Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 86

বাংলাদেশে ফিরেই পড়াশুনা নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত হয়ে যায় রুপন্তী।অনেকদিন কামাই গেছে,পড়ার ও ভীষন চাপ।কি করবে বুঝতে পারছেনা রুপন্তী।
অন্যদিকে বোনের জন্য ও ভীষন চিন্তা হচ্ছে ওর।বোন কে এভাবে ফেলে এসে একটু ও ভালো লাগছেনা।পড়াশুনায় ও মন লাগাতে পারছেনা।
কথা গুলো ভেবেই রুহীর নম্বরে কল দেয় রুপন্তী।
-হ্যালো!!!!অপরপাশ থেকে অসুস্থ গলায় বলে উঠে রুহী।
ঘুম ঘুম চোখে ফোন না দেখেই রিসিভ করে রুহী।রাতে মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা থাকায় সারারাত ঘুমোতে পারেনি।সকাল পাঁচটায় চোখ লেগে আসে।
-আপি কি হলো তোর?চিন্তিত গলায় বলে রুপন্তী।
-এবার রুহীর ঘোর ভাঙ্গে।না কিছু হয়নি।মাত্র ঘুম ভাঙ্গলো তো।তাই কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে।
-ওহ।ভালো আছিস আপি?জিজ্ঞেস করে উঠে রুপন্তী।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রে।তোর কি খবর পড়াশুনা কেমন চলছে?বলে উঠে রুহী।
-এই তো ভালই।বাকি সবাই কেমন আছে আপি?জিজ্ঞেস করে উঠে রুপন্তী।
-বাকি সবাই বলতে কি রেহান ভাইয়া?দুষ্টু হেসে বলে রুহী।
-লজ্জা পায় রুপন্তী।আরে নাহ এলিজা,আমার ছোট্ট বাচ্চুটার কথা বলছিলাম আপি।বলে উঠে রুপন্তী।
-হেসে দেয় রুহী।আহ এখন তোর সামনে থাকলে তোর লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে পারতাম রুপন্তী।বলে উঠে রুহী।
-যাহ আপি তুইনও না।লজ্জা পেয়ে বলে উঠে রুপন্তী।
-বড় বোন তো তাই বুঝি।রেহান ভাই কে কল দিস।বলে উঠে রুহী।
-ওকে আপি।টেক কেয়ার।
-ওকে বায়।ফোন ডিসকানেক্ট করে শুয়ে পড়ে রুহী।কাল সকালে রোয়েনের সাথে শেষ কথা হয় ওর।এয়ারপোর্টে সে যাচ্ছিলো তখন।
এরপর সে আর কলই দিলোনা।রুহী মোনাজাত ধরে।
ইয়া আল্লাহ ওকপ সহি সালামতে আমার কাছে এনে দাও।আর কিছু চাইনা।বলে চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু মুছে নেয় রুহী।
বোনের সাথে কথা শেষ করে খেয়ে দেয়ে পড়তে বসে রুপন্তী।রাত ৯ টা বাজে।জিজু কে একবার কল দেয়া উচিৎ।কিন্তু এখন ধরার সম্ভাবনা নাই।
রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়াশুনা করে খাটে শুয়ে পড়ে রুপন্তী।চোখজোড়ায় নেমে আসে রাজ্যের ঘুম।
পরদিন সকাল নাস্তা সেড়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে পড়ে রুপন্তী।
ক্লাশ শেষে ভার্সিটির নাঈম স্যারের কোচিং সেড়ে বের হতেই ৫ টা বেজে যায়।
ফার্মগেটের মাথা ধরে যাওয়া জ্যামে বসে অপেক্ষা করতে করতে পাশের ওয়েলফুডের দোকানের সামনে একটা গাড়ির দিকে নজর যায় রুপন্তীর।গাড়িটা উল্টে গেছে।
বাংলাদেশের মানুষ গুলোর ও মানবিকতার অভাব আছে।কয়েকজন দাঁড়িয়ে মঞ্চ নাটক দেখছে আর কেউ ছবি তুলছে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য।রুপন্তীর আর সহ্য হলো না গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে গাড়িটার কাছে এসে দাঁড়ালো।
ভিতরে মধ্যবয়স্ক একজন সুদর্শন লোক পড়ে আছে।তার চকচকে টাক ফেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
রুপন্তী কিছু ছেলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।ছেলে গুলো ছবি তুলছিলো।
-আপনারা কি সত্যিই মানুষ?কোন মানবিকতা বলতে কি আসলেই কিছু নেই?লোকটার একসিডেন্ট হয়েছে। তার হেল্প দরকার।হেল্প না করে পোস্টের জন্য ওনার ছবি তুলছেন ১,২হাজার লাইক কমেন্ট পাওয়ার জন্য?
-মানুষ আজকাল আর মানুষ নেই।বলেই গাড়ির কাছে বসে পড়ে রুপন্তী।ওর পাশে একজন লোক এসে বসে।
-আমি হেল্প করছি।লোকটা বলে উঠে।
-প্লিজ।বলে উঠে রুপন্তী।
-আরো দুতিনজন লোক মিলে একসিডেন্ট হওয়া লোকটিকে টেনে বের করলো।
একজন এম্বুলেন্স কে কল দিলো।এম্বুলেন্সের সাথে রুপন্তী সেই অসুস্থ লোক আর বাকি দুজন পাশ্ববর্তি স্কয়ার হাসপাতালে চলে গেলো।
লোকটিকে হাসপাতালে এডমিট করালো।
লোকটার ফোন চেক করে লাভ হয়নি।তার ফিংগারপ্রিন্ট লাগবে লক খুলতে।কিছুক্ষন বাদে ডাক্তার রুপন্তীকে ডেকে পাঠায়।
সেই লোকটার নাকি জ্ঞান ফিরেছে।
রুপন্তীকে দেখে লোকটার মুখে হাসি ফু্টে উঠে।
রুপন্তী হেসে তারপাশে গিয়ে বসলো।
-আঙ্কেল ভালো লাগছে একটু?জিজ্ঞেস করে উঠে রুপন্তী।
-জি মা।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।বলে উঠে সে।
-ওয়েলকাম।বাট আঙ্কেল এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।বলে উঠে রুপন্তী।
-তোমার মতো যদি আমার একটা মেয়ে থাকতো খুব ভালো হতো।বলে উঠে লোকটা।
-রোয়েন চৌধুরী!!!!
-আপনাকে পাশের হাসপাতালে এডমিট করিয়ে দেই।বলে উঠে সামনের লোকটা।
-লাগবেনা।জাস্ট একটু পানি দেন আমাকে।বলে উঠে রোয়েন।
-একজন মহিলা একটা বোতল এগোয় রোয়েনের দিকে।বোতলের পানি টুকু খেয়ে নেয় রোয়েন।তারপর দেয়াল ধরে খুব কষ্টে উঠে দাঁড়ায় ও।
-লোকগুলো ওর পিছে আসছে।আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেই।
-আমার লাগেজ গুলোর খেয়াল রাখেন একটু।আর পারলে একটু ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন।বলে উঠে রোয়েন।
-ওকে।লোকটা রোয়েনকে ওয়াসরুমের সামনে নিয়ে আসে। রোয়েন কাঁধের হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে ওয়াশরুমো ঢুকে যায়।আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় রোয়েন।
পরনের কালো শার্টটা খুলে নিয়ে পাশে রাখলো।তারপর ব্যাগের ভিতর থেকে ছোট্ট একটা ছুড়ি হাতে নিয়ে ক্ষত জায়গায় ঢুকিয়ে চোখ জোড়া জোরে বন্ধ করে নিলো।
বুলেট টা বের করে নিলো রোয়েন।তারপর ব্যাগ থেকে ফার্স্টএইড বক্স বের করে সেখান থেকে লিকুইড স্যাভলন বের করে ঘা পরিষ্কার করে নিলো।
তারপর অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিজেই ব্যান্ডেজ করে বেরিয়ে আসে রোয়েন।
লোকটা রোয়েনের কাছে এসে দাঁড়ায়।
আপনি কি যেতে পারবেন?জিজ্ঞেস করে উঠে লোকটা।
-জি।
-আপনার ঘা???জিজ্ঞেস করে উঠে লোকটা।এমনিতেই রোয়েনকে একটু সুস্থ লাগছে দেখে সে খানিকটা অবাক।
-এই ছোট খাটো ঘা কিছু হয়না আমার।বলে উঠে রোয়েন।
-মানে?ভ্রু কু্চকায় লোকটা।
-ড্রেসিং করেছি আমি।ভালো হয়ে যাবে।মেডিসিন ও নিলাম।বলে উঠে রোয়েন।
ওরা চেকিং এর জন্য চলে যায়।সবশেষে দুজন পাশাপাশি দুটো সিটে বসে।রোয়েন চেয়ারে হেলান দিয়ো আছে।
-তা কার কাছে যাচ্ছেন আপনি?জিজ্ঞেস করে লোকটা।
-আমার ওয়াইফের কাছে।বলে উঠে রোয়েন।
-আজ না গেলে হতো না?আই মিন এ অবস্থায় ফ্লাইট!!
-ওর কাছে যাওয়ার বেশি দরকার আমার।
-হুম।অনেক কথা বার্তা চলে দুজনের মধ্যে।
ঠিক ১০.৩০ এ প্লেনে উঠে বসে রোয়েন।
চোখ বুজে টেক ওভারের অপেক্ষা করতে থাকে।
একজন নার্স বারবার এসে ওর খবর নিয়ে গেছে।
অপরদিকে সেই অপরিচিত লোকটিকে পর পর দুদিন দেখে গেছে রুপন্তী।ওনার খুব যত্ন ও করেছে।
আনিলা বেগম প্রনয় খানের বেডের পাশে বসে আছে।
-আমাকে একবার ও জানালে না তুমি হাসপাতালে?
-কেমনে এসব হলো?জিজ্ঞেস করেন আনিলা বেগম।
-আরে ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট।সেদিন মেয়েটা না বাঁচালে কি হতো কে জানে?বলে উঠেন প্রনয় খান।
-নাম কি ওর?জিজ্ঞেস করেন আনিলা বেগম।
-আরেহ নামটাই জানা হলো না।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-হুম।(আনিলা বেগম)
-সেদিন তোমাকে যদি এবরশন না করাতে বলতাম তাহলে হয়ত আমার ও এমন একটা বাচ্চা থাকতো।ওর বয়স ও মেয়েটার মতো হতো।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-এবরশন আমি করিনি প্রনয়।আমাদের একটা মেয়ে আছে আমার তোমার।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-সিরিয়াসলি?কি নাম ওর?কেমন আছে আমার মেয়ে?জিজ্ঞেস করেন প্রনয় খান।
-ওর নাম রুপন্তী।ও ভালোই আছে।ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আকদ হয়েছে আমার ভাইয়ের ছেলে রেহানের সাথে।
-ওহ।আমি আমার মেয়েকে দেখতে চাই।এমুহূর্তে এক্ষুনি।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-দেখো প্রনয় তাড়াহুড়োয় কিছু ভালো হবেনা।ও জানে আজিজ ওর বাবা।তাই তোমাকে নাও মেনে নিতে পারে।
ধীরে সুস্থে বুঝাতে হবে ওকে।বলে উঠেন আনিলা বেগম।
-তুমি যাই বলো।ওর সাথে আমি দেখা করবোই।আমার মেয়ে ও। বলে উঠেন প্রনয় খান।
-ওকে ট্রাই করবো ওকে আনার।
এদিকে রোয়েনের অপেক্ষার প্রহর কাঁটতেই চায়না।হংকং এ ৮ ঘন্টার ট্রানজিট।
-প্লেন থেকে নেমে জুস আর কেক কিনে নিলো ও।সেই লোকটা ও বেশ ভালোই সাহায্য করেছে ওকে।
আসলে দুনিয়ায় এখনো ভালো মানুষ আছে।একটা মেয়ে বারবার আড় চোখে দেখছিলো ওকে।কিছু যেন বলতে চায় মেয়েটা।
রোয়েনকে দেখে বারবার হাসছিলো মেয়েটা।একরাশ বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা ভয় পেয়ে অন্য দিকে চলে যায়।
চলবে