The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 116

→ধুসরপ্রজাপতি,
সব দুঃখগুলো ডানা মেলে
যেদিন উড়ে যাবে
বুঝবে সেদিন বৃষ্টি হবে,
বৃষ্টির রং হবে লাল,
যেমনটি কৃষ্ণচূড়া পুরো গাছটা
ঢেকে ফেলে তার রং দিয়ে,
যেদিন সব সম্পর্কের সঙ্গা
শুধু একটাই হবে,
সেদিন যেন বৃষ্টি হবে,
বৃষ্টির রং হবে সাদা,
যেমনটি কাশফুল ছেয়ে
থাকে চরের উপুকুল,
যেদিন তুমি আমাকে দেখতে পাবে
তোমার চাওয়া প্রিয় রঙে,
সেদিন যেন বৃষ্টি হবে,
শুভ্রতার মাঝে নীল যেমন
রঙের খেলায় মেতে উঠে তেমনি,
হে বৃষ্টির রং হবে নীল…!!
হুমায়ুন আহমেদের ”নীল বৃষ্টি “কবিতাটি মনে পড়ে যায় রোয়েনের অজান্তেই।মনে মনে বারবার আউড়ে নেয় তুমি সুন্দর তুমি মায়াবতী,আমার সকাল বেলার স্নিগ্ধ আলো,আমার রজনী,আমার চাঁদের আলো।বাহিরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে তারই মাঝে নীল শাড়ীতে আচ্ছাদিত রমনী দু বাহু মেলে বৃষ্টির পানির স্পর্শ নিজের শরীর মনে মেখে নিচ্ছে।বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটা তার হৃদয় মনে ভালবাসার আলোড়ন জাগাচ্ছে।আজ মনে হচ্ছে নিজেকে মুক্ত পাখি,সব কিছু থেকে মুক্ত।ঠোঁটজোড়ার ওপর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ভালবাসার মানুষটার ঠোঁটজোড়ার ছোঁয়ার কথা মনে পড়ে যায়।চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তবে সেগুলো বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার।অশ্রু কনা গুলো নিজের মাঝেই গোপন রয়েছে।কাউকে দেখাতে চায়না রুহী।নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেবেনা ও।কারন কি লাভ নিজের কষ্টে অন্য কাউকে কষ্ট দেয়া?থাকনা সেগুলো মনের খাঁচায় বন্দী।কাজ থেকে ফিরে রুমে এসে মেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে রোয়েন।কি মিষ্টি লাগছে সোনা বাচ্চাটাকে।উপুড় হয়ে মেয়ের গালে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ খেয়াল করে রুহী রুমে নেই।এদিক সেদিক তাকিয়ে রুহীকে পায়না ও। এ দিক সেদিক তাকিয়ে রুহীকে না পেয়ে কিছু টা চিন্তিত হয় ও।তারপর নিচে ও খুঁজে রুহীকে।না পেয়ে ছাদে উঠে যায় ও।ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য থমকে যায় রোয়েন।আজ যেন নতুন ভাবে রুহীকে আবিষ্কার করলো ।রোয়েন হেঁটে হেঁটে ছাদের একটু কাছে এসে দাঁড়ায়।রুহী নীল শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজছে।বাহিরের স্পটলাইটে রুহীকে দেখা যাচ্ছে।দুহাত দুদিকে মেলে বৃষ্টির আনন্দ নিচ্ছে মায়াবতী।ভেজা শাড়ীটা রুহীর শরীরের সাথে মিশে গেছে।রুহীর হাত উঠানোর কারনে ওর পেট দৃশ্যমান।শরীরের প্রত্যেকটা আঁকা বাঁকা ভাজ রোয়েন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।দোষ কি?নিজের বিবাহিত স্ত্রী।কোমড়ের সাইডের কালো তিলটা আরো বেশি ফুঁটে উঠেছে। কিভাবে নিজেকে সামলায় ও?বৌকে এমন ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে কেই বা পারে নিজেকে সামলাতে।রুহী একজায়গায় স্থির হয়ে আছে।কোন নড়চড় নেই ওর।রোয়েন ভিতরে ঢুকে পড়ে যতোই এগোচ্ছে ততোই যেন দৃশ্যটা ওকে টানছে।একসময়ে রোয়েন রুহীর একদম কাছে চলে আসে।ধীরে ধীরে রুহীর দুদিকে মেলে ধরা হাত দুটোয় হালকা স্পর্শ লাগিয়ে দিতে দিতে রোয়েনের হাতজোড়া রুহীর হাত জোড়া বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করে।তারপর একদম শেষপ্রান্তে এসে রুহীর হাত জোড়া নিজের হাত দুটো দিয়ে মুঠ করে ধরে।যতোক্ষন রুহী নিজের হাত দুটোয় দুটো পুরষালী হাতের ছোঁয়া পাচ্ছিলো ততক্ষন যেন দম আটকে আসছিলো।তারপর যেন কোন এক অজানা নেশায় মত্ত হতে লাগলো রুহীর পুরো শরীর।কাঁপন দিয়ে উঠে রোয়েনের বুকের মাঝে।রোয়েনের বুকের ওর পিঠ সাথে স্পর্শ লাগতেই শিহরন বয়ে যায় রুহীর পুরো শরীর জুড়ে।তারপর নিজেকে আরো বেশি মিশিয়ে নিতে চায় ও।রোয়েন এবার রুহীর হাতদুটো ভাজ করে নিয়ে ওর পেটের ওপর রেখে এক হাত দিয়প রুহীর খালি কোমড় আর অপরহাতে রুহীর পেট স্পর্শ করে।রুহী ঘোরের মাঝেই বলতে লাগলো,
”প্লিজ নিজের সাথে মিশিয়ে নাও।ভালবাসো আমাকে প্লিজ।”
রুহীর কাঁপন ধরা কন্ঠ শুনে রোয়েন এবার যেন পাগল হয়ে যাবে।কি করবে ও?মেয়েটাকে বড্ড ভালবাসে ও।কিভাবে নিজেকে রুহীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে ও?রুহীর ভেজা চুল গুলো ওর দুকাঁধের ওপর এলিয়ে পড়েছে।রোয়েন কাঁধের ওপর থেকে চুল সরিয়ে সেখানে ঠোঁট বুলিয়ে নিতে থাকে।রুহীর শরীরের কম্পন অনুভব করতে পারছে রোয়েন।রুহীকে হঠাৎ সামনে ফিরিয়ে নেয় রোয়েন।দুজন অনেকটা কাছে চলে আসে একে অপরের।মাঝের দূরত্ব কমতে থাকে।তারপর দুজোড়া ওষ্ঠ এক হয়ে যায়।দীর্ঘ চুম্বনের পর রুহীকে বুকে টেনে নেয় রোয়েন।রুহীর অশ্রু গুলো রোয়েনের শার্টের ওপর পড়ছে।রোয়েন নিজের বুকে শক্ত জড়িয়ে নেয় রুহীকে। তারপর বলতে লাগলো,
”রুহী ভালবাসি তোমাকে খুব ভালবাসি।প্লিজ ভুল বুঝোনা আমাকে দূরে সরিয়ে রেখোনা নিজেকে।পারছিনা নিতে তোমার শূন্যতা।প্রত্যেকটা রাত তোমার শুন্যতা কাঁদায় আমাকে।প্লিজ মাফ করো আমাকে।আবার ও মিশে যাও আমাতে।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনা আর।রুহী……”
রুহী এতোটা সময় রোয়েনের নেশায় মত্ত ছিলো।রোয়েনের কথা গুলোয় নেশা কেঁটে যেতে থাকে ওর।মনে পড়তে থাকে রোয়েনের কর্মকান্ড।রোয়েনের পিঠের ওপর থেকে রুহীর হাতজোড়া পড়ে গেলো।রোয়েন একটু সরে রুহীর দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো রুহী ওর দিকে চেয়ে আছে।রুহীর গালে ভরাট চুমু খেতে খেতে বিনয়ের সুরে রোয়েন বলল,
”রুহী প্লিজ রাগ করে থেকোনা।নিজেকে এভাবে সরিয়ে রেখোনা।”
রুহী ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়ে সরে আসে রোয়েনের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে। তারপর আঁচল টেনে শরীরে ভালমতো জড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুহী।রোয়েন ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে।নিজ হাতে সব শেষ করে দিয়েছে।ভালবাসার সংসার টাকে নষ্ট করে ফেলেছে ওর রাগের মাধ্যমে।সেদিনকার দোষ এখন প্রতিনিয়ত ওর হৃদয় খানিকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।দু হাঁটু ভেঙ্গে ছাদের শক্ত মাটির ওপর বসে পড়ে।প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠে।রুহী শাড়ী ঠিক করে নিচে এসে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।তারপর শাড়ী বুকে চেঁপে ধরে গুঁমড়ে কেঁদে উঠে ও।মিশে কি যেতে পারতোনা স্বামীর ভালবাসার ছোঁয়ায়?কেন এতো দূরত্ব এসে গেছে ওদের মাঝে?নিজে ও কি অস্থির হয়ে পড়েছিলো না?তার ভালোবাসা মাখা ছোঁয়া গুলো কি পেতে চাইছিলো না?তবে কেন পাষান নারীর মতো লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে চলে এলো?কেন মিশে গেলো না তার মাঝে?দোষ টা তো তার তাইনা?বারবার আঘাত করেছে স্ত্রীকে পুরো কথা না শুনে।কথা শুনতে চায়নি।ছোট্ট হৃদয়খানি কে দুমড়েমুচড়ে দেয়নি সে?দিয়েছে রুহীকে প্রান ভরা ভালবাসা আবার নিজের রাগের আগুনে ওকে জ্বালিয়ে মেরেছিলো। রাগ কি সবার থাকেনা?সবাই কি প্রিয় মানুষ গুলোকে এভাবে আঘাত করে?সবাই তো একহয়না।তাহলে কেন ওর প্রিয় মানুষটা এমন করে?কেন বারবার এই মনটাকে ব্যাথা দেয়?সে কেন বুঝেনা ওর নিজের ও কষ্ট হয়?
কাঁদতে থাকে রুহী বাথরুমের দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে।যদি মরে যেতো হয়ত ভালো হতো।কিন্তু ওর বাচ্চাটা?ওর কি হতো?রুহী কি নিজের সুখের জন্য বাচ্চা কে ভুলে গেলো?হয়ে গেলো হৃদয় হীনা মা?তবে এমন মাকে ধিক্কার!!!!
দুদিন পেরিয়ে গেলো।ফারদিন হক আর নীলাদ্রি হক ঠিক করলেন ছেলের প্রিয় মানুষটাকে দেখতে যাবেন।এ কয়দিন মেয়েটার পরিবার সম্পর্কে অনেক খোঁজ নিয়েছেন। জানতে পেরেছেন দুবাই তে জন্ম মেয়েটার।ওর পরিবার ও বেশ ভালো।স্থির করলেন এই মেয়েকে দেখতে যাবেন।একটা আংটির ব্যাবস্থা ও করে নেন যদি কাজে লাগে আর কি আগে প্রয়োজন অনুভব করলেন আরমান হামিদের সাথে কথা বলবেন।কারন হঠাৎ করে একজনের বাসায় গেলে কেমন দেখা যাবে।তার ওপর মানসিক প্রস্তুতির ও ব্যাপার আছে সবার।তাই আর চিন্তা না করে কল দেন আরমান হামিদের পার্সেনাল নম্বরে।ফোন বেজে উঠায় খানিকটা অবাক আরমান হামিদ।কখনোই দেখেননি এ নম্বর।তারপর ও কিছুটা চিন্তা করেই ফোন রিসিভ করেন।
অপরপাশ থেকে ফারদিন হক বলেন,
”আসসালামু আলাইকুম। আরমান হামিদ বলছেন তো?”
”ওয়ালাইকুম আসসালাম।আপনাকে ঠিক চিনলাম না।”
”আমি ফারদিন হক।ডাক্তার ফাহমিন হকের বাবা আমি।”
ডাক্তারের নাম শুনে মনে করতে পারেননা আরমান হামিদ। আদৌ কি শুনেছিলেন এই নাম?
পারদিন হামিদ বলে উঠেন,
”রোয়েন আমার ছেলের বন্ধু।”
”ওহ হ্যা।ভালো আছেন?”
”আলহামদুলিল্লাহ আপনি?”
”আল্লাহ রাখছে।তা আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।সামনাসামনি বলতে চাই।”
”তাহলে আমার বাসায় চলে আসেন কাল।”
”আচ্ছা।তাহলে আমি আসবো।আপনার ঠিকনা দিন।”
”হুম।বলছি।”
পরদিনই বেরিয়ে যান স্ত্রীকে নিয়ে আরমান হামিদের বাসার উদ্দেশ্যে।বিকেলে নবাগত মেহমান দের দেখে কিছুটা অবাক হন নীরা হামিদ।ফারদিন হক বলেন,
”রোয়েনের বন্ধু ফাহমিনের বাবা আমি।”
”ওহ। আসুন ভেতরে।”
দুজন বয়স্ক মানুষকে দেখে অবাক হন নীরা হামিদ।মনে পড়ে যায় আরমান বলেছিলো একজন আসবে।কিন্তু এখন দেখেন দুজন।
দুজন সোফায় এসে বসে।ওনাদের কাপড় চোপড়ে বেশ আভিজাত্যের ভাব।চেহারায় ও আছে নূরের আলো।দুজন বেশ সুন্দর। নীরা হামিদ কে ফারদিন হক বলেন,
”আপনার হাজবেন্ডের সাথে কথা আছে।”
”জি ডাকছি। ”
নীরা হামিদ দৌড়ে গিয়ে আরমান হামিদকে বলেন,
”ফাহমিনের বাবা মা আসছে।একটু আসো নিচে।”
আরমান হামিদ একটু অবাক হন।তারপর রোয়েনের কথা মনে পড়তেই ভাবেন সামায়রাকে দেখতে এলো কিনা।ওনি কাপড় পাল্টে বেরিয়ে যাবার সময়ে বললেন,
”সামায়রা কে ঘুম থেকে তোলো।ওনাদের সাথে কথা বলি আমি।”
”কেন?”
”এতো কথা বলোনা।যা বলছি করো।”
”আচ্ছা।”
আরমান হামিদ নিচে এসে দেখতে পান ওনাদের।তারপর সালাম দিয়ে ওনাদের সামনে বসেন।ফারদিন হক বললেন,
”আমার ছেলে আপনার ভাগনী জামাইয়ের বন্ধু।”
”জি।জানি ওকে।”
”আমার ছেলে আপনার মেয়ে সামায়রা কে পছন্দ করে।”
”হুম।রোয়েন বলেছিলো।”
”আমার ছেলে আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছে বলেই দেখতে এলাম।আপনাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে যা জানলাম আমার বেশ ভালো লেগেছে।”
”ধন্যবাদ।”
”আপনি কিছু মনে না করলে মেয়েটাকে একটু দেখবো।”
”জি। একটু আসছি আমি।”
আরমান হামিদ রুমে এসে রোয়েনকে কে কল দেন।রোয়েন আরমান হামিদের কল দেখে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।আরমান হামিদ বললেন,
”বাবা ফাহমিনের বাবা মা এসেছে বাসায়।সামায়রাকে দেখতে আসবে জানতাম না আমরা। এখন তুমি আর রুহী একটু আসো।”
”জি মামা।চিন্তা করবেননা আমরা আসছি।”
”ধন্যবাদ রোয়েন।তাহলে আসো।সামায়রাকে ওনাদের সামনে নিয়ে যাই।”
”ঠিক আছে।”
রোয়েন ফোন রেখে রুহীর কাছে এসে দাঁড়ায়।রুহী মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে।সেদিনের পর থেকে রুহী খুব কম কথা বলে।শুধু উত্তর দেয় রোয়েনের কথার।ভীষন কষ্ট হয় রোয়েনের।তারপর ও নিজেকে সামলে বলল,
”রেডি হও।সামায়রাকো ফাহমিনের বাবা মা দেখতে এসেছে।”
চলবে