The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 103
চোখে ঘুম নেই রোয়েনের।রাত দুটো বেজে বিশ মিনিট।সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাঁটিয়ে দিয়েছে।রুহী কেন যেন ওর বুক থেকে নেমে বালিশে শুয়েছে।অবশ্য আাগে কখনো এমন করেনি। কিন্তু প্রেগন্যান্সিতে প্রায়শই এমন করতে দেখেছে রুহীকে।হয়ত একভাবে শুয়ে থাকতে পারেনা।বাবুটা ও খুব বড় হচ্ছে।রোয়েন খাটে গড়াগড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।আলমারি খুলে সেখানটার পিছনের দেয়াল টা হাতড়ে বের করে তারপর ফোনের লাইট জ্বালিয়ে দেখলো কতগুলো সুইচ।সেগুলোর ওপর নাম্বার লেখা।রোয়েন দুবার শুন্যে একবার সাতে দুবার আটে চাপতেই একটা ট্রে এর মতো চলে এলো আর সেখানে খুব পুরোনো একটা রেকর্ডার।সেটা নিয়ে হল ঘরে চলে এলো।তারপর একটা চেয়ার টেনে সেখানে বসে। তারপর রেকর্ডারটা অন করতেই প্রথমেই বাঁধলে ও পরে ঠিকই শুনতে পায় রোয়েন একজন মহিলার কন্ঠ।সে ভাঙ্গা বাংলায় বলছে যখন তুমি আমাকে শুনবে তখন হয়ত আমি থাকবোনা তোমার সাথে।আল্লাহ যা করেছেন হয়ত ভালোই করেছেন নয়তো তোমার বাবার সাথে পাঁচবছর কাঁটাতেই যেন মৃত্যু যন্ত্রনা পাচ্ছিলাম।তাই হয়ত আল্লাহ আমাকে নিয়ে গেছেন নিজের কাছে।জানি তুমি হয়ত আমার ওপর রেগে যাবা তোমাকে কোন একা করে দিয়ে চলে গেলাম?কিন্তু এটাই আমার ভাগ্য নিজের সন্তানকে কাছে রাখতে পারবোনা।তোমার বাবা আমাকে তিলে তিলে মেরে ফেলছে।তোমাকে ও মেরে ফেলবে।যতো দ্রুত সম্ভব তার থেকে চলে যেও।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো।আর বড় হয়ে তাকে খুব বড় শাস্তি দিও।এখন আর কিছু বলতে পারছিনা।আশা করি তুমি ভালো থাকবে।বিদায় বাবা।
রোয়েনের চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।লোকটাকে পেলে তিলতিল করে মারবে।বাঁচার সুযোগটাও ছাড়বেনা।হঠাৎ দরজায় ঘা পড়তেই ঘোর কাঁটে রোয়েনের।রেকর্ডারটা লুকিয়ে দরজা খুলে দেখলো রুহী দাঁড়িয়ে আছে।ওর চোখ ভেজা।রোয়েন রুহীকে টেনে বুকে জড়িয়ে ওর মাথায় চুমু খেয়ে বলল,
”কি হয়েছে তোমার?”
”এভাবে একা ছেড়ে চলে এলে কেন?”
”রুহী আমি তোমার সাথেই আছি।ঘুম পাচ্ছিলো না।তাই এখানে বসলাম।”
”প্লিজ কখনো আমাকে ছেড়ে যেওনা।সহ্য করতে পারবোনা।”
রোয়েন অবাক হলো।রুহী কি বলছে এগুলো?আবার কাঁদছে ও?রোয়েনের কাছে সুবিধের ঠেকছেনা কিছুই।তাই রুহীকে নিয়ে রুমে এসে খাটের ওপর বসলো।ওর চোখ মুছে বলল,
”কি হয়েছে বলো।তোমাকে ছেড়ে কই যাবো?”
”বাজে স্বপ্ন দেখেছি আমি।”
”কি সেটা?”
”তোমাকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে আমার থেকে।আমি তোমাকে ধরতে চাইছি পারছিনা।এমন কেন দেখলাম বলো তো?”
”রুহী ওসব কিছুনা।তুমি হয়ত কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো তাই এমন হচ্ছে।”
”জানি না ভালো লাগছেনা আমার।”
রোয়েন রুহীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।তারপর কি যেন ভেবে বলল,
”চলো বাহিরে গিয়ে হেঁটে আসি।বাহিরের ঠান্ডা বাতাস তোমার ভালে লাগবে।”
”এখন তো খুব রাত।”
”সমস্যা নেই।আসো আমার সাথে।”
রুহী কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসে।বাহিরে পা রাখতেই স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাস রুহীর পুরো শরীরে মিশে গেলো।রোয়েন একহাত বাড়িয়ে রুহীর কাঁধ জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করে।রুহীর ভীষন ভালো লাগছে।গভীর রাত হালকা ঠান্ডা বাতাস আর সেই পরিবেশে ওরা একসাথে হেঁটে চলেছে কোন এক অজানা গন্তব্যে।রুহী রোয়েনকে দেখে হালকা হেসে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলে,
”রাতটা যদি আর কখনোই শেষ না হতো।”
”বিধির নিয়মেই পৃথিবী চলে রুহী।রাত শেষে দিন আসবেই।
”জানো তোমার সাথে এমন অনেক মুহূর্ত আছে যেগুলো হৃদয়ে গেঁথে যায়।”
”কোন মুহূর্ত?”
”যেদিন বিয়ের আগের পার্টিতে আমাকে দেয়ালে চেঁপে বললে ভালবাসো।”
”হুম সেজন্যই ভেগে যাচ্ছিলে?”
”খোঁটা দিচ্ছো আমায়?”
”না শুধু বললাম।আর কি?”
”আর তোমার সাথে কাঁটানো প্রত্যেকটা মুহূর্তই জানো ভীষন মূল্যবান।নিজের আগের ভুল গুলোয় খুব কষ্ট হয়।এটাই ভাবি কেন আমার জীবনে আগে তুমি এলেনা?”
”হয়ত আমাদের দেখা হওয়াটাই ওইরকম ছিলো।”
”হুম।যেদিন জানতে পারলাম মা হবো সেদিন যেন সব পেয়ে গেলাম।”
”হুম।তোমরা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার রুহী।”
রুহী চুপ হয়ে কি যেন ভাবলো তারপর আস্তে করে বলল,
”আগে কখনো কাউকে ভালবেসেছিলে?”
রুহীর প্রশ্নে কিছুটা অবাক হয়ে রোয়েন বলল,
”হঠাৎ এমন প্রশ্ন?”
”জানতে ইচ্ছে করছে।”
”রুহী তুমি এখন আমাকে যেমন দেখছো আগে তেমন ছিলামনা।তুমি আসার আগে অনেক নারীর সংশ্পর্ষে এসেছিলাম কিন্তু কাউকে ভালবাসতে পারিনি।ভালবাসাটা তখন অবাস্তব লাগতো।মনে হতো যে দুনিয়ায় কেউ কাউকে ভালবাসতে পারেনা।সবাই টাকার কাঙ্গাল। টাকার জন্য কিছু মেয়ে মানুষ নিজেদের অন্যের কাছে সঁপে দেয়।হয়ে উঠে ব্যাবহার্যের বস্তু।”
রুহীর চোখ জ্বলে উঠে।ও বুঝতে পারলো রোয়েন কি বুঝিয়েছে।তাই কোনমতে নিজেকে সামলে বলল,
”বাবা মা কবে আসবে?”
রোয়েন বুঝতে পারলো রুহী হয়ত প্রসঙ্গটা নিতে পারছেনা।তাই বলল,
”বাবা চাইছেন চলে আসতে।টিকিট কনফার্ম হলেই ফিরবে।”
”ওহ।কয়টা বাজে?”
”সাড়ে তিনটা।”
”চলো একটু পর আজান দেবে।”
”হুম চলো।”
ঘরে ফিরে আসে রুহী।তারপর ওজু করে নিয়ে দোয়া পড়তে থাকে।ওর চোখজোড়া খুব জ্বালা করছে।রোয়েন প্রতিদিনকার মতো ওদের কলোনির মসজিদের জন্য বেরিয়ে পড়ে।মোনাজাতে বসে রুহী কাঁদতে শুরু করে হাউমাউ করে।আর বলতে থাকে আল্লাহ আমাকে সহ্য করার ধৈর্য দাও।ও যা বলল আমি কেন মেনে নিতে পারছিনা।তাকে যে খুব ভালবাসি।তাকে আর কারোর সাথে ভাবতেই পারিনা।আল্লাহ আমি যেন তাকে ভুল না বুঝি সেই শক্তি দাও।নাহলে অনেক দূরুত্ব চলে আসবে।আমি সেটা মানতে পারবোনা।আমি ধৈর্য দাও আল্লাহ ধৈর্য দাও।
এদিকে ফাহমিন আর সামায়রা অনেকটারাত পর্যন্ত কথা বলে শুয়ে পড়ে।ফাহমিন যতোই মেয়েটাকে গভীরভাবে জানছে,কথা বলছে ততোই মেয়েটাড প্রেমে পড়ছে।ফাহমিন প্রচন্ড ভাবে ভালবেসে ফেলেছে সামায়রাকে।আরো অনেকটাই ভালবাসতে চায়।পরদিন কলেজ আর অফিসের পর দুজন সামনাসামনি দাঁড়ায়।ফাহমিনকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ঠিক তেমন সামায়রাকে ও।সামায়রা বলল,
”কই যাবেন?”
”এইতো সামনেই।বেশি দূরে কোথাও যাবোনা।”
”আচ্ছা ঠিক আছে।তার আগে বলুন কেমন লাগছে আমায়?”
”খুব সুন্দর লাগছো।তোমার ড্রেসটায় খুব মানিয়েছো তুমি।”
”থ্যাংক ইউ। আপনাকে ও খুব সুন্দর লাগছে।তা আজ এতো সেজুগুঁজে আসলেন?কারন কি?বিয়ে টিয়ে করবেন নাকি?”
”হুম করবো।”
”কাকে?মেয়ে ঠিক হয়েছে?আর আপনি যদি চান আমি আপনার জন্য মেয়ে ঠিক করে আনবো।”
”ঠিক হয়ে গেছে।”
”কে সে?”
”যদি বলি তুমি?”
সামায়রার উৎসাহে ভাঁটা পড়ে গেলো।চোখ মুখ কুঁচকে এলো ওর।একটু দূরে গিয়ে বলল,
”পঁচা কথা বললে আমি কিন্তু চলে যাবো।”
”আরে নানা ফাজলামো করছি।চলো।”
”এমন কথা যেন আর কখনো না শুনি।”
”আচ্ছা শুনবেনা।”
আশফিনা ভাবছে বিয়ের পর রামীন আর ও একান্তে কোথাও সময় কাঁটাতে পারেনি।রামীন ও খুবই ব্যাস্ত থাকে।এরই মাঝে শাশুড়ী ওদের ডেকে নেন নিজের কক্ষে।এমনিতেই আশফিনাকে খুব আদর করেন ওনি তাই হয়ত ওদের ওপর ওপর ওনার আশা ও একটু বেশি।রামীন ঘরে এসে দেখলো আশফিনা রুমে বসে আছে।রামীনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আশফিনা বলল,
”মা ডেকেছিলেন ওনার কাছে।”
”তো যাও।”
”আমাদের দুজনকে ডেকে পাঠিয়েছেন।”
”ওহ।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।তারপর যাচ্ছি।”
”ঠিক আছে।জলদি বের হবেন।”
রামীন ফ্রেশ হয়ে নেয়।তারপর খাওয়া দাওয়া করে মায়ের কাছে চলে আসে রামীন আশফিনাকে নিয়ে।মা ওদের দেখেই ওনার কাছে বসতে বলেন।আশফিনা এসে বসে কিন্তু খাটের কাছে মায়ের পাশে দাঁড়ায়।ওনি বললেন,
”তোদের বিয়ের কত সময় হলো?”
রামীন মায়ের কথায় কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
”দুমাস শেষ ।কিন্তু কেন মা?”
”তোরা তো কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারিস।”
”মা জানোই তো অনেক কাজ থাকে।সময় করে যাবো।”
”একটু জলদি যাবি।আর শুনলাম রোয়েনের ওয়াইফ মা হচ্ছে।”
”জি।”
”ওদের দেখে আসবো ভাবছি।কিন্তু আমার একটা ইচ্ছা হয়েছে।”
”কি মা?”
”অস্ট্রিয়াতে ফিরবার আগে তোদের বাবুকে দেখতে চাই।”
মায়ের কথায় দুজনে অবাক।রামীন আশফিনাকে দেখে মায়ের দিকে তাকায় বিস্ফোরিত চোখে।আশফিনা মাথা নিচু করে নেয়।ওনি আবার বলেন,
”কি হলো কিছু বল ছোট বৌ।”
আশফিনা কি বলবে? লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে ও।তাই বলল,
”জানিনা মা।আপনি বিশ্রাম নিন।”
বলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আশফিনা।রামীন মায়ের সামনে এসে বসে।ওনি বললেন,
”দেখ বাবা বৌ লজ্জায় কিছু বলেনি।কিন্তু নিশু কে আদর করতে দেখেছি ওকে।নিশু ও চাচী বলতে পাগল।তারমানে তোর বৌ ও বাচ্চা পছন্দ করে।তাই জলদি তুই বাবা হয়ে যা।”
”মা একটু বেশি জলদি হচ্ছেনা?মানে সেদিনইতো বিয়ে হলো।”
”শোন বাবু হওয়ার পর ও আনন্দ করা যায়।সামনে তোদের বয়স আরো বাড়বে তখন সমস্যা দেখা দেবে।এখন যা আমার সামনে থেকে।”
রামীন বেরিয়ে এসে ভাবতে থাকে মায়ের বলা কথা গুলো।আসলেই ওরা ও বাবা মা হতে পারে।আর যেখানে মা শখ করেছে কথাটা ফেলবার নয়।
রুমে ফিরে দেখলো আশফিনা শাড়ীর আঁচল আঙ্গুলে পেঁচাচ্ছে।হয়ত কিছু নিয়ে ভাবছে।রামীন ওর পাশে এসে বসতেই আশফিনা বলল,
”মা হওয়া অনেক বড় দায়িত্বের কাজ তাইনা?”
”হুম।”
”মা তখন বলছিলেন তাতে আমার আপত্তি নেই বাট ভয় লাগছে।”
আশফিনার আপত্তি নেই শুনে খুব ভালো লাগলো।কিন্তু ওর ভয়ের কথায় কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
”কেন? ”
”আমি কি এতো বড় দায়িত্ব নিতে পারবো?ভাবি কে দেখি খুব কষ্ট করে নিশুর পিছনে।আমি কি পারবো ওনার মতো?”
রামীন সুখের হাসি দিয়ে বলল,
”কেন পারবেনা?আমরা বেস্ট মা বাবা হয়ে দেখাবো।আমি সবসময় তোমার পাশে আছি আর থাকবো।”
আশফিনার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে কথাটা বলল রামীন।আশফিনা হেসে রামীনের দিকে তাকায়।এদিকে রেজোয়ান মাহবুব জলদি ফেরার চেষ্টা করছেন।ওনার খুব লজ্জা হচ্ছে নিজের হানিমুনে এতোদিন থাকতে।আনিলা ওনার অবস্থা দেখে মজা পেয়ে হাসে।লোকটা একয়দিন এতোটাই ওনাকে ভালবেসেছে যে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয় এই বয়সে এমন স্বামী পেয়েছেন।এদিকে সকালে রুহীকে দেখে কিছুটা মন খারাপ হয় রোয়েনের।সে কথা গুলো হয়ত লুক্কায়িত থাকলে ভালো হতো।রুহী সব কিছু করলে ও মন টা ভালো নেই বুঝতে পারে রোয়েন।তাই ও নিজেও সেই ব্যাপারে কিছু না বলে কাজে চলে যায়।এদিকে রাতে নীলা ফাহমিনকে কল দিয়ে একগাদা গালি দিয়ে বলল,
”এমন অদ্ভুত মেসেজ পাঠালি।আমার হাসবেন্ড দেখে তোকে পাগল বলল জানিস।”
চলবে