The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 109
→লন্ডনে যাওয়ার জন্য ব্যাবস্থা করতে থাকে রামীন। দুজনে গিয়ে চিকিৎসা করে ফিরবে।ভিসার জন্য এপ্লাই করতে গিয়ে কাজে ও যেতে পারছেনা বেশি। তবে রোয়েনকে জানিয়েছে।রোয়েন ও বলেছে নিশ্চিন্ত থাকতে।তাই ও নিজেদের কিছু প্রয়োজনীয় মার্কেটিং করছে।এদিকে সেদিন রাতে ঘরে ফিরে সামায়রার নম্বরে কল লাগায় ফাহমিন।ফোন রিং হয়ে কেঁটে যাচ্ছে।যেন কল হতে হতে নিজে নিজেই কেঁটে যাচ্ছে। ফাহমিন লাগাতার কল লাগাতে থাকে।মেয়েটা কল ধরছেনা কেন?বিরক্ত লাগছে।এবার কঠিন একটা মেসেজ দিয়ে বসলো ফাহমিন।সেটি এমন ছিলো,
”থাপড়ে গাল গুলো এমন পাতলা করে দিবো যে কথা বলতে পারবেনা জলদি কল রিসিভ করো।”
ফাহমিনের নম্বর টা ফাহমিদা নামে সেভ করা সামায়রার নম্বরে।ফোনটা ছিলো নীরা হামিদের সামনে।মেয়ের চুল আঁচড়াচ্ছিলেন ওনি।ফোন সাইলেন্ট তাই কেউ বুঝতে পারেনি কল আসার কথা।নীরা হামিদ মেসেজ দেখে বললেন,
”ফাহমিদা তোকে অনেক বার কল করেছে।ও কে রে?”
ফাহমিদার নামে কেঁপে উঠে সামায়রা।তাড়াতাড়ি বলে দিলো,
”বান্ধুবী আমার।”
”ওহ। যেভাবে মেসেজ দিলো সেটা মনে হচ্ছে।যাই হোক হয়ত কোন ইমার্জেন্সি কথা বল।আমি গেলাম।”
”আচ্ছা মা।”
নীরা হামিদ যেতেই সামায়রা দরজা লক করে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করে ভয় পেয়ে যায়।ওর ভয় কে দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়ে ফাহমিনের কল এলো।লোকটা নিশ্চয়ই রেগে আছে। খুব বকা দিবে।কি বলবে ও?কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কল রিসিভ করে কানে রাখে সামায়রা।অপরপাশ থেকে ফাহমিন চিৎকার করে বলল,
”ভাব হয়েছে তোমার?”
কিছুটা অবাক হয় সামায়রা। কি বলছে এই লোক?কোথায় ভাব দেখালো ও?
”ভাব কোথায় দেখালাম?কি বলছেন এসব?”
”কতোবার কল করেছি দেখো?এমনি তো সারাদিন ফোন নিয়ে থাকো।আর সেই কতক্ষন যাবৎ কল দিয়ে মরছি তোমার ধরার কোন খবর নেই।”
”মা রুমে ছিলো। চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলো।”
”ওহ।ভিডিও কলে আসো। ”
”এতো রাতে কেন?”
”কাজ আছে।আগে এসো পরে বলছি।”
”আচ্ছা।”
সামায়রা ভিডিও কলে এলো ফাহমিনের সামনে বসে আছে। ফাহমিন চুপ করে তাকিয়ে আছে।সামায়রার লজ্জা লাগছে ফাহমিনের দিকে তাকাতে।লোকটা এভাবে তাকিয়ে আছে। এমনিতেই বিকেলের কাহিনীর পর থেকে কেমন যেন লাগছিলো কিভাবে লোকটার সামনাসামনি হবে ও?এখন যখন হয়েই গেছে কিন্তু তার চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা।ফাহমিন বুঝতে পেরে বলল,
”মিমিকে দেখি তো কেমন আছে ও?”
”একটু ভালো। ওয়েট নিয়ে আসি ওকে।”
”ওকে।”
সামায়রা মিমিকে নিয়ে এসে বসলো ফাহমিনের সামনে।ফাহমিন দেখলো না একটু ভালো লাগছে ইদুরটাকে।আসলেই খুব কিউট।
সামায়রা বলল,
”ওর পরিবার দেখবেন?”
”দেখাও।”
সামায়রা বারান্দায় এলো।তারপর বড় একটা খাঁচায় মিমিকে ভরে দেয়।সেখানে ছোট বড় অনেক গুলো হ্যামস্টার আছে।সামায়রা বলল,
”কমলা দুটো বাবু দেখছেন? ওরা আমার নাতি নাতনি মানে মিমির ছেলে মেয়ে।”
”ওর ছেলে মেয়ে তোমার নাতি নাতনী হলো কি করে?”
”মিমি আমার মেয়ে তো।আর কালো টা দেখছেন? ওটা মিমির ভাই।ওর আরেকটা বোন ছিলো ওটাকে এডপশন দিয়েছি।মিমির মা বাবা মারা গেছে।আর কমলা বড় টাকে দেখছেন ওটা মিমির জামাই মানে বাবু গুলোর বাবা।”
ফাহমিন অবাক। মেয়েটা হ্যামস্টারের পরিবারও বানিয়ে ফেলেছে আবার বলছে ওর মেয়ে।ভাবা যায়?ও এ হ্যামস্টার গুলোর বাবা।ভাবতেই কোথায় যেন পিতৃত্ব ভাব জেগে উঠে আবার কোথায় যেন অতি দুঃখে হাসি ও পাচ্ছে। সত্যি অদ্ভুত অনুভূতি।
সামায়রা আবার বলল,
”বাবু গুলোর নাম পিকু আর পিউ।ওদের বাবার নাম ক্যাটবেরি আর ভাইয়ের নাম কোকো।”
”আচ্ছা মিমির বাবা কই?”
”নেই মানে আমি বিয়ে করলেই না ওর বাবা আসবে।”
”বিয়ে করে নাও।”
”দিচ্ছেনা তো।”
”পছন্দের কেউ আছে?”
সামায়রা গাল দুটো লাল হয়ে আসে।মাথা নিচু করে বলল,
”না।”
”আচ্ছা আমি তাহলে ওদের প্রতিদিন দেখবো এভাবে।আপত্তি আছে?”
মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ে সামায়রা।এভাবে অনেকটা সময় কেঁটে যায় ওদের কথায়।
এদিকে রুহীর কপালের মাঝ বরাবর ঠোঁট ছোঁয় রোয়েন।বাবুকে এক কিনারে শুইয়ে রেখেছে বালিশ দিয়ে দুপাশে।চোখ লেগে এসেছিলো রুহীর। হঠাৎ এমন শীতল স্পর্শে রুহীর পুরো শরীর কেঁপে উঠে।চোখ খুলে হাসে রুহী।তারপর রোয়েনের গাল আলতো করে ছুঁয়ে বলল,
”কখন এলে?”
”এখনই।ঘুম পাচ্ছে?”
”উহুম।সারাদিন কেমন গেলো?”
”ভালোই।ও কখন ঘুমালো?”
”বিশমিনিট হলো।তুমি ফ্রেশ হও আমি খাবার রেডি করছি।”
”ওকে।”
রোয়েন ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।রুহী আলমারি থেকে কাপড় বের করে নিচে চলে যায়।তারপর খাবার গরম করে টেবিলে সাজিয়ে উপরে চলে আসে।রোয়েন উপুড় হয়ে মেয়েকে দেখছে।দ্রিধা ঘুমে কাতর।মেয়ের গালে ছোট্ট ছোট্ট চুমু খাচ্ছে রোয়েন।সারাদিন খুব মনে পড়ছিলো বাচ্চাটাকে।হঠাৎ চুমুটা জোরে হওয়াতে কেঁপে উঠে দ্রিধা। সরে আসে রোয়েন।রুহী এসে কোলে বসে ওর।তারপর বলল,
”এখন তো আর কেউ নই আমি।”
”তা হতে যাবে কেন?”
”মেয়েকে কতগুলো চুমু খেলে।কতো আদর দিলে।”
”রুহী মেয়েকে যতোটা ভালবাসি তার চাইতে ও তোমাকে অনেকটা বেশি চাই।তোমাকে সারাদিন না দেখলে জানো কিভাবে থাকি?আর তুমি এভাবে বলছো।”
রুহী একটু হেসে বলল,
”মজা করছিলাম।আমি জানি তুমি কতোটা ভালবাসো আমাকে।মোটেই হিংসা করছিনা। আমারই তো মেয়ে।জানো ও তোমাকে খুব মিস করছিলো।দুপুরে খাওয়ানোর পর ও কাঁদছিলো।প্রথমে ভাবলাম পেট ব্যাথা কিন্তু পেট ব্যাথা ছিলো না। অনেক সময় পর্যন্ত কোলে নিয়ে হাঁটলাম কান্না কমছেনা।পরে তোমার ছবি দেখে সেটায় হাত লাগায়।কোন রিসপন্স না পেয়ে আবার কাঁদতে লাগে।”
রুহীর কথায় হেসে মেয়ের দিকে তাকায় রোয়েন।রুহী বলল,
”খেয়ে আসি চলো।”
”তুমি খাওনি?”
”উহুম।চলো।”
রুহী হাঁটতে চাইলে ওকে কোলে তুলে নেয় রোয়েন।রুহী হেসে রোয়েনের গলা জড়িয়ে ধরে।দুজনে খেয়ে নিয়ে রুমে আসে।দ্রিধা ঘুমোচ্ছে।রুহী এলবাম নিয়ে বসলো।রোয়েন ও বসেছে ওর সামনে।প্রথম পাতা উল্টাতেই দুজনের একদম প্রথম দিকের ছবি।যখন রুহী একেবারেই ভালবাসতোনা রোয়েনকে।মুখে একদমই হাসি নেই ওর।রোয়েন বলল,
”কতোটা ভালবাসি তখন বুঝলে সব কিছু অন্যরকম হতো।”
”হুম।”
অপরপাতায় উল্টায় সেখানে ওদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার ছবি।কোথাও জোর করে ওকে জড়িয়ে ছবি তুলেছে রোয়েন।রুহী হেসে পাতা উল্টায়।পার্টিতে ওদের প্রথম চুমুর ছবি উঠে গিয়েছিলো কোন সিসিটিভি ক্যামেরায়।সেটার একটু কাছেই ছিলো ওরা।তাই রোয়েন ছবিটা তুলে ভিডিওটা ডিলিট করে দেয়। রুহীর মুখ লজ্জায় লাল।রোয়েন বলল,
”প্রথম চুমুটার স্বাদ কতোটা মধুর ছিলো ভাবতে ও পারবেনা।”
”সত্যি বলতে আমার ও ভাল লেগে ছিলো।”
”ওটাতো ঘরে ফেরার পর বলেছিলে।”
”হুম।”
কয়েকটার পরের পাতায় ওদের এ্যাংগেজমেন্টের ছবি।রুহীর চোখে পানি আর রোয়েনের চোখে তীব্র রাগ আর কষ্ট।রুহীর চোখের কোনা ভরে আসে।আংটি পরানোর সময় হাতটা খুব শক্ত করে ধরেছিলো।ভীষন লাল হয়ে গিয়েছিলো।তখন দুজনে কাছাকাছি থেকে ও কতোটা দূরত্বে ছিলো।পরের পাতায় হলুদের ছবি আর রুহীর হাতের মেহেদীর ছবি।হলুদে রোয়েনকে ভীষন সুন্দর লাগছিলো।এর পর আসলো বিয়ের ছবি।তখনই কেমন যেন কেঁপে উঠে রুহী।উঠে বারান্দায় চলে এলো কোন কথা না বলেই।রুহীর এমন ব্যাবহারে অবাক হয় রোয়েন। তারপর নিজেও বারান্দায় চলে আসে।রুহী রোয়েনের দিকে এবার তাকিয়ে আবার ও বাহিরে তাকায়।রোয়েন বলল,
”জানো ওটা নাটক ছিলো।”
”জানি।কিন্তু ওটার জন্য না।খারাপ লাগছে বিয়েটায় আমার মৃত্যুর মাধ্যমেই অনেককে চিনতে পারলাম।কাউকে বিশ্বাস করা অনেক কঠিন তাইনা?মাকে তো কাছেই পাইনি।নানা নানুই সবচেয়ে আপন ছিলো।ওনারা কিভাবে পারলো এমনটা করতে?”
রোয়েন রুহীর কপালে ঠোঁট ঠেঁকিয়ে বলল,
”ওসব কথা ভুলে যাও রুহী।তোমার জীবনে এমন আর কাউকে আসতে দেবোনা।”
রুহীর কপালে নাকে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর ওষ্ঠের অনেকটা কাছে চলে আসে সেখানে চুমু না খেয়ে রুহীর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়।ঘনঘন নিশ্বাস ছেড়ে ঠোঁট বুলাতে থাকে রুহীর ঘাড়ের লাল তিলটায়।
এদিকে রামীন আর আশফিনার টিকিট আর ভিসা হয়ে গেলো।সেদিন অফিসে রামীন আর আশফিনা রোয়েনের বাসায় এসে বিদায় নেয়।যাওয়ার সময় দ্রিধা কে খুব আদর করে গেলো দুজনে।রোয়েন রুহী ওদের দুজনকে সাহস দিতে থাকে।অনেকটা দিন পার হতে থাকে।আরমান হামিদ মেয়ের ওপর নজর রাখছেন।ফাহমিনের সাথে বেশ হাসি খুশি থাকে।আরমান হামিদের বেশির ভাগ সময় মনে হয় মেয়েটা ভালবাসতে শুরু করেছে আবার মাঝে মাঝে মনে হয় ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে কি ভালবাসবে।তাই ওনি ঠিক করেন দাওয়াত দেবেন রোয়েন আর ওর বন্ধুদের।স্ত্রী নীরা হামিদের সাথে কথা বলবেন ভেবে সিদ্ধান্ত নেন।
বাবুর একমাস বয়স হয়ে গেছে। রোয়েন খুব জলদি ঘরে ফিরে আসে।রুহী বাবুকে গোসল করিয়ে বাথরুম থেকে বের হলো।রোয়েন রুমে ঢুকে দেখলো বাবুর গায়ে পাউডার লাগাচ্ছে রুহী।রোয়েন মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে,
”আমার আম্মাটা গোসল দিয়েছে?”
রুহী বলল,
”ওকে কাপড় পরিয়ে দেই।আর এতো জলদি এলে?”
”আজ আমার আম্মুকে নিয়ে বের হবো রুহী।যাও রেডি হও।”
”ওকে নিয়ে বের হওয়া ঠিক হবে?”
”কেন হবেনা?আমি আছিতো।যাও রেডি হও।আমি ওকে রেডি করাচ্ছি।”
”আচ্ছা।”
রুহী শাড়ী পাল্টে নেয় ততক্ষনে রোয়েন বাবুকে একটা ফ্রক পরিয়ে দেয়। ততক্ষনে বাবু ও ওর শার্ট লালা দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে।রুহী দেখে হেসে বলল,
”যাও তুমি ও চেঞ্জ করে নাও।এটা পরে যেওনা। ”
”ওকে ধরো।আমি শার্ট পাল্টে আসি।”
মেয়েকে কোলে নেয় রুহী।রোয়োন শার্ট পাল্টে নেয়।তিনজনে বেরিয়ে পড়ে।একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেতে বসলো তিনজনে।বাবুর জন্য আলাদা খাবার এনেছে।খাবার শেষ করে শপিংমলে যাওয়ার জন্য পাশ্ববর্তি একটা পার্কে এলো ওরা।বাহিরের বিশুদ্ধ বাতাস টা দ্রিধার শরীরের জন্য ভালো।হঠাৎ হাঁটার মাঝেই রোয়েন কেমন যেন হয়ে গেলো।রুহীর হাত শক্ত করে ধরে বলল,
”চলো।”
”মাত্রই তো এলাম।”
প্রচন্ড রেগে গিয়ে চিৎকার করে রোয়েন বলল,
”একদম কোন কথা না।চলো আমার সাথে।”
চলবে