The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 118
→গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় রুহীর।শুনতে পায় বাবুর মায়া ভরা শব্দ।আর অনুভব করলো এক অদ্ভুত প্রশান্তি।কেঁদে কেঁদেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো জানেনা ও।রাতে কারোরই ডিনার হয়নি।শুধু দ্রিধা কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো।তারপর তো নিজেই ঘুমিয়ে গেলো।রুহীর পেটে একজোড়া শক্ত হাতের ছোঁয়া পাচ্ছে।নড়তে পারছেনা ও।অবশ্য নিজের ওষ্ঠের ওপর আরো একজোড়া ঠোঁটের ছোঁয়া ওকে নড়তে বাঁধা দিচ্ছে।রাতে লোকটা বারান্দায় যে গেলো ফিরেই আসেনি।সিগারেটের বাজে ঘ্রান নাকে আসতেই দ্রিধা কেঁদে উঠেছিলো। রুহী উঠে রুমে এয়ারফ্রেশনার দিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে আদর করে কান্না থামায়।লোকটাও না!!দরজা লাগিয়ে তো সিগারেট টানতে পারে।মেয়েকে আবার ও ঘুম পাড়িয়ে রুহী এসে শুয়ে পড়ে।ঘুমের রেশ কাঁটছে ধীরে ধীরে।চোখ আধোখোলা রুহীর।লোকটার বন্ধ চোখজোড়া গড়িয়ে অশ্রু ঝড়ছে।রুহী চোখ বুজে নেয় আবার ও।ওকে দূর্বল করে তুলছে তার অশ্রুসজল চোখ।নিজের কাঁধে ও মিষ্টি ছোঁয়া পেতে থাকে রুহী।তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।রোয়েনের মাথা ঢলে পড়ে রুহীর বুকের ওপর।চোখে নেমে আসে গভীর তন্দ্রা।
রুহী ও সরাতে পারেনা তাকে।আলতো হাতে চুল গুলো নেড়ে দিতে থাকে যত্নে।সকালে উঠে নিজেকে রুহীর বুকে পেয়ে একটু হাসে রোয়েন।মাথা উঠিয়ে রুহীকে দেখে নেয়।ওর কপাল গাল ঠোঁট কেমন আশ্চর্যজনক ভাবে লাল হয়ে আছে।সেটা যে কতো টা নেশাকাতর লাগছে রোয়েনের কাছে সেটা হয়ত ওই ভালো জানে।মুখ বাড়িয়ে চুমু খায় রুহীকে।তারপর উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় রোয়েন।রুহী পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।এলার্মের শব্দে আর ঘুমাতে পারেনা রুহী।লোকটাকে কাজে যেতে হবে।তার নাস্তা রেডি করতে হবে।তার আগে বাবুকে দেখে নেয়া দরকার।শোয়া থেকে উঠে বসে রুহী।তারপর নিচে নেমে মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ায়।রুহী বেশ অবাক।সব সময় কেঁদে ঘুম ভাঙ্গে দ্রিধার।কিন্তু ও আজ হাসি দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেছে।মেয়েকে কোলে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
”আম্মুটার ঘুম ভাঙ্গলো?আমার মাটা আজ কে একদম কাঁদেনি।লক্ষী সোনা মা।পাপার নাস্তা বানিয়ে আনি ওকে।তারপর আপনাকে খাওয়াবো ঠিক আছে আম্মু?”
মেয়েকে দোলনায় রেখে দোলনার ওপরের খেলনার সুইচ অনকরতেই সেটা ঘুরতে লাগলো।সাথে সাথে শুরু হলো দ্রিধার হাত পা নেড়ে খেলা।রুহী নিচে নেমে আসে।রামীলা বিড়বিড় করে গান করছে।রুহী কড়াইতে তেল আর ডিম ছেড়ে বলল,
”গান করছিস যে?প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি?”
”না। আমার আবার ফেরেম?ওইডা হইতো না আমার দ্বারা।”
”কেন হবেনা?তুই দেখতে সুন্দর বুদ্ধিমতি।”
”হু কইছে আফনেরে।”
রুহী চুপ করে রইলো।একদম পাগল মেয়েটা রামীলা।রামীলা আবার বলল,
”আফু সামায়রা আফুর কি বিয়া ঠিক হইছে?”
”হুম।”
”জামাই কি করে?”
”ওনি ডাক্তার।ফাহমিন ভাইকে মনে আছে তোর?”
”হেতে ভাইয়ার বন্ধু না?”
”হুম।”
”আফু!!!”
”বল।”
”সামায়রা আফায় বাইচ্চা মাইয়া।ফাহমিন ভাইয়ে বাইচ্চারে বিয়া করবার লাগছে ক্যালা?”
”ওপরওয়ালাই ওদের জোড়া বানিয়ে রেখেছেন।সেখানে আমাদের কোন হাত নেই।চাইলে ও কিছু করতে পারবোনা।”
”আইচ্ছা আফু!!!”
”এতো কথা বলিস কেন?কাজ কর।”
”খালি আরেকডা কতা কই?”
”বল।”
”আফনার আর ভাইয়ার ও নাকি ফেরেম আছিলো?”
”কে বলল তোকে?”
”কন না আফু?”
”জানিনা।কাজ কর।”
”আফু আরেকডা কথা কই?”
”হুম।”
”সামায়রা আফু ও কি ফেরেম করছে ফাহমিন ভাইয়ার লগে?”
”তোর ফাহমিন ভাইয়া ওকে ভালবাসে।সামায়রা ও বাসে।তবে কেউ কাউকে জানায় নাই।”
”কইবো কবে?”
”কে জানে?”
”ওহ।ভাইয়া উঠছেনি?”
”হুম।”
রুহী আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসে পাকঘর থেকে।কথা শুরু করলেই মেয়েটা ওকে পেয়ে বসে।রোয়েন নিচে নেমে আসে।রুহী থমকে গেছে রোয়েনকে দেখে।লোকটার শার্টের বোতাম গুলো খোলা।বুকের হালকা পশম গুলোয় ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে আছে।রোয়েন দুহাতের পাঁচ আঙ্গুল করে কাজে লাগিয়ে চুল গুলো পিছনে নিয়ে গেলো।তারপর শার্টের বোতাম লাগাতে থাকে।রুহী অন্যদিকে ফিরে তাকায়।কেমন যেন তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো বুকে।
সামায়রা হাতের আংটিটাকে নাড়ছে।বোনের কথা গুলো কানে বাজছে ওর।রুহীর কথা গুলো ওকে যেন ফাহমিনের অনেকটা কাছে নিয়ে গেছে।অনেকটাই কাছে।ও ডুবে গেছে ফাহমিনে।লোকটাকে ভীষন ভালো লাগে ওর।তাকে ভাবতে ভালো লাগে।তার কথা শুনতে ভালো লাগে।তাকে দেখতে ও ভালো লাগে।তাকে জুড়ে রয়েছে ভালো লাগাটা।কলেজে বসে ভাবছিলো সামায়রা।হাতের আংটিটাকে দেখে হাসলো সামায়রা।কিছুদিনের মাঝেই লোকটার সাথে ওর বিয়ে হবে।বিয়ে মানে তো সারাজীবনের বন্ধন।পবিত্র বন্ধন।লোকটার সাথে সারাটাজীবন থাকবে ও।ভাবতেই ভীষন রকমের ভালো লাগা কাজ করে সামায়রার।কলেজ শেষে বেরিয়ে আসে ও।কিছুক্ষন পর তাকে দেখতে পাবে ও।ফাহমিনের কথা মনে আসতেই লাজ রাঙ্গা হয়ে আসে সামায়রার সুন্দর মুখটা।
তার সাথে দেখা করবে কিভাবে আগে তাকে যে ভাবে দেখেছিলো এখন তো সেভাবে দেখতে পারবেনা। কারন সম্পর্কটা যে আগের মতো নেই।ও তো লোকটার বাগদত্তা।হঠাৎ হাসপাতালের ভিতর থেকে বেরিয়ে ফাহমিন।পাশে একজন লোক।তবে তার গায়ে এপ্রোন আর ফাহমিনের গায়ে ধূসর বর্নের একটি শার্ট। শার্টের কিছু অংশ একদম ভেজা।তার কপাল গাল ভিজে চপচপ করছে কিছুটা লাল হয়ে আছে।লোকটাকে যেন কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে ফাহমিন।সামায়রা শুধু দেখছে তাকে।কেন যেন আজ ওর চোখে ফাহমিনকে অনেক সুন্দর লাগছে। শরীরে মেদ নেই।তার চোখ বেশ বড়।চোখের মনি গুলো হালকা খয়েরী বর্নের।গায়ের রং এ আছে হলদেটে ভাব।বেশ ঘন ভ্রু তার এবং সুন্দর করে সাজানো যেন ভ্রুপ্লাক করে এসেছে।ঠোঁট দুটো একদম লাল হয়ে আছে।একদম হালকা লোম ওনার শরীরে।বেশ লম্বা ও সে।ফাহমিনকে পুরো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো সামায়রা।লোকটা চলে যেতেই সামায়রার কলেজের দিকে তাকায় ফাহমিন।দুজনের চোখাচোখি হতেই সামায়রা মুখ ফিরিয়ে নেয়। অভিমান যেন ওর ওপর চেঁপে বসেছে।সে তাকাতেই কেন যেন অভিমান লাগছে তার ওপর।কাল কথা না বলায় নাকি সে আসেনি দেখে।সামায়রাকে এমন মুখ ফিরাতে দেখে ফাহমিন রাস্তা পার করে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।তারপর কানে ফিসফিস করে বলল,
”এতক্ষন তো খুব দেখছিলে।এখন কি হলো?”
ধরা পড়ে গেছে দেখে সোজা হাঁটতে শুরু করে সামায়রা।ফাহমিন ওর পাশে হাঁটতে শুরু করে।ও থামছেনা দেখে বলল,
”কই যাচ্ছো শ্বশুর বাড়ি? অবশ্য সেটাতো উল্টো দিকে।এ দিকে তো বাপের বাড়ি।”
অভিমান চেঁপে রাখতে পারেনা সামায়রা।হেসে দেয় অন্যদিকে ফিরে। ফাহমিন আবার বলল,
”কি মেয়েরে বাবা?রাগতে ও দেরি নেই হাসতে ও নেই।”
মুখ গম্ভীর করার চেষ্টা করতে করতে সামায়রা বলল,
”কল ধরেননি।আবার বলেন কথা বলবেননা।”
”রাগটাকি সেজন্য?”
”যা মনে করেন।”
”তাহলে বলি যখন কল করছিলে আমি একটা সার্জারি তে ছিলাম।আর কল ধরলে আমার বাবা মা তার একমাত্র বৌ মাকে দেরি করে দেখতে পেতো।সেটাকি ভালো লাগতো আমার।”
সামায়রা হাত দিয়ে হালকা বাড়ি লাগায় ফাহমিনের হাতে।ফাহমিন হেসে সামায়রার হাত পেঁচিয়ে ধরে।তারপর ওর থুতনি ধরে মুখটা একটু উঠিয়ে বলল,
”বৌ আমার বৌ।”
সামায়রা লজ্জা মাখা হেসে একটু সরতে গিয়ে ও পারেনা।লোকটার হাত তার হাতদুটো কে শক্ত করে ধরে রেখেছে।ফাহমিন একটা হাত ছেড়ে বলল,
”চলো আজ অনেক ঘুরবো।”
”ড্রাইভার আসবে গাড়ি নিয়ে।ডোন্টওয়ারি সে আসার আগেই চলে আসবো।”
”আচ্ছা।”
সামায়রাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ফাহমিন।আজ মেয়েটাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালাতে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে।অধিকার নিয়ে পাশে বসিয়েছে আজ।তার আঙ্গুলে ফাহমিনের নামের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে।আজ দুজনে খুব ঘুরলো।সামায়রা কে অনেকগুলো চকলেট কিনে দিয়েছে ফাহমিন।তারপর দুজনে মিলে আইসক্রিম খেয়ে বেরিয়ে এলো।
এদিকে রোয়েন কাজে যাওয়ার কিছুক্ষন পর রুহী নিজে কাপড় পাল্টে নিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।যা করার আজই করতে হবে নাহলে আর কখনো হবেনা।মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুহী।ওরা চলে আসে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। সেখানে ঢুকে পড়ে রুহী।তারপর একটা টেবিলে বসে কোন খাবার অর্ডার করেনা।যেন কারোর অপেক্ষায় এসেছে।টেবিলের ওপর ফোন রেখে মেয়েকে বেবি কারে শুইয়ে অপেক্ষা করতে থাকে রুহী।
অপরদিকে সামায়রাকে নিয়ে আরো কিছুসময় গাড়িতে ঘুরিয়ে কলেজের সামনে এলো ওরা।সামায়রা দরজা খুলে বেরুতে নিলে ফাহমিন ওর হাত ধরে নিজের দিকে ফিরায়। তারপর দুহাতে ওর মুখ ধরে দুগালে পর পর চুমু খেয়ে চোখ বুজে ফাহমিন বলল,
”আই লাভ ইউ সামায়রা।আই লাভ ইউ ভেরি মাচ।”
বলে সামায়রার ঠোঁটের দিকে এগুতেই ওর বুকে হাত রেখে থামায় সামায়রা।বাঁধা পাওয়ায় একটু বিরক্ত হয় ফাহমিন।তারপর চোখ খুলতেই সামায়রা বলল,
”বেরুতে হবে।প্লিজ যেতে দিন।”
”আগে কাজ টা করতে দাও।”
”না না প্লিজ আজ না।”
”তাহলে নেক্সট দিন করতে দেবে?”
‘”কি? ”
”যেটা অসমাপ্ত রয়ে গেলো।”
”জানিনা।”
গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে চলে যায় সামায়রা।লোকটা কেমন করছিলো।কেমন লজ্জা লাগছিলো ওর।এভাবে চুমু খেলো সে।ভাবতেই জান যায় যায় অবস্থা।
রামীন আর আশফিনা ও বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের পথে।ঠিক তিনদিন পর দেশের মাটিতে পা রাখবে ওরা। রুহীর সামনে এসে বসলো রাভীন রুশান চৌধুরী।মুখে হালকা হাসি নিয়ে বলল,
”কেমন আছো বৌমা?”
”জি বাবা ভালো।আপনি?”
”এইতো মা।ওকে আমি কোলে নেই?”
”বাবা আপনারই নাতনী।অবশ্যই নিন।”
রুহীর সম্মতি পেয়ে আর দেরি করেনা রাভীন।উঠে নাতনি কে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়।যেন সব পেয়ে গেছেন।
চলবে