The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 117

→এমন একটা খবরের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না সামায়রা।বড় শান্তির ঘুম এসেছিলো।এরই মাঝে মায়ের ডাকে ঘুম উবে যায় ওর।আর ঘুম থেকে উঠেই এমন খবরের জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলো না সামায়রা।ওকে দেখতে আসছে কে বা কারা এখন ও পর্যন্ত জানেনা সামায়রা।তাহলে কি ফাহমিন কিছুই করবেননা।ওর বিয়ে আটকাবেননা।ওর কি বিয়ে হয়েই যাবে তাহলে?ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ।কি করে ও বিয়ে করতে পারে অপরিচিত কাউকে?বিয়ে মানেই তো দায়িত্বের পাহাড়।কিভাবে সব দায়িত্ব পালন করবে?শুধু হ্যামস্টারদের দায়িত্ব নিতে শিখেছিলো কিন্তু বিয়ের দায়িত্ব তো অনেক বড় অনেকটাই কঠিন।নিজেকে পরের জন্য একেবারেই উৎসর্গ করে দিতে হয়।সামায়রা থম ধরে বসে রইলো বিছানার ওপর।কান্না পাচ্ছে ওর।ফাহমিনকে কল দেয়া দরকার।কিভাবে দিবে ও?এখনই তো ওকে নিচে নিয়ে যাবে মা।
মেয়েকে এভাবে বসে থাকতে দেখে নীরা হামিদ ধমক দিয়ে বললেন,
”এসব কি সামু?তোকে বললাম ফ্রেশ হয়ে আসতে।ওনারা নিচে বসে আছেন তো?”
সামায়রা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।নীরা হামিদ লাল রং এর একটি স্যালোয়ার কামিজ এনে মেয়ের সামনে রেখে বললেন,
”জলদি এটা পরে নেয়।আমি একটু পর আসছি।এসে যদি দেখি এভাবে বসে আছিস তাহলে শলার বাড়ি মাটিতে পড়বেনা একটাও।”
সামায়রা কিছু বলতে পারেনা।মলিন দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে কয়েকবার ঢোক গিলে বলল,
”রেডি হচ্ছি আমি।”
”হুম।”
আর কিছু বলেননি নীরা হামিদ বেরিয়ে আসেন মেয়ের রুম থেকে।সামায়রা খাট থেকে নেমে দৌড়ে দরজা আটকে দেয় রুমের। তারপর ফোন নিয়ে ফাহমিনকে কল লাগায়।কিন্তু অপরপাশ থেকে রিসিভ হচ্ছেনা কল।কয়েকবার কল করার পর ফাহমিন ফোন রিসিভ করে বলল,
”কান্ট টক রাইট নাউ।”
বলেই কল কেঁটে দেয় ফাহমিন।সামায়রাকে কথা বলার সুযোগটাও দেয়নি।সামায়রা ফোন সরিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়।সে কেন এমন করলো?ওকে কি এভয়েড করছে?নাকি সামায়রা নিজেই এতোটা ভাবছে।ওদের মাঝে কি এমন কোন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যেখানে এভয়েড নামের শব্দটা অত্যন্ত কষ্ট দায়ক। বুঝতে পারেনা সামায়রা।মায়ের বকার ভয়ে কাপড় পাল্টে নেয়। মনে হচ্ছিলো ফাহমিনকে কল দিলে সব সমাধান হয়ে যাবে।বড় ভরসার জায়গা মনে হচ্ছিলো লোকটাকে।সেটার কারন জানা নেই সামায়রার।জামা পাল্টানোর পর পরই নীরা হামিদ এসে ওকে রেডি করাতে শুরু করেন।অপরদিকে রুহী চুপচাপ দ্রিধা কে কোল থেকে রেখে শুইয়ে দিয়ে আলমারি থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।রোয়েন রুহীর এমন নিস্তব্ধতা মেনে নিতে পারছেনা। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।যেন কেউ ওর গলা টিপে ধরে রেখেছে।ওর হাত পা গুলো আটকে রেখেছে।অচল মনে হচ্ছে নিজেকে।দ্রিধা শুয়ে বাবার দিকে চেয়ে আছে। যেন বুঝতে পারছে বাবার মনের কথা।রোয়েন মেয়েকে কোলে তুলে ওর দুগালে চুমু খেয়ে বলল,
”মাকে বুঝাতে পারিস না? বাবার সাথে রাগ করে আছে দেখছিস না?”
দ্রিধা রোয়েনের নাক খেতে লাগে।যার কারনে ওর নাকে মাড়ির নরম ঘষা লাগে আর ওর লালায় মেখে যায় রোয়েনের নাক খানা। মেয়ে কে সামনে এনে ওকে বুকে জড়িয়ে নেয় রোয়েন।এদিকে সামায়রা কে সাজিয়ে নিচে নিয়ে আসেন নীরা হামিদ।আরমান হামিদ ওনাদের সাথে বসে গল্প করছেন।নীরা হসমিদ মেয়ে কে ইশারা করেন ওনাদের সালাম দিতে।ইয়ারাবী ওনাদের সালাম দিয়ে বাবার পাশে এসে বসলো। নীরা হামিদ মেয়ের মাথায় ছোট একটা ঘোমটা টেনে দিয়েছেন।ওনারা সামায়রা কে ওর পড়াশুনা শখ সব কিছুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে থাকেন।সামায়রার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে।কিছু বলতে পারছেনা ও।গলা ও আটকে আসছে।বারবার মনে পড়ছে ফাহমিনকে।সামায়রা না চাইতে ও ফাহমিনকে এখানে আশা করছে।কিছুক্ষন পরই রোয়েন রুহীকে আসতে দেখা যায় দ্রিধা কে নিয়ে।বোন আর ভাগনীকে দেখে খুশি হতে চেয়ে ও পারেনা।ওনারা সামনে বসে আছে নাহলে দৌড়ে গিয়ে রুহীকে জড়িয়ে ধরতো সামায়রা।রোয়েন এসে ফারদিন খান আর ওনার স্ত্রীকে সালাম জানায়।রুহী ও রোয়েনের পাশে এসে দাঁড়ায়।রোয়েন বলল,
”আঙ্কেল ও আমার ওয়াইফ রুহী আর আমাদের মেয়ে দ্রিধা।”
”হুম।ফাহমিন বলেছিলো তোমার মেয়ের কথা।ব্যাস্তার কারনে দেখতে আসতে ও পারিনি।”
”ওকে বলেছিলাম আপনাদের নিয়ে আসতে।সময়ই তো পায়না।”
”হুম বুঝোইতো ডাক্তার মানুষ।এখন এ অপারেশন তখন সে ডিউটি।”
”জি আঙ্কেল বুঝি।”
”হুম।তাহলে তোমরা বসো।”
”জি।”
এদিকে ওনাদের কথায় সামায়রা প্রচন্ড চমকে যায়।ওর বুঝতে দেরি হয়নি এই ভদ্রলোক আর ভদ্র মহিলা ফাহমিনের বাবা মা।ফাহমিন বলে ছিলো ওনার কোন ভাই নেই।তাহলে?? বুকটা কেমন অদ্ভুত ভাবে লাফাতে শুরু করে।না চাইতে ও ভয়টা অনেকাংশে কমে যায়।হাসি পায় ওর। মুখ লুকিয়ে একটু হেসে নেয়।
ফারদিন খান আবার সামায়রায় মনযোগ দিলো।তারপর রোয়েনকে বললেন,
”তোমার শালিকাকে তো আমাদের পছন্দ হয়েছে।তোমার বন্ধুতো অনেক আগে থেকে পছন্দ করে রেখেছে।তা সামায়রা কি বলবে তুমি?রাজি এই প্রস্তাবে?
সামায়রা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।রুহী উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
”কিছু না মনে করলে সামায়রার সাথে পার্সোনালি কথা বলবো।”
রুহীর কথায় ফারদিন খান তাঁর স্ত্রীর দিকে তাকান।তারপর বললেন,
”যাও।”
রুহী বোনকে নিয়ে সামায়রার রুমে চলে এলো।দরজাটা একটু চাঁপিয়ে সামায়রা বিছানায় বসিয়ে দ্রিধাকে শুইয়ে দিলো বিছানায়।তারপর বোনের সামনে বসে বলল,
”ফাহমিন ভাইকে খুব ভালো করে চিনিস।অনেক ঘুরতে ও গিয়েছিলি ওনার সাথে।কেমন লাগে ওনাকে তোর?”
”ভালো লাগে আপি।”
”ভালো লাগাটা কেমন?তাকে দেখলে ভালো লাগে,বিশ্বাস আছে তার ওপর,তার সাথে থাকতে ভালো লাগে,কথা বলতে ভালো লাগে এমন কিছু?”
”জি আপু।
লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল সামায়রা।রুহী আবার ও বলল,
”কথা হয়?”
”জি আপু।ওনি ভিডিও কল দেয় তো।”
”তোর খেয়াল রাখে?”
”হ্যা অনেক।”
”আজ তো ওনার বাবা মা তোকে দেখতে এলো। তুই কি সারাজীবন থাকতে পারবি ওনার সাথে?বিয়ের পর কিন্তু ওনিই তোর সব।ওনার সাথেই থাকতে হবে।তোর সব খুশি আশা আবদার ওনার কাছেই থাকবে।বিয়েটা হলো সারাজীবনের বন্ধন।থাকতে পারবি সারাজীবন?”
সামায়রা রুহীকে দেখে আবার চোখ সরিয়ে নিচে তাকিয়ে দ্রিধাকে আদর করতে থাকে।কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সবসময় মনে হয় লোকটাকে ওর দরকার,তাকে দেখতে ভালো লাগে,ভাবতে ভালো লাগে,কথা শুনতে ভালো লাগে।মোটকথা তার সবটাই ওর ভালো লাগে।তার সাথে কি সারাটাজীবন কাঁটিয়ে দেয়া যায়?বোনের জবাব না পেয়ে রুহী আবার ও বলল,
”কিছু বল।নিচে বসে আছেন ওনারা।”
সামায়রা এখনো চুপ করে আছে।আসলে প্রচন্ড দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছে ও।রুহী বলল,
”আজ তোর ডিসিশনের ওপর তোর জীবন নির্ভর করছে।তুই না করে দিলে অন্য এক লোকের সাথে থাকতে হবে।সারাজীবনের জন্য তার হয়ে যেতে হবে পারবি অন্য কারোর হতে?ফাহমিন ভাই তোকে ভালবাসে।তুই না করে দিলে জানিস ফাহমিন ভাইয়ের সাথে ধোঁকা হবে।কিভাবে ওনি নিজের মা বাবা কে রাজি করিয়েছে চিন্তা ও করতে পারবিনা।এখন বল পারবি অন্য কারোর হতে?
সামায়রা এতক্ষন চুপ থাকলে ও এখন আর পারলোনা ফাহমিনকে ছাড়া আর কাউকে কল্পনা ও করতে পারছেনা এর কারন ও জানা নেই ওর।তবে অন্য কাউকে বসাতে পারবেনা ফাহমিনের জায়গায়।অন্য কারোর কথায় বুক ভার হয়ে আসে সামায়রার।গলা ধরে আসে।আর আটকাতে পারেনা নিজেকে।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সামায়রা।রুহী অবাক হয়ে যায় সামায়রার হঠাৎ কান্নায়। সামায়রাকে বুকে টেনে নেয় রুহী।এবার একটু শান্ত হলো সামায়রা।তারপর ও কাঁদো গলায় বলল,
”আপি অন্য কাউকে ভাবতে পারছিনা আমি।অন্য কারোর সাথে থাকতে পারবোনা আমি।”
”তাহলে কি বলবি ওনাদের?”
”আপি ওনাদের হ্যা বলে দাও।আমি ওনার সাথেই সারাজীবন থাকবো।”
রুহীর মুখে হাসি ফুঁটে উঠে।সামায়রার চোখ মুছে বলল,
”কাঁদতে হয়না।চল নিচে যাই।”
”জি।”
ওরা নিচে চলে এলো।রোয়েন রুহীকে দেখছে।অনেকটা সময় পর যেন রুহীকে দেখছে।এতক্ষন ওর বুকটা বেশ ভার লাগছিলো এখন যেন ভাল লাগছে।রুহী এসে ওনাদের বলল,
”সামায়রা রাজি।”
ফারদিন খান সশব্দে বলেন,
”আলহামদুলিল্লাহ। ”
নীরা হামিদ খুশি হয়ে মিষ্টি নিয়ে আসেন সবার জন্য।রুহী হাসতে হাসতে রোয়েনের দিকে তাকাতেই দেখলো রোয়েন ও ওর দিকে চেয়ে আছে।মুখ সরিয়ে নেয় রুহী।মিষ্টি মুখ করে নিলাদ্রী খান বলেন,
”তাহলে ওকে আংটি পরিয়ে যাই।আজ থেকে তো আমাদেরই মেয়ে।”
নীরা হামিদ মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
”জি অবশ্যই।”
সামায়রাকে আংটি পরানো হলো।সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেলো সবাই।সামায়রা রুমে এসে ফোন চেক করে দেখলো ফাহমিনে পঞ্চাশ প্লাস কল।লজ্জা ভরে আসে ওর মুখ।ফাহমিনের নম্বরের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেতে থাকে সামায়রা।
এদিকে আশফিনাকে ঘরে আনা হয়েছে।পরশুদিন ওদের ফ্লাইট।রামীন অপারেশনের পর থেকে ভীষন খেয়াল রাখছে ওর।নিজ হাতে খাইয়ে দেয় তিনবেলা।এমন স্বামী পেয়ে সত্যিই নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয় ওর।বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে রোয়েন রুহী।দ্রিধা ওর দোলনায় ঘুমিয়ে গেছে।রোয়েন হঠাৎ করে রুহীর দিকে উপুড় হয়।তারপর রেগে বলতে শুরু করে,
”এমন এ্যাটিটিউড দেখিয়ে নিজেকে দূরে রাখার মানে কি?নিজে কষ্ট পাচ্ছো আমাকে ও দিচ্ছো।পেয়েছোটা কি?”
রুহীর গাল চেঁপে ধরে বলল,
”তুমি বুঝোনা ভালবাসি তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসি।কি মনে করেছো তুমি এমন চুপচাপ থাকলে তোমাকে ছেড়ে দিবো?আমি নিজের পুরোটা অধিকার আদায় করে নিতে জানি।শুধু বেশি ভালবাসি বলেই এমন জোর খাটাচ্ছিনা।”
বলেই রোয়েন উঠে বারান্দায় চলে আসে।তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দেয়।রোয়েন চলে যেতেই কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে থাকে।তারপর স্বাভাবিক হতে থাকে।হঠাৎ বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে।আর সামলাতে পারেনা নিজেকে।কেঁদে উঠে ডুকরে।
চলবে