনা।গলা আটকে এসেছে।এ কি দেখছে ও?রাদ্রিন ও তাকায় সামনে তারপর নিজেও অবাক।সামনে বসে থাকা লোকটা হুবুহু বাবার মতো।লোকটা মুচকি হেসে বলল,
”তোমাদের এক্সপ্রেশন এমন হয়ে গেলো কেন?কি হয়েছে?তোমরা কি চেনো আমাকে?”
দ্রিধা ভাবছে কি জিজ্ঞেস করবে তাকে?কিভাবে শুরু করবে?তবে এভাবে অপেক্ষা করাও ঠিক হবেনা।ও সকল সংকোচ ভেঙ্গে বলল,
”আপনার নামের ফুল ফর্মটা কি?”
”কেন?তোমরা সেটা কেন জানতে চাইছো?”
”প্লিজ অনেক হেল্প হতো।আমরা ও বাঙ্গালী দেখে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।”
”হুম।কি চাও তোমরা?”
”আপনার পরিচয়!!!!”
অবাক কন্ঠে বলল রাদ্রিন।লোকটা বলল,
”ওকে।বাট আমার পরিচয় তোমাদের কেন দেব?”
”দেখুন আমাদের সত্যিই জানার দরকার।”
”দেখো আমাকে উঠতে হবে।অফিস টাইম শেষ।”
লোকটা উঠে বেরুতে নিলে দ্রিধা বলল,
”কবে দেখা হবে জানিনা কিন্তু আপনার পরিচয়টা আমাদের দরকার খুব।”
লোকটা পিছনে ফিরে বলল,
”আমার বাসায় চলো সেখানে কথা হবে।তোমরা খুব ছোট নিশ্চয়ই খুব দরকারে এসেছো।”
”জি খুব দরকার।”
লোকটা ওদের নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলো।সেখানে পৌছে দুজন খাওয়া দাওয়া সেড়ে নেয়।লোকটা নিজ হাতে রাদ্রিনের পায়ে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তার পর তার সাথে সোফায় এসে বসে।লোকটার গালে কাঁটা দাগ আর সেটা খুব গভীর।দ্রিধা বলল,
”আপনার পরিবারে কেউ নেই?”
”তারা কই আছে জানিনা। কিন্তু ভালো আছে।”
”কেমন করে জানলেন?”
”আমার মন বলে।”
রাদ্রিন বলল,
”আমার আম্মু খুব অসুস্থ।বাবা চলে যাওয়ার পর মা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন।বাবার মৃত্যুর খবর শুনে মা থেকে ও না থাকার মতো।স্ট্রোক করেছেন আমার মা।”
কথাটা শুনে আর বাচ্চা দুটোর দিকে তাকায় লোকটা।দ্রিধা বলল,
”আমার বাবার সাথে আপনার চেহারার খুব মিল।কি করবো বাবা তো নেই।আপনার সাথে এতোটা সময় কাঁটানোর পর মনে হয়নি আমাদের বাবা নেই। ”
লোকটা মাথা নিচু করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।সে যেন ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে।দ্রিধা বলল,
”আঙ্কেল ঠিক আছেন আপনি?”
হঠাৎ দুভাই বোনকে অবাক করে দিয়ে সে দ্রিধার হাত চেঁপে বলল,
”তোমাদের মা রুহী না?”
”জি। আপনি কি তাহলে?”
রোয়েন এবার দাঁড়িয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।রাদ্রিন অবাক কি হচ্ছে এসব?লোকটা তারমানে বাবা ওদের বাবা।
দ্রিধা বলল,
”তুমি দূরে ছিলে কেন বাবা?”
রোয়েন কাঁদছে। রাদ্রিন বলল,
”অন্যায় করেছেন আপনি।আমাদের সাথে মায়ের সাথে।”
রোয়েন এবার কান্নার্ত কন্ঠে বলল,
”সরি। আমি অসহায় ছিলাম।না চলে এলে তোমাদের জীবন ঝুঁকি পূর্ন হয়ে যেতো।আমাকে করানো হয়েছিলো কাজটা।না করলে তোমাদের ওপর আক্রমন হতো। তখন রুহী অসুস্থ ছিলো।আমি কখনো চাইনি আমি থাকতে তোমাদের কিছু হোক।আমাকে গায়েব করে রাখা হয়েছিলো।আমার অজান্তেই তারা মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেশ।তাদের মেরে বেরিয়ে আসি আমি।এমন অবস্থায় ছিলাম না বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য।তোমাদের খবর নিতে শুরু করি। ভেবেছিলাম তোমাদের কাছে ফিরে যাবো কিন্তু ততক্ষনে তোমার খালামনি তোমাদের মুনিচি তে নিয়ে যায়।তাই আমি আসিনি।অন্যায় হয়েছে আমার প্লিজ মাফ করে দাও।”
দ্রিধা আর রাদ্রিন কাঁদছে।ওদের বাবা পরিবারের জন্যই করেছিলো এমনটা।হয়ত তখন সেই পথটাই সঠিক মনে হয়েছিলো।দুজনে রোয়েনের দুপাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে।রোয়েন দুজনকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে।এরপর রোয়েন দ্রিধা আর রাদ্রিন কে নিয়ে মুনিচিতে চলে আসে।ওর বেশ ভালো লাগছে ছেলেটার নাম ওর নামে রাখা হয়েছে।মুনিচিতে ফিরে ওরা বাসার পথে রওনা দেয়।
সারারাস্তায় বাবার সাথে অনেক কথা হয় ওদের। ঘরে পৌছে কলিংবেল চাঁপ দেয় দ্রিধা।রাদ্রিন বাবাকে পেয়ে বসেছে।প্রশ্ন করা বন্ধই হচ্ছেনা।এরই মাঝে দরজা খুলে সামায়রা।অবাক হয়ে বলল,
”দ্রিধু চলে এসেছিস?ক্লাশ কি অফ?”
”খালামনি এখানে ক্লাশ করছিনা আর।”
”কেন?”
”কারনটা দেখে চমকে যাবে।”
সরে যায় দ্রিধা।সামায়রা দেখলো রোয়েনকে রাদ্রিনের সাথে।সামায়রা অবাক।নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।রোয়ে এগিয়ে এলো সামায়রার কাছে।সামায়রা বলল,
”ভাই আপনি?”
রোয়েন হেসে বলল,
”ভালো আছো সামায়রা?”
”জি।আপনি কই ছিলেন এতোদিন?”
দ্রিধা বলল,
”খালামনি বাবাকে ভিতরে আসতে দাও।খুব টায়ার্ড।আমি সব বলছি তোমাকে।”
রোয়েন ভিতরে এসে বসলো।ওকে পানি এনে দিলো দ্রিধা।পানি টুকু খেয়ে রোযেন বলল,
”রুহী কই?”
সামায়রা বলল আসুন আমার সাথে।রোয়েনকে নিয়ে রুহীর রুমে এলো সাময়রা।রুহী শুয়ে আছে।রোয়েন সামনে এসে বসে রুহীর।চোখ জোড়া বড় হয়ে যায় রুহীর।রোয়েন হাত বাড়িয়ে রুহীর কপাল স্পর্শ করে কম্পিত স্বরে বলল,
”মায়াবতী!!!”
রুহীর চোখ ভিজে আসে।কিছু বলতে পারছেনা।রোয়েন বলল,
”শান্ত থাকো।আর কোথাও যাবোনা।তোমার সাথেই আছি থাকবো।”
রুহীর চোখের কোনা গড়িয়ে অঝোর গতিতে পানি ঝড়তে থাকে।রেয়েন রুহীর সাথে থাকতে শুরি করে।ওকে নিজের হাতে খাওয়ায়, ফ্রেশ করানো রোয়েন নিজেই করছে।এদিকে বাংলাদেশে সবাই জেনে গেছে রোয়েনের ব্যাপার।ফাহমিন তো বন্ধুকে দেখে কেঁদে দিয়ে জড়িয়ে ধরে।সবাই খুশি।চারপাঁচদিন চলে গেলো।রুহীর অবস্থায় ভালো পরিবর্তন।ফাহমিন চেক করে সেদিন বলল,
”ঠিক হতে দেরি নেই।”
রুহীর ঔষধ পাল্টানো হলো।এখন হাত নাড়াতে পারে ভালো ভাবে।খুব ধীরে কথা ও বলতে পারে।সেদিন রোয়েন কে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলো।রোয়েন ও কাঁদে খুব কাঁদে।অঝোর চুমুতে ভরিয়ে দেয় রুহীর মুখ আর ওষ্ঠজোড়া।সাতদিনের মাথায় রুহী স্বাভাবিক। তবে দূর্বলতা আছে।রোয়েনের সাথে এবার তেমন কথা বলছেনা রুহী।কারন ভিতরে প্রচন্ড অভিমান তো আছেই।রোয়েন ও অবশ্য বেশি ঘাঁটায় নাই।সময় দেবে ও রুহীকে।
একমাস পর,
চৌধুরী কলোনি আবার ভরপুর হয়ে গেছে।রোয়েন যে ফিরে এসেছে।ওদের অফিসটাকে পাল্টে রোয়েন জার্মানির অফিসটির শাখা বানানো হলো।মাফিয়া ছেড়ে দিয়েছে রোয়েন।পুরো কলোনি সাজানো হয়েছে।আজ গ্রান্ড পার্টির আয়োজন করা হয়েছে রোয়েনের আসার খুশিতে।তবে সবার জন্য বড় ধাক্কা ছিলো রেজোয়ান মাহবুবের মৃত্যু।রুহী আনিলাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদে।দ্রিধা আর রাদ্রিন বাবাকে পেয়ে সব ভুলে গেছে।কাপল ড্যান্সে রোয়েন প্রথমে রুহী তারপর দ্রিধার সাথে নেচেছে।আর আজতো মায়াবতীর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে গেছে।কালো শাড়ীতে ওর বৌটাকে চমৎকার দেখাচ্ছে।দ্রিধা ও কালো গাউন পরেছে আর রাদ্রিন রয়াল ব্লু ব্লেজার আর ভিতরে কালো শার্ট।চারজনের ছবি তোলা হলো।রামীন ফাহমিন রোয়েন আর বাকি বন্ধুরাও একসাথে ছবি তুলে।রোয়েন মাইক নিয়ে দাঁড়ায় সবার সামনে।তারপর বলল,
”তেরটা বছর যাবৎ আমার পরিবার থেকে দূরে ছিলাম।আমার অনুপস্থিতে আমার পরিবারে অনেক উথান পতন হয়েছে।আশাই ছিলোনা প্রানের পরিবারকে আবার দেখতে পাবো।তবে আমার বাচ্চারা আমাকে খুঁজে নিয়েছে।আর কখনো যাবো না আমার পরিবার কে ছাড়া।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পরিবারটাকে চাই আমার সন্তান আর আমার মায়াবতীকে।আই লাভ ইউ রুহী।তোমাকে তেরবছর পরে আজ ও ঠিক সে গভীরতা দিয়ে ভালোবাসি।কখনো শেষ হবেনা এই ভালবাসা।রোয়েন রুহী শুধু একে অপরের কখনো দূরে যাবেনা একে অপর থেকে।”
রুহী অশ্রুসজল চোখে রোয়েনকে দেখতে থাকে।রোয়েন ও তার মায়াবতীকে দেখছে ছলছল চোখে।চোখাচুখি হতেই চোখ সরিয়ে নিয়েছিলো রুহী।
রাতে দুজন রুমে চলে আসে।রোয়েন ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো রুহী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রোয়েন হেঁটে ওর পিছে এসে দাঁড়িয়ে রুহীর কাঁধে আলতো চুমু খেয়ে বলল,
”খুব কষ্ট দিয়েছি রুহী।”
”অনেক।”
”মাফ ও কম পড়বে।তবে কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমাদের নিয়ে থাকবো।”
”অনেকবারই দিয়েছিলে।”
”জানো কতোটা কষ্টে ছিলাম।বেঁচে ফিরবো বলে ভাবিইনি।”
রুহী পিছনে ফিরে।রোয়েন খেয়াল করলো রুহী কাঁদছিলো এতক্ষন।রুহীর কপালে আলতো করে চুমু দিতেই রুহী ওর বুকে মাথা রেখে শত করে জড়িয়ে ধরে।রোয়েন মুচকি হেসে বলল,
”মায়াবতী ভালবাসি খুব ভালবাসি।আবার ও বিয়ে করার সুযোগ দেবে?”
রোয়েনের কথায় রুহী রাগী চোখে তাকাতেই রোয়েন হেসে বলল,
”সবসময় তোমাকেই চাই। আমার জীবন সঙ্গীনি হিসেবে।কখনো কারোর জায়গা হবেনা এই হৃদয়ে তুমি ছাড়া।”
রুহী বলল,
”বিশ্বাস করি বলেই বেঁচে ছিলাম।”
”রুহী আবার ও সেই মিষ্টি রাত গুলো তোমার সাথে কাঁটানোর সুযোগ এসেছে।হাত ছাড়া করা ঠিক হবেনা।
রুহী সরে এসে ভ্রু কুঁচকে বলল,
”মানে?”
রোয়েন একটু কাছে এসে বলল,
”চলো আবার ও এক হয়ে যাই।তোমার শরীরের সুঘ্রানে নিজেকে মিশিয়ে নেই।রাতের বাতাসের মাতালতায় ভরিয়ে তুলি নিজেদের।”
রোয়েনের কথায় রুহী লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নেয়।রোয়েন দুহাতের ওপর চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে নেয় বুকে।সারাজীবন একসাথে থাকার নতুন একটা সকালের প্রহর গুনতে থাকে ওরা।সেটা চিরকালের জন্য।আজ দুজনেই পরিপূর্ন একে অপরের মাঝে আর পরস্পরের ভালোবাসায়।
সমাপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *