Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 87
বাঁকা হাসে রোয়েন।আজ রুহী থাকলে নিশ্চিত মেয়েটার এক একটা চুল টেনে ছিড়তো।বড় একটা নিশ্বাস টেনে ফোনের ওয়াল পেপারে রুহীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে রোয়েন।
-ভাবি নাকি?পাশের লোকটা বলে উঠে
-জি।বলে উঠে রোয়েন।
-আপনাদের জোড়া চমৎকার।দুজনেই মাশাল্লাহ খুব সুন্দর।তা কয় বছর হলো বিয়ের?জিজ্ঞেস করে উঠে লোকটা।
-নয়মাস হলো।বলে উঠে রোয়েন।
-হুম,ভালো।এভাবেই কিছু কথা চলতে থাকে দুজনের।
এদিকে রুপন্তী প্রায়শই প্রনয় খানকে দেখে আসতো হাসপাতালে।লোকটা অজানা কারনেই ভীষন মায়া করতে জানে।হয়ত রুপন্তীকে দেখে তার মেয়ের কথা মনে পড়ে।
কথা গুলো ভেবেই মিটমিটিয়ে হেসে উড়নায় সেফ্টিপিনস লাগাচ্ছিলো রুপন্তী।
হঠাৎ দরজায় চোখ পড়তেই খানিকটা বিরক্ত হয় রুপন্তী।
তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।
রুপন্তীর কোন রিয়্যাকশন না দেখে ভিতরে ঢুকেন আনিলা বেগম।
-কলেজে যাচ্ছিস?জিজ্ঞেস করে উঠেন আনিলা বেগম।
-নাহ শপিং এ যাচ্ছি।বলে উঠে রুপন্তী।
-আজ আমার সাথে একটু বের হতে হবে তোকে।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-একা চলে যাও।বলে উঠে রুপন্তী।
-দেখ তোর হেল্প লাগবে তাই বলছি।শরীর খারাপ লাগছে তাই হাসপাতালে যাবো।প্রেসার টা লো মনে হচ্ছে।বলে উঠেন আনিলা বেগম।।
মাকে আয়না দিয়ে খানিকটা অবাক চোখে দেখে রুপন্তী।
আজ এনার গলার স্বর এতো নিচে নামলো কেমনে?কোন ফন্দি আঁটেনিতো?কেমনে বুঝবো?চেহারায় ও তো অসুস্থতার ছোঁয়া লেগে আছে।ভাবতে থাকে রুপন্তী।
-কি হলো যাবিনা?আবার ও বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-খানিক্ষন ভেবে রুপন্তী বলে উঠে,ওকে চলো।
-আনিলা বেগম মুচকি হেসে রুপন্তীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
সেই সকাল থেকে কোমড় বেঁধে কাজে লেগেছে রুহী।রোয়েন বলে ছিলো সন্ধ্যায় এসে পৌছুবে।নিজে রান্না বান্না করছে এর পাশা পাশি কাজের লোকদের ও তদারক করছে।
ঘর গুছাচ্ছে।কেউ ফুলদানির ফুল পরিবর্তন করছে।বড় শোপিজ আর সোফা গুলোর ধুলোবালি পরিষ্কার করছে।
রুহীর চেহারায় যেন আজ আলাদা সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে।ভিন্ন এক ঔজ্জ্বল্যতা প্রকাশ পেয়েছে।
সবই যেন রোয়েনের আগমনের আভাস পেয়েছে।ভালোবাসার মানুষটার আসার খুশিতেই যেন সকল সৌন্দর্য।
রুহীর ঠোঁটের কোনের মায়াভরা হাসিটাই বলে দিচ্ছে মানুষটার আসার কি খুশি সেটা ওর চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
সকল খুশি যেন ওর হৃদয় মন জুড়ে ছেঁয়ে গেছে।
সিড়ি বেয়ে নামার সময় রেহান রুহীকে দেখে থমকে যায়।সকল অসুস্থতা দূর হয়ে গেছে।
রুহী আবার ও আগের মতো চঞ্চল হয়ে আছে।দৌড় ঝাঁপ করে এটা ওটা করছে।রেহান ভ্রু কু্ঁচকে ঘড়ি চেক করে নেয়।সকাল ৮.৩০ টা বাজে।
-ভাবি কখন উঠলেন?সিড়ি থেকে বলে উঠে রেহান।
-রুহী পাঁচটা আঙ্গুল দেখালো।
-এতো সকাল সকাল আজ?হেসে বলল রেহান।
-হুম।মাথা উপর নিচ করে বলল রুহী।
রেহান নিচে এসে রুহীর সামনে দাঁড়ালো।
-কি রান্না হচ্ছে ভাবি?পাতিলের ঢাকনা তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করে রেহান।
-দেখেই নিন।বলে উঠে রুহী।
-ওয়াও চিংড়ি মাছের কোর্মা,হোয়াইট রোস্ট,এতো রকমের ভর্তা,পোলাউ।ভাবি এতো কিছু!!!বলে উঠে রেহান।
রেহান পাতিল থেকে একটা চিংড়ি নিয়ে মুখে দিতে যাবে তখনই রুহী ওর হাতে বাড়ি দিলো।
-ইসস এখন না।ওনি আসলে সবাই খেয়ে নিবো।বলে উঠে রুহী।
-ওকে ওকে খাচ্ছিনা।কিন্তু তখন আটকাবেননা ভাবি বলে দিলাম।বলেই হাসতে থাকে রেহান।
-আচ্ছা ঠিক আছে আটকাবোনা।বলে উঠে রুহী।
এয়ারপোর্টে পৌছে ড্রাইভার কে কল দেয় রোয়েন।
-Hello sir.অপর পাশ থেকে বলে উঠে ড্রাইভার।
-Where are you?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-On the way sir.বলে উঠে ড্রাইভার।
-ok.বলে কল ডিসকানেক্ট করে রোয়েন।
রুপন্তীকে নিয়ে প্রনয় খানের ঘরে পৌছালেন আনিলা বেগম।
-আমাকে কোথায় আনলে তুমি?ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।
-যেয়েই দেখবি।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-আমার ভালো লাগছেনা।জায়গাটা কেমন যেন।আমাকে যেতে দাও।বলে পিছু ফিরেই দাঁড়িয়ে যায় রুপন্তী।
-প্রনয় খান রুপন্তীকে বুকে জড়িয়ে নেয়।ভালো আছো মা?
-জি আঙ্কেল।বাট আপনি এখানে?রুপন্তী আনিলা বেগমের দিকে তাকায়।
-তোমরা একে অপরকে কি করে চিনো?জিজ্ঞেস করেন আনিলা বেগম।
-প্রনয় খান সব কাহিনী খুলে বলেন।
আনিলা বেগম হেসে মেয়ের দিকে তাকায়।
-সালাম দেয় ওনাকে।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-রুপন্তী সালাম দেয়।
-চলো রুপন্তী আমার ঘরে এসে বসো।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-রুপন্তী চুপচাপ প্রনয় খানের পিছু নেয়।
প্রনয় খান রুপন্তী আর আনিলা বেগমকে নিয়ে সোফায় এসে বসে।তারপর কাউকে কল দিয়ে খাবার পাঠাতে বলে।
-আঙ্কেল কিছু খাবোনা আমরা।বলে উঠে রুপন্তী।
-না মা আমার বাসায় প্রথম এসেছো কিছু তো খেতে হবেই।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-রুপন্তী মুচকি হেসে সায় দেয়।
-রুপন্তী তোকে আজ কিছু বলতে চাই।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-কি?(রুপন্তী)
-আজিজ না ওনিই তোর বাবা।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
রুপন্তী ভ্রু কু্ঁচকে প্রনয়ের দিকে তাকায়।
-আমাকে বাবা বলো মা।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-দেখেন আঙ্কেল আপনার জন্য যা করেছি সেটা মানবিকতার খাতিরে।আপনাকে বাবা ডাকতে পারবোনা আমি।বাবা একমাত্র আমার বাবাকেই জেনেছি আর ওনাকেই জানবো।
আর কাউকে বাবা মানতে পারবোনা।সরি বলে বেরিয়ে।যায় রুপন্তী।
প্রনয় খান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মেয়ের দিকে।
-ওর এতো স্পর্ধা হলো আমাকে নিষেধ করার।ও জানে আমি কে!!!!চিৎকার করে বলেন প্রনয় খান।
-শান্ত হও প্রনয়।আমিই ওকে বুঝাবো।ও তোমাকে বাবা মানতে বাধ্য।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-প্রনয় খান রুপন্তীর যাওয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আনিলা বেগমকে জাপটে ধরে ওনার কাঁধে নাক লাগায়।
গাড়িতে উঠে বসে রোয়েন।
গাড়ি চলছে অজানার পথে।
গাড়িটা একটা মলের সামনে থামলো।রোয়েন নেমে ভিতরে চলে যায়।কিছু চকলেট পুতুল কিনে ফিরে এসে গাড়িতে বসে পড়ে।
গাড়ি আবারো চলতে শুরু করে।রাস্তা থেকে অনেক গুলো বেলুন কিনে বাসার দিকে হাঁটা ধরে রোয়েন।সামনেই ওর বাসা।
-রুহী ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।
-ভাইয়া ঘর সুন্দর লাগছেনা দেখতে?জিজ্ঞেস করে উঠে রুহী।
-হুম।খুব পরিচ্ছন্ন লাগছে ঘরটাকে।বলে উঠে রেহান।
রুহী হেসে খোপায় আবদ্ধ চুল গুলোকে বাতাসে উড়িয়ে দিলো।
কলিং বেল বেজে উঠে।রেহান যেতে নিলেই রুহী থামিয়ে দেয় ওকে।
– আপনি কফি খান।আমি দেখছি বলে মাথায় ঘোমটা টেনে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় রুহী।দরজা খুলে
সামনে দারোয়ান কে পায় রুহী।
-কিছু লাগবে ম্যাম?(দারোয়ান)
-নাহ কিছুনা।বলে দরজা আটকাতে গেলেই দরজায় বাঁধা পায় রুহী।
খানিকটা অবাক হয়ে দরজা হালকা ফাঁকা করতেই নিশ্বাস থেমে যায় যেন মুহূর্তেই।রুহী একটু সরে আসে।চোখজোড়া ছলছল করছে ওর।
রোয়েন দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে।
-রুহী কিছু বলছেনা।মুখভঙ্গি কান্নার মতো হলে ও কাঁদেনা রুহী।
যেন অজানা এক ঘোরে চলে গেছে ও।
রেহান মুচকি হেসে উপরে চলে যায়।ও জানতো ভাইয়া সকালেই আসবে সন্ধ্যায় নয়।
রোয়েন রুহীর দিকে একপা একপা করে এগোয়।
রুহীর একদম কাছে চলে আসতেই রুহী মাথা তুলে তাকায় রোয়েনের দিকে।
রোয়েনের ঠোঁটের কোনায় হাসি।
রুহীর দুগালে হাত রাখে রোয়েন।
রুহী চোখজোড়া বুজে নেয়।
-মায়াবতী!!!মায়া দিয়ে ডাকে রোয়েন।
-রুহী কিছু বলতে পারছেনা।গলা আটকে আসছে।
কিছুক্ষন পর রেহান শার্ট গায়ে দিয়ে নিচে আসে।
-ভাইয়া আপনার না সন্ধ্যায় ফিরার কথা?দুষ্টু হেসে বলে রেহান।।
-জোরে গলা পরিষ্কার করে রেহানের দিকে রাগী লুক দেয় রোয়েন।
রেহানের কথায় রুহী রাগী চোখে তাকায় স্বামীর দিকে।তারপর ফুঁসতে ফুঁসতে উপরে চলে যায়।
রোয়েন রেহানের মাথায় বাড়ি দিয়ে উপরে চলে যায় রুহীর পিছু পিছু।
রুহী রুমে এসে পিছনে ফিরে রেগে দাঁড়িয়ে থাকে।
রোয়েন রুমে এসে রুহীকে পিছন থেকে বুকে জড়িয়ে নিতে গেলে রুহী সরে এসে দাঁড়ায়।
রোয়েন রুহীর সামনে এসে নিজের কান ধরে।
-সরি,সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম বৌ।বলে উঠে রোয়েন।
-রুহী জ্বলজ্বলে চোখে স্বামীর দিকে তাকায়।রোয়েনের কান থেকে হাত সরিয়ে নেয়।তারপর রোয়েনের বুকে আছড়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করে।
চলবে