Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 75
রুহী রোয়েনের দিকে তাকায়।ওর চোখজোড়া ছলছল করছে।
-আবার বলো কথাটা।রোয়েন আবার বলো প্লিজ!!!মিনতির স্বরে বলে উঠে রুহী।
-রোয়েন রুহীর ঠোঁটের ওপর আলতো চুমু খেয়ে বলল ভালোবাসি বৌ!!খুব ভালোবাসি!!অনেক ভালোবাসি!!সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসতে চাই।
রুহীর ভিতর কেমন যেন শিহরন বয়ে গেলো।বুকে কেমন অজানা কম্পন ধরে গেছে।চোখজোড়া ভরে এলো রুহীর।রোয়েন নিজের কপাল রুহীর কপালে ঠেঁকায়।চোখজোড়া বন্ধ রোয়েনের।রুহী অনূভব করতে পারছে রোয়েনের শরীরটা কেমন থরথর করে কাঁপছে।রোয়েন বারবার কি যেন বলতে চেয়ে ও পারছেনা।অতি উত্তেজনায় রোয়েন কথাটা বলতে পারছেনা মায়াবতীকে।
রোয়েন চোখ খুলে রুহীর দিকে তাকায়।
-বৌ শুনো।ডেকে উঠে রোয়েন।
-জি বলো।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুঁটিয়ে বলল রুহী।
-খুশি কি জানো?খুশি হলো জীবনে কাউকে খুব বেশি আপন করে পাওয়া।নিজের করে পাওয়া,নিজের মাঝে তার বিচরন অনূভব করা,তার মুখে নিজের নামটা শোনা।তার হৃদকম্পন শুনতে পারা।তার প্রত্যেকটা নিশ্বাস নিজের নিশ্বাসে পরিনত করা।
তার সুখের জন্য নিজেকে পুরোটাই তার সঁপে দেয়া।
তার মুখে এক চিলতে হাসি ফুঁটাতে সব করতে পারা,তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়া।
তাকে শুধু শারীরিক না মন থেকে পাওয়ার নামই খুশি।
আর মহাখুশি কি জানো?বলতে থাকে রোয়েন রুহীর কপালের সাথে কপাল লাগিয়েই।
-রোয়েনের কথাটা যেন রুহীর রক্তের সাথে মিশে গেছে।ওর শরীরের প্রত্যেকটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে শীতল হাওয়া বয়ে গেছে।কাঁপা কাঁপা গলায় রুহী বলে উঠে কি?
-মহাখুশি হলো নিজের মাঝে নতুন কোন অস্তিত্ব অনূভব করতে পারা।নতুন কাউকে নিজের মাঝে অনূভব করার নাম।একটু থেমে রোয়েন আবার বলতে লাগলো থ্যাংকস বৌ দুনিয়ার সবচেয়ে বড় খুশি এনে দেয়ার জন্য।
-রুহী বুঝতে পারছেনা রোয়েনের কথা গুলো।কিন্তু কথা গুলো ওর বুকে তোলপাড় সৃষ্টি করছে ঠিকই।
রোয়েন এবার রুহীর হাত নিয়ে রুহীর পেটে রাখলো।
-Can you feel anything?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-রুহী যেন কাউকে অনূভব করতে পারছে।নতুন কোন অস্তিত্বের অনূভব করতে পারছে।ছোট্ট একটু হৃদপিন্ডের সন্ধান পেয়েছে রুহী।
রুহী হাঁসফাস করছে।চোখজোড়া জলে ভরে গেছে ওর।কাঁদতে চেয়েও পারছেনা ও।এতো খুশি লাগছে ওর।মহাখুশি লাগছে ওর।
-রোয়েন এটা কি সত্যি??? সত্যি কি আমি মা হবো?রোয়েন প্লিজ বলো না।
রোয়েন এবার সরে এসে রুহীকে জড়িয়ে ধরলো।সত্যি বলছি রুহী।আমাদের ছোট্ট একটা বাবু হবে।
♦♦♦
তোমাকে মাম্মাম আর আমাকে পাপাই ডাকার জন্য ছোট্ট একটা বাবু আসবে রুহী।রোয়েনের বাহুডোরে কেঁদে দিলো রুহী।
রুহীর চোখের পানিতে রোয়েনের কালো টিশার্ট ভিজে যাচ্ছে।রুহীর চোখে আজ সুখের অশ্রু।
রোয়েন রুহীর কাঁধে নাক ডুবিয়ে ওর নেশা ধরানে ঘ্রান নিচ্ছে।রুহী ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে রোয়েনকে।আজ যে খুশির সীমানা নেই।
কিছুক্ষন পর সরে এলো রোয়েন।রুহীর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে ওকে ফ্রেশ করিয়ে আনলো রোয়েন।তারপর নিজ হাতে নাস্তা করিয়ে দিলো।
সন্ধ্যায় রুহীকে অবাক করে দিয়ে রেহান রুপন্তী আজিজ রায়হান সাইফ রাহমান,আনিলা বেগম সবাই ওদের বাসায় হাজির হয় বিভিন্ন গিফটস নিয়ে।রুপন্তী দৌড়ে এসে বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-আপি কংগ্রাচুলেশনস। সত্যি অনেক খুশি লাগছে আপি।খালামনি হচ্ছি আমি।হাসতে হাসতে বলতে থাকে রুপন্তী।
-রুহী নিজে ও বোনকে জড়িয়ে ধরেছে।
গলা পরিষ্কার করলো রেহান।রোয়েন রেহানের দিকে ভ্রু নাচিয়ে তাকায়।
-তো খালু হচ্ছি নাকি চাচ্চু?মামা ও হই সম্পর্কে কারন রুহী আমার বোন হয়। বলতে থাকে রেহান।
-ওহ হ্যা তোর তো বোন।চাচ্চুই ডাকবে তোকে।বলে উঠে রোয়েন।
-রুপন্তীর হাজবেন্ড হিসেবে খালু হই তাইনা?রেহান বলে উঠে।
-খালু হোক মামা হোক একটা ডাকলেই চলবে।
বলে সরে আসে রোয়েন।
সবাই ভীষন খুশি।ঘরে ঈদের আনন্দ লেগেছে।
রুহী বাবুর জন্য অনেক গুলো গিফটস পেয়েছে।রোয়েন মিষ্টি কিনে সবার ঘরে পাঠিয়েছে।রুহী তো যেন নতুন এক দুনিয়ায় পাড়ি দিয়েছে।এ সময়ের প্রত্যেকটা অনুভূতি নোট করে রাখছে ও।
রোয়েন আর ওর ভালোবাসার উপহার পাচ্ছে ওরা।আল্লাহর দেয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত পাচ্ছে ওরা।
ইসস সে কি অনুভূতি।
ছোট্ট আঙ্গুল গুলো যখন রুহীর আঙ্গুল ধরবে তখন কতো আনন্দিত রুহী হবে সেটার অনুভূতি টা বলে বুঝানোর মতো নয়।
অনুভব করে নিতে হয়।
মরনিং সিকনেস,ভমিটিং,সব কিছুর উর্ধে যে খুশিটা পাচ্ছে রুহীর সেটার তুল্য আর কিছু নেই।পেটে হাত বুলিয়ে ভাবছে রুহী।
আচমকা চোখের কোনে পানি চলে আসে রুহীর।
৬,৭ দিন যাবৎ রোয়েন পাল্টে গেছে।রোয়েন রুহীর অনেক খেয়াল রাখে ঠিকই কিন্তু বেশির ভাগ সময়ে ল্যাপটপে কাঁটিয়ে দেয়।তেমন একটা কথা ও বলে না।রুহী কে আগের মতো বুকে নিয়ে গল্প করেনা।শুধু খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে চলে যায় ও।
এঅবস্থায় আর ও অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় সেটা বুঝতে কি পারছেনা রোয়েন?
রোয়েন তো সব বুঝে তাহলে কেন দূরে থাকছে রুহী থেকে?কেন বেশি সময় পার করছেনা রুহীর সাথে?
ভাবতেই চোখ ভরে আসে রুহীর।
♦♦♦
রোয়েন রুমে আসতেই চোখ মুছে নেয় রুহী।রোয়েন বাটিটা রুহীর সামনে রেখে এক হাত দিয়ে রুহীর মাংসপেশী অার অপর হাত রুহীর পিঠে রেখে ওকে উঠপ বসালো রোয়েন।রুহীর সামনে এসে বসে প্লেটে ভাত মাখাতে শুরু করলো রোয়েন।
রুহীর গলা ধরে আসছে।কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,
-কি হয়েছে তোমার?
-আমার কি হবে?রুহীর মুখে এক লোকমা ভাত এগিয়ে বলল রোয়েন।
-তুমি আগের মতো সময় দিচ্ছো না রোয়েন।কোন ব্যাস্ততা থাকলে আমাকে ও বলো।আমার এভাবে ভালো লাগছেনা।
-রুহী আমি অনেক চাপের মধ্যে আছি এখন।প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।তোমার তো খেয়াল রাখছি তাইনা?কিছুটা রেগে বলল রোয়েন।রুহী আর কিছু বলতে পারেনা।
কান্না আসলে ও কাঁদতে পারেনা।
রুহীকে খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো রোয়েন।
মাঝখান দিয়ে রুপন্তী ও অনেক বার এসে ঘুরে গেছে।কিন্তু ৫,৬দিন হলো আসেনা। ফোন ও দেয়না কেউ।
নিজেকে ভীষন অসহায় লাগছে রুহী।
পরশুদিন ওরা চলে যাবে।এ অবস্থায় সবার সাপোর্ট দরকার ছিলো ওর।কিন্তু,,,,,ভাবতেই কেঁদে দেয় রুহী।
ওদের যাওয়ার দিন টা ও চলে আসে।
ভেবেছিলো সবাই এসে একটা বার অন্তত দেখা করবে কিন্তু করে নি কেউ।
সব কিছু প্যাকিং শেষ করে রুহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রোয়েন।
গাড়িতে বেশকয়েক বার বমি হয়ে ছিলো ওর।
একটু পানি খেয়েছিলো সেটা ও পেটে থাকেনি।
গাড়ির সিটে মাথা ফেলে দেয় রুহী।
দীর্ঘ তিনদিন জার্নি শেষ করে লন্ডনে চলে আসে ওরা।
রোয়েন রুহীকে নিয়ে ওদের বাসার থেকে বেশ কাছে একটা হোটেলে উঠলো।
হালকা খাবার খেয়ে রুহীকে নিয়ে একটা রুমে চলে এলো।
রুহীকে শুইয়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে রোয়েন।
রোয়েন রুহীর পেটে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
রুহী বেশ অবাক হচ্ছে ঘরে না গিয়ে হোটেলে কেন এলো ওরা?
-ঘুমিয়েছো?জিজ্ঞেস করে উঠে রুহী।
-উহুম।বলো কি বলবা?বলে।উঠে রোয়েন।
-ঘরে না গিয়ে এখানে কেন এলাম।(রুহী)
-তোমার তো শরীর ভালো নেই।কিছুক্ষন রেস্ট করো।তারপর বেরিয়ে পড়বো।
চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে রোয়েন।
রুহী চুপচাপ ঘুমিয়ে গেলো।
চলবে