Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 77

রুহী কাগজটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন বসে ভাবতে থাকে কি হতে পারে এটায়?রোয়েনই বা কই গেলো?রুহীর মনটা বড্ড অস্থির লাগছে।লোকটাকে ছাড়া কোন সকাল ওর ভালো লাগেনা।খুব খালি খালি লাগছে সব।কিছু একটা হারিয়ে গেছে মনে হচ্ছে।বুকটা হাহাকার করছে তার জন্য।যেখানেই যায় একটা বার বলে গেলে পারতো না?
থাক যেখানেই সহি সালামতে ফিরে আসুক শীঘ্রই।
সব চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে চিঠিটার ভাজ খুলে পড়তে আরম্ভ করে রুহী।
প্রিয় রুহী,
গুড মর্নিং বৌ।কেমন আছো?জানি ভালো লাগছেনা তোমার।আমার ও ভালো লাগছেনা তোমাকে ছাড়া।কিন্তু কি করবো বলো খুব জরুরি কাজ সম্পাদন করতেই বাংলাদেশে ফিরে যেতে হচ্ছে।দেখো কাঁদবানা।আমি জানি খারাপ লাগছে তোমার।আমার ওপর রাগ হচ্ছে।আসার পর ইচ্ছেমতো বকে দিও।তবে আগে শুনে নাও কেন এভাবে তোমাকে ছেড়ে চলে আসছি।
সেদিন তোমার মামা মানে সাইফ রাহমান আমাকে কল দিয়ে বলেন মা শপিং থেকে ফিরে আসেননি।তারপর খুব চিন্তায় পড়ে যাই আমি।
তারপর আমার লোকদের খবর নিতে বলি আমার মা কোথায় সেটা জানাতে।
তারা বলল সাজিদ রায়হান মানে আমার বাবা মাকে কিডন্যাপ করিয়েছে।
সেটা শুনে আর থাকতে পারিনি রুহী।আর তোমাকে ও বলতে পারিনি কারন তুমি চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
আর এখন সুস্থ থাকাটা তোমার জন্য আমাদের ছোট্ট জানটার জন্য খুব বেশি দরকার।শীঘ্রতা ফিরে আসবো আমি রুহী।প্লিজ চিন্তা করোনা আমার।খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করো।আর কথাটা রেহানকে জানি ওনা।ও কষ্ট পাবে জানতে পারলে।
ভালো থেকো।বাংলাদেশে পৌছে আমি কল দিবো তোমাকে।মন খারাপ করবেনা একদম,ভালোবাসি বৌ।
ইতি
তোমার রোয়েন
কাঁদতে নিয়ে ও কাঁদেনি রুহী।সে তো না করেছে কাঁদতে।
রুহী গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি গুলো মুছে নিয়ে চিঠিটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলো।
আচমকা রুপন্তী রুমে এসে রুহীকে জিজ্ঞেস করে উঠে
-আপি জিজুর খবর পেলি?
-হুম।রেহান ভাইয়া কই?জিজ্ঞেস করে উঠে রুহী।
-ওনি নিচে।কেন আপি?জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।
-রুহী রোয়েনের লেখা মায়ের কথা রুপন্তীকে বলে দিলো।শোন রেহান ভাইয়া যেন না জানে।
-ওকে আপি।ওনি জানবেনা।বলে উঠে রুপন্তী।
রুহী মলিন হেসে বোনের দিকে তাকায়।
♦♦♦
রায়না রাহমান অন্ধকার একটা রুমে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।
পুরো শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে ওনার।
কাল থেকে না খেয়ে আছে।অবশ্য কালো মুখোশ পরা দুজন লোক খাবার এনেছিলো কিন্তু খায়নি ওনি।খাবেন না ওনি ঘরে ফিরে যেতে চান।স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান ওনি।
ঘরটা ভীষন অন্ধকার ভীষন ভয় লাগছে ওনার।কই এসে পড়েছেন ওনি?জায়গাটা চেনেন না ওনি।জায়গাটা অচেনা হলে ও পরিচিত লাগছে।সামনে ধুলো পড়া একটা খাট।একটা সাদা কালো কম্বিনেশনের নুয়ে যাওয়া একটা ফুটবল।একটা ছত্রাক পড়ে যাওয়া ব্যাট আর পাশে একটা টিয়া রং এর টেনিস বল।
খাটের পাশের টিটেবিলের ওপর একটা খালি ফুলদানি।দেয়ালে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত।
গা শিরশির করতে শুরু করলো রায়না রাহমানের।সব কিছু কেন জানি ভীষন পরিচিত লাগছে ওনার।হঠাৎ দরজার পিছনে চোখ পড়লো রায়না রাহমানের।করিডোর থেকে ঘরে ঢুকার দরজাটার পিছনে ছোট্ট ফর্সা রাহুল কাট দেয়া ছেলেটার দিকে চোখ পড়লো রায়না রাহমানের।
বাচ্চাটার ঠোঁটের কোনা ফেঁটে রক্ত বেরুচ্ছে।চোখ মুছে যাচ্ছে বাচ্চাটা।চেহারাটা কেন যেন স্বপ্নের বাচ্চাটার সাথে ভীষন মিল খাচ্ছে।বাচ্চাটা কান্নার মাঝে ও মা মা করে ডাকছে।
রায়না রাহমানের স্বপ্নের সাথে বাচ্চাটার কানেকশান বুঝতে পারছেননা ওনি।বাচ্চাটা কে? কেন ওনার স্বপ্নে আসে?ভাবতে লাগলেন রায়না রাহমান।
হঠাৎ পিছনের ঘর থেকে একটা মহিলার চিৎকার শুনতে পান রায়না রাহমান।মনে হচ্ছে মহিলাটার ওপর ভীষন অত্যাচার করা হচ্ছে।রায়না রাহমান কেঁপে উঠেন।পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে ওনার।
মহিলাটার কান্নার শব্দ যতো বাড়ছে বাচ্চাটাও মা মা করে খুব জোরে চিৎকার করে কাঁদছে।
রায়না রাহমান নিজেই বাচ্চাটাকে বলে উঠেন বাবা কাঁদেনা।আবার ও বললেন প্লিজ মারবেননা পুরো শরীর ব্যাথায় ভরে যাচ্ছে।বলেই কাঁদতে শুরু করেন রায়না রাহমান।
হঠাৎ সব থমকে গেলো।সব শব্দ থেমে গেলো।রায়না রাহমান হুহু করে কাঁদছেন।প্রত্যেকটা মার যেন ওনার শরীরেই লেগেছে।হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেয়ে সামনে তাকান রায়না রাহমান।লম্বা ফর্সা বয়স্ক একজন লোক রুমে ঢুকলো।ডার্ক ব্লু কোট গায়ে ওনার।মাথার তালু ছাড়া পুরো মাথায় চুল ওনার।
লোকটা যতো কাছে আসছে রায়না রাহমানের পুরো শরীর বেয়ে দ্রুত গতিতে ঘাম ঝড়ছে ওনার।লোকটা কাছে আসতেই রায়না রাহমান অজান্তেই বলে উঠলেন সাজিদ বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
রায়না রাহমানের গাল চুল স্পর্শ করলেন সাজিদ রায়হান।তারপর আলতো করে ওনার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন।ওনি জানেন রায়না রাহমান নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তাই এখানে নিয়ে এসেছেন ওনাকে।
♦♦♦
তিমদিনের জার্নি শেষে বাংলাদেশে পৌছে যায় রোয়েন। এয়ারপোর্টের সকল ফর্মালিটিস পালন করে রুহীর নম্বরে কল দিলো রোয়েন।
ফোন বেজে উঠতেই কল রিসিভ করলো রুহী।
-ফোন হাতে নিয়ে বসেছিলে মনে হয়?বাঁকা হেসে বলল রোয়েন।
-ফোন সামনেই ছিলো।অভিমান করে বলল রুহী।
-খেয়েছো?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-হুম।তুমি খেয়েছো?ছল ছল চোখে জিজ্ঞেস করলো রুহী।
-হুম।কেমন আছো?জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।
-ভালো।তুমি কেমন আছো?কখন পৌছালে?অপর পাশ থেকে বলল রুহী।
-একটু আগেই পৌছালাম।রেহানকে কিছু বলোনি তো?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-উহুম,বলিনি।ওনার খারাপ লাগবে জানলে।বলে উঠে রুহী।
-রোয়েন হাসে।বাবুটা কি করছে?
-কি করে বলি কি করছে?এখনো অনেক ছোট বুঝতে পারছিনা।হয়ত বাবাইকে মিস করছে।ধরা গলায় বলল রুহী।
-আমার ছোট্ট জানটা বুঝে।সে মিস করবেনা।কারন ও জানে বাবাই ফিরে আসবে।
মিস তো করছে আমার আম্মুটার আম্মু।বলে উঠলো রোয়েন।
-রুহী কানে ফোন চেঁপে ঠোঁট কামড়ে কান্না সংবরন করার চেষ্টা করলো রুহী।কথা বলতে পারছেনা ও।
-এই পাগলী এমন করছো কেন?চলে আসবো তো জানু।
-রুহী কেঁদে দিলো।আই লাভ ইউ রোয়েন।কাঁদো গলায় বলে উঠে রুহী।
-আই লাভ ইউ টু বৌ।প্লিজ কেঁদোনা।বাবুটা ও কাঁদবে তো।বলে উঠে রোয়েন।
-রুহী নিজেকে সামলে নিলো।মাকে খুঁজে বের করো জলদি।বলে উঠে রুহী।
-হুম।মাকে বের করেই তোমার কাছে চলে আসবো ছুটে।বলে উঠে রোয়েন।
-রুহী মিষ্টি হাসলো।হুম জলদি আসবে।
-আচ্ছা রুহী আমাকে বের হতে হবে।বায়।বলে উঠে রোয়েন।
-বায়।ফোন কান থেকে সরিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো রুহী।
♦♦♦
আজিজ রায়হানের ঘরে এসে পৌছালো রোয়েন।সাইফ রাহমানের সামনে বসে আছে রোয়েন।সাইফ রাহমানকে ভীষন দুঃখী মনে হচ্ছে রোয়েনের।বড় একটা নিশ্বাস নিলো রোয়েন।
-জানেন মাকে কে নিয়ে গেছে?বলে উঠে রোয়েন।
-কে?রোয়েনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন সাইফ রাহমান।
-আমার বাবা সাজিদ রায়হান চৌধুরী।বলে উঠে রোয়েন।
-কি বলো?জিজ্ঞেস করে উঠলেন সাইফ রাহমান।
-হুম সত্যি বলেছি।এখন রেখেছে কোথায় সেটা জানতে হবে।ওনার পিছনে আমার লোক লাগিয়েছি।তারা কল দিলেই জানতে পারবো মা কই আছে?কেমন আছে?বলে উঠে রোয়েন।
-তা বাবা রেহান জানেনা তো?জিজ্ঞেস করে উঠেন সাইফ রাহমান।
-জানেনা।রুহীকে মানা করেছি।বলে উঠে রোয়েন।
-হুম ভালো করেছো।বলে উঠেন সাইফ রাহমান।
– রোয়েন বেরিয়ে এলো আজিজ রায়হানের বাসা থেকে।গাড়িতে বসে কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে অন করলো।আজিজ রায়হানের পার্সোনাল গাড়িতে অনেক আগেই ওর সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে।ওনি কই যায় কি করে সব ও জানতে পারে।রুহীর অসুস্থতার কারনে বেশ কিছুদিন চেক করা হয়নি যার কারনে মার কিডন্যাপিং এর ব্যাপারটা অজ্ঞাত ছিলো ওর।
সাজিদ রায়হানের গাড়িটা একটা ঝোঁপের ভিতর আছে।সেখানে পাতা ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা ও।
হঠাৎ কেউ একজন গাড়িতে ঢুকে বসলো।রোয়েনের বুঝতে ভুল হলো না লোকটাই সাজিদ রায়হান।
রোয়েন খেয়াল করলো সে কাকে যেন কল দিচ্ছে।
বুঝতে পারছেনা ও কার সাথে কথা বলছে।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো রোয়েনের।
-ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ওর এক লোক বলল স্যার সাজিদ রায়হান কুমিল্লা যাচ্ছে।কাল ফিরে আসবে।
-রোয়েনের মুখে বা্কা হাসি ফুঁটে উঠলো।দ্যাটস গুড।কই আছে আমার মা?জেনেছো?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-স্যার বনানীতে রায়হান ম্যানশনে আছে আপনার মা।বলে উঠে লোকটা।
-রোয়েনের মুখ শক্ত হয়ে উঠে।ওকে পরে কথা হবে বায়।বলে ফোন কেঁটে দেয় রোয়েন।
চলবে